ডাঁটা বাংলাদেশের একটি অন্যতম গ্রীষ্মকালীন সব্জি। ডাঁটায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, *বি’, ‘সি’ ও “ডি এবং ক্যালসিয়াম ও লৌহ বিদ্যমান। ডাটার কান্ডের চেয়ে পাতা বেশী পুষ্টিকর। খুব কম সব্জিতেই এত পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে।
(১) ডাটার জাত পরিচিতি
ক) বারি ডাটা-১ (লাবণী)
- কাণ্ড খাড়া হালকা বেগুনী রঙের, নরম ও কম আশযুক্ত।
- পাতার নিচের অংশ গাঢ় বেগুনী এবং উপরের অংশ গাঢ় সবুজ রঙের।
- জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং খেতে সুস্বাদু।
- বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়।
- বীজ ডিম্বাকৃতি উজ্জ্বল কালো বর্ণের।
- খরিফ মৌসুমে বাংলাদেশের সর্বত্র চাষের উপযোগী। চৈত্র-আঘাঢ় মাসে বপন করতে হয়।
- জীবনকাল ৫০-৬০ দিন।
- ফলন ৫-৬ টন/বিঘাঃ ৩৫-৪০ টন/হেক্টর।
- রোগবালাই প্রতিরোধী।
খ) বারি ডাটা-২
জাতটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত কৌলিসম্পদের মূল্যায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত একক গাছ থেকে উদ্ভাবিত।
- কাণ্ড খাড়া, নিচের দুই তৃতীয়াংশ হালকা বেগুনী এবং উপরের অংশ গাঢ় সবুজ রঙের।
- কাণ্ড নরম ও কম আশযুক্ত।
- পাতার উপরের অংশ হালকা রঙের।
- দ্রুত বর্ধনশীল জাত। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়।
- বীজ ডিম্বাকৃতি উজ্জল কালো বর্ণের।
- খরিফ মৌসুমে বাংলাদেশের সর্বত্র চাষের উপযোগী। চৈত্র-আষাঢ় মাসে বপন করতে হয়।
- জীবনকাল শাক হিসেবে: বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত। ডাটা হিসেবে:
বীজ বোনার ৬০-৭০ দিন। বীজের জন্য: বীজ বোনার ১২৫-১৪০ দিন পর্যন্ত। - ফলন ৩০-৩২ টন/হেক্টর।
- বীজ বপনের ২৫ দিন পর থেকেই খাওয়ার উপযোগী হয় এবং খেতে সুস্বাদু।
- রোগবালাই প্রতিরোধী।
(২) ডাটা চাষ পদ্ধতি বর্ণনা
ক) জাত নির্বাচণ
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট বারি ডাটা-১ (লাবনী) ও বারি ডাঁটা-২ নামে দুটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। সারাদেশে বিভিন্ন জাতের ডাঁটা চাষের প্রচলন থাকলেও বিএআরআই উদ্ভাবিত জাত দুটি উচ্চ ফলনশীল এবং উন্নতমানের।
- বারি ডাটা-১ (লাবনী): এ জাতটি গ্রীক্মকালে চাষ উপযোগী। তবে বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। কাণ্ড খাড়া, হালকা বেগুনী রঙের, নরম ও কম আঁশযুক্ত। পাতার নিচের অংশ হালকা বেগুনী এবং উপরের অংশ গাঢ় বেগুনী রংয়ের। দ্রুত বর্ধনশীল জাত। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়।
- বারি ডাটা-২: গ্রীষ্মকালে চাষপযোগী। তবে বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। দ্রুত বর্ধনশীল, কান্ড নরম, বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ উপযোগী হয়
খ) জলবায়ু ও মাটি
- ডাঁটা উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ুর উপযোগী ফসল। ২০-৩০০ সেঃ তাপমাক্রায় এটি সবচেয়ে ভালো জন্মে।
- গাছের দ্রুত বৃদ্ধি ও উচ্চ ফলনের জন্য পূর্ণ আলো প্রয়োজন।
- ডাঁটার জন্য উর্বর ও গভীর মাটি প্রয়োজন। সুনিষ্কাশিত অথচ স্যাঁতস্যাতে থাকে এমন মাটিতে এটি সবচেয়ে ভলো জন্মে।
গ) ফসলের জীবন কাল
শাক হিসেবে: বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত।
ডাঁটা: বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিন পর্যন্ত।
বীজ ফসলের জন্য: বীজ বপনের ১২৫-১৪০ দিন পর্যন্ত।
ঘ) বপন সময়
ফেব্রুয়ারী থেকে জুন মাস বীজ বপনের জন্য উপযুক্ত সময়। তবে সেচের ব্যব¯হা থাকলে ডাঁটার বীজ সারা বছরই বপন করা যায়।
ঙ) বীজের হার
সারিতে বপনের জন্য: ১.০-১.৫ কেজি/হেক্টর (৪-৬ গ্রাম/শতাংশ)।
ছিটিয়ে বপনের জন্য: ২-৩ কেজি/হেক্টর (৮-১২ গ্রাম/শতাংশ)।
চ) জমি তৈরী
জমি গভীর ভাবে চাষ দিয়ে বড় ঢেলা ভেঙ্গে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে এবং শেষ চাষের সময় নির্ধারিত মাত্রায় গোবর, টিএসপি ও এমপি সার মিশিয়ে দিতে হবে।
সারিতে বীজ বপন করলে নিম্নরূপে বেড প্রস্তুত করতে হবে-
বেডের প্রস্থ: | ১ মিঃ |
বেডের দৈর্ঘ্য: | জমির দৈর্ঘ্যে অনুযায়ী |
সারি থেকে সারির দূরত্ব: | ২৫সেঃ মিঃ |
নালার আকার: | প্রস্থ ৩০ সেঃ মি; গভীরতা ১৫ সেঃ মিঃ |
ছ) বীজ বপন
- সারিতে (২৫ সে.মি. দূরে দূরে) কাঠির সাহায্যে ১.০-১.৫ সেঃ মিঃ গভীর লাইন টানতে হবে।
- লাইনে বীজ বপন করে হাত দিয়ে গর্ত বন্ধ করে দিতে হবে। বীজ ছিটিয়ে বপন করলে বীজের সাথে সমপরিমান ছাই বা পাতলা বালি মিশিয়ে নিলে সমভাবে বীজ পড়বে।
- বপনের পর হালকা ভাবে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে।
- বীজ বপনের পর ঝাঝরি দিয়ে হালকা করে কয়েক দিন পানি দিতে হবে। তাহলে বীজ দ্রুত এবং সমান ভাবে গজাবে।
জ) সার প্রয়োগ (সাধারনভাবে প্রয়োগ)
সারের নাম | মোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) | মোট পরিমাণ (কেজি/বিঘা) | জমি তৈরীর সময় (কেজি/বিঘা) | পিট তৈরীর সময় (কেজি/বিঘা) | ১ম উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ১৫ দিন পর) (কেজি/বিঘা) | ২য় উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ৩৫ দিন পর) (কেজি/বিঘা) |
পঁচা গোবর | ১০.০ টন | ১৩৪০.০ | ৭৭০.০ | ৭৭০.০ | – | – |
ইউরিয়া | ২৫০.০ কেজি | ৩৪.০ | – | – | ১৭.৫০ | ১৭.৫০ |
টিএসপি | ১৫০.০ কেজি | ২০.০ | – | ২০.০ | – | – |
এমপি | ১৫০.০ কেজি | ২০.০ | – | ২০.০ | – | – |
জিপসাম | ৭৫.০ কেজি | ১০.০ | – | ১০.০ | – | – |
ঝ) সার প্রয়োগ (নতুন পদ্ধতিতে প্রয়োগ)
সারের নাম | মোট পরিমাণ (হেক্টর প্রতি) | মোট পরিমাণ (কেজি/বিঘা) | জমি তৈরীর সময় (কেজি/বিঘা) | পিট তৈরীর সময় (কেজি/বিঘা) | ১ম উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ১০ দিন পর) (কেজি/বিঘা) | ২য় উপরিপ্রয়োগ (চারা লাগানোর ২৫ দিন পর) (কেজি/বিঘা) |
কিচেন কম্পোষ্ট | ৩.০ টন | ৪০১.০ | ২০১.০ | ২০০.০ | – | – |
ভার্মিকম্পোষ্ট | ১.৫০ টন | ২০০.০ | ১০০.০ | ১০০.০ | – | – |
ইউরিয়া | ১৮৮.০ কেজি | ২৫.০ | – | – | ১২.৫০ | ১২.৫০ |
টিএসপি | ১১২.০ কেজি | ১৫.০ | – | ১৫.০ | – | – |
এমওপি | ১১২.০ কেজি | ১৫.০ | – | ১৫.০ | – | – |
জিপসাম | ৫৬.০ কেজি | ৭.৫০ | – | ৭.৫০ | – | – |
ঞ) পরবর্তী পরিচর্যা
- গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমিকে আগাছামুক্ত রাখা আবশ্যক।
- প্রয়োজন মত জমিতে সেচ দিতে হবে, নাহলে কান্ড দ্রুত আঁশযুক্ত হয়ে ডাটার গুনগুন ও ফলন কমে যাবে।
- মাটির চটা ভেঙ্গে মাটি ঝুরঝুরে করে দিলে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং গোড়া পচা রোগ রোধ হয়।
- চারা গজানোর ৭ দিন পর হতে পর্যায়ক্রমে গাছ পাতলাকরণের কাজ করতে হবে। জাতভেদে ৫-১০ সেঃ মিঃ অস্তর গাছ রেখে বাকী চারা তুলে শাক হিসেবে ব্যবহ্নত হতে পারে।
- ডাটা যেহেতু দ্রুত বর্ধনশীল ফসল তাই সঠিক সময়ে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করে পানি সেচ দিতে হবে।
ট) ফসল সংগ্রহ
- ডাঁটার কান্ডের মাঝামাঝি ভাঙ্গার চেষ্টা করলে যদি সহজে ভেঙ্গে যায় তাহলে বুঝতে হবে ডাটা আঁশমুক্ত আছে। এ অবস্থাই ডাটা সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- সাধারনতঃ বীজ বপনের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে।
- ফলন: শাক হিসাবে হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন (৪০-৬০ কেজি/শতাংশ) এবং ডাটা হিসাবে হেক্টর প্রতি ৪৫-৫০ টন (১৮০-২০০ কেজি/শতাংশ)।
ঠ) বীজ উৎপাদন
- ডাটা একটি পরপরাগী উদ্ভিদ। সে কারণে জাতের বৈশিষ্ট্য অক্ষূন্ন রাখার জন্য দুইটি জাতের মধ্যে প্রজনন বীজের ক্ষেত্রে ১০০০ মিটার আর ভিত্তি বীজের জন্য ৫০০ মিটার পৃথকীকরণ দুরত্ব বজায় রাখা উচিৎ।
- বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডাটা সারিতে বপন করা উচিৎ। সারি থেকে সারি ৪০ সে.মি. এবং গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ২০-৩০ সে. মি. রাখা যেতে পারে।
- বীজ ফসলের জন্য হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত ৫০ কেজি (২০০ গ্রাম শতাংশে) ইউরিয়া, ৩৫ কেজি (১৫০ গ্রাম শতাংশে) টিএসপি, এবং ৩০ কেজি (১২৫ গ্রাম শতাংশে) এমওপি সার প্রয়োগ করলে ভাল বীজের ফলন পাওয়া যায়।
- গাছে ফুল আসার পর বীজ পাকতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগে। ফুল গুচ্ছের এক অংশে অঙুল দিয়ে ঘষা দিলে যদি কালো বীজ বাহির হয়ে আসে তাহলে বীজ ফসল সংগ্রহ করা যেতে পারে।
- বীজ সংগ্রহের পর ভালোকরে রৌদ্রে শুকাতে হবে এবং পরিস্কার করে শুকনা পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
- বীজের ফলন : হেক্টর প্রতি ৫০০-৮০০ কেজি।
(৩) ডাটা চাষে রোগবালাই ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
ক) জাব পোকা
ক্ষতির লক্ষন:
- প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক জাব পোকা দলবদ্ধ ভাবে গাছের নতুন ডগা বা পাতার রস চুষে খেয়ে থাকে।
- ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যহত হয় ও প্রায়শঃ নীচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা য়ায়।
- মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় এদের বংশ বৃদ্ধি বেশী হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে।
- নিম বীজের দ্রবন (১ কেজি পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) স্প্রে করেও পোকার আক্রমন অনেকাংশে কমানো যায়।
- আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে স্বল্পমেয়াদী বিষ ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি (ফাইফানন/সাইফানন) (প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. হারে) অথবা ডাইমেথয়েট (টাফগর) (প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি. হারে) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
খ) মরিচা রোগ
রোগের লক্ষণ:
পাতার নীচের দিকে সাদা থেকে হালকা হলুদাভাব একটু উচু ধরনের দাগ দেখা যায়। দাগের চারিদিকের টিস্যু (কোষগুলো) পুড়ে যাওয়ার মত হয়, পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারন করে এবং পাতাগুলি মরে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- রোগমুক্ত ভাল বীজ ব্যবহার করতে হবে।
- বীজ ফসলে আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করতে হবে। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অটোস্টিন/নোইন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- ডাইথেন এম-৪৫ নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার এক সপ্তাহ পর ফসল সংগ্রহ করা যাবে।
- বীজ-ফসলে অব্যশই ছত্রাকনাশক প্রপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) বা হেক্সাকোনাজোল (ফলিকুর ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি. মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করে ক্ষেত রোগমুক্ত রাখতে হবে।
গ) এনথ্রাকনোজ
রোগের লক্ষণ:
