Skip to content

লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল চাষে সেচ পদ্ধতি

লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল চাষে সেচ পদ্ধতি

(১) বেড ও ফারো (নালা) সেচ পদ্ধতিতে লবণাক্ত এলাকায় ফসল চাষ

বাংলাদেশের দক্ষিণের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত অর্ধেকের বেশি কম-বেশি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। বছরের বেশিরভাগ সময় এ সকল জমির অধিকাংশই থাকে জলাবদ্ধ, আবার শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় সেচযোগ্য স্বাদু পানির তীব্র সংকট। ফলে দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে দক্ষিণাঞ্চলে ফসলের নিবীড়তা ও ফলন উভয়ই অনেক কম, যা অত্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রতিবন্ধক।

অতঃপর, এ অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নের জন্য যেমন প্রয়োজন লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত, তেমনি প্রয়োজন উন্নত পানি ও মাটির ব্যবস্থাপনা।

সীমিত সেচযোগ্য পানির সঠিক ও বুদ্ধিমান প্রয়োগে লবণাক্ত এলাকায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং সেইসাথে বাড়ানো সম্ভব এই অঞ্চলের ফসল আবাদের ব্যাপকতা।

বেড ও ফারো (নালা) হলো এমন একটি সহজ সেচ ব্যবস্থা যেটি প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অনেক পানি সাশ্রয়ী এবং লাভজনক।

ক) বৈশিষ্ট্যসমূহ

বেড ও ফারো সেচ পদ্ধতিতে লবণাক্ত এলাকায় টমেটো চাষ
বেড ও ফারো সেচ পদ্ধতিতে লবণাক্ত এলাকায় টমেটো চাষ
  • এ পদ্ধতিতে ১৫-২০ সেমি উচ্চতায় বেডে ফসলের বীজ বপন/ চারা রোপণ করার পর জমিতে মালচ (খড় বা পাতার আস্তরণ) প্রয়োগ করতে হয়।
  • পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে একটি ফারো (নালা) রাখতে হয় যেটি সেচ প্রয়োগ এবং/অথবা অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • বেড ও ফারো পদ্ধতিতে প্রায় সব ধরনের ফসলই চাষ করা সম্ভব, তবে সারিতে বা পীটে রোপণযোগ্য সবজি জাতীয় ফসল (যেমন- টমেটো, বেগুন, তরমুজ, কুমড়া, ইত্যাদি) বেশি কার্যকরী।
  • বেড ও ফারো পদ্ধতিতে সরাসরি নালা দিয়ে অথবা ড্রিপ/হুস পাইপের মাধ্যমে উভয়ভাবেই সেচের পানি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

খ) সুবিধাসমূহ

বেড ও ফারো সেচ পদ্ধতিতে লবণাক্ত এলাকায় শশা ও তরমুজ চাষ
বেড ও ফারো সেচ পদ্ধতিতে লবণাক্ত এলাকায় শশা ও তরমুজ চাষ
  • ফসল উৎপাদনে এ পদ্ধতির ব্যবহারে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ কম পানি লাগে, অপরদিকে শতকরা প্রায় ২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়।
  • বপন/রোপণের সময় শতকরা প্রায় ২০-৩৫ ভাগ বীজ কম লাগে।
  • বেডে ফসল চাষ সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমাতে সক্ষম।
  • এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল কম আগাছার সংক্রমণ। নির্দিষ্ট দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে চারা লাগানোতে এবং সারির মাঝখানে ফাঁকা জায়গা থাকায় আগাছা দমন (হাত দিয়ে বা মেকানিক্যাল) সহজতর হয়।
  • গাছপ্রতি আলো-বাতাস পানি ও সারের বণ্টন সুষম হওয়ায় গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়, রোগের আক্রমণ কম হয় এবং বীজ/দানা/ফলের আকার সুঠাম হয়।
  • ফসলের লজিং (ঢলে পড়া) কম হয়।
  • গাছের গোড়ায় লবণাক্ততা হ্রাস পায়।
  • পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না ফলে এ পদ্ধতিতে পানিতে নাজুক ফসল চাষ সুবিধাজনক।
See also  স্প্রিংকলার সেচ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ও রসুন চাষ

(২) লবণাক্ত অঞ্চলে রবি ফসলে স্বাদু ও লবণাক্ত পানির সংযোজক ব্যবহার

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা কৃষির জন্য বড় সমস্যা। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাটি ও পানির লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও বৈরি পরিবেশ ইত্যাদি কৃষি উৎপাদনকে ক্রমান্বয়ে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

রবি মৌসুমে স্বাদু পানির অভাবে এবং লবণাক্ততার কারণে অধিকাংশ জমি পতিত থাকে ফলে কৃষকেরা রবিশস্য জন্মাতে পারে না। কিছু কিছু এলাকায় নালা, পুকুর বা ডোবা থাকলেও উন্নত সেচ পদ্ধতির অভাবে ফসলে পানি প্রয়োগ করা সম্ভবপর হয় না বা প্রচলিত পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করে থাকলেও আশানুরূপ ফসল ফলানো সম্ভব হয় না।

প্রতিকূল পরিবেশের মাঝে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে উন্নত সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অধিক পরিমাণ ফসল ফলানো সম্ভব।

স্বাদু ও লবণাক্ত পানির সংযোজক ব্যবহারে ফলন
স্বাদু ও লবণাক্ত পানির সংযোজক ব্যবহারে ফলন

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাটির লবণাক্ততা প্রায় এক ডিএস/মি এর নীচে নেমে আসে এবং নভেম্বর থেকে লবণাক্ততা বাড়তে থাকে যা মার্চ কিংবা এপ্রিল মাসে ১২ ডিএস/মি এর চেয়ে বেশি হয়। ফলে লবণাক্ত অঞ্চলে রবি ফসলে স্বাদু ও লবণাক্ত পানির সংযোজক ব্যবহারের ফলে পানির উৎপাদনশীলতা ও ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো সম্ভব।

ক) বৈশিষ্ট্যসমূহ

  • ফসলের সংবেদনশীল পর্যায়গুলোতে পরিমিত ভূ-গর্ভস্থ মিঠা পানি প্রাথমিক পর্যায়ে ও খালের/নালা মাঝারি মানের লবণাক্ত পানি পরবর্তী পর্যায়ে সেচ দেওয়া হয়।
  • ২.৮-৪.৩ ডিএস/মি মাত্রা ভূ-গর্ভস্থ পানি ফসলের প্রাথমিক পর্যায়ে সেচের জন্য উপযোগী।
  • ৪.৬-৬.৪ ডিএস/মি মাত্রায় লবণাক্ত খালের/নালা পানি ফসলের মাঝামাঝি বা শেষ পর্যায়ে জমিতে সেচ প্রয়োগ করা যায়। এ ক্ষেত্রে ফসলের ফলনের খুব একটা তারতম্য হয় না।
  • উপকূলীয় অঞ্চলের পতিত জমিতে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করে কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
  • উপকূলীয় এলাকায় গম, সরিষা, ভুট্টাসহ অধিকাংশ রবি ফসলের ক্ষেত্রে স্বাদু ও লবণাক্ত পানির সংযোজক ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ প্রয়োগ অত্যন্ত উপযোগী।

খ) সুবিধাসমূহ

  • লবণাক্ত এলাকায় গম, সরিষা, ভুট্টাসহ অধিকাংশ রবি ফসলের ক্ষেত্রে স্বাদু ও লবণাক্ত পানির সংযোজক ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ প্রয়োগ অত্যন্ত উপযোগী।
  • ফসলের মাঝামাঝি বা শেষ পর্যায়ে ৪.৬-৬.৪ ডিএস/মি মাত্রার লবণাক্ত খালের/নদীর পানি ফসলের চাহিদা
  • অনুযায়ী সরবরাহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফসলের ফলনের তেমন কোন ক্ষতি হয় না।
  • মাঝারি মাত্রার লবণাক্ত খালের/নালার পানি ফসল উৎপাদনে সেচের পানির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় অধিক রবি ফসল উৎপাদন সম্ভব। ফলে
  • ফসলের নিবীড়তা বাড়ার সাথে সাথে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
See also  পানি সেচ কাকে বলে? পানি সেচের প্রয়োজনীয়তা কি? সেচের পানির মূল উৎস কোনটি?

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts