জারবেরা অ্যাসটারেসী পরিবারভুক্ত উচ্চমূল্যের একটি আকর্ষণীয় ফুল। চাহিদার দিক দিয়ে এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে এ ফুলের জুড়ি নেই।
সারা বছরই বাজারে এর চাহিদা থাকে এবং বিভিন্নভাবে এ ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে কাটফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলদানীর জন্য এটি অনন্য। প্রটেকটিভ চাষাবাদের মাধ্যমে উন্নত মানের জারবেরা ফুল সারা বছর পাওয়া যায়।
জারবেরা মালা, পুষ্পস্তবক, বেনী, খোঁপায় এবং মুকুট তৈরিতে এ ফুল ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া এ ফুল চাষের জন্য উপযোগী। উচ্চমূল্যের ফুল ফসলের কারণে জারবেরার চাষ এখন লাভজনক ফসল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে সাধারণত শীতের সময় জারবেরা ফুলের চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও তাপমাত্রা জারবেরা চাষের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য পলিসেডে জারবেরা চাষের মাধ্যমে সারা বছরব্যাপী রোগ-পোকামাকড় মুক্ত ও গুণগতমানের ফুল উৎপাদন করা সম্ভব।
(১) জারবেরা ফুলের বৈশিষ্ট্য
ক) বারি জারবেরা-১
বারি জারবেরা-১ দ্রুত বর্ধনশীল বহুবর্ষজীবী হার্ব জাতীয় উদ্ভিদ।
- গাছ রোমাবৃত (Hairy) এবং ২৫-৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়।
- জারবেরা কান্ডহীন, পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং পাতার কিনারা খাঁজযুক্ত।
- ফুলের রং গাঢ় লাল, কেন্দ্র হালকা সবুজাভ এবং ৯.৫-১০ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট।
- নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জারবেরা সারা বছর চাষ করা যায়, তবে অক্টোবর-নভেম্বর মাস চারা লাগানোর সর্বোত্তম সময়।
- চারা লাগানোর পর থেকে ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফুল আসে।
- প্রতি ঝাড়ে এক বছরে ২০-২৫টির মত ফুল ফোঁটে এবং হেক্টরপ্রতি ফলন ৯-৯.৫ লক্ষ ফুলের স্টিক।
- ফুলের সজীবতা থাকে ৮-৯ দিন।
খ) বারি জারবেরা-২
বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।
- পাতার রং হালকা সবুজাভ এবং গভীর খাঁজযুক্ত।
- গাছ কান্ডহীন, রোমাবৃত এবং ৩০-৩৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়।
- ফুলের রং সাদা এবং ৯-৯.৫ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট।
- প্রতিটি পুষ্পদন্ডের ওজন প্রায় ১৪-১৫ গ্রাম।
- বাংলাদেশের সব অঞ্চলে এ জাতটি চাষ করা যায়।
- নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সারা বছর চারা লাগানো যেতে পারে। তবে শীত মৌসুম অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাস চারা লাগানোর সর্বোত্তম সময়।
- চারা লাগানোর পর থেকে ৮০-৯০ দিনের মধ্যে ফুল আসে।
- প্রতি ঝাড়ে এক বছরে ২২-২৫টির মত ফুল জন্মায় এবং হেক্টরপ্রতি ফলন ৯.৫-১০ লক্ষ ফুলের স্টিক।
(২) জারবেরা ফুল চাষের পদ্ধতি
ক) উপযুক্ত মাটি
সুনিষ্কাশিত, ঊর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। মাটির pH মান ৫.৫ থেকে ৭.০ এর মধ্যে থাকা উচিত।
খ) চারা তৈরি
বীজের মাধ্যমে:
বীজের মাধ্যমে জারবেরার বংশবৃদ্ধি করা যায়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত গাছে মাতৃগাছের সকল গুণাবলি বজায় থাকে না, তবে পদ্ধতিটি সহজ।
ডিভিশন:
মাতৃগাছের ক্লাম্প বিভক্ত করে বংশবৃদ্ধি করা যায়। এজন্য মাঠের সুপ্রতিষ্ঠিত ও পরিপূর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত গাছগুলিকে ছোট ছোট ভাগে ধারালো ছুরি দিয়ে ভাগ করা হয়। উক্ত সাকার গুলির পাতা ও শিকড় হালকা প্রুনিং করে পরবর্তীতে নতুন বেডে লাগানো হয়।
মাইক্রোপ্রোপাগেশন:
বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে উপরের পদ্ধতি দুটি খুব উপযোগী নয়। অল্প সময়ে প্রচুর সংখ্যায় রোগমুক্ত চারা পাওয়ার জন্য টিসুকালচার পদ্ধতিটি উত্তম।
এ জন্য প্রথমে সঠিক জাত নির্বাচন করতে হবে। পরে ঐ গাছের কান্ডের বর্ধিত অগ্রাংশ (growing shoot tips), ফুল কুড়ি (Flower bud), পাতা (Leaf) ইত্যাদিকে এক্সপান্ট (Explants) হিসেবে নিয়ে বার বার সাব-কালচার (Sub-culture) করে অসংখ্য চারা উৎপাদন করা সম্ভব।
গ) জমি তৈরি
জমিতে পরিমাণমতো জৈব সার দিতে হবে। তারপর ৪০-৪৫ সেমি গভীর করে আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি ভাবে পরপর কয়েকটি চাষ দিয়ে জমিটি ঝুরঝুরা (fine tilth) করে তৈরি করতে হবে।
ঘ) বেড তৈরি
- জারবেরার জন্য বেডের উচ্চতা ২০ সেমি এবং প্রশস্ততা ১.০-১.২ মি হলে ভাল হয়।
- জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য দুই বেডের মধ্যবর্তী ৫০ সেমি পানি নিষ্কাশন নালা থাকতে হবে।
- সাধারণত একবার লাগিয়ে পর্যায়ক্রমে ২ বৎসর ফুল আহরণ করা হয় বলে জমি ও বেড তৈরির সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
ঙ) চারা লাগানোর নিয়ম
- বেড তৈরি হলে জাত ও এর বৃদ্ধির ধরন বুঝে সাকারগুলি ৫০ ⨉ ৪০ সেমি দূরে দূরে লাগাতে হয়।
- সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪০ সেমি।
- চারাগুলি এমনভাবে মাটিতে স্থাপন করতে হবে যেন চারার ক্রাউন (Crown or Central growing point) মাটির (Surface level) উপরে থাকে। ক্রাউন মাটির নিচে গেলে গোড়া পচা (Foot rot) রোগ সংক্রমণের সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়।
চ) চারা লাগানোর সময়
নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সারা বছর চারা লাগানো যেতে পারে তবে শীত মৌসুম অর্থ্যাৎ অক্টোবর-নভে¤¦র মাস চারা লাগানোর সর্বোত্তম সময়।
ছ) সার প্রয়োগ
বেড তৈরি হলে চারা লাগানোর কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে বেডের প্রতি ১০ বর্গ মিটারের জন্য ৬০ কেজি পচা জৈব সার, ১.৫ কেজি ইউরিয়া অথবা ১ কেজি এমোনিয়াম সালফেট, ২.৫ কেজি ট্রিপল সুপার ফসফেট, ৫০০ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ ও ৫০ গ্রাম ম্যাগনেশিয়াম সালফেট প্রয়োগ করে ভালভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
জারবেরার বেড তৈরির সময় সারের যে বেসাল ডোজ দেয়া হয় তার পাশাপাশি নিম্নলিখিত মাত্রায় পুষ্টি সরবরাহ করতে হবে।
- চারা রোপণের প্রথম ২-৩ সপ্তাহ গাছে কোন সার প্রয়োগ করা যাবে না।
- জারবেরা বেডের প্রতি ১০ বর্গ মিটার জমিতে গাছের চারপাশে ২৫০ গ্রাম ক্যালসিয়াম এমোনিয়াম নাইট্রেট এবং ১৫০ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ প্রতি ১৫ দিন অন্তর প্রয়োগ করতে হবে।
- ১২ সপ্তাহ পর থেকে গাছে ফুল আসা শুরু হলে এনপিকে (NPK) (১৫:২০:৩০) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম মিশিয়ে ২-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন জমিতে প্রয়োগ করলে ভাল মানের বেশি ফুল পাওয়া যায়।
জ) পানি দেয়া
- জারবেরার শিকড় গভীরে প্রবেশ করে বিধায় বার বার হালকা স্প্রিংকলার (Sprinkler) সেচের পরিবর্তে প্লাবন সেচ (Flood Irrigation) দেয়া উত্তম।
- পানি সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়। কারণ জারবেরা ক্ষেতে জলাবদ্ধতা মাটিবাহিত রোগ সংক্রমণ ত্বরান্বিত করে।
- আবার মাটিতে পানির অভাব হলে গাছ ঢলে (Wilting) পড়ে, সেক্ষেত্রে ফুলের পুষ্পদন্ড ছোট হয়ে যায়।
ঝ) ফুল তোলা
- পূর্ণ বিকশিত জারবেরা ফুলের বাহিরের দু’সারি ডিস্ক ফোরেট পুষ্পদরন্ডের সাথে সমকৌনিক অবস্থানে আসলে ফুল তোলা হয়। কর্তনের সময় পুষ্পদন্ড যথাসম্ভব লম্বা রেখে ফুল সংগ্রহ করা হয়।
- ধারালো চাকু দ্বারা তেরছা ভাবে কেটে খুব সকালে বা বিকালে ফুল তোলা উত্তম।
- ফুল কাটার পর পুষ্পদন্ড এক ইঞ্চি পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পানির সংগে অল্প চিনি এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে দিলে ফুল বেশি দিন সতেজ থাকে।
ঞ) ফুলের সজীবতা বৃদ্ধিকরণ
জারবেরা ফুলের স্টিক ৩% সুক্রোজের সাথে ২০০ পিপিএম হাইড্রোক্সিকুইনোলিন সালফেট এবং ৩০ পিপিএম সাইট্রিক এসিড দ্রবণে রাখার পর ফুলের সজীবতা প্রায় ১২-১৪ দিন পর্যন্ত থাকে।
(৩) জারবেরা চাষে রোগবালাই দমন
ক) গোড়া পচা
এটি একটি মাটিবাহিত রোগ। এ রোগের ফলে গাছের গোড়ার অংশ কাল রং ধারণ করে পচে যায় এবং আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে।
দমন ব্যবস্থা:
রিডোমিল গোল্ড অথবা ডায়থেন এম-৪৫ (০.২%) নামক ছত্রাক নাশক ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া যায় অথবা টপসিন (০.২%) ব্যবহার করেও এ রোগ দমন করা যায়।
খ) ক্রাউন রট
এটি মাটি বাহিত ছত্রাক জনিত রোগ। এ রোগ হলে গাছের গোড়ার অংশ কালো বর্ণ ধারণ করে, পচে যায় এবং আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে।
মাটিতে জলাবদ্ধতা থাকলেও চারা রোপণের প্রারম্ভিক অবস্থায় এ রোগ বেশি দেখা যায়।
দমন ব্যবস্থা:
- বেডে যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেচের পানি না জমে এবং গাছের মুকুট বা পাতা যেন মাটির সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- তাছাড়া টপসিন-এম (০.২০%) অথবা ব্লিটক্স (০.১%) মাটিতে প্রয়োগ করে (প্রতি গাছে ৫০-১০০ মিলি) এ রোগ দমন করা যায়।
গ) পাউডারী মিলডিউ
এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ।
পাতা ও ফুলে সাদা পাউডারের আস্তরণ পড়ে। মারাত্মক আক্রমণে পাতা কুঁকড়ে যায়।
এ রোগ সাধারণত মাঝারী তাপমাত্রা, দীর্ঘ সময় উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় বেশি দেখা যায়।
এ রোগের আক্রমণে গাছ দ্রুত আক্রান্ত হয় এবং শুকিয়ে মারা যায়। বাতাসে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।
দমন ব্যবস্থা:
এ রোগ দমনে আক্রমণের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে থিওভিট (০.২%) বা টিল্ট (০.০৫%) বা সালফোলাক (০.২%) ১০ দিন পর পর দুবার স্প্রে করা প্রয়োজন।
(৪) জারবেরা চাষে পোকা মাকড় ও দমন
জারবেরার ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের মধ্যে মাইট এবং গোলাপের লেদা পোকা উল্লেখযোগ্য। পোকামাকড় আক্রান্ত জারবেরা ও গোলাপের গুণগতমান খারাপ হয়, সর্বোপরি ফলন ও বাজার মূল্য কমে যায়।
ক) সাদা মাছি
সাদা মাছি গাছের বিভিন্ন অংশের রস চুষে মারাত্মক ক্ষতি করে। এ মাছির মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণও হয়।
দমন ব্যবস্থা:
চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর থেকে এসাটাফ ৭৫ (এসপি) ও কুমুলাস-ডিএফ একসংগে মিশিয়ে ২ গ্রাম করে প্রতি লিটার পানিতে দিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করা যেতে পারে।
খ) মাকড় বা মাইট
শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়ায় জারবেরা গাছে মাইটের আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়।
এ পোকা পাতার নিচের রস চুষে খায় এতে পাতার নিচে বাদামী দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে পাতা শুকিয়ে যায়।
ফুলের পাঁপড়িতেও কিছু জাল বোনার মত আবরণ দেখা যায়। ফলে ফুল বিকৃতি হয় এবং বাজার মূল্য কমে যায়।
দমন ব্যবস্থা:
- নিম তেল ৫ মিলি + ৫ মিলি ট্রিক্স ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
- আক্রমণ বেশি হলে ওমাইট বা ভার্টিমেক ১.৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর পাতার উল্টো পৃষ্ঠে ২-৩ বার স্প্রে করলে কার্যকরী ফল পাওয়া যায়।
(৫) টিস্যুকালচার পদ্ধতির মাধ্যমে জারবেরার বংশবৃদ্ধি
অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক রোগমুক্ত জারবেরার চারা তৈরির জন্য টিস্যুকালচার একটি মানসম্মত পদ্ধতি।
টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে গাছের যে কোন অংশ যেমন কান্ড, শীর্ষমুকুল, পাতা বা অফসেট থেকে কাঙ্খিত গাছ তৈরি করা যায়।
জারবেরা ফুলেরকচি বাড (Bud) বা ক্যাপিচুলাম গঝ মিডিয়ামের সাথে ২.০ মিগ্রা. BAP এর মিশ্রণে অধিক সংখ্যক কান্ড বা স্যুট তৈরি করে। অন্য দিকে ১/২ MS মিডিয়ামের সাথে ০.৫ মিগ্রা./লিটার IAA এর মিশ্রণ উল্লেখিত Shoot গুলিতে অধিক পরিমাণে শিকড় গজানো এবং বৃদ্ধির জন্য উপযোগী।
নিয়ন্ত্রিত ইনভিট্রো পরিবেশে সারা বছর জারবেরার চারা তৈরি করা যায়। তবে কোকোডাস্ট মিডিয়াতে জারবেরা ফুলের অণুজীব বা চারা নভেম্বর মাসে ভাল জন্মে। এতে কৃষক আগাম ফুল পায়। ফলে নববর্ষ, একুশে ফেব্রুয়ারি, ভালবাসা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদিতে কৃষক লাভবান হয়।
(৬) জারবেরা ফুলের হাইড্রোপনিক চাষ
হাইড্রোপনিক পদ্ধতি হলো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পানিতে গাচের অত্যাবশ্যক উপাদান সরবরা করে ফসল উৎপাদন।
উন্নত বিশ্বের অনে দেশে যেমন- আমেরিক, ইরোরোপের দেশসমূহ, জাপান, তাইওয়ান, চীন থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং মধ্য-প্রাচ্যের দেশসমূহ বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতির মাধ্যমে জারবেরা ফুল উৎপাদন করে থাকে।।
