সফেদা বাংলাদেশের একটি সুস্বাদু সমৃদ্ধ ফল। বাংলাদেশে সর্বত্রই এ ফল জন্মায় তবে বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় সফেদার চাষ বেশি হয়।
সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে অতি সহজেই বাংলাদেশে সফেদার ব্যাপক চাষ করা সম্ভব।
বিভিন্ন খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিটন ‘এ’ ও ‘সি’ এর একটি ভাল উৎস হচ্ছে সফেদা।
(১) সফেদার জাত পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য
ক) বারি সফেদা-১
‘বারি সফেদা-১’ উচ্চ ফলনশীল ও নিয়মিত ফলধারী জাতটি বাংলাদেশে চাষের জন্য ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়। দেশিয় জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতটি নির্বাচন করা হয়।
- ফল দেখতে গোলাকার চ্যাপ্টা।
- আকারে বেশ বড়।
- প্রতিটি ফলের ওজন ৮০-৯০ গ্রাম।
- ফলের খাদ্যোপযোগী অংশ ৯০-৯৫%।
- ফলে টিএসএস এর পরিমাণ ১৪-১৬%।
- বীজের বর্ণ কালচে তামাটে, ডিম্বাকৃতির, তবে অঙ্কুরোদগমের দিকের মাথাটা কিছুট সরু।
- গাছপ্রতি বাৎসরিক ফলন ১১০-১২০ কেজি।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ২০-২৫ টন।
- কম বেশি সারা বছরই ফল ধরে। তবে ফুল ধরা ও ফল সংগ্রহের প্রাচুর্যতা বিবেচনায় সারা বছরকে দুটি মৌসুমে ভাগ করা যায়- (১) মধ্য-ভাদ্র থেকে মধ্য-বৈশাখ (সেপ্টেম্বর-এপ্রিল) এবং (২) মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-ভাদ্র (এপ্রিল-আগস্ট) মাস।
- প্রধানত চট্টগ্রাম এলাকায় জাতটি ভাল জন্মে। তবে অন্যান্য এলাকাতেও এর চাষ করা যায়।
খ) বারি সফেদা-২
জাতটি দেশিয় জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়।
- ‘বারি সফেদা-২’ উচ্চ ফলনশীল জাতটি বাংলাদেশের মধ্য-অঞ্চলে বিশেষত ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকায় চাষাবাদের জন্য ২০০৩ সালে অবমুক্ত করা হয়। দেশের মধ্য অঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকাতেও এর চাষ করা যেতে পারে।
- সফেদার এ জাতটিতে নিয়মিত পৌষ থেকে বৈশাখ মাস (মধ্য-ডিসেম্বর থেকে মধ্য-এপ্রিল) পর্যন্ত সর্বাধিক ফল সংগ্রহ করা যায়। তবে বছরের অন্য সময়েও কিছু না কিছু ফল পাওয়া যায়।
- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য ফলন পাওয়া যায়।
- ফল দেখতে গোলাকার।
- আকারে মাঝারী।
- প্রতিটি ফলের ওজন ৭০-৮০ গ্রাম।
- পাকা ফলের শাঁস লালচে-বাদামী বর্ণের, মোলায়েম, খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু, টিএসএস ১৮%।
- ফলের খাদ্যোপযোগী অংশ ৮১.০%।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ২০-২২ টন।
গ) বারি সফেদা-৩
ফল প্রদর্শনীর মাধ্যমে সণাক্তকৃত জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০৯ সালে বারি সফেদা-৩ নামে সফেদার নিয়মিত ফলধারী উচ্চ ফলনশীল এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।
- গাছ মাঝারী, মধ্যম খাড়া ও অধিক শাখা প্রশাখা সমৃদ্ধ।
- গাছপ্রতি গড়ে ১৮০০টি ফল ধরে যার ওজন ২০০-২২৫ কেজি।
- হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০-৩৫ টন।
- জাতটি বছরে দুইবার ফল দেয় যা কার্তিক ও মাঘ মাসে আহরণোপযোগী হয়।
- ফল বেশ বড় (১১৭ গ্রাম), গোলাকৃতির ও বাদামী বর্ণের।
- শাঁস নরম, ধূসর বর্ণের, খুব রসালো ও মিষ্টি (গড় ওজন টিএসএস ২৩%) এবং সুগন্ধযুক্ত।
- ফলের ভক্ষণযোগ্য অংশ ৯১%।
- সারাদেশে চাষোপযোগী জাতটি অমৌসুমে দেশি ফলের প্রাপ্যতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
(২) সফেদা ফলের চাষ পদ্ধতি বা সফেদা গাছ চাষ
জমি নির্বাচন: উঁচু নিকাশযুক্ত বেলে দোআঁশ ও দোআাঁশ মাটি সফেদা চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তবে অন্যান্য উঁচু জমিতেও চাষ করা যায়।
কলম উৎপাদন: গ্রাফটিং এর মাধ্যমে সফেদার কলম তৈরি করে নিতে হবে। ‘খিরণী’ গাছের বীজ থেকে উৎপাদিত চারাকে সফেদার ‘রুটস্টক’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কলম রোপণ: বাগান আকারে চাষের জন্য ৬ ⨉ ৬ মিটার হিসেবে রোপণের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ হিসেবে হেক্টরপ্রতি চারা লাগবে ২৭৮টি। চারা লাগানোর ১০-১৫ দিন আগে নিয়ম অনুযায়ী গর্ত তৈরি করে নির্ধারিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
গর্তে সার প্রয়োগ: কলম লাগানোর ১০-১৫ দিন আগে গর্তে সার ও মাটি মিশিয়ে রাখতে হবে। লাগানোর পরে চারায় প্রথম ২-৩ দিন প্রয়োজনমতো পানি দিতে হবে এবং খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সারের নাম | সারের পরিমাণ/গর্ত |
টিএসপি | ২৫০-৩০০ গ্রাম |
এমওপি | ২৪০-২৫০ গ্রাম |
গোবর | ১০-১৫ কেজি |
গাছের বয়স অনুসারে সারের পরিমাণ: নিচে উল্লিখিত পরিমাণ সার সমান তিন কিস্তিতে যথাক্রমে মার্চ, জুন ও সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে প্রয়োগ করতে হবে। গোবর বা কম্পোস্ট সার মার্চ ও সেপ্টেম্বরে দুই কিস্তিতে দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হবে।
সারের নাম | গাছের বয়স ১-৩ বছর | গাছের বয়স ৪-৭ বছর | গাছের বয়স ৮-১০ বছর | গাছের বয়স ১১-১৫ বছর | গাছের বয়স ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে |
গোবর/কম্পোস্ট (কেজি) | ২০ | ২৫ | ৩০ | ৪০ | ৫০ |
ইউরিয়া (গ্রাম) | ১০০-২০০ | ৩০০-৫০০ | ৬০০-৭০০ | ৮০০-৯০০ | ১০০০ |
টিএসপি (গ্রাম) | ২০০ | ৩০০ | ৫০০ | ৭০০ | ৮০০ |
এমপি (গ্রাম) | ১৫০ | ৩০০-৫০০ | ৬০০-৭০০ | ৮০০-৯০০ | ১০০০ |
জিপসাম (গ্রাম) | ৫০ | ১০০ | ২০০ | ৩০০ | ৪০০ |
পানি সেচ: সফেদা গাছ খরা সহ্য করতে পারে। তবে বেশি খরার সময় প্রয়োজনীয় সেচ দিলে ফলন ভাল হয়।
[সূত্র: বিএআরআই]