Skip to content

 

ক্যাকটাস কি? ক্যাকটাস গাছের বৈশিষ্ট্য

ক্যাকটাস কি ক্যাকটাস গাছের বৈশিষ্ট্য

(১) ক্যাকটাস কি?

পরিচয়: গ্রীক শব্দ “ক্যাকসে” থেকে ক্যাকটাসের নাম হয়েছে। “ক্যাকসে” শব্দের অর্থ কাঁটায় পরিপূর্ণ। ক্যাকটাসের আদি অবস্থান মেক্সিকোতে। ক্যকটাস আর কিছুই না তাহলো ফণীমনসা জাতীয় গাছ। ইহা পর্ণকান্ডে রুপান্তরিত হয়ে পাতা ও কান্ডে পানি সঞ্চয়ের কাজ করে থাকে। এদের ডালে পানি ধরে রাখার নিজস্ব ক্ষমতা আছে বলে ক্যাকটাস মরু এলাকায় ভাল জন্মে।

এগুলো দেখতে পশমের কুশনের মত,উপরে শুঁয়া থাকে এবংএর উপরে ফুল ফোটে, ক্যাকটাসের ফুলের শোভা অতুলনীয়।

কাঁটাযুক্ত সৌন্দর্যমণ্ডিত ক্যাকটাস এখন ঘরের গাছ হিসেবেই বেশি পরিচিত।

রং: প্রচলিত ক্যাকটাসের মাথা কেটে তাতে লাল, খয়েরি, গোলাপি কিংবা হলুদ রঙের ক্যাকটাসের কলম করে বানানো হয় রঙিন ক্রাউন ক্যাপ গ্রাফটিং ক্যাকটাস।

জীবনকাল: ক্যাক্‌টাস ঘরের ভেতর টবে লাগানো হলে ১০ থেকে ৪০ বছর এবং জমিতে আরও বেশি বছর বেঁচে থাকে পারে।

জাত: প্রায় দুই হাজার জাত আছে। যেমন কোচিনেলিফেরা, মনাকাটা, নাইগ্রিকান্স, ওপানসিয়া ইত্যাদি।

ফেরো, নোটো, মেলো, ক্লেসট্রো, র্যাট টেইল, লবিভিয়া, পেরেস্কিয়া, বানি ইয়ারস এ দেশে বেড়ে ওঠা জনপ্রিয় ক্যাকটাসের জাত। 

সব ধরনের ক্যাকটাসেই রোদের দরকার হয়। তবে নিতান্তই যদি রোদ না আসে, তবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসা-যাওয়া করে, এমন স্থানেই ক্যাকটাস রাখা ভালো।

ব্যবহার: কাঁটায় ভরা গাছের সৌন্দর্য ছাড়াও ক্যাকটাসের ফুল খুব সুন্দর। ছোট টবে রাখা ক্যাকটাস অনায়াসেই স্থান পেতে পারে ছাদে কিংবা বারান্দায়।

কাঠ, বাঁশ বা রডের তৈরি স্ট্যান্ড বানিয়ে নিলে অনায়াসেই নান্দনিকভাবে গুছিয়ে পরিপাটি করে অন্দরের দ্যুতি ছড়াতে পারে এই কণ্টকিত ভালোবাসার গাছটি।

বড় বড় হোটেল বা রেস্তোরাঁ বা পাহাড়ে ঘুরতে গেলে আমরা প্রায়ই দেখি ঘরের সাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যাকটাস।

দীর্ঘায়ু, কাঁটাযুক্ত এসব ক্যাকটাস গাছের প্রধান সুবিধা হচ্ছে ছোট্ট একটি টবে বছরের পর বছর ধরে এগুলোকে সজীব রাখা যায়। ঘরের বারান্দা, ব্যালকনি কিংবা ঘরের সুবিধামতো যে কোনো স্থানে এগুলো রাখা যায়।

ফুল: ক্যাকটাস গাছ দীর্ঘজীবী হলেও এর ফুলগুলো প্রায়ই স্বল্পস্থায়ী হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্যাকটাস ফুলই দু’একদিনের মধ্যে ঝরে পড়ে।

See also  ক্যাকটাস গাছের চাষ বা টবে ক্যাকটাস চাষ পদ্ধতি

তাছাড়া অধিকাংশ ক্যাকটাসের ফুলই ফোটে রাতের বেলায়। আর রাতে ফোটার কারণে সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত এসব ফুলের রংও হয় সাধারণত সাদা। তবে যেসব ক্যাকটাসের ফুল দিনের বেলায় ফোটে সেগুলো হলুদ, লাল, গোলাপি, বেগুনি প্রভৃতি বিচিত্র রংয়ের হয়ে থাকে।

চাষ: অন্যান্য ফুলগাছের মতো ক্যাকটাসের খুব বেশি যত্নআত্তির প্রয়োজন হয় না। সপ্তাহান্তে একদিন সামান্য পরিমাণ পানি গাছের গোড়ায় ছিটিয়ে দিলেই হলো।

বাগানে ক্যাকটাস না লাগানোই উত্তম। কারণ বৃষ্টির ফলে কিংবা বর্ষাকালে মাটির আর্দ্রতা বেড়ে গেলে গাছের গোড়া পচে তা বিনষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য বাগানে ক্যাকটাস রোপন করতে চাইলে উঁচু জায়গা নির্বাচন করতে হয় এবং বৃষ্টির পানি যাতে গাছে সরাসরি না পড়তে পারে সে জন্য গাছের উপরে দোচালা ঘরের মতো করে স্বচ্ছ পলেথিন দ্বারা আচ্ছাদন দিতে হয়। কাঁচ কিংবা পলেথিন দ্বারা আচ্ছাদিত এরূপ ঘরকে বলা হয় ‘গ্রিন হাউস’।

যে টবটিতে ক্যাকটাস রোপণ করা হবে তাতে তিন ভাগের একভাগ মাটি, একভাগ বালি এবং একভাগ পাতা পচা সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। এক বছর পর পর একই নিয়মে টবের মাটি পরিবর্তন করে দিতে হয়।

ক্যাকটাস চাষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা যায়। সাধারণত শিকড় থেকেই ক্যাকটাসের চারা তৈরি হয়ে থাকে। তবে ক্যাকটাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গ্রাফটিং বা জোড়কলম পদ্ধতি অনুসরণ করা আবশ্যক।

দুই বা ততোধিক প্রজাতির ক্যাকটাস একত্রে জুড়ে দেয়ার কাজটিকে বলা হয় গ্রাফটিং। এর মাধ্যমে একটি ক্যাকটাস গাছ অনন্য শিল্পকর্মের রূপ ধারণ করে। যারা ক্যাকটাসের চাষ করেন তারা দিনের পর দিন একটি গাছকে কেটে-ছেঁটে, ঘুরিয়ে-বাঁকিয়ে নানা বর্ণের মিশ্রণে গ্রাফটিং করে তাকে শিল্পসমৃদ্ধ করে তোলেন। এর ফলে গাছটি হয়ে ওঠে একটি জীবন্ত শিল্পকর্ম, হয়ে ওঠে দৃষ্টিনন্দিত, অপরূপ।

পোকামাকড় ও রোগজীবাণুর হাত থেকে ক্যাকটাসকে রক্ষা করার জন্য ‘একালাক্স’ দ্রবণ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। এছাড়া মাঝেমধ্যে ছত্রাকনাশক ওষুধও প্রয়োগ করা আবশ্যক।

জনপ্রিয়তা: আমাদের বাংলাদেশে ক্যাকটাসের জনপ্রিয়তা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের ড্রইং রুম থেকে শুরু করে গ্রামের শিক্ষিত ও শৌখিন ব্যক্তিদের আঙ্গিনাতেও ক্যাকটাস শোভাবর্ধন করছে।

See also  ক্যাকটাস গাছের যত্ন ও পরিচর্যা

সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি নার্সারি থেকে ক্যাকটাসের চারা সংগ্রহ করা যাবে। তবে অন্যান্য ফুলগাছের তুলনায় ক্যাকটাসের চারার দাম কিছুটা বেশি।

(২) ক্যাকটাস গাছের বৈশিষ্ট্য

ক্যাকটাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তাদের পানি এবং পুষ্টি সঞ্চয় করার ক্ষমতা। এই উদ্ভিদটি অত্যন্ত প্রতিরোধী, যা শুষ্ক এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় বেঁচে থাকার জন্য এটি আদর্শ করে তোলে। 

ফণিমনসা, তেসিরা মনসা, বাজবরণ ইত্যাদি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ। ক্যাক্টাস বৃষ্টিহীন বা খুবই অল্প পরিমাণ বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের শুষ্ক ও বালুকাময় স্থানে এবং মরুভূমি এলাকায় জন্মায়, তাই ক্যাকটাসকে জঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরােফাইট বলে। ক্যাক্টাস সাধারণত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।

ক) ক্যাকটাসের শারীরবৃত্তীয় ও অভিযােজনগত বৈশিষ্ট্য

মূল: ক্যাকটাসের সুগঠিত মূলতন্ত্র, মূল সুদীর্ঘ। মাটির অনেক নীচ পর্যন্ত চলে যায়। মূলে মূলরােম ও মূলত্রাণ থাকে। অসংখ্য মূলের শাখা প্রশাখা বের হয় মাটি থেকে পানি শােষণ করার জন্য।

কাণ্ড: কাণ্ড খর্বাকার ও কাষ্ঠল হয়। কাণ্ডের বাকল পুরু এবং মােম জাতীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে। কাণ্ডের কোশে মিউসিলেজ নামে এক রকম পিচ্ছিল পদার্থ থাকায় জন্য গাছের পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি হয়। কান্ডের ত্বকে কিউটিকল থাকে।

পাতা: ক্যাকটাসের পাতা আকারে ক্ষুদ্র এবং সংখ্যায় কম থাকে। ফনিমনসার গাছের পাতা কাটায় রূপান্তরিত হয়েছে। বাপমােচন রােধের জন্য পাতাগুলি কাটায় রূপান্তরিত হয়। পাতায় পত্ররন্ধ খুব কম সংখ্যায় থাকে।

পানি সংরক্ষণ: ক্যাক্টাসের কাণ্ড চ্যাপ্টা, স্থূল এবং রসাল। এইরকম কাণ্ডে প্রচুর পরিমাণ পানি সংরক্ষিত থাকে।

পানি শােষণ: এই জাতীয় গাছের শাখা ও প্রশাখা মূলগুলি মাটির অল্প নীচেই সম্প্রসারিত থাকে, ফলে গাছ সহজেই বৃষ্টির পানি শােষণ করতে পারে। প্রধান মূল এবং কয়েকটি প্রধান শাখা মূল পানি শোষণের জন্য মাটির গভীরে প্রবেশ করে। এরকম উদ্ভিদের মূলের কোষে বড় বড় ভ্যাকুল থাকে। ভ্যাকুওলের কোষ রসের আস্রাবণ চাপ অনেক বেশী হওয়ায় এসব গাছের সাধারণ স্থলজ উদ্ভিদের তুলনায় পানি শােষণ ক্ষমতাও অনেক বেশী হয়।

বাষ্পমােচন হ্রাস: ক্যাক্টাসের বাষ্পমােচন রােধ করার জন্য পাতা-কাঁটায় রূপান্তরিত হয় অথবা পাতাগুলি আকারে খুব ছােট এবং কম পত্ররন্ধ্রযুক্ত হয়। কাণ্ডের ত্বকে পুরু কিউটিকএবং মােমের মত আবরণী থাকে।

See also  ক্যাকটাস গাছ লাগানোর নিয়ম

সালােকসংশ্লেষ: ক্যাক্টাস জাতীয় উদ্ভিদের পাতা না থাকায় বা কম থাকায় এদের কাণ্ড চ্যাপ্টা, প্রসারিত এবং সবুজ রঙের হয়। ফলে এই জাতীয় পর্ণকাণ্ডে সহজেই সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ঘটতে পারে।

খ) বিভিন্ন ধরণের ক্যকটাস ও তাদের বৈশিষ্ট্য

ফনিমনসা: এদের কান্ড পুরু, চ্যাপটা ও ডিম্বাকৃতি। একটির প্রান্ত হতে আরেকটি বের হয়। তীক্ষè কাঁটাযুক্ত কান্ডের গায়ে তারকাকারে সজ্জিত। অধিকাংশ ফনিমনসার বড় হলুদ বা লালচে বর্ণের ফুল হয়। ফনিমনসার অনেকগুলো জাত রয়েছে, যেমন-ডিলেনাই, ইলেটিওর, কেচিনেলিফেরা, ননাকান্থা বা মনকাটা নাইগ্রিকান্স প্রভৃতি।    

নিপল ক্যাকটাস: পশুর বাটের মতো ঠোঁট, বামনাকার, কান্ডের শীর্ষে গুচ্ছ গুচ্ছ চুলের মতো পাতা ও পাতার ফাঁকে ফুল হয়। ফুলগুলো হালকা হলুদ। এর সুদৃশ্য ফুলের ভিতরের দিক উজ্জ্বল হলুদ, বাইরের দিক লালচে। এর জাতগুলো যেমন কোয়াড্রস্পাইনা, এমপুশিলা, এম আটটা ইত্যাদি।   

মেলোক্যাকটাস: এ শ্রেণী দেখতে তরমুজ/ফুটির মতো। এদের মাথার শীর্ষ দেশ পশমী চুলের ন্যায় কাঁটায় আবৃত। এর জাতগুলোর মধ্যে পিরামিডাম, ডিপ্রেসাস, পলিক্যান্থাস, ম্যাক্সো ক্যান্থাস, গ্রেংগেলি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।   

সোরিয়াস: এই শ্রেণীর ক্যাকটাস শক্ত, দীর্ঘ, কান্ডযুক্ত ও কাঁটাওয়ালা। এগুলো ইট, পাটকেলের গুঁড়ো, পচা গোবর ও মাটির মিশ্রণে লাগানো হয়। এই ফুল সন্ধ্যার পর ফুটতে শুরু করে এবং মধ্য রাত্রি পর্যন্ত তা চলে। প্রায় ৬ ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত সাদা কেন্দ্র হলুদাভাব বেগুনী, বহির্দেশ সুগন্ধযুক্ত।   

হেকসাগোনাস: ছয় শিরা বিশিষ্ট। এতে বড় বড় ফুল ফোটে।   

ট্রাংকেনাম: এই জাত শীতকালে বৃহৎ দর্শনীয় ফুল দেয়। ফুলের রং গোলাপী। দিনের বেলায় ফুল ফোটে। গাছ দুর্বল স্বভাবের। তবে গাছের যেকোন অংশ মাটিতে পুঁতলে শিকড় বের হয় এবং পরে বড় ফুল ফোটে।  

রিপম্যালিস: এর অদ্ভুত ধরনের কান্ড। ছোট ছোট জোড়া লাগানো বলে মনে হয়। আবার অনেকগুলো তামাকের পাইপ জোড়া দেয়া মনে হতে পারে। ফুল ছোট হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। এটা পরগাছা উদ্ভিদ হিসেবে জন্মে।  

পেরেসকিয়া: এর সিংগল জাতে গোলাপের মত ফুল ফোটে। পেরেসকিয়া সারা বছর ফুল দেয়। এরকম অসংখ্য জাতের ক্যাকটাস রয়েছে।

[সূত্র: ইন্টারনেট]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page