এ পদ্ধতিতে সারাবছরই পলিটানেল, নেট হাউজ বা গ্রীন হাউজে জারবেরা ফুল উৎপাদন করা সম্ভব এবং হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত জারবেরা ফুল চাষে তেমন কোন রোগ-পোকা মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। এ জন্য হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সাধারণত কোন কীটনাশক বা ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা হয় না।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফুল বিভাগ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে পানির মধ্যে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদানসমূহ সরবরাহ করে জারবের ফুল সাফল্যজনকভাবে উৎপাদন করছে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে যে কোন জাতের জারবেরা ফুলের চাষ করা যায়।
টিস্যু কালচার জারবেরা চারা সাধারণত সেপ্টেম্বর-অটোবর মাসে রোপণ করা হয়। একটি গাছ ২০-২৫ সেমি লম্বা এবং গাছে প্রায় ৮-১০টি ফুল হয়। প্রতিটি ফুল প্রায় ১০ সেমি আকারের হয়।
ফুল ধরা থেকে শুরু করে প্রায় ১৫-২০ দিন ফুলের স্থায়ীত্ব থাকে এবং জারবেরা ফুল ইৎপাদনের জন্য pH ৫.৫-৬.০ এবং EC ১.০-১.৫ dS/m থাকা অবশ্যক।
(৭) জারবেরা গাছের পাতায় GA3 প্রয়োগের মাধ্যমে ফুলের গুণগত মান ও সংখ্যা বৃদ্ধি
বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে উদ্ভিদ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোনের (গ্রোথ হরমোন) ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। এটি উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে। এছাড়া ফুল গাছের ফলন ও ফুলের গুণগত মান বৃদ্ধি করে।
অন্যান্য গ্রোথ হরমোনের মধ্যে GA3 ফুলের গুণগত মান বৃদ্ধি ও দ্রুতসময়ে ফুল উৎপাদনের জন্য বেশি কার্যকর।
জারবেরা পাতায় ১০০ পিপিএম ঘনত্বের GA3 ২ বার প্রয়োগের মাধ্যমে ফুলের কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য গুলো যেমন আগাম ফুল ফোটা, গাছের দৈর্ঘ্য, গাছ প্রতি ফুলের সংখ্যা, বাজারযোগ্য ফুলের স্টিকের সংখ্যা, ফুলের সজীবতা বৃদ্ধি ইত্যাদি অর্জিত হয়।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
চারা গুলোকে ৫০ সেমি. ⨉ ৪০ সেমি দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
হেক্টরপ্রতি জমিতে ৫ টন গোবর, ৫০০ কেজি কোকোডাস্ট, ৩২০ কেজি ইউরিয়া, ৩০০ কেজি এমওপি, ৩৭৫ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি বোরিক এসিড, ১০০ কেজি জিপসাম ও ১২ কেজি জিংক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে।
টিএসপি, এমওপি, কোকোডাস্ট, ফসফরাস, বোরিক এসিড, জিপসাম, জিংক সালপেট বেসাল ডোজ হিসেবে দিতে হবে।
ইউরিয়া সার চারা লাগানোর ৩০ ও ৬০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
গ্রোথ হরমোন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমন দিন বাছাই করতে হবে যেদিন বা যার পরদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম থাকে। এ ক্ষেত্রে লাগানো চারার বয়স যথাক্রমে ২৫, ৫০ দিন হলে ১০০ পিপিএম GA3 এর জলীয় দ্রবণ পাতায় স্প্রে করতে হবে।
[সূত্র: বিএআরআই]