- এ রোগের আক্রমনে গাছের আক্রান্ত অংশ যেমন পাতা ও কান্ড ক্রমশ উপর হতে মরতে থাকে। একে ডাইব্যাক বলে।
- পাতায় গোলাকৃতি দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত অংশ খুলে পড়ে ও পাতা ছিদ্রযুক্ত হয়।
কান্ডে লম্বাটে কালো দাগ দেখা যায়। - বীজের পরিপুষ্টতা হ্রাস পায় এবং গজানোর ক্ষমতাও কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- এ রোগটি বীজবাহিত তাই রোগমুক্ত ভাল বীজ ব্যবহার করলে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
- গাছের পরিত্যক্ত অংশ ও আগাছা একত্রিত করে ধ্বংশ করে ফেলতে হবে।
- কার্বেণ্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন অটোষ্টিন বা নোইন এর ২ গ্রাম প্রতিলিটার পানিতে দ্রবীভূত করে সে দ্রবনে বীজ ৩০ মিনিট ভিজিয়ে শোধন করা ভেজা বীজ বপনের পূর্বে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে।
- আক্রমন বেশী হলে প্রতিলিটার পানিতে ০.৫ মি.লি. প্রপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) মিশিয়ে ৭-১০ দিনঅন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করে ক্ষেত রোগমুক্ত রাখতে হবে।
ঘ) ডাঁটার ঢলে পড়া রোগ
রোগের লক্ষণ:
- ছত্রাক গাছের নীচের দিকে মাটি সংলগ্ন স্থানে বা মাটির কাছাকাছি কান্ডে আক্রমন করে এবং গাড় বাদামী ও দাবানো ক্যাংকার সৃষ্টি করে। ক্রমে এই ক্যাংকারজনিত দাগ কান্ডের চতুর্দিক বেষ্টন করে ফেলে।
- রোগের অনুূকূল অবস্থায় ৪-৫ দিনের মধ্যে চারা নেতিয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে পঁচে মারা যায়।
- মাঠে বীজ গজানোর হার কম হয়। অনেক সময় মাটির নীচে অঙ্কুিরত বীজের ভ্রূণমূল ও ভ্রূণকান্ড রোগেআক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং চারা মাটি ভেদ করে উপরে উঠতে ব্যর্থ হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- খুব গভীরে এবং ঘন করে বীজ বপন করা থেকে দূরে থাকতে হবে।
- চারায় বা গাছে বেশী পানি দেয়া বন্ধ রাখতে হবে।
- কার্বেন্ডিজম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন অটোস্টিন এর ২ গ্রাম প্রতিলিটার পানিতে দ্রবীভূত করে সে দ্রবনে বীজ ৩০ মিনিট ভিজিয়ে শোধন করা ভেজা বীজ ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে বপন করতে হবে।
- রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি.লি. প্রপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) মিশিয়ে৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
ঙ) পাতার দাগ রোগ
রোগের লক্ষণ:
- এ রোগের আক্রমন হলে পাতায় ছোপ ছোপ দাগের সৃষ্টি হয়। দাগগুলো গোলাকার থেকে তির্যকাকৃতির হয়। দাগের মাঝখান হালকা ধুসর বর্ণের হয় এবং দাগের চারিদিকে গাড় বাদামি বর্ণের বলয় সৃষ্টি হয়।
- রোগের মারাত্মক আক্রমন হলে ছোট ছোট দাগগুলো একত্রিত হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং এতে সবজীর মান কমে যায়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- ফসলের মাঠ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাখতে হবে এবং ফসল সংগ্রহের পর ফসলের অবশিষ্টাংশ একত্রিত করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- রোগমুক্ত ফুল গুচ্ছ থেকে নীরোগ বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- এ রোগের আক্রমন বেশী হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি. প্রপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) বা ২ গ্রাম ম্যানকোজেব (ডায়থেন এম-৪৫) মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করে দমন করা যায়।
[সূত্র: বিএআরআই]