Skip to content

ধুন্দুলের জাতের নাম ও চাষ পদ্ধতি

ধুন্দুলের জাতের নাম ও চাষের পদ্ধতি

(১) ধুন্দুলের জাতের নাম ও পরিচিতি

বারি ধুন্দুল-১:

বারি ধুন্দুল-১
বারি ধুন্দুল-১

বারি ধুন্দুল-১ জাতটি ২০১৯ সালে চাষাবাদের জন্য মুক্তায়িত করা হয়। এ জাতটি স্থানীয় জার্মপ্লাজম থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়।

  • এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত।
  • ফল বড়, নলাকৃতি (Elongate) এবং ভক্ষন যোগ্য অবস্থায় হালকা সবুজ বর্ণের।
  • গাছ প্রতি ৯০-৯৭টি ফল ধরে এবং প্রতি ফলের গড় ওজন ২৩৬ গ্রাম।
  • ফল ধরা শুরু হওয়ার পর হতে প্রায় ৩ মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়।
  • জীবনকাল ১২০-১৫০ দিন।
  • জাতটি ভাইরাস ও পাউডারী মিলডিউ জনিত রোগের প্রতি সহনশীল।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ৪৫-৪৬ টন হয়।

(২) ধুন্দুলের চাষ পদ্ধতি ও নিয়ম

ক) জলবায়ু ও মাটি

  • দীঘ সময়ব্যাপী উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়ায় ধুন্দুল ভালো জন্মে। পরিবেশগত ভাবে এটি একটি কষ্ট সহিষ্ণু উদ্ভিদ। এরা খরা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পরাগায়ন বিঘ্নিত হয় ফলে, ফলন কমে যায়।
  • শীতকালের ২/৩ মাস ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সারা বছরেই ধুন্দুল চাষ করা সম্ভব।

খ) উৎপাদন মৌসুম

বছরের যে কোন সময় ধুন্দুলের চাষ সম্ভব হলেও বাংলাদেশে প্রধানত খরিফ মৌসুমেই ধুন্দুলের চাষ করা হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারী হতে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় পর্যন্ত ধুন্দুলের বীজ বপন করা যায়।

গ) বীজ হার

ধুন্দুলের জন্য হেক্টর প্রতি ৩-৪ কেজি এবং শতাংশ প্রতি ১২-১৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

ঘ) জমি তৈরী ও বপন পদ্ধতি

  1. বানিজ্যিক ভাবে ধুন্দুল চাষের জন্য উঁচু, পানি জমে থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
  2. প্রথমে সম্পূর্ন জমিকে ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি উপযুক্ত করে নিতে হবে।
  3. সম্পূর্ন জমিতে ১.২ মি. চওড়া ও ১০-১৫ সেমি উঁচু করে বেড করে নিতে হবে।
  4. বেডের দৈর্ঘ্য জমির দৈর্ঘ্যরে উপর নির্ভর করবে এবং এক বেড হতে অন্য বেডের মাঝখানে কমপক্ষে ৬০ সে. মি. এর নালা রাখতে হবে।
  5. এর পর বেডের মধ্যে ৩-৩.৫ মি. পর পর মাদা তৈরী করতে হবে।
  6. উক্ত মাদাতে সরাসরি ২/৩ টি বীজ বপন করা যেতে পারে অথবা পলিব্যাগে চারা তৈরী করে ১০-১৫ দিন বয়সের চারা মাদাতে লাগানো যেতে পারে।

ঙ) সারের পরিমান ও প্রয়োগ পদ্ধতি

মাদায় চারা রোপনের পূর্বে, সার দেয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। অতঃপর মাটিতে ‘জো’ এলে ৭-১০ দিন পর চারা রোপন করতে হবে।

ধুন্দুলের জমিতে হেক্টর ও শতাংশ প্রতি নিম্নবর্নিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে-

সারসারের পরিমান (হেক্টরে)সারের পরিমান (শতাংশে)জমিতে গর্ত তৈরির সময় দেয় (হেক্টরে)জমিতে গর্ত তৈরির সময় দেয় (শতাংশে)২০দিন পর/মাদা (হেক্টরে)২০দিন পর/মাদা (শতাংশে)৪০ দিন পর/মাদা (হেক্টরে)৪০ দিন পর/মাদা (শতাংশে)৫৫ দিন পর/মাদা (হেক্টরে)৫৫ দিন পর/মাদা (শতাংশে)৭৫ দিন পর/মাদা (হেক্টরে)৭৫ দিন পর/মাদা (শতাংশে)
গোবর১০ টন৪০ কেজি৪০ কেজি
ইউরিয়া১৮৫ কেজি৭৪০ গ্রাম৫৮ কেজি২৩২ গ্রাম৫৫ কেজি২২০ গ্রাম৫০ কেজি২০০ গ্রাম২২ কেজি৮৮ গ্রাম
টিএসপি১৭৫ কেজি৭০০ গ্রাম৩৫০ গ্রাম
এমপি১৭৫ কেজি৭০০ গ্রাম৭৫ কেজি৩০০ গ্রাম২৫ কেজি১০০ গ্রাম২৫ কেজি১০০ গ্রাম২৫ কেজি১০০ গ্রাম২৫ কেজি১০০ গ্রাম
জিপসাম৯৯ কেজি৪০০ গ্রাম৪০০ গ্রাম
জিঙ্ক সালফেট১২কেজি৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম
বোরাক্স/বরিক এসিড৪০ গ্রাম৪০ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট৬০ কেজি২৪০ গ্রাম২৪০ গ্রাম

চ) সেচ দেওয়া

ধুন্দুল গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় বলে তখন সবসময় পানি সেচের প্রয়োজন নাও হতে পারে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ সময় থেকে মে মাস পর্যন্ত খুব শুস্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। তখন অনেক সময় কোন বৃষ্টিই থাকে না। উক্ত সময়ে ৫-৬ দিন অন্তর নিয়মিত পানি সেচের প্রয়োজন হয়।

ছ) বাউনি দেওয়া

ধুন্দুলের কাঙ্খিত ফলন পেতে হলে অবশ্যই মাচায় বা কঞ্চিতে চাষ করতে হবে। ধুন্দুল কঞ্চিতে/মাচায় চাষ করলে প্রাকৃতিক পরাগায়ন বেশি হওয়ায় ফলন ভাল হয়।

জ) মালচিং

সেচের পর জমিতে চটা বাধে। চটা বাঁধালে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কাজেই প্রত্যেক সেচের পর হালকা মালচ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।

ঝ) আগাছা দমন

চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময়ই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। এছাড়াও গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যেপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। ফলে কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যায় না।

ঞ) সার উপরি প্রয়োগ

চারা রোপনের পর গাছ প্রতি সারের উপরি প্রয়োগের যে মাত্রা উল্লেখ করা আছে তা প্রয়োগ করতে হবে।

ট) বিশেষ পরিচর্যা

সময়মতো গাছের গোড়ায় শোষক শাখা অপসারণ করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে।

ঠ) ফল ধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ণ

  • ধুন্দুল এর পরাগায়ণ প্রধানত মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধারনের জন্য হেক্টর প্রতি তিনটি মৌমাছির স্থাপন করা যেতে পারে।
  • এছাড়াও কৃত্রিম পরাগায়ন করে ধুন্দুলের ফলন শতকরা ২০-২৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

ড) ফসল তোলা

ভাল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে ২.৫-৩ মাসব্যাপি ফল সংগ্রহ করা যায়।

ভক্ষণযোগ্য পরিপক্কতা সনাক্তকরণ: ধ্ন্দুুলের ফল পরাগায়নের ৮-১০ দিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয়। ফল মসৃন ও উজ্জ্বল দেখায়।

ফলন: হেক্টরপ্রতি ৪৫-৪৬ টন।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts