সারা বৎসরব্যাপী উৎপাদিত সবজি ফসলের মধ্যে করলা একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি হিসেবে পরিচিত। করলায় খাদ্যমান, প্রোটিন, খনিজ এবং ভিটামিন অধিক পরিমাণ পাওয়া যায়।
করলা সাধারণত নিষ্কাশনযুক্ত মাটিতে ভাল হয়। একদিকে যেমন মাটিতে রসের ঘাটতি হলে ভাল ফলন দেয় না, তেমনি জলাবদ্ধতাও সহ্য করতে পারে না। তাই সুষ্ঠ সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনার অভাবে করলা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
করলা সাধারণত দিনের তাপমাত্রা ২৪-২৬০ সে. থাকলে ভাল ফলন দেয়। আমাদের বাংলাদেশের কৃষকেরা সাধারণত করলা চাষে সেচ প্রয়োগ বা অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে না। সে কারণে গাছের বৃদ্ধি যথাযথ না হওয়ায় ফলন কমে যায়।
তাই সময়মতো প্রয়োজনীয় পরিমাণ সেচ প্রয়োগ ও মালচ্ ব্যবহার করে অধিক ফলন যেমন পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি পানির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে অধিক মুনাফাও অর্জন করা সম্ভব।
নিম্নে করলা চাষে সেচ ও মালচ্ প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
বপনের সময় এবং পদ্ধতি:
করলা চাষের জন্য বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি উপযোগী। করলা সাধারণত মধ্য-জানুয়ারি থেকে মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে চাষের উপযোগী। সাধারণত উঁচু বেডে নির্দিষ্ট দূরত্বে মাদায় এর বীজ বপন করতে হয়।
সারের ব্যবহার:
করলা চাষের জন্য নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া | ১৭০-১৭৫ কেজি/হেক্টর |
টি এস পি | ১৭৫-১৮০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ১৫০-১৫৫ কেজি/হেক্টর |
জিঙ্ক সালফেট | ১২-১৫ কেজি/হেক্টর |
বরিক এসিড | ৪-১০ কেজি/হেক্টর |
গোবর | ২০-২৫ টন/হেক্টর |
সেচ প্রয়োগ/পদ্ধতি:
গাছের চাহিদা মোতাবেক মাটিতে পানি সরবরাহ ভাল ফলনের পূর্বশর্ত। মাটির রস সংরক্ষণের জন্য মাটিতে পরিমাণমতো মাল্চ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
করলা চাষে খরিফ মৌসুমে প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয়। তবে ফুল আসা এবং ফল ধরার পর্যায়ে যদি বৃষ্টিপাত হয় তখন পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
রবি মৌসুমে মাটিতে পরিমাণমতো রস না থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চারা গজানোর ১২-১৫ দিন পরপর রিং বেসিন পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে করলা উৎপাদনের জন্য প্রায় ১৮০-২০০ মিমি পানির প্রয়োজন হয়।
মালচ্ প্রয়োগ/পদ্ধতি:
বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে যখন গাছপালার গোড়া, সবজি ক্ষেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেয়া হয় তখন তাকে বলে মালচ্। আর এ পদ্ধতিটি কে বলে মালচিং।
ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফসল ক্ষেতের পানি সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রুত উড়ে যায় না। ফলে জমিতে রসের ঘাটতি হয় না এবং সেচ লাগে অনেক কম। মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ২৫ ভাগ আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
মালচিং করার জন্য যেসব মালচ্ উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো জৈব ও অজৈব পদার্থ। উপাদানগুলো হলো-ধান বা গমের খড়, কচুরিপানা, গাছের পাতা, শুকনা ঘাস, কম্পোস্ট, ভালোভাবে পচানো রান্নাঘরের আবর্জনা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
গাছের গোড়া, সবজির বেড এবং ফলবাগানে গাছের গোড়া হতে এক থেকে দু’ইঞ্চি (২.৫০-৫.০ সে.মি) দূরে বিভিন্ন ধরনের মালচ্ ব্যবহার করা যেতে পারে। মালচিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদার্থ অবশ্যই ৫ সেন্টিমিটার (২ইঞ্চি) এর বেশি পুরু করে দেয়া ঠিক নয়।
উল্লেখ্য যে, মালচিং পদার্থের পুরুত্ব বেশি হলে তা গাছপালার অনাকাঙ্খিত মূল গজাতে সহায়তা করবে। এমনকি সঠিক মালচ্ প্রয়োগে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণও রোধ করা যায়।
শীতকালে মালচ্ ব্যবহার করলে মাটিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব হয় এবং গরমকালে মাটি ঠান্ডা থাকে, এমনকি বেশ কিছু পোকামাকড়ের আক্রমণও রোধ করা যায়।
সবচেয়ে বড় কথা মালচিং প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পানি লাগে অনেক কম। সেচ খরচ বাঁচে, লাভ হয় বেশি।
সেচ ও মালচ্ প্রয়োগে ফলনের প্রভাব:
গাছের সুষ্ঠ বৃদ্ধি ও ফলনের জন্য পরিমিত সেচ প্রয়োগ এবং মাটির রস বজায় রাখার জন্য মাল্চ অপরিহার্য। শুষ্ক মৌসুমে চারা গজানোর ১৪ দিন পর পর মাল্চসহ গাছের গোড়ায় পরিমিত সেচ প্রয়োগ করলে করলার ফলন অধিকতর বৃদ্ধি পায়। এই পদ্ধতিতে করলা চাষ করলে প্রতি হেক্টরে ১৩-১৫ টন ফলন পাওয়া করা সম্ভব।
পরিমাণমতো মাল্চ ও সেচ প্রয়োগের ফলে মৌসুমে ২২০-২৬০ মিমি পানি ব্যবহারের মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের অনুপাত ২.৪ঃ১-৩ঃ১ হয় এবং প্রতি হেক্টরে নীট মুনাফা ৭০,০০০-৭৫,০০০ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ) অর্জন করা সম্ভব।
[সূত্র: বিএআরআই]