Skip to content

সাতকরা ফলের চাষ পদ্ধতি

সাতকরা ফলের চাষ পদ্ধতি

সাতকরা (Citrus macroptera) একটি লেবু জাতীয় অপ্রধান ফল। অপ্রধান হলেও সিলেট অঞ্চলে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

কমলালেবু ও লেবুর মত এর রস বা শাঁস খাওয়া হয় না। ফলের খোসা বিভিন্ন ধরনের রান্নায় তরকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খোসার সুগন্ধ রান্নার মান বৃদ্ধি করে থাকে। খোসা দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের আচার তৈরি হয়।

সাতকরা ইংল্যান্ডে রপ্তানি হয়। প্রবাসী সিলেটবাসীরাই এ ফলের সবচেয়ে বড় ভোক্তা।

(১) সাতকরার জাত পরিচিতি

বারি সাতকরা-১:

স্থানীয় জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০৪ সালে বারি সাতকরা-১ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।

বারি সাতকরা-১
বারি সাতকরা-১
  • এটি উচ্চ ফলনশীল নিয়মিত ফলদানকারী জাত।
  • গাছ মাঝারী, মধ্যম ছড়ানো ও মধ্যম ঝোপালো।
  • চৈত্র-বৈশাখ মাসে গাছে ফুল আসে এবং শীতের প্রারম্ভে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) ফল পাকতে শুরু করে।
  • ফল মধ্যম আকারের (৩৩০ গ্রাম) কমলালেবুর মত চ্যাপ্টা।
  • পাকা ফল হালকা হলুদ বর্ণের।
  • বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাসমূহে চাষ উপযোগী।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১০ টন।

(২) সাতকরা ফলের চাষ পদ্ধতি

ক) জলবায়ু ও মাটি

যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয় এমন আর্দ্র ও উঁচু পাহাড়ী অঞ্চলে সাতকরা ভাল জন্মে।

ঊর্বর, গভীর সুনিষ্কাশিত এবং মৃদু অম্লভাবাপন্ন বেলে দোআঁশ মাটি সাতকরা চাষের জন্য উত্তম। এঁটেল মাটির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা কম হওয়ায় সাতকরা চাষের অনুপযোগী।

সাতকরা উৎপাদনের জন্য বার্ষিক ১৫০০-২৫০০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত এবং ২৫-৩০০ সে. গড় তাপমাত্রা উপযোগী। সাতকরা চাষের জন্য মাটির অম্লত্ব মান ৫.৫-৬.০।

খ) বংশ বিস্তার

বীজ এবং অঙ্গজ দুই ভাবেই সাতকরার বংশ বিস্তার হয়। অঙ্গজ উপায়ে জোড় কলম (ভিনিয়ার ও ক্লেফট গ্রাফটিং) ও কুঁড়ি সংযোজন (টি-বাডিং) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

গ) জমি নির্বাচন ও তৈরি

  1. সাতকরার জন্য ঊর্বর, গভীর, সুনিষ্কাশিত এবং মৃদু অম্লভাবাপন্ন বেলে দোআঁশ মাটি সম্বলিত উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে।
  2. তৈরির পূর্বে জমি হতে আগাছা ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় গাছপালা অপসারণ করতে হবে।
  3. সমতল ভূমিতে আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে কোদালের সাহায্যে জমি তৈরি করতে হবে।
  4. পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে ধাপ বা অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকারের বেড তৈরি করে সাতকরার চারা লাগাতে হবে।

ঘ) গর্ত তৈরি, চারা/কলম রোপণ ও পরিচর্যা

  1. রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে উভয় দিকে ৫-৬ মিটার দূরত্বে ৭৫ ⨉ ৭৫ ⨉ ৭৫ সেমি মাপের গর্ত করতে হবে।
  2. প্রতি গর্তে ১৫ কেজি কম্পোস্ট বা পচা গোবর, ৩-৫ কেজি ছাই, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি এবং ২৫০ গ্রাম চুন গর্তের উপরের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে পানি দিতে হবে।
  3. গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে ১ বছর বয়সের নির্বাচিত চারাটি সোজাভাবে লাগিয়ে গোড়ার মাটি সামান্য চেপে দিতে হয় এবং লাগানোর পরপরই খুঁটি ও পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
  4. বৈশাখন্ডজ্যৈষ্ঠ এবং ভাদ্র-আশ্বিন মাস সাতকরার চারা/কলম রোপণের উপযুক্ত সময়।

ঙ) ডাল ছাঁটাই

  1. নতুন রোপণকৃত গাছে আদিজোড় হতে উৎপাদিত কুঁশি ভেঙ্গে দিতে হবে।
  2. গাছটির অবকাঠামো মজবুত করার লক্ষ্যে গোড়া থেকে ১ মিটার উঁচু পর্যন্ত কোন ডালপালা রাখা চলবে না।
  3. এক থেকে দেড় মিটার উপরে বিভিন্ন দিকে ছড়ানো ৪-৫টি শাখা রাখতে হবে যাতে গাছটির সুন্দর একটি কাঠামো তৈরি হয়।
  4. প্রতি বছর ফল সংগ্রহের পর মরা, পোকান্ডমাকড় ও রোগাক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করতে হয়।
  5. ডাল ছাঁটাইয়ের পর কর্তিত স্থানে অবশ্যই বর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে।

চ) সারের পরিমাণ

গাছের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য সময়মতো, সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সাতকরার জন্য প্রতি বছর পচা গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

বয়সভেদে গাছপ্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে দেয়া হলো।

সারগাছের বয়স ১-২ বছরগাছের বয়স ৩-৪ বছরগাছের বয়স ৫-১০ বছরগাছের বয়স ১০ বছরের উর্ধ্বে
গোবর (কেজি)৭-১০১০-১৫২০-২৫২৫-৩০
ইউরিয়া (গ্রাম)১৭৫-২২৫২৭০-৩০০৫০০-৬০০৬০০-৭০০
টিএসপি (গ্রাম)৮০-৯০১৪০-১৭০৪০০-৪৫০৪০০-৪৫০
এমওপি (গ্রাম)১৪০-১৬০৪০০-৫০০৫০০-৫৫০৬০০-৬৮০

ছ) সার প্রয়োগ

সার একেবারে গাছের গোড়ায় না দিয়ে যত দূর পর্যন্ত গাছের ডালপালা বিস্তার লাভ করে সে এলাকায় মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হয়।

উল্লিখিত সার ৩ কিস্তিতে ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি), মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য-জ্যৈষ্ঠ (মে) ও মধ্য-আশ্বিন থেকে মধ্য-কার্তিক (অক্টোবর) মাসে প্রয়োগ করতে হয়।

জ) আগাছা দমন

গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমিকে আগাছামুক্ত রাখা দরকার, বর্ষার শুরুতে ও বর্ষার শেষে হালকাভাবে কোদাল দ্বারা কুপিয়ে বা চাষ দিয়ে আগাছা দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ঝ) সেচ ও নিষ্কাশন

বয়স্ক গাছে খরা মৌসুমে ২-৩টি সেচ দিলে সাতকরার ফলন ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।

গাছের গোড়ায় পানি জমলে মাটি বাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই অতিরিক্ত পানি নালার মাধ্যমে নিষ্কাশন করে দিতে হবে।

ঞ) ফল সংগ্রহ

পরিপক্ক হলে সাতকরা হালকা সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং এর খোসা তুলনামূলকভাবে মসৃণ হয়ে আসে। গাছ হতে ফল সংগ্রহ করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে ফলগুলোতে যাতে আঘাত না লাগে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts