Skip to content

বারি চীনাশাক ও বাটিশাক চাষ পদ্ধতি

বারি চীনাশাক ও বাটিশাক চাষ পদ্ধতি

(১) বারি চীনাশাক পরিচিত

বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত চীনাশাক জাতটি ১৯৮৪ সালে অনুমোদন করা হয়।

এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল সবুজ পাতাজাতীয় সবজি। সরিষা গোত্রীয় এই সবজি জাতটি বাংলাদেশে সারা বৎসর উৎপাদন করা যায়।

হালকা সবুজ পাতা অবস্থায় শাক হিসেবে খাওয়া যায়। চীনাশাক ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ।

বারি চীনাশাক-১
বারি চীনাশাক-১
  • বাংলাদেশের আবহাওয়ায় জাতটি পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম।
  • সবজি হিসেবে গ্রীষ্মকালে এবং বীজ উৎপাদনের জন্য শীতকালে বীজ বপন
    করতে হয়।
  • বীজ লাগানোর ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই শাক হিসেবে উঠানো যায়।
  • বীজ উৎপাদনের জন্য ৯০-১০৫ দিন সময় লাগে।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করে হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ টন সবুজ পাতা এবং ৭০০-৭৫০ কেজি বীজ পায়া যায়।
  • স্বল্পকালীন, উচ্চ ফলনশীল এবং সারা বছর উৎপাদনযোগ্য এ সবজির চাষ বেশ লাভজনক।

(২) বারি বাটিশাক পরিচিত

বিদেশ থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাটিশাক নামে এ জাতটি ১৯৮৪ সালে অনুমোদন করা হয়।

বাটিশাক বাংলাদেশে অনেকটা নতুন সবজি। বাটিশাক চীন, জাপান ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে আবাদ হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে শীতকালসহ বছরের যেকোনো সময় বাটিশাক আবাদ করা যায়। তবে শীতকালে ভালো হয়।

বারি বাটিশাক-১
বারি বাটিশাক-১
  • এ সবজির বৈশিষ্ট্য হলো এর পাতার বোঁটা দীর্ঘ, চ্যাপ্টা, সাদা রঙের এবং পাতার ফলক হালকা সবুজ রঙের ও গোলাকৃতি।
  • প্রতি গাছে ২০-২৫টি পাতা থাকে।
  • পাতার দৈর্ঘ্য ২২-২৫ সেমি এবং প্রস্থ ১৮-২০ সেমি।
  • পাতা ও পাতার বোঁটা নরম। পাতার রং গাঢ় সবুজ ও বোঁটার রং সাদা।
  • স্বল্পকালীন, উচ্চ ফলনশীল এবং সারা বছর চাষোপযোগী।
  • এ জাত স্থানীয় আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদন করতে পারে।
  • জীবনকাল শাকের জন্য ৪০-৫০ দিন এবং বীজের জন্য ১১০-২০ দিন।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে ৪৫-৫৫ টন শাক এবং ৭০০-৮০০ কেজি বীজ পাওয়া যায়।
  • দেশের প্রায় সর্বত্র সারা বছরই এ জাতের সবজি চাষ করা যায়।
See also  সহজে লাল শাক চাষের পদ্ধতি

(৩) বারি চীনাশাক ও বাটিশাক চাষ পদ্ধতি

ক) মাটি

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বাটিশাক ও চীনাশাক চাষ করা যায়। তবে বেলে মাটি ও বেলে দোআাঁশ মাটিতে এ ফসল ভাল জন্মে।

খ) জমি তৈরি

তিন থেকে চারবার উত্তমরূপে জমি চাষ করে ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে পারলে ভাল হয়। জমিতে সেচ দেওয়া ও অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

গ) চারা তৈরি

  • উঁচু বেডে বাটিশাক ও চীনাশাক চাষ সবচেয়ে ভালো হয়। বেডে সরাসরি বীজ বপন করে অথবা চারা রোপণ করে বাটিশাক চাষ করা যায়। তবে বাটিশাক চাষে চারা রোপণ করা উত্তম।
  • জমি চাষ দেয়ার পর এক মিটার চওড়া বেডে ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্বে দু’টি সারি করে সারিতে সরাসরি বীজ বপন করা যেতে পারে। তা ছাড়া বীজতলায় চারা তৈরি করেও বেডে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে চারা লাগানো যায়।
  • চারা রোপণ করলে চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিন হওয়া উচিত।

ঘ) বীজ বপনের সময়

সারা বছরই বাটিশাক ও চীনাশাক চাষ করা যায়, তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বপন না করাই ভালো। বীজ উৎপাদনের জন্য শীতকালে চাষ করতে হয়।

ঙ) সারের মাত্রা ও প্রয়োগ

বাটিশাক ও চীনাশাকের জমিতে (হেক্টরপ্রতি) নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হয়-

সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া২০০-২৫০ কেজি
টিএসপি১০০-১৫০ কেজি
এমওপি১৫০-২০০ কেজি
গোবর১০-১২ টন

অথবা, প্রতি শতক জমিতে:

  • ৪০ কেজি গোবর, এক কেজি ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম টিএসপি ও ৯০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • জমি তৈরির সময় শেষ চাষে সম্পূর্ণ গোবর (৪০ কেজি) ও সম্পূর্ণ টিএসপি সার (৬০০ গ্রাম) এবং অর্ধেক ইউরিয়া (৫০০ গ্রাম) ও অর্ধেক এমওপি সার (৪৫০ গ্রাম) জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  • ২০ থেকে ২৫ দিন পরে বাকি অর্ধেক ইউরিয়া (৫০০ গ্রাম) ও এমওপি সার (৪৫০ গ্রাম) জমিতে উপরিপ্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
See also  লালশাক চাষ পদ্ধতি

চ) উৎপাদন পদ্ধতি

  • বীজতলায় চারা তৈরি করে অথবা সরাসরি জমিতে বীজ বপন করে চাষ করা যায়।
  • সরাসরি বীজ বপনের ক্ষেত্রে একটু ঘন করে বীজ বপন করতে হবে।
  • চারা তৈরি করে নিলে প্রতি শতক জমির জন্য বীজ লাগবে এক গ্রাম ও সরাসরি বীজ বপন করলে প্রতি শতাংশ জমির জন্য বীজ লাগবে পাঁচ গ্রাম। চারা রোপণের জন্য প্রতি শতকে ২২০টি চারা লাগবে। প্রতি ১০ গ্রামে ৯ হাজার ৫০০ বীজ থাকে।
  • সব শেষে ২০-২৫ সেমি দূরত্বে একটি করে চারা রেখে দেওয়া হয়।
  • ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই গাছ সংগ্রহের সময় হয়।

ছ) অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

সাফল্যজনকভাবে বাটিশাক ও চীনাশাকের চাষ করতে হলে পরিমিত সেচ জরুরি। প্রয়োজনমত নিড়ানী দিয়ে আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts