Skip to content

 

বরবটি চাষ পদ্ধতি

বরবটি চাষ পদ্ধতি

বরবটি Leguminosae পরিবারের একটি দ্রুত বর্ধনশীল গ্রীষ্মকালীন সবজি। সবজিটি প্রোটিন, ভিটামিন ‘এ’, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন‘সি’, ফোলেট, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের উত্তম উৎস। তাছাড়া বরবটির গাছ নাইট্রোজেন ফিক্সেশনের মাধ্যমে জমির উবর্রতা বাড়ায়।

(১) বরবটির জাত পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য

বারি বরবটি-১:

বারি বরবটি-১
বারি বরবটি-১
  • এ জাতের গাছ গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং লম্বায় ৪৫ সেমি হয়।
  • প্রতিটি গাছে ৬০-৭০টি বরবটি ধরে এবং পাকার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত নরম থাকে, খেতে সুস্বাদু।
  • বীজ বপনের ৬০-৭০ দিন পর থেকে বরবটি সংগ্রহ করা যায়।
  • বাংলাদেশের সব অঞ্চলে এ জাতটির চাষ করা যায়।
  • ফাল্গুন-আশ্বিন মাসে এ জাতের বীজ বপন করতে হয়।
  • জীবনকাল ২০০-২২০ দিন হয়।
  • ফলন ১৫-২০ টন/হেক্টর।
  • এ জাতটি পাউডারী ও ডাউনি মিলডিউ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। অন্যান্য রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
  • উচ্চ ফলনশীল বিধায় এর চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

(২) বরবটি চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত বর্ণনা

ক) জলবায়ু ও মাটি

  • বরবটি অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় ভাল জন্মে। সাধারণভাবে ২০-৩০০সে. তাপমাত্রা গাছের বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
  • বাংলাদেশে বছরের যে কোন সময় বরবটি জন্মানো সম্ভব, তবে শীতকালে গাছের বৃদ্ধির হার কমে আসে।
  • যে কোন রকম মাটিতে বরবটির চাষ করা যায়, তবে দো-আঁশ মাটি অধিকতর উপযোগী, কারণ বর্ষাকালে এ জাতীয় মাটির ব্যবস্থাপনা সহজ। মাটির pH ৫.৫-৭.৫ হলে ভালো হয়।

খ) উৎপাদন মৌসুম

বরবটি খরিফ মৌসুমে জন্মানো হয়। মার্চ-এপ্রিল মাস বপনের উপযুক্ত সময়।

গ) বপনপদ্ধতি

  • বেশি পরিমাণ জমিতে এর চাষ করতে হলে বাউনীর ধরণ অনুযায়ী মাদায় অথবা সারিতে বীজ বুনতে হবে।
  • বাউনীর জন্য মাচা ব্যবহার করলে উভয় পদ্ধতি (মাদা অথবা সারি) ব্যবহার্য, কিন্তু ইংরেজী ‘V’ অক্ষরের উল্টা আকারে খাড়া বাউনী দিলে সারিতে বীজ বুনতে হবে। পাশাপাশি মাদার দূরত্ব হবে কম বেশি ১.৫-২.০মিটার। এ পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি বীজ লাগবে ২.৫-৩.০ কেজি।
  • সারি পদ্ধতিতে (৬০ সে.মি. x ৩০ সে.মি.) হেক্টর প্রতি বীজ লাগবে ২০-২৫ কেজি আর এক মিটার ব্যবধানে ১.২ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করে জোড়াসারি (দূরত্ব ৬০ সে.মি.) করে সারিতে ২০-২৫ সে.মি. দূরে দূরে বীজ লাগানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি বীজের হার ১৮-২০ কেজি।

ঘ) সারের পরিমাণ (কেজি/হেক্টর)

সারমোট সারের পরিমাণজমি তৈরির সময় দেয়বীজ রোপনের ১৫ দিন পরবীজ রোপনের ৩৫ দিন পর
গোবর১০,০০০ কেজিসব
ইউরিয়া৫০ কেজি২৫ কেজি২৫ কেজি
টিএসপি১৫০ কেজিসব
এমওপি১৫০ কেজি৫০ কেজি৫০ কেজি৫০ কেজি

ঙ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি

  • শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর ও টিএসপি এবং অর্ধেক এমওপি সমান ভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালো ভাবে মিাশয়ে দিতে হবে।
  • সম্পূর্ণ ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার ২কিস্তিতে চারা লাগানোর ১৫ এবং ৩৫ দিন পর সমভাবে গাছের গোড়ায় ১০-১৫ সে.মি. দূরে মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

