Skip to content

 

সবুজ ডাটা শাক চাষ পদ্ধতি

সবুজ ডাটা শাক চাষ পদ্ধতি

ডাটাশাক জনপ্রিয় পুষ্টিকর পাতা জাতীয় সবজি। এ সবজিগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন ’এ’, ’বি’ ও ’সি’ এবং ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। এ সবজিগুলো কোষ্টকাঠিন্য, দৃষ্টিহীনতা দূরীকরণে এবং শারীরিক ও মানসিক গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

(১) সবুজ ডাটা শাকের জাত পরিচিতি

বারি সবুজ ডাটা শাক-১:

বারি সবুজ ডাঁটা শাক-১ দ্রুত বর্ধনশীল এবং গ্রীন্মকালে চাষোপযোগী প্রথম পাতা জাতীয় ডাটা শাক যা নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়।

  • বারি ডাটা শাক-১ এর পাতার বৌটা এবং কাণ্ড নরম ও রসালো।
  • গাছ উচ্চতায় ১৫-২০ সেমি।
  • প্রতি গাছে ১৮-২৫ টি পাতা থাকে।
  • পাতা হালকা সবুজ, বোটা ও শিরা হালকা সাদাটে৷
  • ফুল হালকা সবুজ, বীজ গোলাকার ও উপরিভাগ কালো।
  • সারা বছর বাংলাদেশের সবত্রচাষপোযোগী। তবে খ্রীন্মকালে এর বৃদ্ধি ও ফলন বেশি হয়।
  • বারি সবুজ ডাটা শাক-১ সাধারণত ১৫-৩০ দিনের মধ্যেই উত্তোলন করা যায়।
  • বীজ উৎপাদনের জন্য ৯০- ১২০ দিন সময় লাগে।
  • ফলন ১৮-২০ টন/হেক্টর।

(২) সবুজ ডাটা শাক চাষ পদ্ধতি

ক) জলবায়ু ও মাটি

  • ডাটাশাক সারা বছরই চাষ করা যায়। ডাটাশাক খরিপ মৌসুমে চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
  • সব ধরনের মাটিতেই এ ডাটাশাক চাষ করা যায় তবে দোঁঁআশ বা বেলে দোঁআশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত উর্বর জমি উত্তম।

খ) জাত নির্বাচন

  • বারি সবুজ ডাটা শাক-১: এ জাতের ডাটার কান্ড ও পাতা হালকা বেগুনী রংয়ের, নরম, কম আঁশযুক্ত এবং দ্রুত বর্ধনশীল। বীজ বপনের ৩০ -৩৫ দিনের মধ্যেই শাক খাওয়ার উপযোগী হয়।
  • বারি সবুজ ডাটা শাক-২: এ জাতের ডাটার পাতা ও কান্ড সবুজ। পাতাগুলি বেশ প্রশস্ত, দ্রুত তবর্ধনশীল ও ঝোঁপালো প্রকৃতির। বীজ বপনের ২০-২৫ দিন পর থেকেই শাক খাওয়ার উপযোগী হয়। শাক খেতে নরম ও সুস্বাদু। গাছের উচ্চতা ১৫-২৫সে.মি. এবং পাতার সংখ্যা ১২-১৬ টি হলেই শাক খাওয়ার উপযোগী হয়।
See also  ডাটা চাষ পদ্ধতি

গ) বীজ বপনের সময় এবং বীজের হার

ডাঁটাশাক সারা বছর চাষ করা যায় তবে খরিপ মৌসুমে বপন করলে উৎকৃষ্ট মানের শাক পাওয়া যায়। ডাটা শাকের বীজ হার ৮-১০ গ্রাম/শতাংশ।

ঘ) জমি তৈরি

  1. জমি গভীরভাবে ৫-৬ টি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে তৈরী করতে হবে।
  2. বীজতলার ন্যায় ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরী করতে হবে।
  3. প্রত্যেকটি বেডের উভয় পার্শ্বে পানিসেচ ও নিষ্কাশনের জন্য ৩০ সে.মি. প্রশস্ত নালা রাখতে হবে।
  4. বেডের দৈর্ঘ্য হবে জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী।
  5. বেডের উভয় কিনারে ১০ সে.মি. ছেড়ে দিয়ে লম্বালম্বি ২০ সে.মি. দুরত্বে বীজ বপনের জন্য কাঠির সাহায্যে ১.৫ – ২.০ সেমি গভীর লাইন টেনে বীজ বপনের জন্য জমি তৈরী করতে হবে।

ঙ) সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

ডাটাশাক দ্রুত বর্ধনশীল এবং স্বল্পকালীন ফসল। তাই সঠিক সময়ে সঠিক পরিমান সার সঠিকভাবে প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। ডাঁটাশাকের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে নিম্ন লিখিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নামসারের মোট পরিমাণশেষ চাষের সমর্য় জমিতে প্রয়োগবীজ বপনের ১৫ ও ২০ দিন পর উপরি প্রয়োগ
গোবর/কম্পোস্ট৪০ কেজিসম্পূর্ণ
ইউরিয়া৮০০ গ্রাম৪০০ গ্রাম৪০০ গ্রাম
টিএসপি৫০০ গ্রাম৫০০ গ্রাম
এমওপি৬০০ গ্রাম৬০০ গ্রাম

চ) বীজ বপন

  1. লালশাক ও ডাঁটাশাকের বীজ সরাসরি ছিটিয়ে বা সারিতে বপন করা যায়। তবে সারিতে বপন করা উত্তম।
  2. সারিতে (১০-১৫সে.মি. দূরে দূরে) কাঠির সাহায্যে ১.০-১.৫ সে.মি. গভীর লাইন টানতে হবে।
  3. লাইনে বীজ বপন করে হাত দিয়ে গর্ত বন্ধ করে দিতে হবে।
  4. ঘনত্বের সমতা বজায় রাখার জন্য বীজের সাথে সমপরিমান ছাই বা পাতলা বালি মিশিয়ে নিয়ে বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে।
  5. বপনের পর হালকা ভাবে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে।
  6. বীজ বপনের পর ঝাঝরি দিয়ে হালকা করে কয়েক দিন পানি দিতে হবে। তাহলে বীজ দ্রুত এবং সমান ভাবে গজাবে।
See also  ডাটা চাষ পদ্ধতি

ছ) অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

  • গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমিকে আগাছামুক্ত রাখা আবশ্যক।
  • প্রয়োজনমতো জমিতে সেচ না দিলে কাণ্ড দ্রুত আঁশমুক্ত হয়ে ডাটার গুণগতমান ও ফলন কমে যাবে।
  • মাটির চটা ভেঙে ঝুরঝুরে করে দিলে গাছের বৃদ্ধির সুবিধা এবং গোড়াপচা রোগও রোধ হয়।
  • চারা গজানোর ৭ দিন পর হতে পর্যায়ক্রমে একাধিকবার গাছ পাতলাকরণের কাজ করতে হবে। জাত ভেদে ৫-১০ সে.মি. অন্তর গাছ রেখে বাকি চারা তুলে শাক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
  • যেহেতু দ্রুত বর্ধনশীল ফসল তাই উল্লিখিত হারে সঠিক সময়ে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

জ) ফসল উত্তোলন

  • কাণ্ডপ্রধান জাতে ফসল সংগ্রহের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। গাছে ফুল আসার পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় ফসল তোলা যেতে পারে। ফুল আসলেই কাণ্ড আঁশময় হয়ে যায়।
  • ডাটার কাণ্ডের মাঝামাঝি ভাঙার চেষ্টা করলে যদি সহজে ভেঙে যায় তাহলে বুঝতে হবে আঁশমুক্ত অবস্থায় আছে। তখনই সংগ্রহের উপযুক্ত সময় বলে বিবেচিত হয়।
  • প্রতি শতকে ৭২-৮০ কেজি সবুজ ডাটা শাক পাওয়া যায়।

ঝ) বীজ উৎপাদন

  • বীজ উৎপাদনের সর্বোত্তম সময় হলো সবজি উৎপাদন মৌসুম অর্থাৎ লালশাকের জন্য রবি মৌসুম ও ডাটাশাকের জন্য খরিপ মৌসুম।
  • এ সবজিদ্বয় পর-পরাগায়িত বিধায় বিভিন্ন জাতের মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ মি দুরত্ব রাখা উচিত।
  • বীজ ফসলের জন্য বারি লালশাক-১ নভেম্বরে এবং বারি ডাটাশাক মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই বপন করা প্রয়োজন।
  • বীজ উৎপাদনের জন্য সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩০ সেমি হওয়া প্রয়োজন।
  • সঠিক সময়ে পোকা মাকড় দমন, জমিতে সেচ এবং সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • বীজ বপন থেকে শুরু করে লালশাকের ১২০-১৩০ দিন এবং ডাটাশাকের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা যায়।
  • গাছে বীজের রং যখন কালো হয় তখনই বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
  • বীজ সংগ্রহের পর ভালভাবে রোদে শুকিয়ে, পরিস্কার করে শুকনাবীজ বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • প্রতি হেক্টরে বারি লালশাক-১ প্রায় ৬০০-৭০০ কেজি (২.৫-৩.০ কেজি/শতাংশ) এবং বারি ডাটা-১ ও ২ ৪০০-৬০০ কেজি (২.০ – ২.৫ কেজি/শতাংশ) বীজ উৎপাদন করতে পারে।
See also  ডাটা চাষ পদ্ধতি

ঞ) সবুজ ডাটা শাক চাষে রোগবালাই ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা

সবুজ ডাটা শাকের রোগবালাই ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা অন্যন্যা প্রকার ডাটাশাক ও লালশাক এর মতই।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page