(১) ক্যাকটাস গাছের বংশবিস্তার পদ্ধতি
মা-গাছের মূলে শাখা জন্মে৷ ব্লেড দিয়ে সমান ভাবে সাবধানে কেটে তা আবার অন্য জায়গায় লাগানো যায়। কাটার জন্য ধারালো ব্লেড ব্যাবহার করতে হবে,আর কাটা স্থানে অবস্যই ডায়থেন-এম ৪৫ দিতে হবে,আর চারার জন্য কাটা অংশটির মাঝে ডায়থেন-এম ৪৫ লাগিয়ে ২ দিন পর লাগাতে হবে।
ফ্লাট জোড় কলম পদ্ধতিতে ক্যাকটাসের বংশবৃদ্ধি:
কিছু কিছু ক্যাকটাসে ক্লোরোফিল বা সবুজ কণিকা থাকে না। সেজন্য এ ধরনের ক্যাকটাসে ক্লোরোফিলযুক্ত অন্য জাতের ক্যাকটাসের সাথে জোড় কলম বাঁধলে সহজে বংশবৃদ্ধি করা যায় তথা শোভাময়ী ক্যাকটাসের সৃস্টি হয়। জোড়া লাগানোর পর এ ধরেনের ক্যাকটাস প্রায় ৫-৬ বছর বাঁচে।
- ক্যাকটাসের আদিজোড়ের (রুটষ্টক) বয়স ৫-৬ মাস হলে জোড় কলমের জন্য উপযুক্ত হয়।
- ফ্লাট জোড় কলম পদ্ধতিতে রুটস্টক ও সায়নের মাথা ফ্লাট করে কেটে সায়নের কাটা প্রান্ত রুটস্টকের কাটা প্রান্তে ভালভাবে বসিয়ে রাবার ব্যান্ড বা স্কসটেপ দ্বারা আটকে দিতে হয়। রুটস্টক ও সায়নের সম্মিলন স্থানে (জোড়া) যেন পানি না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।
- জুন-জুলাই মাসে ফ্লাট জোড় কলমে সাফল্যের হার বেশি এবং অধিক পরিমাণে অফসুট উৎপাদিত হয়।
- টবে বা ঝুলানো ঝুড়িতে জন্মানোর জন্য এ ধরনের গ্রাফটেড ক্যাকটাস খুবই উপযোগী।
সহজে ও অল্প সময়ে এ ধরনের শোভাবর্ধক গ্রাফটেড ক্যাকটাস তৈরি করা যায় যা থেকে অধিক মূল্য পাবার সুযোগ আছে এবং এতে করে কৃষক বা নার্সারিম্যান লাভবান হবে।
(২) ক্যাকটাস গাছ লাগানোর নিয়ম
ক) ক্যাকটাস গাছ লাাগানোর জন্য টব/পাত্র নির্বাচন করা
- টবে ক্যাকটাসের জন্য মাটি তৈরি ও চাষের ক্ষেত্রে টবের মাটি তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূলত ক্যাকটাসের চাষে আমাদের বাংলাদেশে কাঠের তৈরি বা মাটির তৈরি টব ব্যবহার করা হয়। এগুলোতে পানি নিষ্কাশনের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা যায়।
- ক্যাকটাসের জন্য খুব বড় পাত্র না-ব্যবহার করাই ভালো। আপনার গাছের থেকে ১-২ ইঞ্চি চওড়া ডায়ামিটারের পাত্র ব্যবহার করুন। সঙ্গে প্লাস্টিক, মাটি বা চিনামাটি সবধরণের পাত্রই ব্যবহার করতে পারেন ক্যাকটাস লাগাতে। তবে মাটির টব সবচেয়ে ভালো। কারণ এই ধরনের মাটিতে পানি তাড়াতাড়ি টেনে যায়।
- পাস্টিকের পাত্র বা ধাতব থেকে মাটির পাত্রই ভালো ক্যাকটাস চাষের জন্য কারণ মাটির পাত্রে পানি ও বাতাস চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত অতি সুক্ষ্য সুক্ষ্য ছিদ্র থাকে। পাত্রকে পরিস্কার ও জীবাণু মুক্ত করে শুকিয়ে নিতে হবে চারা লাগানোর পূর্বে।
- সঠিক মাপের পাত্র নির্বাচনও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ বেশী বড় পাত্র অধিক পরিমাণে আর্দ্রতা ধরে রাখে যা ক্যাকটাস চারার জন্য খুবই ক্ষতিকর আর ছোট পাত্রে ক্যাকটাস চারা ঠিক মতো বাড়তে পারে না।
খ) ক্যাকটাস গাছ লাাগানোর জন্য মাটি তৈরি করা
টবের জন্য বিভিন্ন প্রকার মাটি তৈরি করা হয় এদের মধ্যে মিশ্রণে কিছুটা তফাৎ থাকে। টবে ক্যাকটাসের জন্য মাটি তৈরি অন্যান্য গাছের থেকে অনেকটা আলাদা।
আঠালো ধরনের মাটিতে রাখবেন না ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট। বালি মেশানো ঝরঝরে মাটিতে লাগান এই ধরনের গাছ।
যদি ক্যাকটাস জাতীয় গাছের জন্য মাটি তৈরি করতে হয় তাহলে ২০ ভাগ দোআঁশ মাটি ৩০ ভাগ বালি এবং বাকি ৫০ ভাগ গোবর সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হয়।
নমুনা:
- ক্যাকটাস সাধারণত সয়েল লেস মিডিয়া পছন্দ করে। মানে তাতে মাটি না থাকায় ভালো।
- সাধারণত ৩০% হলুদ বালি, ৩০ % কম্পোস্ট, ১০% কোকোপিট, ২০% নুড়ি, ১০% পার্লাইট ব্যবহার করে মিডিয়া তৈরি করতে পারেন।
- অথবা, ২০% পঁচা পাতা, ৩৫% সিলেকশন বালি, ১৫% কেচো সার, ১৫% ইটের টুকরা (পাই), ১০% কাঠের চিপস, ৫% হাড়ের গুরা, ১০% কাঠ কয়লা ব্যবহার করতে পারেন।
- অথবা, ২০% দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ + ২০% পচা গোবর + ৪০% পচা পাতা+ ২০% বালি + কিছু পরিমাণ ভাঙা হাড়ের গুড়া।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
পঁচা পাতার পরিবর্তে কোক ডাষ্ট অথবা ধানের চিটা ব্যবহার করা যেতে পারে তবে পঁচিয়ে নিতে হবে।
প্রতি এক ফুট সাইজের একটি টবে এক মুঠো হাড়ের গুঁড়ো অথবা দুই চামচ সুপার ফসফেট মিশিয়ে দিতে পারলে ভালো হয়।
জৈব সার তৈরীর পরপরই পাত্রে চারা রোপণ করা উচিত না, অন্তত ১৫দিন পর চারা রোপণ করা উচিত।
কাজ:
বালি মাটির স্বছিদ্রতা রক্ষা করে ও পানি নিষ্কাশন এর সুবিধা করে দেয় জৈব সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং মাটিকে সড়স রাখে। চুন মাটির অম্লত্ব নষ্ট করে আর দোআঁশ মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
প্রয়োগ:
উপড়ে দেয়া নিয়ম গুলো অনুসরন করে প্রথমে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।
এরপর টবের বা কাঠের বাক্স ভর্তি করার আগে টবের নিচের ফুটোয় পাতলা কাগজ দিয়ে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পরিমাণ ইটের গুঁড়ো বা কয়লার গুড়ো দিয়ে এরপর আপনার তৈরি করা মাটি দিতে হবে।
গ) ক্যাকটাস গাছের চারা লাগানো/রোপণ করা
চারা রোপণের উপযুক্ত সময়:
ক্যাকটাস গাছ বছরের যেকেনো সময় রোপণ করা যায় তবে মার্চ-এপ্রিল মাস বেশি উপযুক্ত সময়।
পাত্রে চারা রোপণের পদ্ধতি:
- ক্যাকটাস লাগানোর সময় এর কাঁটার হাত থেকে বাঁচতে হাতে ভারী কাপড় বা গ্লাবস পরে নিতে পারেন। লক্ষ রাখুন, মাটির গভীরতা যাতে খুব বেশি না হয়।
- পাত্রের নিচের এক তৃতীয়াংশ ইটের গুড়া দিয়ে পূর্ণ করতে হবে পানি চলাচলের জন্য, তারপর পাত্রের উপর থেকে ২ সে.মি. ফাকা রেখে মাটি ও জৈব সারের মিশ্রণ দিয়ে পাত্রটি পূর্ণ করতে হবে।
- চারা রোপণের আগে চারার রোগ ও নেমাটোড আক্রান্ত মূল কেটে ফেলতে হবে। মূলের কাটা অংশ সালফার ডাস্ট দিয়ে ট্রিটমেন্ট করে নিতে হবে।
- মেলী বাগ ধ্বংস করার জন্য মিথ্যাইলেটেড স্পিরিট (৫-১০%) ও নিকোটিন (২.৫%) ব্যবহার করা যেতে পারে।
গ) ক্যাকটাস গাছে পানি দেওয়া
- ক্যাকটাস এমনই এক উদ্ভিদ, খরা সহ্য করার ক্ষমতা যার আছে। ক্যাকটাসে খুব বেশি পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না৷ তবে সবটাই নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর৷
- খেয়াল রাখতে হবে ক্যাকটাসের টবের নিচের অংশের ছিদ্র দিয়ে বাড়তি পানি যেন বেরিয়ে যেতে পারে।
- ক্যাকটাসে শীতকালে পানি দেওয়ার দরকার হয় না। তবে যদি মূল শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে তাহলে শীতকালে মাসে একবার পানি দিতে হবে। বর্ষায় ১০-১৫ দিন পরপর ক্যাকটাসে পানি দিন। গরমে সপ্তাহে ১ দিন। তবে পানি দেওয়ার সময় মাটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। উপরের ১-২ ইঞ্চি শোকালেই ফের পানি দেবেন। এতে শিকড় পচে যাওয়া বা গাছ পচে যাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না।
- মাটি শুষ্ক হলেই পানি বাড়তি পরিচর্যার ফলে অনেকেই ক্যাকটাসের টবে এক-দুই দিন পরপরেই পানি দিতে থাকেন। এতে করে ক্যাকটাসের গোড়া থেকে পচন ধরে যায়। খেয়াল রাখতে হবে, ক্যাকটাসের টবে মাটি একেবারে শুকিয়ে গেলে তবেই তাতে পানি দিতে হবে। তার আগে নয়।
পানি ছাড়াও খাবার বলতে দিতে পারেন উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় ১৬টি পুষ্টি-উপাদান (ম্যাক্রো ও মাইক্রো উপাদান) নিয়ে তৈরি তরল খাবার। প্রতি মাসে অল্প পরিমাণে দুবার দিলেই যথেষ্ট। পাওয়া যাবে ব্র্যাক কানন, আগোরা, আড়ংসহ বড় কিছু সুপারশপে।
তবে বিকল্প হিসেবে বাসায় তৈরি করা যায়। ইউরিয়া ৪ গ্রাম,পটাশ ৬ গ্রাম, টি,এস পি ৬ গ্রাম (প্রতি লিটারে পানিতে) ১ মাস অন্তর হালকা করে স্প্রে করা যেতে পারে হবে।
ঘ) ক্যাকটাস গাছে আলো/রোদের ব্যবস্থা করা
- একইসাথে ক্যাকটাসটিকে খোলামেলা আলো ও বাতাসযুক্ত স্থানে রাখতে হবে।
- ক্যাকটাসের জন্য রোদের আলো অপরিহার্য। ক্যাকটাস যত বাড়তে থাকে, ছড়াতে থাকে তার শাখাপ্রশাখা। অনেক সময় একই টবে ক্যাকটাস অনেক বেশি বড় হয়ে গেলে ক্যাকটাসের ছোট অংশ রোদের আলো ঠিকমতো পায় না। সে অংশগুলোকে রোদের আলো দেওয়ার জন্য বেশি করে রোদের দিকে মুখ করে রাখতে হবে।
- ক্যাকটাস গাছ এমন গাছ রাখুন যেখানে সকালের নরম রোদ আসে। সারাদিন রোদ না পেলেও চলবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে বৃষ্টির ছাট গাছে না পড়ে। এতে শিকড় পচে যেতে পারে।
- একটানা রোদ সেও নিতে পারবে না৷ তাদের শুধুমাত্র আলোর দরকার হয়৷ যেহেতু আপনি ঘরে রাখার জন্য যখন গাছটি কিনেছেন তখন সেটিকে ঘরের মধ্যেই রাখুন৷ বেড়ে ওঠার জন্য এসব ক্যাকটাসের খুব বেশি আলোর প্রয়োজন নেই৷ তবে যে ঘরে গাছটি রয়েছে সেটি কখনওই সম্পূর্ন অন্ধকার করে দেবেন না৷
ঙ) ক্যাকটাস গাছের রোগবালাই দমন করা
- নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশ কেটে ফেলা ক্যাকটাসটির কোন অংশ যদি নষ্ট হয়ে যায় বা পচে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় তবে উক অংশটি সযত্নে কেটে বাদ দিয়ে দিতে হবে। নতুবা উক্ত স্থান থেকে ভালো অংশেও পচন ধরে যাবে। ক্যাকটাসের কোন অংশে যদি ফাংগাসের মতো দেখা দেয়, বাদামী বা কালচে হয়ে আসে তবে বুঝতে হবে উক্ত স্থানে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
- পাতার ওপর মাকড়সার জালের মতো হলে ভাববেন গাছটির স্পাইডার মাইটস হয়েছে৷ এই জালের মতো ধুলো পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন৷
- গাছের গোড়ায় ও গাছে ফাঙ্গাসের জন্য ডায়থেন-এম ৪৫ দুই/তিন মাস অন্তর (লিটারে সাড়ে চার গ্রাম) দিয়ে স্প্রে করতে হবে। এটি দিলে গাছ পঁচবে না। যেদিন ব্যবহার করবেন সে দিন অবশ্যই রোদে রাখবেন। ডায়থেন-এম এর সহিত ম্যাগনল (Plant growth regulator) লিটারে হাফ মিলি ব্যবহার করতে পারেন, এতে করে শিকড় ও ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
- পোকা আক্রমণ করলে পানিতে নিম অয়েল মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে পারেন।
চ) প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যাকটাসের টব ও মাটি পরিবর্তন করা
- যে টবটিতে ক্যাকটাস রোপণ করা হবে তাতে তিন ভাগের একভাগ মাটি, একভাগ বালি এবং একভাগ পাতা পচা সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। এক বছর পর পর একই নিয়মে টবের মাটি পরিবর্তন করে দিতে হয়।
- ক্যাকটাসের পট বারবার পরিবর্তন করার দরকার পড়ে না। ২ বছরে একবার করলেই হবে। বসন্তে কাঁটা গাছের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়। তাই প্রতি বছর শীত শেষ হলে মাটির সঙ্গে কম্পোস্ট মেশান। দেখবেন গাছ বাড়ছে তরতর করে।
- ক্যাকটাস বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ছড়াতে থাকে তার শাখাপ্রশাখা এবং সেই সকল শাখাও বড় হতে থাকে। এভাবে ছোট ক্যাকটাসটিই এক সময় বিশাল আকৃতি ধারণ করে। ক্যাকটাস যত বড় হবে, তার জন্য তত বড় ও প্রশস্ত টবের প্রয়োজন হবে। নতুবা অপর্যাপ্ত স্থানের দরুন ক্যাকটাস ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে।
- ক্যাকটাস গাছ রোপন করার সময় একটা কথা মাথায় রাখুন যে এই গাছের ক্ষেত্রে এমন মাটি প্রয়োজন যা খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়৷ আপনি যে টবে এটি রোপন করেছেন সেই টবে মাটি শুকাতে না পারলে আজই টব বদলান৷ নতুন তবে দুই ভাগ বালি এবং পুরানো মাটির এক ভাগ দিয়ে গাছটিকে ফের রোপন করুন৷ সময়ে সময়ে সার দিতে ভুলবেন না৷ এটাই কিন্তু গাছটির খাদ্য৷
[সূত্র: ইন্টারনেট]