চ) পরিচর্যা

  • বরবটিতে বাউনী দেয়া প্রধান পরিচর্যা।
  • গাছ ৩০ সে.মি. উচু হওয়ার আগেই বাউনী দেয়া শেষ করতে হবে।
  • এর লতা যতো মুক্তভাবে বাইতে পারে ফলন ততো বেশি হয়।
  • উল্টা V (ইংরেজি ভি) পদ্ধতিতে দেয়া বাউনির খুটির উচ্চতা হবে ২.৫ মিটার।
  • শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে।

ছ) ফসলসংগ্রহ ও ফলন

  • বরবটি কেবল শুঁটি (পড) এর জন্য জন্মানো হয়।
  • বীজ বোনার ৬০-৭০দিন পর থেকে বরবটির শুঁটি সংগ্রহ করা যায়।
  • দু-তিন মাস ফল দিয়ে গাছ মার যায়।
  • পূর্ণ আকার প্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু খোসা আঁশময় হয়নি এমন পর্যায়ে শুঁটি সংগ্রহ করলে ফলন ও গুন ভাল হয়।
  • ২-৩ দিন অন্তর শুঁটি সংগ্রহ করা যেতে পারে।
  • হেক্টর প্রতি ফলন ১২-২০ টন।

(৩) বরবটি চাষে রোগ ব্যবস্থাপনা

ক) এ্যানথ্রাকনোজ রোগ

জীবাণু/কারন:

Colletotrichum lindemuthianum

রোগের লক্ষণ:

  • পাতার উপর কৌনিক আকৃতির লালচে বাদামী থেকে কালো দাবানো ক্ষত সৃষ্টি হয়।
  • আদ্র অবস্থায় দাগের কেন্দ্র/ মাঝ বরাবর ছত্রাকের গোলাপী রঙের স্পোরের স্তর দেখা যায়। পরে এ দাগগুলোতে একটু উঁচু ক্ষত দেখা যায়।
  • সংক্রমন গুরুতর হলে পড কুচকিয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে।
  • আক্রান্ত বীজ বপন করলে, বীজপত্র এবং চারা গাছগুলোর কান্ডে একটা-দুটো দাবানো গাঢ় বাদামী থেকে কালো বর্ণের দাগ দেখা যায়। এ দাগগুলোর মাঝখানটা ছাই রঙের হয়।
  • জীবাণু ফসলের অবশিষ্টাংশ ও বীজে বেঁচে থাকে। মাঠে এ রোগটি বৃষ্টি ও বাতাস দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে

রোগের প্রতিকার:

  1. রোগমুক্ত পড (শুঁটি) থেকে বীজ সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হবে।
  2. কার্বেন্ডিজম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন অটোস্টিন বা নোইন এর ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে সে দ্রবনে বীজ ৩০-৪০ মিনিট ভিজিয়ে শোধন করা। ভেজা বীজ বপনের পূর্বে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে।
  3. ফসল সংগ্রহ শেষে ফসলের অবশিষ্টিাংশ একত্রিত করে পুড়িয়ে ধ্বংশ করে ফেলতে হবে।
  4. অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অটোস্টিন/নোইন বা ডায়থেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার আক্রমণের শুরু হওয়া মাত্রই প্রয়োগ করতে হবে। অথবা, ছত্রাকনাশক প্রপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতিলিটার পানিতে ১ মি.লি. মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
  5. যে সব ফসল (যেমন ভুট্টা) এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয় না তাদের সাথে এ ফসলের ২-৩ বছর শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।

খ) পাউডারী মিলডিউ

রোগের লক্ষন:

  • Erysiphe polygoni নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ সৃষ্টি হয়।
  • এ রোগের আক্রমণ হলে পাতায় সাদা পাউডারের মত ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে এ দাগ কান্ড, ফুল ও ফলে বিস্তার লাভ করে।
  • রোগের আক্রমণ বেশি হলে সমস্ত গাছ আক্রান্ত হয় ও মারা যায়।

রোগের প্রতিকার:

  1. শুটি সংগ্রহ করার পর ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
  2. রোগ প্রতিরোধী/সহনশীল জাত ব্যবহার করতে হবে।
  3. অত্যধিক সেচ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  4. সালফার জাতীয় বালাইনাশক থিওভিট ৮০ ডব্লিউ পি অথবা কুমুলাস ডি এফ জাতীয় ঔষুধ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ৫-৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে।

গ) ডাউনি মিল্ডিউ

রোগের কারন/জীবাণু:

Pernospera vicae নামক ছত্রাকের আক্রমণে ডাউনি মিল্ডিউ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের লক্ষন:

  • বীজে সংক্রমন থাকলে মাঠে মাটি ফুঁড়ে বেরোনোর সময় চারাগাছ আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
  • আক্রান্ত গাছ হালকা সবুজ বর্ণের হয়। পাতার দাগগুলো ছোট, কৌনিক আকৃতির ও হলুদ রঙের হয় এবং দাগগুলো পাতার উপরের পৃষ্ঠে শিরার কাছাকাছি সীমাবদ্ধ থাকে।
  • আদ্র আবহাওয়ায় সৃষ্ট দাগের নীচের দিকে ধুসর থেকে পার্পল রঙের ঝুলে থাকা (downy) কিছু বৃদ্ধি দৃষ্টি গোচর হয়।
  • রোগের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে পাতার আক্রান্ত স্থান বাদামী ধুসর বর্ণের হয়, শুকিয়ে যায় এবং পুর্ণতা প্রাপ্তি হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে।
  • পড (শুঁটি) আক্রান্ত হলে ক্ষতস্থানে বৃহতাকৃতির বাদামী ব্লচ দেখা যায়।
  • জীবানুটি বীজ ও মাটি বাহিত। আদ্র আবহাওয়ায় রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে এ রোগটি বৃষ্টি ও বাতাস দ্বারা বিস্তার লাভ করে।

রোগের প্রতিকার:

  1. ফসলের মাঠ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  2. শুটি সংগ্রহ করার পর ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
  3. লিগুমিনোসি বহিভূত ফসলের সাথে বরবটির ২-৩ বছর শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
  4. রোগ প্রতিরোধী/সহনশীল জাত ব্যবহার করতে হবে।
  5. প্রাত কেজি বীজের সাথে ২.৫-৩.০ গ্রাম ক্যাপটান বা ডায়থেন এম-৪৫ উত্তমরূপে মিশিঢে শোধন করা।
  6. কার্বেন্ডিজম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন অটোস্টিন বা নোইন এর ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে সে দ্রবনে বীজ ৩০-৪০ মিনিট ভিজিয়েও বীজ শোধন করে নেয়া যায়। ভেজা বীজ বপনের পূর্বে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে।
  7. অত্যধিক সেচ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  8. গ্রীষ্মে জমি গভীরভাবে চাষ দিতে হবে এবং আগাছাসমূহ দূর করতে হবে।।
  9. রিডোমিল গোল্ড অথবা টেবুকোনাজোল (ফলিকুর ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ টি স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।

ঘ) মরিচা রোগ

রোগের লক্ষন:

  • Uromyces fabae নামক ছত্রাকের আক্রমণে মরিচা রোগ হয়ে থাকে।
  • পাতার নিচের দিকে, কান্ডে ও ফলের উপর মরিচা রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায় এবং ফল পাকার পূর্বেই গাছ শুকিয়ে খড়ের মত রং ধারণ করে।
  • উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা, কুয়াশাচ্ছন্ন বা মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া এবং রাতের তাপমাত্রা ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে এ রোগ সহজেই বিস্তার লাভ করে।

রোগের প্রতিকার:

  1. লিগুমিনোসি বহিভূত ফসলের (যেমন ভুট্টা) সাথে বরবটির ২-৩ বছর শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
  2. রোগ প্রতিরোধী/সহনশীল জাত ব্যবহার করতে হবে।
  3. অধিক নাইট্রোজেন সার দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যথেষ্ট পরিমানে পটাশিযাম সার প্রয়োগ করতে হবে।
  4. আক্রান্ত ফসলে প্রোপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ইসি) অথবা টেবুকোনাজোল (ফলিকুর ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ টি স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়। স্প্রে করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন স্প্রে দ্রবন ভালোভাবে পাতার নীচের দিকে পড়ে।

ঙ) সাধারণ মোজেইক রোগ

রোগের কারন:

ভাইরাস।

রোগের লক্ষন:

  • বয়স্ক গাছের পাতায় হলুদ-সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইকের মত দাগ দেখা যায়। দাগগুলো অসম আকারের এবং দ্রুত বড় হয়।
  • আক্রান্ত পাতা ছোট, বিকৃত ও উপরের দিকে কোকড়ানো, বিবর্ণ হয়ে যায়। পাতা চিকন ও ছোট হয়। শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। প্রথমদিকে আক্রাস্ত হলে গাছগুলো খর্বাকৃতি হলুদ বর্ণের হয়।
  • আক্রান্ত গাছে সাধারণত ফল (পড) ধরে না। ধরলে পড ছোট হয়। আক্রান্ত পডে ছোট ছোট গাঢ় সবুজ দাগ দেখা যায় এবং এগুলো দেরীতে পাকে।

দমন ব্যবস্থাপনা:

  1. রোগের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত গাছ দেখলেই তা তুলে ধ্বংস করতে হবে এবং ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে।
  2. রোগাক্রান্ত গাছ থেকে কোন বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার না করা।
  3. ক্ষেতে বাহক পোকার উপস্থিতি দেখা দিলে একান্তর ভাবে দুটো অন্তর্বাহী ছত্রাকনাশক যেমন ইমিডাক্লোরোপিড প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি.লি. অথবা ডায়াজিনন (সেভিয়ন) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ মি.লি.মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
  4. ভুট্টার সাথে আন্ত:ফসল হিসেবে বরবটির চাষ করা।

(৪) বরবটি চাষে পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা

ক) জাব পোকা

ক্ষতির ধরন:

  • নিম্ফ ও পূর্ণবয়স্ক পোকা উভয়েরই ছিদ্র ও শোষন উপযোগী মুখোপাঙ্গ রয়েছে। অসংখ্য পোকা দলবদ্ধভাবে কচি ডগা, পাতার নীচের পৃষ্ঠ, পাতার বোটা, ফুল এবং পডে আক্রমন করে এবং সেগুলো খেকে রস চুষে খায়।
  • সামান্য আক্রান্ত পাতা হলুদ বর্ণ ধারন করে। গুরুতরভাবে আক্রান্ত পাতা খর্বাকৃতির হয়, কুচকিয়ে যায় এবং উপরের দিকে মুড়িয়ে যায়, দেরীতে ফুল আসে, পড কুচকিয়ে যায় এবং ফলন মারাত্মক ভাবে কমে যায়। গুরুতর ভাবে আক্রান্ত গাছ মারা যায়।
  • জাব পোকা ভাইরাস রোগের বাহক বিসাবে কাজ করে। অসংখ্য পোকা একত্রিত হয়ে আক্রান্ত স্থানে, বিশেষ করে পাতায় মধুরমত একধরনের রস নিসৃত করে এবং এখানে সুটি মোল্ড জন্মায়। এর ফলে গাছের সালোকসংশ্লেষন ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়। ফলশ্রুতিতে শুঁটি (পড) এর ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।

দমন ব্যবস্থাপনা:

  1. আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে।
  2. নিম বীজের দ্রবণ কেজি পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবান গুলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুঁড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়।
  3. লেডীবার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ পোকা ও কীড়া এবং সিরফিড ফ্লাই-এর কীড়া জাব পোকা খেয়ে প্রাকৃতিকভাবে দমন করে। সুতরাং উপরোক্ত বন্ধু পোকাসমূহ সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়।
  4. আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি অথবা ডাইমেথোয়েট (যেমন টাফগর) এর ২ মি.লি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

খ) ফল ছিদ্রকারী পোকা

ক্ষতির ধরন:

  • এ পোকা ফুল এবং ফল আসার সময় গাছের ক্ষতি করে থাকে।
  • প্রথমে শীর্ষ ডগাতে আক্রমন শুরু হয়, পরবর্তীতে পুস্পমঞ্জুরীর ফুল ও পডে আক্রমন করে।
  • লার্ভা এক ফুল থেকে আরেক ফুলে, দ্বিতীয় ফুল থেকে তৃতীয় ফুল এভাবে একটা লার্ভা ৪ টা থেকে ৬ টা ফুল ক্ষতিগ্রস্ত করে।
  • আক্রমনের তীব্রতার অনুক্রম যথাক্রমে ফুল, ফুলের কুঁড়ি, শুঁটি (পড) এবং তারপরে পাতা।
  • পূর্ণবয়স্ক লার্ভা, বিশেষ করে তৃতীয় ইনস্টার থেকে পড, পডের বোটা এবং মাঝেমাঝে কান্ডকে ক্ষতি করে।
  • প্রথম ইনস্টার লার্ভা পড ও পাতার চেয়ে ফুলকে ভক্ষন করতে পছন্দ করে। লার্ভা ফুলের কুঁড়ি, ফুল, শুঁটি (পড) খেয়ে জালের মত করে ফেলে।

    দমন ব্যবস্থাপনা:
  1. পোকা সহ আক্রান্ত ফল হাতে বাছাই করে মেরে ফেলতে হবে।
  2. এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি স্প্রে করতে হবে।
  3. আক্রমনের হার অত্যন্ত বেশী হলে সাইপারমেথ্রিন ৪০ ইসি জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

গ) কালো পিপড়া

প্রায়শই দেখ যায়, বড় কালো পিপড়ার আক্রমণে ফল ধারণ ব্যাহত হয়। এ পিপড়া দমন করে ফলন বাড়ানো যায়।

এ পিপড়ার দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সেভিন ৮০ ডব্লিউ পি পাওডার মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page