Skip to content

 

এ্যাভোকেডো চাষ পদ্ধতি

এ্যাভোকেডো চাষ পদ্ধতি

(১) অ্যাভোকাডো কি? দেখতে কেমন?

পরিচয়:

অ্যাভোকাডো একটি বিদেশি ফল। বেশিরভাগ ফলের মধ্যে মূলত কার্বোহাইড্রেট থাকে তবে অ্যাভোকাডোতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমাণ ৮০%, যা অনেক বেশি। 

বাংলাদেশে যেসব বিদেশি ফল অধুনা চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তার মধ্যে অ্যাভোকাডো অন্যতম। অন্যান্য ফলের তুলনায় এ ফলের মিষ্টতা কম হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অতি উপযোগী।

এ ফলের আকার অনেকটা পেয়ারা বা নাশপাতির মতো। ফলটির খোসা কুমিরের গায়ের মত অমসৃণ হওয়ায় এটা কুমির নাশপাতি হিসেবেও পরিচিত।

একেকটা ফলের ওজন প্রায় ৩০০-৭০০ গ্রাম হয়। ফলের ভেতরে বেশ বড় ডিম্বাকার বীজ থাকে। আহার্য্য অংশ মাখনের মত মসৃণ, হালকা মিষ্টি স্বাদের। একই কারণে অনেকের কাছে এটি মাখন ফল নামে পরিচিত।

পুষ্টিমান:

অ্যাভোকাডোতে ৩ প্রকারের চর্বি বিদ্যমান-

  1. ফাইটোস্টেরল: অ্যাভোক্যাডোর চর্বির বেশির ভাগই এই ফাইটোস্টেরল। অ্যাভোকাডোর চর্বিতে বিভিন্ন ফাইটোস্টেরলের সমন্বয় ঘটায় ফলটি প্রদাহ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
  2. পলিহাইড্রওক্সিল্যাটেড ফ্যাটি অ্যালকোহল: যদিও এই উপাদানটি সামুদ্রিক গাছেই সচারাচর পাওয়া যায় কতিপয় স্থলজ উদ্ভিদেও এটা বিদ্যমান। ফাইটোস্টেরলের মত PFA ও প্রদাহ নিরোধে সহায়তা করে। অ্যাভোক্যাডোতে এই উপাদানটি যথেষ্ট পরিমানে থেকে ফলটিকে অসাধারন করেছে।
  3. অলেইক এসিড: অ্যাভোক্যাডোতে প্রচুর পরিমানে অলেইক এসিড থাকায় এই ফলটি ওজন, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক এর ঝুকি কমাতে সহায়তা করে। অলেইইক এসিড শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় ও ভাল কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়।

অ্যাভোক্যাডোর অভ্যন্তরীণ হলুদ-সবুজ মাংসল অংশ খাওয়া হয়, তবে খোসা এবং বিচি ফেলে দেয়া হয়। এতে ২০ রকমের ভিটামিন এবং খনিজ সহ বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

অ্যাভোক্যাডোতে পটাশিয়ামের মাত্রাধিক্য থাকায় ফলটি হৃৎপিণ্ড সবল ও সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। এছাড়া অ্যাভোক্যাডো প্যান্টোথেনিক এসিড, ডাইটারি ফাইবার, তামা, ফলিক এসিড, ভিটামিন B6, ভিটামিন K এবং ভিটামিন C এর ভাল উৎস।

ব্যবহার:

পেঁপের মতো কাঁচা-পাকা ফল, সবজি, ভর্তা, সালাদ, শরবতসহ ভিন্নতরভাবে খাওয়ার সুবিধা আছে। টোস্টে মাখনের পরিবর্তে অ্যাভোকাডো ক্রিম দিয়ে খাওয়া, সালাদে, স্যান্ডুইচে মেয়নেজের পরিবর্তে অ্যাভোকাডোর ক্রিম দিয়ে আহার করা স্বাস্থ্যসম্মত।

মহিলা মহলে ত্বকের পরিচর্যার জন্য মুখে অ্যাভোকাডোর পেস্ট (avocado face masks) এর প্রলেপ দেয়ার রেওয়াজ আছে। অ্যাভোকাডোর খনিজদ্রব্য ও ভিটামিনসমূহ ত্বকের ভেতর যেয়ে তত্বককে সতেজ ও মস্রিন রাখে।

সালাদে অ্যাভোক্যাডো যোগ করলে পরিপাকনালীতে সালাদ থেকে নির্গত ক্যারোটিন জাতীয় এন্টিওক্সিডেন্টের (লাইকপিন, বেটা-ক্যারোটিন ইত্যাদি) শোষণ দ্বিগুন থেকে চারগুন বৃদ্ধি পায়। এই ক্যারোটিন প্রদাহবিরোধী হিসেবে কাজ করে।

(২) এ্যাভোকেডোর জাত পরিচিতি

বারি এ্যাভোকেডো-০১:

বারি এ্যাভোকেডো-০১
বারি এ্যাভোকেডো-০১
  • উচ্চফলনশীল, নিয়মিত প্রচুর ফলদানকারী।
  • ফলের বোঁটার গোড়া সামান্য উচু ও ফল বড় আকারের (প্রতি ফলের গড় ওজন ৫৬২.৩ গ্রাম), ফল দেখতে সবুজ বর্ণের এবং টিএসএস ১৪.৬%। ফলের খাদ্যোপযোগী অংশ ৭০.৪%।
  • ফলে বেটা ক্যারোটিনের পরিমাণ (৫৪.৩ মা.গ্রাম/ ১০০ গ্রাম) এবং অসম্পৃক্ত চর্বি ওমেগা-৬ এর পরিমাণ ২০.২%।
  • গাছ প্রতি গড় ফলের সংখ্যা ১৮৯টি এবং গড় ফলন ১০৬.৩ কেজি/গাছ/বছর এবং ১০.৬ টন/হে./বছর।

(৩) এ্যাভোকেডো চাষ পদ্ধতি

মাটি:

দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি উপযোগী। অম্লীয় ও ক্ষারীয় মাটিতে জন্মে থাকে। পিএইচ ৫.০-১০.০। ইহা অধিক বিস্তৃত মাটি যেমন বরেন্দ্র ও পাহাড়ী এলাকায় উৎপাদন করা যেতে পারে।

তাপমাত্রা:

এ্যাভোকেডো গাছ নিম্ন তাপমাত্রা থেকে উচ্চ তাপমাত্রায় (৪-৪৫ ডি. সে.) জন্মাতে পারে।

উৎপাদন প্রযুক্তি:

  • এ্যাভোকেডো গাছ সমতল ভুমিতে আয়তাকার পদ্ধতিতে, পাহাড়ী এলাকায় সীমিত ঢালে কন্টুর টেরেস পদ্ধতিতে লাগানো হয়ে থাকে।
  • প্রথমে গভীর চাষ দিয়ে জমি থেকে সমস্ত ধরনের বহুবর্ষজীবি আগাছা ও জঙ্গল পরিস্কার করে নিতে হবে এবং ৬০-৬০-৬০ সেমি আকারের গর্ত তৈরী করতে হবে।
  • প্রতি গর্তে ১০-১৫ কেজি গোবর সার ও ১৫০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করে চারা রোপণের আগে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে।

চার রোপণ:

এ্যাভোকেডো বীজ ও কলমের চারা রোপণ করা হয়। পাকা ফলের রিক্যালসিট্র্যান্ট বীজ আহরণের সাথে সাথেই সীড বেড অথবা পলি ব্যাগের মাটিতে রোপণ করতে হবে। চারার একটা নির্দিষ্ট বয়সে গ্রাফটিং করা হয়।

  1. পরিপক্ব ফল থেকে বীজকে আলাদা করতে হবে।
  2. বীজের উপরের কালো আবরণ পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  3. জল দিয়ে পরিষ্কারের পরপরেই ছায়া যুক্ত স্থানে ২০ সেন্টিমিটার পুরু শুকনো বালির ভিতরে আড়াআড়ি করে বীজটি এমন ভাবে বপন করতে হবে যাতে করে বীজের চারভাগের একভাগ বালির উপরে থাকে।
  4. হ্যান্ড স্প্রেয়ার জল নিয়ে প্রতিদিন হালকা করে বালি ভিজিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জল দিলে বীজ পঁচে যেতে পারে। তাই জল দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  5. বীজ বালিতে বপন করার ৩৫-৪০দিনের মধ্যে (ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি দিন) প্রথমে শিকড়, পরবর্তিতে অঙ্কুর(ডগা)দেখা যাবে।
  6. বেলে দোআঁশ মাটি সাথে শুকনো গোবর অথবা কমপোস্ট মিশিয়ে টবের মাটি তৈরি করতে হবে।
  7. অঙ্কুর(ডগা) ৩-৪ সেন্টিমিটার লম্বা হলে শিকড় সহ বীজটিকে তুলে মাটির টবে রোপন করতে হবে।
  8. মাটির টবে বীজটিকে রোপনের পর অঙ্কুর(ডগা) ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পানি ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে বা অণুখাদ্য স্প্রে করতে হবে।
  9. দৈর্ঘ্য ৪০ সেন্টিমিটার x প্রস্থ ৪০ সেন্টিমিটার x গভীরতা ৬০ সেন্টিমিটার মাপে মাদা বা গর্ত তৈরি করে ৩ কেজি গোবর, ৬০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০ গ্রাম টিএসপি, ৪০ গ্রাম এমওপি, ১০ গ্রাম জিংক, ১৫ গ্রাম বোরণ, ২০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১০ গ্রাম জিপসাম মাটির সাথে মিশিয়ে ২-৪ দিন পরে চারা রোপন করতে হবে।
  10. ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে চারাটিকে মাটির টব থেকে মাদা বা গর্তে স্থানান্তর করতে হবে।

রোপণ দূরত্ব:

সারি থেকে সারি ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ১৮ মি.।

সার প্রয়োগ:

  • সার প্রয়োগ মাটির উর্বরতার উপর নির্ভর করে।
  • গাছের বর্ধনশীল অবস্থায় সাধারণত প্রতি বছর ১৫-২০ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ, ১০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম বোরিক এসিড প্রয়োগ করতে হবে।
  • গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে।
  • বর্ষার আগে ও পরে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ প্রয়োগ:

সাধারণত এ্যাভোকেডো গাছে সেচ দেয়া হয় কিন্তু ইহা দীর্ঘ খড়া সহ্য করতে পারে। ফলের গুণগত মান উন্নয়ন ও ফলন বৃদ্ধির জন্য শুষ্ক মৌসুমে ২/৩ বার সেচ প্রয়োগ করতে হবে।

গাছের অঙ্গ ছাটাই:

গাছের সুন্দর আকার দেয়ার জন্য নীচ থেকে অতিরিক্ত ডাল পালা ছেটে দিয়ে ১-১.৫ মি. উচু ট্রাংক তৈরি করতে হবে। এরপর প্রতিবছর নিয়মিত রোগাক্রান্ত ও অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ডাল ছেটে দিতে হবে। ফলন্ত গাছে অতিরিক্ত ফল ছিড়ে ফেলে দিতে হবে যাতে ফল বড় হতে পারে।

আন্ত পরিচর্যা:

গাছের গোড়া থেকে চতুর্দিকে প্রায় ১ মি. জায়গা সর্বদা পরিস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে। আগাছা দমন করতে হবে। মাঝে মাঝে নিড়ানী দিয়ে মাটি আচড়ায়ে দিতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগবালাই:

সাধারণত বারি অ্যাভোকেডো-১ জাতটিতে কোন রোগ ও পোকামাকড় এর আক্রমণ দেখা যায় না।

ফল সংগ্রহ:

ফল বড় হলে আগস্ট মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে।

ফলন:

কুড়ি বছরের এ্যাভোকেডো গাছে বছরে ১৮৯টি ফল ধরে যার প্রতিটি ফলের ওজন ৫৬২ গ্রাম এবং প্রতি গাছে ১০৬ কেজি এবং ফলন ১০.৬ টন/হে.।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page