(১) কীটনাশক দ্বারা আলুর কাটুই পোকা দমন
- কাটুই পোকার কীড়া বেশ শক্তিশালী, ৪০-৫০ মিমি লম্বা।
- পোকার উপর পিঠ কালচে বাদামী বর্ণের, পার্শ্বদেশ কালো রেখাযুক্ত এবং বর্ণ ধূসর সবুজ।
- শরীর নরম ও তৈলাক্ত।
- এই পোকার কীড়া দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে এবং রাতের বেলা চারা গাছ কেটে দেয়।
- এই পোকা আলুতে ছিদ্র করে আলু ফসলের ক্ষতি করে থাকে।
প্রতিকার:
- আক্রান্ত কাটা আলু গাছ দেখে তার কাছাকাছি মাটি উল্টে পাল্টে কীড়া খুঁজে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা উচিত।
- কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি হলে সেক্স ফেরোমন ট্রাপ + ফুরাডান ৫জি (কার্বোফুরান) @ ২০ কেজি/হেক্টর জমি তৈরির সময় এবং শেষ সেচের পূর্বে
প্রয়োগ করে এই পোকার আক্রমণ কমানো সম্ভব। - এছাড়া প্রতি লিটার পানির সাথে ক্লোরোপাইরিফস ২০ ইসি জাতীয় কীটনাশক (ক্লোরোপাইরিফস) ৫ মিলি হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটিতে স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর স্প্রে করতে হবে।
- কাটুই পোকার কীড়া দমনের জন্য বিষটোপ ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। ১ কেজি ধানের কুড়া এবং ক্লোরোপাইরিফস ৫ এমএল মিশিয়ে বিষটোপ তৈরি করা হয়।
বিকল্প পদ্ধতি:
আলুর কাটুই পোকা দমনে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক (কেয়ার ৫০ এসপি অথবা সানটাপ ৫০ এসপি ২০ মিলি/৪মুখ)।
অথবা, ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (ক্যারাটে ২.৫ ইসি অথবা ফাইটার প্লাস ২.৫ ইসি ১৫ মিলি/৩ মুখ) ১০ লিটার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
(২) কীটনাশক দ্বারা আলুর সুতলী পোকা দমন
- আলুর সুতলী পোকার মথ আকারে ছোট, ঝালরযুক্ত ও সরু ডানা বিশিষ্ট ধূসর বাদমী বর্ণের হয়।
- পূর্ণাঙ্গ কীড়া সাদাটে বা হাল্কা গোলাপী বর্ণের এবং ১৫-২০ মিমি লম্বা হয়ে থাকে।
- কীড়া আলুর মধ্যে লম্বা সুড়ঙ্গ করে আলুর ক্ষতি করে থাকে।
- বাংলাদেশে বসতবাড়িতে সংরক্ষিত আলু এ পোকার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রতিকার:
জমিতে সুতলী পোকা দমন ব্যবস্থাপনা-
- আলুর জমিকে সর্বদা আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে।
- আলুর সুতলী পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ট্রাপ এর সাথে মাটি উঠানোর (Hilling up) মাধ্যমে এই পোকা দমন করা যায়। সেক্স ফেরোমন ট্রাপ + মাটি উঠানো (সর্বশেষ মাটি উঠানো অবশ্যই আলু সংগ্রহের কমপক্ষে ৬০ দিন পূর্বে করতে হবে)।
- মাঠ থেকে তোলার পর আলু উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা যাবে না, কারণ স্ত্রী মথ রাত্রি বেলায় উন্মুক্ত আলুর গায়ে ডিম পাড়ে। তাই মাঠ থেকে আলু তোলার পর মশারি অথবা পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেঁকে দিতে হবে।
বিকল্প পদ্ধতি:
এই পাতা সুড়ঙ্গকারি আলুর সুতলী পোকা দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোথায়ারানিলিপ্রল জাতীয় কীটনাশক (যেমন- ভলিউম ফ্লেক্সি ৫ মিলিলিটার অথবা ১মুখ)।
অথবা, সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন- ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার।
বসত বাড়িতে সংরক্ষিত আলুর সুতলী পোকা দমন ব্যবস্থাপনা-
- আলু সংরক্ষণ করার আগে সুতলী পোকা আক্রান্ত আলু বেছে
ফেলে দিতে হবে। - আলুর সুতলী পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ট্রাপ এর সাথে শুকনো বালি এবং নীম ওয়েল কেক (বালি এবং নীম ওয়েল কেক মিশ্রিত স্তর ০.৫ সেমি) এর ব্যবহার-সেক্স ফেরোমন ট্রাপ + শুকনো বালির পাতলা স্তর + নীম ওয়েল কেক @ ৩:১।
- বাড়িতে সংরক্ষিত আলু শুকনা বালি, ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুঁড়ার একটি পাতলা স্তর ( আলুর উপরে ০.৫ সেমি) দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
(৩) আলুর অন্যন্য পোকামাকড় ও রোগ দমন
ক) আলুর জাবপোকা ও সাদামাছি দমন
- ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন- এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার/২মুখ);
- ১০ লিটার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
- মোজাইক রোগ ও পাতা কোকড়ানো রোগের বাহক হলো এই জাবপোকা।
খ) আলুর ঢলে পড়া রোগ, নাবি ধ্বসা ও গোলআলুর স্ক্যাব রোগ দমন
- ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- (রিডোমিল গোল্ড ২০ গ্রাম)
- অথবা, কার্বান্ডিজম জাতীয় ছত্রানাশক যেমন- (এমকোজিম ৫০ ; অথবা গোল্ডাজিম ৫০০ ইসি ১০ মিলি /২মুখ);
- ১০ লি পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ৩ বার গাছের গোড়ায় ও মাটিতে স্প্রে করুন।
- আক্রমণ বেশি হলে প্রথম থেকে প্রতি লিটার পানিতে ২গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে স্প্রে করুন।
গ) ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ হলে
- ক্ষেতের মাটিতে বিঘা প্রতি ২ কেজি হারে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে।
ঘ) আগাম ধ্বসা দমনে
- আক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।
- পাতায় ২/১টি দাগ দেখার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে আইপ্রোডিয়ন বা মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- রোভরাল বা ডাইথেন এম-৪৫ ২০ গ্রাম);
- ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন ।
ঙ) পাউডারী মিলডিউ দমনে
- সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- (কুমুলাস ৪০ গ্রাম বা গেইভেট বা মনোভিট ২০ গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- গোল্ডাজিম বা এমকোজিম ১০ মিলি);
- ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
(৪) আলু চাষে কীটনাশক ব্যবহারে সতর্কতা
- ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন।
- ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন।
- ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনা।
- বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন।
[সূত্র: বিএআরআই]