(১) মিষ্টি মরিচের জাত পরিচিতি
ক) বারি মিষ্টি মরিচ-১
- বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১১ সালে বারি মিষ্টি মরিচ-১ জাতটি মুক্তায়িত হয় এবং অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
- এ জাতটি অনেকটা মাঝারী ঝোপালো আকৃতির এবং উচ্চতায় ) ৭০-৭৫ সেমি হয়।
- প্রতি গাছে ৭-৯টি ফল ধরে এবং ফলের। গড় ওজন ৭৫-৮৫ গ্রাম।
- বড় আকর্ষণীয় (ঘণ্টাকৃতির) Bell shaped চকচকে সবুজ ফল, পাকলে গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করে।
- চারা লাগানোর ৬০ দিন পর ফুল আসতে শুরু করে এবং ৩০-৪০ দিন ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়।
- বড় বড় সুপার সপ কিংবা মার্কেটে মিষ্টি মরিচ সাধারণত ক্যাপসিকাম নামে বিক্রয় করা হয়।
- ক্যাপসিকাম বাংলাদেশে সবজি চাষের এলাকায় চাষাবাদের উপযুক্ত। মানসম্মত ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য ১৬-২৫০ সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। গড়ে তাপমাত্রা ১৬-২১০ সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- পলিথিন ছাউনি, পলি হাউস, পলি ভিনাইল হাউসে গাছ লাগালে গাছের বৃদ্ধি ভাল হয় এবং ফলন আশানুরূপ হয়।
- আশ্বিন (অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করে কার্তিক (নভেম্বর) মাসে চারা রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
- জীবনকাল ১২৫-১৩৫ দিন।
- ফলন ১৪-১৫ টন/হেক্টর।
খ) বারি মিষ্টি মরিচ-২
সবজি বিভাগ, উদ্যানতন্ত গবেষণা কেন্দ্র, বারি AVRDC এর কয়েকটি লাইন সংগ্রহ করে। এগুলো মূল্যায়নের মাধ্যমে ২০১৫ সালে বারি মিষ্টি মরিচ-২ (BARI Misti Morich-2) জাতটি মুক্তায়িত হয়েছে।
- এটি ৮০-৯০ গ্রাম ওজনের বড় আকর্ষণীয় (ঘণ্টাকৃতির) Bell shaped ফল।
- চকচকে সবুজ ফল, পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
- ফলন ২৫-৩০ টন/হেক্টর ৷
(২) মিষ্টি মরিচের চাষ পদ্ধতি
ক) জলবায়ু ও মাটি
- মানসম্মত ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য ১৬ – ২৫০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও শুঙ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী।
- রাতের তাপমাত্রা ১৬-২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে, ফলন ও মান কমে যায় কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারেই ফলন হয় না।
- অক্টোবর মাসে বীজ বপন করে নভেম্বরে চারা রোপণ করলে দেখা যায় যে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে জানুয়ারি পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এজন্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনি, পলি হাউস, পলিভিনাইল হাউসে গাছ লাগালে রাতে ভিতরের তাপমাত্রা বাহির অপেক্ষা বেশি থাকে।
- সুনিষ্কাশিত দো-আশ বা বেলে দোআশ মাটি মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য উত্তম।
- মিষ্টি মরিচ খরা এবং জলাবদ্ধতা কোনটিই সহ্য করতে পারেনা।
- মিষ্টি মরিচের জন্য মাটির অস্রক্ষারত ৫.৫-৭.০ এর মধ্যে হওয়া বাঞ্চনীয়।
খ) জীবনকাল
জাত ও মৌসুম ভেদে মিষ্টি মরিচের জীবনকাল ১৩০ থেকে ১৫০ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গ) বীজ বপনের সময়
অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস।
ঘ) বীজের মাত্রা
প্রায় ১৪০টি বীজ প্রতি এক গ্রাম বীজে থাকে। অঙ্কুরোদগমের হার ৯০% এবং মাঠে বাঁচার হার ৯০% বিবেচনায় প্রতি হেক্টরে বীজের পরিমাণ ২৩০ গ্রাম এবং চারার সংখ্যা ৩০,০০০ প্রয়োজন।
ঙ) চারা উৎপাদন
- প্রথমে বীজগুলো ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- সুনিষ্কাশিত উঁচু বীজ তলায় মাটি মিহি করে ১০ x ২ সেমি দূরে দূরে বীজ বপন করে হালকাভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
- বীজতলায় প্রয়োজনানুসারে ঝাঝারি দিয়ে হালকা ভাবে সেচ দিতে হবে।
- বীজ গজাতে ৩-৪ দিন সময় লাগে।
- বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর চারা ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হলে ৯ x ১২ সেমি আকারের পলি ব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে।
- পটিং মিডিয়াতে ৩:১:১ অনুপাতে যথাক্রমে মাটি, কম্পোস্ট এবং বালি মিশাতে হবে।
- পরে পলিব্যাগ ছায়াযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে, যাতে প্রখর সূর্যালোকে এবং ঝড় বৃষ্টি আঘাত হানতে না পারে।
চ) জমি তৈরি ও চারা রোপণ
- চারার রোপণ দূরত্ব জাত ভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা ৪৫ x ৪৫ সেমি দূরত্বে রোপণ করা হয়।
- মাঠে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে।
- প্রতিটি বেড প্রস্থে ৭৫ সেমি হতে হবে এবং লম্বায় দুটি সারিতে ২০ টি চারা সংকোলনের জন্য ৯ মিটার বেড হবে।
- দুটি সারির মাঝখানে ৩০ সেমি ড্রেন করতে হবে।
- চারা বিকেল বেলা রোপণ করা উত্তম।
- চারা রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে।
- নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় এ সময় গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কাজেই গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নাইলন নেট এবং পলিথিন ছাউনিতে গাছ লাগাতে হবে। এতে রাতে ভিতরের তাপমাএা বাহির অপেক্ষা বেশি থাকে এবং গাছের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়।
ছ) সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি
ক্যাপসিকাম চাষে হেক্টর প্রতি সার প্রয়োগের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি নিম্নের সারণিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
- জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে।
- বাকি অর্ধেক গোবর, টিএসপি, জিংক সালফেট, জিপসাম এবং ১/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং এমওপি পরবর্তীতে দুই ভাগ করে চারা লাগানোর ২৫ এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হব।
সার | মোট পরিমাণ (কেজি/হেক্টর) | শেষ চাষের সময় (কেজি/হেক্টর) | পিটে বা গর্তে (কেজি/হেক্টর) | উপরি প্রয়োগ চারা রোপনের ২৫ দিন পর | উপরি প্রয়োগ চারা রোপনের ৫০ দিন পর |
গোবর/কম্পোস্ট | ১০ টন | ৫০০০ | ৫০০০ | – | – |
ইউরিয়া | ২৫০ | – | ৮৪ | ৮৪ | ৮৪ |
টিএসপি | ৩৫০ | ৩৫০ | – | – | – |
এমওপি | ২৫০ | – | ৮৪ | ৮৪ | ৮৪ |
জিপসাম | ১১০ | ১১০ | – | – | – |
জিঙ্ক সালফেট | ১২ | ১২ | – | – | – |
জ) সেচ প্রয়োগ
- মিষ্টি মরিচ খরা ও জলাবদ্ধাতা কোনটিই সহ্য করতে পারেনা। জমিতে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে। আবার অতিরিক্ত সেচ দিলে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থা করতে হবে।
ঝ) খুঁটি
কোন কোন জাতে ফল ধরা অবস্থায় খুঁটি দিতে হয় যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে।
ঞ) আগাছা দমন
আগাছানাশক বা হাত দিয়ে অথবা নিড়ানী দিয়ে প্রয়োজনীয় আগাছা দমন করতে হবে।
ট) ফসল তোলা
- মিষ্টি মরিচের সাধারনত পরিপক সবুজ অবস্থায় লালচে হলদে হওয়ার পূর্বেই মাঠ থেকে উঠানো হয়।
- সাধারনত সপ্তাহে একবার গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
- ফল সংগ্রহের পর ঠাণ্ডা অথচ ছায়া যুক্ত স্থানে বাজার জাতকরণের পূর্ব পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে।
- উল্লেখ্য যে, ফসল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলে সামান্য পরিমাণে বৌটা রেখে দিতে হবে।
ঠ) ফলন
১৫-২৫ টন/হেক্টর।
[সূত্র: বিএআরআই]