Skip to content

রাম্বুতান ফল চাষ

রাম্বুতান ফল চাষ

রাম্বুতান আকর্ষণীয়, অত্যন্ত সুস্বাদু ও রসালো ফল। সাদা, স্বচ্ছ, মিষ্টি স্বাদ ও গন্ধযুক্ত শাঁস এ ফলের ভক্ষণীয় অংশ। গায়ে লাল ও নরম কাঁটা থাকার কারণে এদের লিচু থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখায়।

মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতেই এদের উৎপত্তিস্থল এবং দক্ষিণ চীন, ইন্দোচীন ও ফিলিপাইন পর্যন্ত এটি বিস্তৃত।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহ (যেখানে শীতের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম) রাম্বুতান চাষের জন্য অধিক উপযোগী।

(১) রাম্বুতান ফলের পুষ্টিমান

রাম্বুতান ফল
রাম্বুতান ফল

রাম্বুতান ‘শর্করা’ ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি ফল।

আহার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম রাম্বুতান ফলে জলীয় অংশ ৮২.১%, প্রোটিন ০.৯%, ফ্যাট ০.১%, ০.০৩% আঁশ, ০.০৫% ম্যালিক এসিড, ০.৩১% সাইট্রিক এসিড), ২.৮ গ্রাম গ্লুকোজ, ৩.০ গ্রাম ফ্রুকটোজ, ৯.৯ গ্রাম সুক্রোজ, ২.৮ গ্রাম ফাইবার, ৭০ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি, ১৫ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.১-২.৫ মিলি গ্রাম লৌহ, ১৪০ মিলি গ্রাম পটাসিয়াম, ও ১০ মিলি গ্রাম ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়।

(২) রাম্বুতান ফলের জাত পরিচিতি

ক) বারি রাম্বুতান-১

বিদেশ হতে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত জাতটি ২০১০ সালে বাংলাদেশে চাষাবাদের জন্য ‘বারি রাম্বুতান-১’ নামে অনুমোদন দেয়া হয়।

বারি রাম্বুতান-১
বারি রাম্বুতান-১
  • নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত।
  • গাছ বড় ও ঝোপালো।
  • ফাল্গুন-চৈত্র মাসে গাছে ফুল আসে, চৈত্র-বৈশাখ মাসে ফল ধরে।
  • শ্রাবণ মাসে ফল আহরণ উপযোগী হয়, ফল ডিম্বাকৃতির, আকারে বড় (৫০ গ্রাম)।
  • পাকা ফলের রং আকর্ষণীয় লালচে খয়েরি।
  • ফলের গায়ের কাঁটা (স্পাইনলেট) বেশ লম্বা ও নরম। শাঁস পুরুত্ব, মাংসল, সাদা, নরম, রসালো সুগন্ধযুক্ত এবং মিষ্টি (টিএসএস ১৯%)।
  • বীজ ছোট ও নরম, খাদ্যোপযোগী অংশ ৫৮%।
  • বাংলাদেশের সর্বত্র চাষযোগ্য।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১০-১২ টন।

(৩) রাম্বুতান ফল চাষ পদ্ধতি

ক) জলবায়ু ও মাটি

  • রাম্বুতান উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু পছন্দ করে। রাম্বুতান ফলের গাছ ২২-৩৫০ সে. তাপমাত্রা ও ২০০০ থেকে ৩০০০ মিমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত পছন্দ করে।
  • এঁটেল দোঁআশ মাটি রাম্বুতান চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। তবে ঊর্বর, সুনিষ্কাশিত পলিমাটি ও দোআঁশ মাটিতেও রাম্বুতান সাফল্যজনকভাবে চাষ করা যায়।
  • সুনিষ্কাশিত উচ্চ জৈব পদার্থ সম্বলিত মাটিতে গাছের মূলের বৃদ্ধি ও বিকাশ ভাল হয়।
  • মাটির অম্ল/ক্ষারত্ব (pH ৫.০-৬.৫) রাম্বুতানের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
  • রাম্বুতান স্বল্পমেয়াদী জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারলেও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় গাছ মারা যায়।

খ) বংশ বিস্তার

অঙ্গজ উপায়ে অথবা বীজের মাধ্যমে রাম্বুতানের বংশ বিস্তার হয়ে থাকলেও মাতৃ গুণাগুণ বজায় রাখার জন্য অঙ্গজ উপায়ে বংশ বিস্তার উত্তম।

কুঁড়ি সংযোজন ও গুটিকলম পদ্ধতিতে রাম্বুতানের বংশ বিস্তার করা হয়। ১-২ বৎসর বয়সী শাখা থেকে সুপ্ত কুঁড়ি সংগ্রহ করে ৮-১২ মাস বয়সের রুটস্টক সংযোজন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

এছাড়া গুটি কলম পদ্ধতিতে সফলতার হার বেশি এবং শ্রমসাধ্য। ১০০০-১৫০০ পিপিএম ঘনত্বের আইবিএ ব্যবহার করে গুটি কলমের মাধ্যমেও সফলভাবে রাম্বুতানের বংশ বিস্তার করা যায়।

গ) জমি তৈরি

  1. রাম্বুতানের জন্য সুনিষ্কাশিত উঁচু ও মাঝারী উঁচু ঊর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে।
  2. পর্যায়ক্রমিক কয়েকটি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হবে।
  3. মাদা তৈরির পূর্বে জমি থেকে বহুবর্ষজীবী আগাছা বিশেষ করে উলুঘাস সমূলে অপসারণ করতে হবে।

ঘ) রোপণ পদ্ধতি

সমতল ভূমিতে বর্গাকার কিংবা ষড়ভুজাকার এবং পাহাড়ী জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে কলম রোপণ করতে হবে। কলম রোপণের পর হালকা ও অস্থায়ী ছায়ার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো।

ঙ) রোপণের সময়

মধ্য-সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য-অক্টোবর কলম রোপণের উপযুক্ত সময়।

চ) মাদা তৈরি

  1. উভয় দিকে ৮-১০ মিটার দূরত্বে ১ ⨉ ১ ⨉ ১ মিটার আকারের গর্ত করে উন্মুক্ত অবস্থায় রাখতে হবে।
  2. কলম রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে প্রতি গর্তে ২৫-৩০ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০ গ্রাম এমওপি, ২০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম জিংক সালফেট সার গর্তের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রেখে দিতে হবে।
  3. মাটিতে রসের অভাব থাকলে পানি সেচ দিতে হবে।

ছ) চারা রোপণ

গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর নির্বাচিত চারাটি সোজাভাবে গর্তের মাঝখানে লাগিয়ে কলমের চারদিকের মাটি হাত দিয়ে চেপে ভালভাবে বসিয়ে দিতে হবে এবং খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে যাতে বাতাসে চারার গোড়া নড়ে না যায়।

রোপণের পরপরই পানি সেচ দিতে হবে। এরপর নিয়মিত পানি সেচ ও প্রয়োজনে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

জ) সার প্রয়োগ

বয়স বাড়ার সাথে সাথে গাছের যথাযথ বৃদ্ধি ও কাঙ্খিত ফলনের জন্য সার প্রয়োগ করা আবশ্যক।

বিভিন্ন বয়সের গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সারের পরিমাণ নিম্নরূপ:

গাছের বয়সগাছপ্রতি গোবর সার (কেজি)গাছপ্রতি ইউরিয়া (গ্রাম)গাছপ্রতি টিএসপি (গ্রাম)গাছপ্রতি এমওপি (গ্রাম)
১-২ বছর১০-১৫২০০২৫০১৫০
২-৪ বছর১৫-২০৩০০৪৫০৩০০
৫-৭ বছর২০-২৫৪৫০৭৫০৪৫০
৮-১০ বছর২৫-৩০৭৫০১২০০৬০০
১০-১৫ বছর৩০-৪০১২০০১৫০০৭৫০
১৫ বছরের উর্ধ্বে৪০-৫০১৫০০২০০০১০০০

সার প্রয়োগের নিয়ম:

  1. উল্লিখিত সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  2. প্রথম কিস্তি ফল আহরণের পর (ভাদ্র মাসে), দ্বিতীয় কিস্তি শীতের প্রারম্ভে (কার্তিক মাসে) এবং শেষ কিস্তি গাছে ফল আসার পর (বৈশাখন্ডজ্যৈষ্ঠ মাসে) প্রয়োগ করতে হবে।
  3. প্রয়োজনে সার প্রয়োগের পর সেচ প্রদান করতে হবে।

ঝ) আগাছা দমন

গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমিকে আগাছামুক্ত রাখা প্রয়োজন। বর্ষার শুরুতে ও বর্ষার শেষে কোদাল দ্বারা কুপিয়ে বা চাষ দিয়ে আগাছা দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ঞ) পানি সেচ ও নিষ্কাশন

  • রাম্বুতান গাছ খরা সংবেদনশীল। চারার বৃদ্ধির জন্য শুকনো মৌসুমে ১০-১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে।
  • ফলন্ত গাছের বেলায় সম্পূর্ণ ফুল ফোটা পর্যায়ে একবার, ফল মটর দানার মতো হলে একবার এবং এর ১৫ দিন পর আরও একবার মোট তিনবার সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সার প্রয়োগের পর সেচ দেয়া ভাল।
  • বর্ষার সময় যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে তার জন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • এ ছাড়া ফুল আসার ৬-৮ সপ্তাহ আগে সামান্য পানির কষ্ট/পীড়ন দিলে আগাম ও অধিক ফুল ফুটতে দেখা যায়।

ট) ডাল ও মুকুল ছাঁটাইকরণ

  • রাম্বুতান গাছকে সধারণত লম্বা ও খাড়াভাবে বাড়তে দেখা যায়। তাই প্রথম দিকেই গাছের সঠিকভাবে প্রুনিং করা জরুরি।
  • ফল সংগ্রহের পরপর ফলের বোটা গোড়া থেকে কেটে দিতে হবে তাতে গাছের নতুন কুঁড়িগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
  • মৃত, রোগাক্রান্ত এবং লকলকে ডালপালাগুলো নিয়মিত অপসারণ করতে হবে।
  • কলমের ক্ষেত্রে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রথম ৩-৪ বছর পর্যন্ত মুকুল আসলে তা কেটে দিতে হবে।

ঠ) ফল সংগ্রহ

  • সাধারণত ফল ও স্পাইনলেটের রং লালচে বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হবে।
  • অপরিপক্ক ফলে মিষ্টতা ও অন্যান্য গুণাবলী পরিপক্ক ফলের তুলনায় অনেক কম থাকে।
  • ভাল বাজার মূল্য পাওয়ার জন্য ফল লালচে খয়েরী বর্ণ ধারণ করার ১০-১২ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা ভাল।
  • গাছে ফল অতিরিক্ত পাকিয়ে সংগ্রহ করলে এরিল শুকিয়ে শক্ত হয় এবং ফলের সুগন্ধ ও স্বাদ কমে যায়।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts