দানা ফসল পুষ্টির দিক থেকে শ্বেতসার উপাদানের প্রধান উৎস। এ কারণে পৃথিবীর
সকল দেশে প্রধান খাদ্য ফসল হিসেবে গম, ভুট্টা, চীনা, কাউন ও বার্লি প্রভৃতি দানা
ফসল উৎপাদিত হয়। এ সব ফসল থেকে বেশ কিছু পরিমাণ আমিষ ও খনিজ লবণও পাওয়া যায়।
গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান দানা ফসল। ইদানীং মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও পুষ্টিমানের বিবেচনায় গমের আটা বাংলাদেশে মানুষের খাদ্য তালিকায় উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে।
বর্তমানে উৎপাদন ও খাদ্যের দিক থেকে আমাদের বাংলাদেশে ধানের পরই গমের স্থান। গমের পাশাপাশি ভুট্টা, চীনা, কাউন ও বার্লির বেশ কিছু উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং এসব জাতের আবাদ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিদিন মাথাপিছু ৪৫৪ গ্রাম দানা খাদ্যের দরকার।
নিচে ৭ টি দানা ফসলের নাম ও ছবি উপস্থাপন করা হলো-
(১) গম
গম এর ইংরেজি নাম Wheat, গম মানবসভ্যতার শুরুতে নগরভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভবের প্রধান হেতু ছিল কারণ গম ছিল আদি শস্য উপাদানের মধ্যে একটি যে শস্য বৃহৎ পরিমানে চাষ করা যায় এবং অতিরিক্ত ফসল অনেক দিন পর্যন্ত গুদামজাত করে রাখা যায়। গম দানা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার উপাদান যা গুড়ো করে তৈরি আটা নানারকম রুটি, বিস্কুট, কুকিজ, কেক, পিঠা, পাস্তা, নুডলস, তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিয়ার, ভদকা ইত্যাদি মদ্য এবং জৈবজ্বালানী তৈরি করতেও গম ব্যবহৃত হয়। গমের খড় গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং খড়ের ছাউনির জন্য নির্মাণ সামগ্রী হিসেব ব্যবহার করা হয়।
(২) ট্রিটিক্যালি
ডুরাম গম (Triticum turgidum L.) ও ঘাস জাতীয় রাই (Secale cereale L.) এর কৃত্রিম সংকরায়ণ ও নানাবিধ বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সৃষ্ট একটি নতুন ফসলের নাম ট্রিটিক্যালি। একে মনুষ্য সৃষ্ট ফসল (Man-made crop) বলা হয়।
(৩) ভুট্টা
ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছ। শুধু পশু, মুরগির খামার ও মাছের চাহিদা মিটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন ভুট্টা দানা প্রয়োজন। বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে। জুমচাষেও ভুট্টার আবাদ হয়। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে।
(৪) বেবী কর্ণ
বেবিকর্ন বা কচি ভুট্টা এক ধরনের উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা। এই জাতের ভুট্টা কচি অবস্থায় সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রেস্টুরেন্টে, পাঁচতারা হোটেলে, ফাষ্টফুড এমনকি বাড়িতেও খাবারে বেবিকর্ন ব্যবহার করা হয় | উৎপাদিত ভুট্টা থেকে এই ভুট্টার চাষাবাদ ও বীজ সম্পূর্ণ আলাদা। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ব্যাপকভাবে বেবিকর্নের ব্যবহার হচ্ছে। এটি সাধারণত সবজি ও সালাদে ব্যবহৃত হয়। অভিজাত চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোয় বেবি কর্ণ স্যুপ একটি জনপ্রিয় খাবার। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় বেবি কর্ণ অত্যন্ত জনপ্রিয় খাদ্য। বেবি কর্নের গাছ সবুজ থাকা অবস্থায় সংগ্রহ করায় এর কান্ড ও পাতা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বেবি কর্ণ গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, রসালো, দূষিত পদার্থমুক্ত এবং যে কোনো পর্যায়ে প্রাণীদের খাওয়ানো যায় ফলে গরুর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
(৫) চীনা
বর্তমানে বাংলাদেশে অপ্রধান ফসল হিসেবে চীনার চাষ করা হয়ে থাকে। অনুর্বর মাটিতে ও চরাঞ্চলে এ ফসলটি বেশি চাষ হয়ে থাকে। খরা বা বন্যার পর কৃষি উৎপাদন পুনর্বাসন কার্যক্রমে চীনা যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে। চীনা দ্বারা খিচুড়ি, পায়েশ, মোয়া, নাড়ু ও পিঠা তৈরি করা যায়। এই ফসল দেখতে ধানের মতো দেখতে হলেও ধানের চেয়ে সেচ কম লাগে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও বেশি পুষ্টিকর।
(৬) কাউন
ছোট দানা বিশিষ্ট এই শস্যটি যেকোনো দানাদার খাদ্য উপাদানের চাইতে কাউনের চালে আঁশ অনেক বেশি থাকে। চাল বা গমের মতো এই দানায় শর্করা নেই। পুষ্টিবিদরা কাউন চালকে সুপারফুড হিসেবে পরামর্শ দেন। যার জন্য স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ খুব সহজেই কাউন চালকে বেছে নেন।
(৭) বার্লি
বার্লি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব খাদ্যশস্যের মধ্যে অন্যতম। উচ্চতর ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বার্লি। এটি উচ্চ ফাইবারযুক্ত, গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ। অবশ্য বার্লিতে সামান্য চর্বি থাকলেও কোলেস্টেরল মুক্ত। বার্লি খাদ্যআঁশের একটি দুর্দান্ত উৎস। এতে দ্রবণীয়-অদ্রবণীয় উভয় খাদ্যআঁশ বিদ্যমান।
[সূত্র: বিএআরআই]