(১) অল্টারনেট ফারো সেচ পদ্ধতি কী ও কেন?
শীতকালে সমগ্র বাংলাদেশে নানা ধরনের সবজি চাষ হয়। তন্মধ্যে টমেটো ও আলু হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বাণিজ্যিক সবজি ফসল যার দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
টমেটো ও আলুতে পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রবি মৌসুমে সেচ দিলে এদের ফলন আড়াই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায় কিন্তু এ মৌসুমে দেশের অধিকাংশ এলাকায় সেচের পানির সংকট দেখা দেয়। পানির সুষ্ঠু বিতরণ ব্যবস্থা না থাকায় পানির অপচয় বেড়ে যায় এবং সেচ এলাকাও কমে যায়। তাই অল্টারনেট ফারো সেচ পদ্ধতিতে ফসলে পানি প্রয়োগ করে পানির ব্যবহার দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং সেইসাথে পর্যাপ্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।
অল্টারনেট ফারো সেচ পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে প্রচলিত সেচ পদ্ধতির চেয়ে অধিকতর সহজ ও সময় সাশ্রয়ী। কৃষি কাজে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেচ পানি সরবরাহ পদ্ধতি সীমিত। উন্নত ও সহজলভ্য সেচ পদ্ধতির দ্বারা পানির সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করার সাথে সাথে ফসলের উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি করা যায়।
উক্ত সেচ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- অল্টারনেট ফারো সেচ হলো এমন একটি সেচ পদ্ধতি যার মাধ্যমে প্রতি সেচের সময় একটি ফারো অন্তর অপর ফারোতে পানি সরবরাহ করা হয়।
- দুই ফারোর মধ্যবর্তী ফারো শুষ্ক থাকে যেখানে পরবর্তী সেচের সময় পানি সরবরাহ করা হয় এবং পূর্বের সেচকৃত ফারোগুলো পরবর্তী সেচের সময় শুষ্ক রাখা হয়।
- উঁচু বেডে সারিতে লাগানো ফসল যেমন: টমেটো, আলু ও ভুট্টা ইত্যাদি ফসল উৎপাদনে এই সেচ ব্যবস্থা উপযুক্ত।
- চারা লাগানোর পর প্রাথমিক পর্যায়ে অল্টারনেট ফারো সেচ পদ্ধতিতে টমেটো ও আলু চাষ (১০-১২ দিন) প্রতি ২-৩ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে। পরবর্তীতে প্রতি ১২-১৫ দিন অন্তর অল্টারনেট ফারো পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
উক্ত সেচ পদ্ধতির সুবিধাসমূহ:
- এই পদ্ধতিতে ফসলের ফলনের তেমন কোন ক্ষতি না করে প্রচলিত ফারো বা প্লাবন সেচ পদ্ধতির চেয়ে শতকরা প্রায় ৩০-৩৫% পানি সাশ্রয় হয়।
- এই পদ্ধতি সারিতে লাগানো ফসল যেমন: টমেটো, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সূর্যমুখী ও ভুট্টা ইত্যাদি উৎপাদনে খুবই উপযুক্ত।
- এই পদ্ধতিতে ফলের গুণগত মান প্রচলিত সেচ পদ্ধতির চেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
- এই পদ্ধতিতে কম পানি ব্যবহার করে মুনাফা প্রচলিত সেচ পদ্ধতিরে চেয়ে শতকরা প্রায় ৫-১০ ভাগ বেশি পাওয়া যায়।
- পানির ঘাটতিজনিত কারণে ফসলের সংকটকাল পর্যায়ে এই প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
- খরাপ্রবণ এলাকায় ফসল উৎপাদনে যেখানে পানির প্রাপ্যতা সীমিত, সেসব এলাকায় সেচের পানি বিতরণের ক্ষেত্রে এটি একটি সহজতর সময়োপযোগী কৃষক বান্ধব সেচ পদ্ধতি।
(২) অল্টারনেট ফারো সেচ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ
চারা রোপণের সময় ও পদ্ধতি:
- শীতকালে মধ্য-কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ (নভেম্বর ও মধ্য-ডিসেম্বর) পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়।
- শীতকালে চারার বয়স সাধারণত ৩০-৩৫ দিনের হয়।
- প্রতি ফারোর কেন্দ্র থেকে অপর ফারোর কেন্দ্র দূরত্ব ৬০ সেমি এবং চারা থেকে অপর চারার দূরত্ব ৪০ সেমি হয়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি:
সারের নাম | পরিমাণ (কেজি/হেক্টর) | প্রয়োগের সময় |
ইউরিয়া ১ম উপরি প্রয়োগ | ১৫০ কেজি-১৮০ কেজি | চারা লাগানোর ১০-১৫ দিনের মধ্যে |
ইউরিয়া ২য় উপরি প্রয়োগ | ১৫০ কেজি-১৮০ কেজি | চারা লাগানোর ২৫-৩০ দিনের মধ্যে |
ইউরিয়া ৩য় উপরি প্রয়োগ | ১৫০ কেজি-১৮০ কেজি | চারা লাগানোর ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে |
টি এস পি | ২৫০- ৩৫০ কেজি | বেসার হিসাবে জমি তৈরির শেষ চাষের সময় |
এমওপি | ১০০ কেজি | জমি তৈরির শেষ চাষের সময় বেসার হিসাবে প্রয়োগ |
এমওপি ১ম উপরি প্রয়োগ | ৮০ কেজি | চারা লাগানোর ২৫-৩০ দিনের মধ্যে |
এমওপি ২য় উপরি প্রয়োগ | ৮০ কেজি | চারা লাগানোর ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে |
জিপসাম | ১২০ কেজি | জমি তৈরির সময় |
জিংক সালফেট | ২.৫-৩ কেজি | জমি তৈরির সময় |
বরিক এসিড | ১২-১৫ কেজি | জমি তৈরির সময় |
গোবর | ৫০০০ কেজি | জমি তৈরির সময় |
(৩) অল্টারনেট ফারো সেচ পদ্ধতিতে আলু চাষ
বপনের সময় ও পদ্ধতি:
- মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত আলুর বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
- বপনের সময় প্রতি ফারোর কেন্দ্র হতে পার্শ্ববর্তী ফারো এর কেন্দ্রের দূরত্ব ৬০ সেমি এবং এক গাছ থেকে পার্শ্ববর্তী গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি রাখা হয়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি:
সারের নাম | পরিমাণ (কেজি/হেক্টর) | প্রয়োগের সময় |
ইউরিয়া | ২২০-২৫০ | ১/২ ভাগ ইউরিয়া জমি তৈরির সময় এবং বাকি অর্ধেক বপনের ২৫-৩০ দিন পর সাইড ড্রেসিং করে |
টি এস পি | ১২০-১৫০ | জমি তৈরির সময় |
এমওপি | ২০০-২৪০ | ১/২ ভাগ ইউরিয়া জমি তৈরির সময় এবং বাকি অর্ধেক বপনের ২৫-৩০ দিন পর সাইড ড্রেসিং করে |
জিপসাম | ৮০-১০০ | জমি তৈরির সময় |
জিংক সালফেট | ৮-১০ | জমি তৈরির সময় |
বরিক এসিড | ৮-১০ | জমি তৈরির সময় |
গোবর | ৫০০০ | জমি তৈরির সময় |
[সূত্র: বিএআরআই]