Skip to content

 

পিঁয়াজ চাষের সমস্যা: পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার

পিঁয়াজ চাষের সমস্যা পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার

পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী মসলা ফসল ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্য। প্রতিদিনের রান্নায় ইহা আমরা ব্যবহার করে থাকি। এ ছাড়াও পেঁয়াজে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে।

দেশের চাহিদার তুলনায় এ ফসলের উৎপাদন নিতান্তই কম। উৎপাদন কম হওয়ার জন্য রোগবালাই একটি প্রধান কারণ।

পেঁয়াজে পার্পল ব্লচ, কান্ড পচা, স্মাট, গুদামজাত ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। এই রোগসমূহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। তাই পেঁয়াজের কয়েকটি মারাত্মক রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

(১) পিঁয়াজ চাষের সমস্যা/পেঁয়াজের পোকা-মাকড়

ক) থ্রিপস্

থ্রিপস্ আক্রান্ত গাছ
থ্রিপস্ আক্রান্ত গাছ

আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়:

সাধারণত কচি চারা গাছ ও চারা রোপণের ১০-৩০ দিনের মধ্যে এই পোকা পেঁয়াজ গাছকে আক্রমণ করে।

ক্ষতির ধরন:

  • থ্রিপস্ আক্রমণে ৫০% পযন্ত ফসলের ক্ষতি হতে পারে।
  • আক্রান্ত পাতায় প্রথমে দাগ পড়ে , পরবর্তীতে হালকা সাদা বর্ণ ধারণ করে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বীজ উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হয় ও বীজের সজীবতা নষ্ট হয়।
  • সাধারণত জানুয়ারি-এপ্রিল মাসে এদের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।

দমন ব্যবস্থা:

  1. আঠালো সাদা ফাঁদ (প্রতি হেক্টরে ৪০টি) ব্যবহার করে পোকা নিয়ন্ত্রণ করা।
  2. আধা ভাঙ্গা নিম বীজের (৫০ গ্রাম এক লিটার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভেজানোর পর মিশ্রনটি ছাঁকতে হবে) নির্যাস আক্রান্ত গাছে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  3. আন্তঃফসল হিসাবে পেঁয়াজের সঙ্গে গাজর (রেপিলেন্ট ক্রপ) চাষ করে পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  4. আক্রমণ বেশি হলে ফিপ্রোনিল (রিজেন্ট/এসেন্ড/গুলি/অন্য নামের) বা ডাইমেথয়েট (বিস্টারথোয়েট/টাফগর/অন্য নামে) ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা সাকসেস ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি হারে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  5. চারা রোপণের ১০-৩০ দিনের মধ্যে তিন বার ১০ দিন অন্তর অন্তর এই পোকা দমনের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ মিলি এ্যাডমায়ার/টিডো/গেইন ঔষধ প্রতি ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হয়।

খ) এফিড বা জাব পোকা

আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়:

পেঁয়াজ গাছের কচি ও বয়স্ক পাতায় আক্রমণ করে।

ক্ষতির ধরন:

  • জাব পোকা দলবদ্ধভাবে পেঁয়াজ পাতার রস চুষে খায়, ফলে গাছ দুর্বল ও হলুদাভ হয়ে যায়।
  • জাব পোকার মলদার দিয়ে যে তরল পদার্থ বের হয় তাকে হানি ডিউ বলে যা পাতায় আটকে গেলে সুটি মোল্ড নামক কালো ছত্রাক জন্মায়। ফলে গাছের সবুজ অংশে সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়।

দমন ব্যবস্থা:

  1. আঠালো হলুদ ফাঁদ (প্রতি হেক্টরে ৪০টি) ব্যবহার করে।
  2. আধা ভাঙ্গা নিম বীজের (৫০ গ্রাম এক লিটার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভেজানোর পর মিশ্রণটি ছাঁকতে হবে) নির্যাস আক্রান্তগাছে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  3. বন্ধু পোকাসমূহ (লেডীবার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ ও কীড়া এবং সিরফিড ফ্লাই) প্রকৃতিতে লালন।
  4. আক্রমণ বেশি হলে স্বল্পমেয়াদী বিষক্রিয়ার ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি (ফাইফানন/সাইফানন/অন্য নামের) ১০ মিলি অথবা কুইনালফস ২৫ ইসি (করলার/একালার/কিনালার/অন্য নামের) বা ডাইমেথয়েট (বিস্টারথোয়েট/টাফগর/ অন্য নামে) বা কেরাতে ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা সাকসেস ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি হারে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
See also  পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি (গ্রীষ্ম ও শীতকালীন)

গ) আম্বেল ছিদ্রকারী পোকা

আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়:

সাধারণত পেঁয়াজের ফুল ফোটার সময়।

ক্ষতির ধরন:

  • পেঁয়াজের ফুল ফোটার সময় এরা আম্বেল-এর উপরের অংশে আক্রমণ করে ও ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে এবং আম্বেল-এর ভিতরের অংশ খেতে থাকে।
  • ছিদ্র করার কারণে পেঁয়াজের ফুল নেতিয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে শুকিয়ে যায়।

দমন ব্যবস্থা:

  1. শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
  2. পোকার দৃশ্যমান বড় কীড়াগুলোকে হাত বাছায় এর মাধ্যমে সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে।
  3. জমিতে পোকা খাদক পাখি যেমন শালিক, ফিঙ্গে এসবের বসার সুবিধার জন্য ডালপালা পুতে দিতে হবে। এ পাখি কীড়াগুলোকে খেয়ে পোকার সংখ্যা করাতে সাহায্য করে।
  4. গাছে ফুল আসতে শুরু করলে আম্বেল ছেদক পোকার ডিম ধ্বংসকারী পরজীবী বা কীড়া ধ্বংসকারী পরজীবী ক্ষেতের মধ্যে পর্যায়ক্রমিকভাবে ছেড়ে পোকার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
  5. পেঁয়াজের সাথে বিভিন্ন ফসল যেমন- ধনিয়া, তিসি, সরিষা, কুসুমফুল আন্তঃফসল হিসাবে চাষ করলে আম্বেল ছেদক পোকার আক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে করে যায়।
  6. আক্রমণ তীব্র হলে কুইনালফস ২৫ ইসি (দেবীকুইন/কিনালার/করলার) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে বা সাকসেস ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি হারে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

(২) পেঁয়াজের রোগ ও তার প্রতিকার

ক) পার্পল ব্লচ/বেগুনী দাগ রোগ (Purple Blotch)

পার্পল ব্লচবেগুনী দাগ রোগে আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ
পার্পল ব্লচবেগুনী দাগ রোগে আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ

রোগের জীবাণু:

Alternaria porri (বীজবাহিত)।

আক্রমণের সময়:

চারা অবস্থা হতে বীজ সংগ্রহের পূর্ব পর্যন্ত।

রোগের উপযোগী আবহাওয়া:

জমিতে অত্যাধিক আগাছা থাকা অধিক তাপমাত্রা ২৮-৩০০ সে. ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৮০-৯০% পেঁয়াজের পাতা অধিক সময় পর্যন্ত ভেজা থাকা

রোগের লক্ষণ:

  • প্রথমে পাতা ও বীজবাহী কান্ডে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ভেজা বাদামী বা হলুদ রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। দাগগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বড় দাগে পরিণত হয়। দাগের মধ্যবর্তী অংশ প্রথমে লালচে বাদামী ও পরবর্তীতে কালো বর্ণ ধারণ করে এবং দাগের কিনারা বেগুনী বর্ণ ধারণ করে।
  • আক্রান্তপাতা উপরের দিক হতে ক্রমান্বয়ে মরে যেতে থাকে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত পাতা ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে হলদে হয়ে মরে যায়।
  • বীজবাহী কান্ডের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানের দাগ বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে।
  • এ রোগের আক্রমণের ফলে বীজ অপুষ্ট হয় এবং ফলন হ্রাস পায়।

প্রতিকার:

  1. সুস্থ, নীরোগ বীজ ও চারা ব্যবহার করতে হবে।
  2. আক্রান্তগাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  3. রোভরাল বা প্রোভেক্স-২০০ নামক ছত্রাক নাশক প্রতি কেজি বীজের সাথে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
  4. রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম রোভরাল/২ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড/২ গ্রাম মেনকোজেব মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে। বীজ পেঁয়াজের ক্ষেত্রে একই ছত্রাকনাশক একই পরিমাণে ১০-১২ দিন পর পর ৫-৬ বার স্প্রে করতে হবে।
See also  পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি (গ্রীষ্ম ও শীতকালীন)

খ) আইরিশ ইয়েলো স্পট

আইরিশ ইয়েলো স্পট রোগে আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ
আইরিশ ইয়েলো স্পট রোগে আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ

রোগের জীবাণু:

Iris Yeccow Spot Virus এর আক্রমণে এই রোগ হয়। Thrips এই রোগের বাহক।

রোগের লক্ষণ:

  • থ্রিপ্স এর আক্রমণের কারণে পাতা সাদা ফ্যাকাশে হতে পারে।
  • আক্রান্ত পাতার বৃদ্ধি হ্রাস পায় ও আক্রান্ত স্থান হীরার মতো বা চোখের মতো দেখতে মনে হয়। আক্রান্ত স্থানের মাঝের অংশ সাদা ও চতুর্দিকে ক্লোরোটিক/ হালকা সবুজ হতে পারে।
  • অত্যাধিক আক্রান্ত পাতা গুলো দেখতে ধুসর রঙের মতো লাগে ও অবশেষে পাতা উপর হতে নিচের দিকে মারা যায়।

প্রতিকার:

  1. মাটিতে পরিমাণমতো আর্দ্রতা রাখা দরকার।
  2. তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে থ্রিপস এর সংখ্যা বৃদ্ধির পেতে থাকে ফলে রোগের আক্রমণ বেশি হয়। এজন্য থ্রিপ্সকে দমন করার জন্য কীটনাশক (ইমিডক্লোরোপিড গ্রুপের যেমন : এডমায়ার, গেইন, ইমিটাফ, কনফিডর @০.০৫%) ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার (কন্দ উৎপাদনের জন্য)/ ৪-৫ বার (পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য) স্প্রে করতে হবে।

পেঁয়াজের পার্পল ব্লচ/বেগুনী দাগ রোগ ও আইরিশ ইয়েলো স্পট রোগের মধ্যে পার্থক্য:

অনেক সময় পেঁয়াজের পার্পল ব্লচ/বেগুনী দাগ রোগ ও আইরিশ ইয়েলো স্পট রোগ সনাক্তকরণে সমস্যা হয়ে পড়ে। দুটি রোগের সনাক্তকরণ লক্ষণ প্রায় কাছাকাছি। নিম্নে রোগ দুটির সনাক্তকরণের পার্থক্য উপস্থাপন হলো।

পেয়াজের পার্পল ব্লচ/বেগুনী দাগ রোগআইরিশ ইয়েলো স্পট রোগ
দাগের মধ্যবর্তী অংশ প্রথমে লালচে বাদামী ও পরবর্তীতে কালো বর্ণ ধারণ করে এবং দাগের কিনারা বেগুনী বর্ণ ধারণ করে।আক্রান্ত লেসনগুলোর মাঝের অংশ সাদা, চতুর্দিকে ক্লোরোটিক/ হালকা সবুজ হতে পারে ও এর পরের অংশ হালকা সাদা বর্ণের হয়। কখনো বেগুনী বর্ণ থাকবে না।
দাগগুলো চোখ আকৃতির হয় হয় না।দাগগুলো চোখ আকৃতির হয়।

গ) স্টেমফাইলিয়াম লিফ ব্লাইট (Stemphylium leaf blight)

স্টেমফাইলিয়াম লিফ ব্লালাইট রোগে আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ ও পু®পমুঞ্জরি
স্টেমফাইলিয়াম লিফ ব্লালাইট রোগে আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ ও পু®পমুঞ্জরি

রোগের জীবাণু:

Stemphylium sp. নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়।

পেঁয়াজের আক্রান্ত অংশ:

পাতা, কান্ড, ফুলকা ও বীজ আক্রমণের শিকার হয়।

সময়:

চারা অবস্থা হতে বীজ সংগ্রহের পূর্ব পর্যন্ত।

রোগের উপযোগী আবহাওয়া:

জমিতে অত্যাধিক আগাছা থাকা অধিক তাপমাত্রা ২৮-৩০০ সে ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৮০-৯০% পেঁয়াজের পাতা অধিক সময় পর্যন্ত ভেজা থাকা।

রোগের লক্ষণ:

  • প্রথমে পাতা ও পাতার কিনারায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ভেজা হালকা বাদামী বা হলুদ রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। দাগগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বড় দাগে পরিণত হয় ও পাতাকে পুড়িয়ে ফেলে। দাগের মধ্যবর্তী অংশ প্রথমে লালচে বাদামী এবং পরবর্তীতে কালো বর্ণ ধারণ করে।
  • আক্রান্তপাতা উপরের দিক হতে ক্রমান্বয়ে কালো হয়ে মরে যেতে থাকে এবং পাতার উপরের অংশে ছত্রাকের ফ্রুটিং বডি দেখা যাবে।
  • এ রোগের আক্রমণের ফলে বীজ অপুষ্ট হয় এবং ফলন হ্রাস পায়।
See also  পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি (গ্রীষ্ম ও শীতকালীন)

প্রতিকার:

  1. সুস্থ, নীরোগ বীজ ও চারা ব্যবহার করতে হবে ও আক্রান্তগাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  2. রোভরাল বা প্রোভেক্স নামক ছত্রাক নাশক প্রতি কেজি বীজের সাথে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
  3. রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম মেনকোজেব/২ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড/২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে। বীজ পেঁয়াজের ক্ষেত্রে একই ছত্রাকনাশক একই পরিমাণে ১০-১২ দিন পর পর ৫-৬ বার স্প্রে করতে হবে। অথবা,
  4. প্রতি লিটার পানির সাথে এমিস্টারটপ ১ মিলি/ তারেদ ০.৭৫ মিলি/ প্রোটেক ২ মিলি ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

ঘ) পেঁয়াজ পচা (Bulb Rot)

পেঁয়াজ পচা
পেঁয়াজ পচা

রোগের জীবাণু:

স্কেলেরোসিয়াম রলফ্ছি (Sclerotium rolfsii)/ফিউজেরিয়াম (Fusarium sp.)/বটরাইটিশ (Botrytis sp.) নামকছত্রাক (মাটি বাহিত) দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।

স্কেলেরোসিয়াম ও ফিউজেরিয়াম দ্বারা আক্রান্তগাছের মধ্যে পার্থক্য:

স্কেলেরোসিয়াম দ্বারা আক্রান্ত গাছফিউজেরিয়াম দ্বারা আক্রান্ত গাছ
Sclerotium দ্বারা আক্রান্তগাছ হাত দিয়ে টান দিলে পেঁয়াজসহ খুব সহজেই মাটি থেকে উঠে আসে।(Fusarium oxysporum f. sp. cepae) দ্বারা আক্রান্ত গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং টান দিলে সহজেই উঠে আসে না।
আক্রান্তস্থানে সরিষার দানার মতো বাদামী রঙের গোলাকার ছত্রাক জীবাণু স্কেলেরোসিয়া দেখা যায়।আক্রান্তস্থানে সরিষার দানার মতো বাদামী রঙের গোলাকার ছত্রাক জীবাণু স্কেলেরোসিয়া দেখা যায় না।

প্রতিকার:

  1. সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ ও চারা রোপণ করতে হবে।
  2. আক্রান্তগাছ তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
  3. পানি নিষ্কাশনের জন্য ভাল ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
  4. রোগের লক্ষণ দেখা দিলে নোইন বা অটোস্টিন/রোভরাল প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ৭-১০ দিন পর পর ২- ৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।

ঙ) কান্ড ও কন্দ কৃমি (Stem and bulb Nematode)

কৃমি আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ
কৃমি আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ

রোগের বিস্তার:

মাটি, পানি ও কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ছড়ায়।

রোগের জীবাণু:

Ditylenchus dipsaci নামক নেমাটোডের (মাটি বাহিত) আক্রমণে পেঁয়াজের এই রোগ হয়।

রোগের লক্ষণ:

  • কচি চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, রং ফ্যাকাশে হয় এবং বীজপত্র ফুলে উঠে।
  • পাতায় হালকা হলুদ-বাদামী বর্ণের স্পট দেখতে পাওয়া যায়, পাতা খাটো ও পুরুত্ব বিশিষ্ট হয় এবং কান্ড মোটা হয়।
  • আক্রান্ত পেঁয়াজের চামড়া নরম, হালকা ধূসর রঙের হয় ও পেঁয়াজের বাল্বের ওজন কম হয়।
  • ফলে দ্বিতীয় পর্যায়ে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হয় ফলে নোংরা ও পচা গন্ধ পাওয়া যায়।

প্রতিকার:

  1. পেঁয়াজ রোপণ/বপনের পূর্বে কমপক্ষে ২০-২৫ দিন পূর্বে বিঘা প্রতি ৩০০-৩২৫ কেজি মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করতে হবে।
  2. পেঁয়াজ রোপণ/বপনের পূর্বে শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি ৪-৪.৫ কেজি ফুরাডান ৫ জি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

চ) এস্টার ইয়েলো

এস্টার ইয়েলো রোগে আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ
এস্টার ইয়েলো রোগে আক্রান্ত পেঁয়াজ গাছ

রোগের জীবাণু:

Aster Yellows Phytoplasma এস্টার ইয়েলো রোগের প্রধান কারণ। এস্টার ইয়েলো হপার এই জীবাণু বহন করে। রোগের উপযোগী আবহাওয়া জমিতে অত্যাধিক পরিমাণে আগাছা থাকা ও সাথী বা আন্ত: ফসল হিসেবে থ্রিপস আকর্ষণীয় (Thrips attractive crop) ফসল চাষ করা।

রোগের লক্ষণ:

  • কন্দ ফসলে নতুন পাতার গোড়ায় হলুদ ও সবুজ স্ট্রিক দেখতে পাওয়া যাবে।
  • পাতাগুলো সমান্তরাল হয়ে পেঁচিয়ে থাকে।
  • অত্যন্ত আক্রান্ত আম্বেলগুলি ফেটে যেতে পারে।

প্রতিকার:

  1. জীবাণুমুক্ত পেয়াজের বাল্ব ও চারা বপণ করা ও ফসলকে আগাছামুক্ত রাখা।
  2. সাথী বা আন্তঃফসল হিসেবে কোন থ্র্প্সি আকর্ষণীয় (Thrips attractive crop) ফসল চাষ না করা।
  3. আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতি লিটার পানির সাথে সাকসেস/জাদিদ/ এডমায়ার/ইমিটাফ/ট্রেসার ০.৫ মিলি মিশিয়ে বিকালে (৫.০০ টার পর) ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

ছ) পেঁয়াজের গুদামজাত রোগ

পেঁয়াজের গুদামজাত রোগ
পেঁয়াজের গুদামজাত রোগ

সচরাচর গুদামজাত অবস্থায় পেঁয়াজের পচন দেখা যায়। এগুলো হলো- নরম পচন (Erwinia sp.) কালো পচন (Aspergillus niger), শুকনা পচন (Fusarium sp.) রোগ।

রোগের লক্ষণ:

  • নরম পচা রোগ হলে পেঁয়াজ পচে খুব নরম হয় এবং পেঁয়াজ হতে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।
  • কালো পচা রোগ হলে পেঁয়াজের খোসা বা কেমড়ার উপরে কালো পাউডারের মতো স্পোস দেখতে পাওয়া যাবে। কালো রং এর স্পোর গুলো মাঝে মাঝে ভিতরে ও দেখতে পাওয়া যায়।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page