(১) সবজি থেকে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ সংক্রমণমুক্তকরণ
শাকসবজি মানবদেহের প্রয়োজনীয় জৈবরাসায়নিক পুষ্টি উপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রনসহ মানবদেহের জন্য অপরিহার্য খনিজ পদার্থ।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য শাকসবজি শক্তির মৌলিক উৎস হিসেবে কাজ করে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন অত্যন্ত উপকারী, তেমনি খাদ্য ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্যও অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।
জলবায়ুগত কারণে বাংলাদেশে চাষকৃত শাকসবজিতে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ব্যাপকভাবে আক্রমণ করে থাকে। কৃষকরা মানসম্মত সবজির ফলন বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের উপর ভালো লাভ পেতে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক ব্যবহার করে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অজ্ঞতার কারণে কৃষকগণ ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন এবং সর্বশেষ স্প্রে ও ফসল তোলার মধ্যে সময়ের উপযুক্ত ব্যবধান মেনে চলেন না। যার ফলে বাজারের সবজির নমুনাতে অহরহ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ মানবদেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকীস্বরূপ।
ফলে, জীবন রক্ষাকারী পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ সবজি হয়ে ওঠে জীবনঘাতী কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের বাহক। যা নিয়মিত গ্রহণের মাধ্যমে মানবদেহের বিভিন্ন অংশে কীটনাশকের দীর্ঘস্থায়ী বিষক্রিয়া হয়, যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায় বিভিন্ন জীবনঘাতী ব্যাধী যেমন: ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনীর বিভিন্ন রোগ ইত্যাদি।
ভোক্তা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শাকসবজি থেকে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অপসারণ জরুরি এবং এই অপসারণ হতে হবে বাড়িতে তথা রান্নাঘরে সহজলভ্য উপাদান দ্বারা।
শাকসবজি থেকে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অপসারণ তথা সংক্রমণমুক্তকরণ কয়েক পদ্ধতিতে রান্নাঘরে সহজলভ্য কিছু উপাদান দ্বারা সহজেই করা যেতে পারে। উপাদানগুলো হলো খাবার লবন, গুঁড়া সাবান, হলুদ গুঁড়া প্রভৃতি। বেগুন, শিম, টমেটো, শসা এবং কাঁচা মরিচ হতে অর্গানোফসফরাস কীটনাশকের যথা- ক্লোরোপাইরিফস, কুইনালফস, ফেনিট্রোথিয়ন, ম্যালাথিয়ন এবং ডায়াজিননের অবশিষ্টাংশ অপসারণের জন্য নিম্নে কিছু পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
ক) খাবার লবণ দ্বারা
- বাজার থেকে কিনে আনা সবজি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে;
- প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম হারে লবণ যোগ করে লবণ পানি তৈরি করতে হবে;
- তৈরিকৃত লবণপানিতে সবজি ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে;
- পরিষ্কার পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে;
- পরিমিত তাপে রান্না করতে হবে।
এই পদ্ধতিতে ৮৬% পর্যন্ত অর্গানোফসফরাস কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অপসারণ হয়।
খ) হলুদ গুঁড়া দ্বারা
- বাজার থেকে কিনে আনা সবজি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে;
- প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম হারে হলুদ গুঁড়া যোগ করে দ্রবণ তৈরি করতে হবে;
- তৈরিকৃত হলুদ দ্রবণে সবজি ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে;
- পরিষ্কার পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে;
- পানিতে ১৫ মিনিট রান্না করতে হবে।
এই পদ্ধতিতে ৭১% পর্যন্ত অর্গানোফসফরাস কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অপসারণ হয়।
এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাজার থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন সবজি কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ সংক্রমণমুক্তকরনের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি সহজলভ্য করা সম্ভব।
কাকরোল, টমেটো ও শসা থেকে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ দূরীকরণ সবজি মানুষের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
দুর্ভাগ্যবশত সবজি ফসল প্রায়ই পোকামাকড় ও রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় যা সবজির উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি ও ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাসায়নিক কীটনাশক ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে যার অবশিষ্টাংশ ভোক্তার স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য সবজি থেকে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অপসারণ করা জরুরি।
বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ কৌশল বা পদ্ধতি ব্যবহার করে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ কিছুটা হলেও অপসারণ করা যায়।
(২) কাকরোল, টমেটো ও শসা থেকে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অপসারণ তথা দূরীকরণ
রান্নাঘরে সহজলভ্য কিছু উপাদান যেমন খাবার লবণ ও ভিনেগার দ্বারা সহজেই করা যেতে পারে। তাছাড়া, খোসা ছাড়ানোর মাধ্যমে শসা হতে অর্গানোফসফরাস কীটনাশকের যথা- ডাইমেথয়েড, ক্লোরপাইরিফস, কুইনালফস, ডায়াজিনন, ম্যালাথিয়ন এবং ফেনিট্রোথিয়নের অবশিষ্টাংশ অপসারণ করা যায় যা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
খাবার লবণ + খোসা ছাড়ানো:
- বাজার থেকে কিনে আনা শসা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে
- প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম হারে লবণ যোগ করে লবণপানি তৈরি করতে হবে
- তৈরিকৃত লবণপানিতে শসা ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে
- চাকু দিয়ে শসার খোসা ছাড়াতে হবে
- পরিষ্কার পানি দিয়ে খোসা ছাড়ানো শসা ধুয়ে ফেলতে হবে।
এই পদ্ধতিতে ৮৫% পর্যন্ত ক্লোরপাইরিফস, ডায়াজিনন, কুইনালফস, ম্যালাথিয়ন এবং ফেনিট্রোথিয়নের অবশিষ্টাংশ অপসারণ করা সম্ভব।
ভিনেগার দ্বারা:
- বাজার থেকে কিনে আনা কাকরোল ও টমেটো পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে;
- প্রতি লিটার পানিতে ২০ মিলি হারে এসিটিক এসিড বা ভিনেগার যোগ করে ভিনেগার-পানি তৈরি করতে হবে;
- তৈরিকৃত ভিনেগার-পানিতে কাকরোল ও টমেটো ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে;
- পরিষ্কার পানি দিয়ে কাকরোল ও টমেটো ধুয়ে নিতে হবে;
- পানিতে ১৫ মিনিট রান্না করতে হবে।
এই পদ্ধতিতে ৮০% পর্যন্ত ডাইমেথয়েট, ক্লোরপাইরিফস, কুইনালফস, ডায়াজিনন, ম্যালাথিয়ন এবং ফেনিট্রোথিয়নের অবশিষ্টাংশ অপসারণ করা সম্ভব।
[সূত্র: বিএআরআই]