ভুট্টা একটি উচ্চ ফলনশীল দানাদার শস্য। বাংলাশের চাল গমের পরই তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফসল হলো ভুট্টা। বিশ্বব্যাপী মানব ও পশু সম্পদের পুষ্টি উপাদান হিসেবে ভুট্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
পরিবেশের প্রতিকূল অবস্থায় পানির সীমাবদ্ধতার কারণে টেকসই ও সবল ভুট্টা বীজ উৎপাদনের প্রভাব ফেলছে। যথাযথ সেচের অভাবে বীজের পূর্ণতা, আকার আকৃতি ও গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। ফলে বীজের গুণগতমানের কারণে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে।
হাইব্রিড ভুট্টার বীজের প্রাণশক্তির কার্যকারিতা, গুণগতমান ও আশানুরূপ ফসল বজায় রাখার জন্য পরিমিত সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক।
নিম্নে হাইব্রিড ভুট্টার গুণগত মানের বীজ উৎপাদনের জন্য সেচ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
বপনের সময় ও পদ্ধতি:
বাংলাদেশে সারা বছরই ভুট্টা চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে চাষ করলে শতকরা প্রায় ২০-৩০ ভাগ বেশি ফলন পাওয়া যায়।
রবি মৌসুমে অর্থাৎ মধ্য কার্তিক হতে অগ্রহায়ণের শেষ (নভেম্বরের শুরু হতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি) পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
যদি অঙ্কুরোদগমের হার শতকরা ৯০ বা তার উপরে হয় তাহলে একর প্রতি ৭-৮ কেজি ভুট্টা বীজ লাগবে।
বীজ সারিতে বপন করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২০ সেমি।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি:
ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হল।
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
ইউরিয়া | ১৭২-৩১২ কেজি |
টিএসপি | ১৬৮-২১৬ কেজি |
এমওপি | ৯৬-১৪৪ কেজি |
জিপসাম | ১৪৪-১৬৮ কেজি |
জিংক সালফেট | ১০-১৫ কেজি |
বরিক এসিড | ৫-৭ কেজি |
গোবর | ৪-৬ টন |
জমি তৈরির শেষ চাষ ও মই দেওয়ার আগে অনুমোদিত ইউরিয়ার এক তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে চাষ দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
প্রথম কিস্তি বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানোর ৪০-৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত চারা তুলতে হবে এবং জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
ভুট্টা চাষের অন্যান্য পরিচর্যা প্রচলিত উন্নত পদ্ধতির মতোই অনুসরণ করতে হবে।
সেচ প্রয়োগ/পদ্ধতি:
- ভুট্টায় আশানুরূপ ফলন পেতে হলে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এলাকাভেদে ৩ থেকে ৪টি সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক।
- মাটির প্রকারভেদে নিয়ন্ত্রিত প্লাবন প্রচলিত ফারো বা অল্টারনেট ফারো বা স্প্রিংলার পদ্ধতিতে সেচ দেয়া যেতে পারে।
- বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে (৪-৬ পাতা পর্যায়) প্রথম সেচ দিতে হবে।
- বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে (৮-১২ পাতা পর্যায়) দ্বিতীয় সেচ দিতে হবে।
- বীজ বপনের ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে (মোচা বের হওয়া পর্যায়) তৃতীয় সেচ দিতে হবে।
- বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার আগের পর্যায়) চতুর্থ সেচ দিতে হবে।
- সেচের পানি বাষ্পায়ন জনিত অপচয় রোধকল্পে ফসলের জমিতে সেচ সাধারণত সকালে অথবা বিকালে প্রয়োগ করতে হবে।
- তাছাড়া প্রচন্ড তাপমাত্রার রৌদ্রের সময় যাতে ফসলের জমিতে সেচ না দেওয়া হয় সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোনোক্রমেই জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সেচ প্রয়োগে ফলনের প্রভাব:
- গবেষণায় দেখা গেছে যে, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯ এর গুণগতমানের বীজ উৎপাদনের জন্য চারটি সেচ অত্যাবশ্যক।
- ভাল মানের বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভুট্টার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পর্যায়ে সেচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- সঠিকভাবে সার ও পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯ এর হেক্টর প্রতি ৮-৯ টন ভাল গুণগতমানের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।
- পরিমিত সেচ প্রয়োগের ফলে ভুট্টা বীজের পুষ্ঠমান ও প্রাণশক্তি বৃদ্ধির ফলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা প্রচলিত সেচ পদ্ধতির চেয়ে বেশি হয়।
- ভুট্টা চাষে উন্নত সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানসম্মত বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক নীট মুনাফা প্রচলিত সেচ পদ্ধতির চেয়ে বেশি পাওয়া সম্ভব।
[সূত্র: বিএআরআই]