Skip to content

চিভ মসলার চাষ

চিভ মসলার চাষ

চিভ (Allium tuberosum) একটি বহুবর্ষজীবী মসলা ফসল। ইহা অ্যামারাইলিডেসি (Amaryllidaceae) পরিবারের অর্ন্তভুক্ত।

ইহার পাতা লিনিয়ার আকৃতির, ফ্লাট, পাতার কিনারা মসৃণ, বাল্ব লম্বা আকৃতির। ইহার ফুলের রং সাদা-পার্পল বর্ণের। পুষ্পমঞ্জুরী অম্বেল প্রকৃতির।

ইহার উৎপত্তিস্থল সাইবেরিয়ান-মঙ্গোলিয়ান-নর্থ চাইনা অঞ্চল।

চিভ স্যুপ ও সালাত তৈরিসহ বিভিন্ন চাইনিজ ডিসে ব্যবহৃত হয়। চিভের পাতা, কন্দ ও অপরিপক্ক ফুল সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

চিভ হজমে সাহায্য করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধী গুণাগুণ বিদ্যমান।

আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করার মাধ্যমে কলার পানামা রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

চিভ-এ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, নায়াসিন, ক্যারোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান।

তুলনামূলকভাবে সিলেট অঞ্চলে চাষাবাদ বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা যেমন: পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী (দূর্গাপুর ও তাহেরপুর) মাগুরা, বগুড়া, লালমনিরহাট ইত্যাদি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।

চিভ পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব এবং সারা বছর চাষ করা যায়।

চিভ এর প্রসার পেঁয়াজের ঘাটতি অনেকটা মেটাতে চিভ এর উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীগণ চিভ এর বেশ কয়েকটি লাইনের উপর গবেষণা চালিয়ে বারি চিভ-১ নামে একটি উচ্চ ফলন শীল জাত উদ্ভাবন করেছে যা সারা দেশে সারা বছর চাষ করা সম্ভব। জাতটি ২০১৭ সালে অবমুক্ত হয়। জাতটির বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদন প্রযুক্তি নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

(১) চিভ মসলার জাত ও বৈশিষ্ট্য

বারি চিভ-১:

পাতাসহ চিভ গাছ
পাতাসহ চিভ গাছ
বারি চিভ-১
বারি চিভ-১
  • এ জাতের গাছের উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার।
  • পাতার দৈঘ্য ২৩-৩০ সেন্টিমিটার।
  • বাল্ব লম্বাকৃতির, বাল্বের দৈঘ্য ১.০-১.৪৫ সেন্টিমিটার।
  • চারা লাগানো থেকে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত ৬৫-৭০ দিন সময় লাগে।
  • ইহা পোকামাকড় ও রোগ সহনশীল।
  • ফলন হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন (গাছ ও পাতাসহ)।

(২) চিভ মসলার চাষ পদ্ধতি

ক) মাটি ও জলবায়ু

  • সেচ ও পানি নিস্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ থেকে দোআঁশ মাটি চিভ চাষের জন্য উপযোগী।
  • মাটির পিএইচ ৬.৩-৬.৮ হলে চিভ এর বৃদ্ধি ভাল হয়।
  • চিভ এর চাষের জন্য বছরে ২,৫০০-৩,০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
  • ১৩-২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা চিভ চাষের জন্য উপযোগী।

খ) জমি তৈরি

  1. জমিতে ৬-৭টি গভীরভাবে (১৫-২০ সেমি) চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে ও পরে মই দিয়ে সমতল করতে হবে।
  2. জমির আগাছা বেছে ফেলতে হবে।
  3. মাটির ঢেলা ভেঙ্গে ঝুরঝুরে ও সমান করে জমি তৈরি করতে হবে।
  4. চিভ চাষের জন্য ৩.০ মিটার ⨉ ১.৫ মিটার আকারের বেড তৈরি করতে হবে এবং বেডের উচ্চতা ১৫-২০ সেন্টিমিটার হতে হবে।
  5. পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য দুই বেডের মাঝে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার প্রশস্থ নালা থাকতে হবে।

গ) সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

ফলন বেশি পেতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার প্রয়োগ মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পায় ও ফলন বেশি হয়। মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের উপর সারের মাত্রা নির্ভর করে।

চিভ এর জন্য প্রতি হেক্টরে নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারমোট পরিমাণশেষ চাষের সময় প্রয়োগপরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে: ১ম কিস্তিপরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে: ২য় কিস্তি
সার গোবর/কম্পোস্ট৫ টনসব
ইউরিয়া১৪০ কেজি৭০ কেজি৩৫ কেজি৩৫ কেজি
টিএসপি২০০ কেজিসব
এমওপি৯০ কেজি৪৫ কেজি২২.৫ কেজি২২.৫ কেজি
জিপসাম৫০ কেজিসব

প্রয়োগ পদ্ধতি:

  1. শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর/কম্পোস্ট, টিএসপি, অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সার জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
  2. বাকি অর্ধেক ইউরিয়া এবং এমওপি সার সমান ভাগে ভাগ করে যথাক্রমে চারা রোপণের
    ২৫ এবং ৫০ দিন পর দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  3. প্রতিবার সার প্রয়োগের পূর্বে জমি আগাছামুক্ত করতে হবে।

ঘ) রোপণ সময়

বাংলাদেশে সারা বছর চিভ চাষ করা সম্ভব। তবে চিভ লাগানোর উপযোগী সময় এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত।

ঙ) বীজ হার ও রোপণ দূরত্ব

প্রতি হেক্টরে ২,০০,০০০-৩,০০,০০০ চারা/ক্লাম্প ডিভিশন (Clump division) লাগে।

প্রতিটি চারা ২০-২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে ১৫-২০ সেন্টিমিটার পরপর লাগাতে হবে।

চ) আন্তঃপরিচর্যা

  • চিভ এর চারা রোপণের পর একটি প্লাবন সেচ দিতে হবে।
  • চারা রোপণ এবং সেচের পর জমিতে প্রচুর আগাছা জন্মাতে পারে। আগাছা জমির রস ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত করে। এই জন্য ২-৩ বার বা ততোধিক নিড়ানী দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
  • জমির ‘জোঁ’ অবস্থা দেখে ২০-২৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।

ছ) ফসল সংগ্রহ

  • চারা লাগানোর ৬৫-৭০ দিন পর থেকে ফসল সংগ্রহ করা যায়। গাছের গোড়া থেকে ২-৩ ইি উপরে পাতা কেটে অথবা পুরো গাছ উঠিয়ে ফসল সংগ্রহ করা যায়।
  • ফসল সংগ্রহের পর বাজারজাতকরণের জন্য পাতা/গাছ ভাল ভাবে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে এবং গাছের শিকড় কেটে ফেলতে হবে।
  • বছরে ৫-৬ বার ফসল সংগ্রহ করা যায়।

জ) ফলন

পাতা ও গাছ সহ প্রতি হেক্টরে ১০-১২ টন ফলন পাওয়া যায়।

(৩) চিভ মসলার চাষে রোগ ও পোকা ব্যবস্থাপনা

চিভ এ রোগের আক্রমণ খুব কম হয়। তবে জমিতে আদ্রতা বেশি থাকলে স্কে্লরোসিয়া জাতীয় ছত্রাকের আক্রমণ হয়। এছাড়া পার্পল লিফ ব্লচ (Purple leaf blotch) নামক রোগের আক্রমণ হতে পারে।

ক) পার্পল লিফ ব্লচ রোগ (Purple leaf Blotch)

  • অলটারনারিয়া পোরি (Alternaria porri) নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে।
  • আক্রান্ত বীজ, বায়ু ও গাছের পরিত্যক্ত অংশের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে।
  • এই রোগের আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে গাছের পাতা বা পুষ্পদন্ডে ছোট ছোট পানি ভেজা দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়। অনুকূলে আবহাওয়ায় পাতা বা পুষ্পদন্দে এক বা একাধিক দাগ পড়ে এবং তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দাগের মধ্যবর্তী অংশ প্রথমে লালচে ও পরবর্তীতে কালো বর্ণ ধারণ করে এবং দাগের কিনারায় বেগুনী রং দেখা যায়। দাগের মধ্যস্থ গাঢ় অংশ ছত্রাকের বীজকনা দিয়ে পূর্ণ থাকে।
  • সাধারণত আক্রান্ত পাতা ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে হলুদ হয়ে মরে যায়।

দমন পদ্ধতি:

  1. সুস্থ, নীরোগ বীজ ও চারা ব্যবহার করতে হবে।
  2. আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  3. রোভরাল বা ভিটাভেক্স-২০০ নামক ছত্রাকনাশক কেজি প্রতি ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
  4. রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম রোভরাল এবং ২ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে। অথবা,
  5. এছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার এমিস্টারটপ মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করলে রোগের প্রকোপ কমে যায়।

খ) থ্রিপস পোকা

এ পোকা মাকড়ের আক্রমণ খুব কম হয়। তবে মাঝে মধ্যে থ্রিপস এর আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। আক্রান্ত পাতায় ক্ষুদ্রাকৃতির বাদামী দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে পাতা শুকিয়ে যায়।

দমন পদ্ধতি:

  1. সাবান মিশ্রিত পানি ৪ গ্রাম/লিটার হারে প্রয়োগ করতে হবে।
  2. কেরাটে/এডমেয়ার/গেইন প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে স্প্রে করে সহজেই এই পোকা দমন করা যায়।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts