তিসি থেকে তেল এবং আঁশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে তেল ফসল হিসেবে জমির পরিমাণের দিক থেকে সরিষা, তিল এবং সয়াবিনের পর তিসির স্থান।
বাংলাদেশে ফরিদপুর, পাবনা, যশোর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলে তিসি বেশি জন্মে। তিসির তেল ভোজ্য তেল নয়। তিসির তেল ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল অয়েল’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তিসি বীজ দু ধরনের হয়, বাদামী অথবা হলুদ রঙের। হলুদ রঙের বীজগুলিকে golden linseeds ও বলে।
এটি ৩০ থেকে ৮০ সেঃ মিঃ উঁচু হয়। ফুলনীল, সাদা বা হালকা গোলাপী হয়। প্রতিটা ফুলে পাঁচটি করে পাপড়ি থাকে। ভোর বেলা ফুল ফোটে এবং বিকালে ঝড়ে যায়। কাণ্ডের বাকল বা ছাল থেকে আঁশ তৈরি হয়। আশ সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের কাণ্ড জলের নিচে ৭-২১ দিন রেখে আঁশ সংগ্রহ করা হয়। জাগ দেওয়া ও আঁশ সংগ্রহ পাট হতে আঁশ সংগ্রহের মতো।
তিসি ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাকে। পাকলে গাছ এবং ফল সোনালী বা কিছুটা তামাটে রং ধারণ করে। ফল ভালভাবে পাকার পরই ফসল কেটে বা উপড়িয়ে নেয়ার পর গাছগুলো ছোট ছোট আঁটি বেঁধে স্তুপ করে রাখা যায়।
(১) তিসির জাত পরিচিতি
নীলা:
তিসির নীলা জাতটি ল্যান্ড রেসেস থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয় এবং ১৯৮৮ সালে অনুমোদন করা হয়।
- গাছের উচ্চতা ৭০-১০০ সেমি।
- বীজ ছোট ও চ্যাপ্টা।
- ফল ডিম্বাকৃতির হয়।
- হাজার বীজের ওজন ৩.০-৩.৫ গ্রাম।
- ফুলের রং নীল।
- বীজ হাতে ধরলে পিচ্ছিল অনুভূত হয়।
- জীবন কাল ১০০-১১৫ দিন।
- ফলন প্রতি হেক্টরে ০.৯৫-১.১ টন।
- এটি একটি খরা সহিষ্ণু ফসল।
(২) তিসি চাষের পদ্ধতির বর্ণনা
ক) মাটি
এঁটেল মাটি তিসি চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। পলি দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতেও তিসির চাষ করা যায়।
খ) জমি তৈরি
তিসির বীজ ছোট বলে জমিতে ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও ২-৩টি মই দিয়ে মসৃণভাবে জমি তৈরি করতে হয়।
গ) বপনের সময়
কার্তিক (মধ্য-অক্টোবর হতে মধ্য-নভেম্বর)।
ঘ) বীজের হার
৭-৮ কেজি/হেক্টর।
ঙ) বপন পদ্ধতি
তিসি সাধারণত ছিটিয়ে বপন করতে হয়। তবে সারিতে বপন করা ভাল। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হয়।
চ) সারের পরিমাণ
সাধারণত তিসি বিনা সারে চাষ করা হয়। তবে ভাল ফলন পেতে হলে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করা যায়-
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
ইউরিয়া | ৭০-৮০ কেজি |
টিএসপি | ১১০-১৩০ কেজি |
এমওপি | ৪০-৫০ কেজি |
ছ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি
ইউরিয়া সার অর্ধেক ও বাকি অন্যসব সার শেষ চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
জ) পরিচর্যা
জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনমতো ১-২ বার সেচ দিলে ফলন ভালো হয়।
ঝ) ফসল সংগ্রহ
ফসল পরিপক্ক হওয়ার সময় গাছ ও ফল সোনালী বা কিছুটা তামাটে রং ধারণ করে। এমন হলে ফসল কেটে মাড়াই করে এবং রোদে শুকিয়ে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।
[সূত্র: বিএআরআই]