(১) মরিচ গাছের রোগের প্রতিকার ব্যবস্থাপনা
ক) মরিচ গাছের ঢলে পড়া রোগের প্রতিকার
রোগের জীবাণু:
Fusarium oxysporum f.sp. capsici, Sclerotium sp. (Soil borne fungi) and Ralstonia solanacearum নামক জীবাণুর আক্রমণে মরিচের ঢলে পড়া রোগ হয়।
রোগের বিস্তার:
ছত্রাক প্রধানত মাটি বাহিত এবং অন্যান্য শস্য আক্রমণ করে। মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা থাকলে এ রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। পানি সেচের মাধ্যমে আক্রান্ত ফসলের জমি হতে সুস্থ ফসলের মাঠে বিস্তার লাভ করে।
রোগের লক্ষণ:
- ছত্রাক গাছের নিচের দিকে কান্ডে আক্রমণ করে এবং গাঢ় বাদামী ও দাবানো ক্যাংকার সৃষ্টি করে।
- ক্রমে এই ক্যাংকারজনিত দাগ কান্ডের গোড়াকে চর্তুদিক হতে বেস্টন করে ফেলে।
- গাছের অগ্রভাগের পাতা হলুদ হয়ে যায়, পরে সমস্ত গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
- স্যাঁতসেতে মাটিতে কান্ডের গোড়া সাদা অথবা নীলাভ ছত্রাক স্পোর দ্বারা আবৃত হয়ে পড়ে।
- গাছ লম্বালম্বিভাবে ফাটালে ভাসকুলার বান্ডল বিবর্ণ দেখা যাবে।
- রোগের অনুকূল অবস্থায় ১০-১৫ দিনের মধ্যে গাছ সম্পূর্ণরূপে ঢলে পড়ে, কিন্ত প্রতিকুল অবস্থায় ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে আক্রান্ত অংশ হতে ধারালো ছুরি দ্বারা কেটে গ্লাসভর্তি পরিষ্কার পানিতে ডুবালে গ্লাসের উপরের অংশের পানিতে ঘন/পাতলা সাদা রঙের পদার্থ (Ooze) পড়তে দেখা যায়।
রোগের প্রতিকার:
- সুস্থ ও সবল ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- প্রোভেক্স-২০০ বা অটোস্টিন (প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম) দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
- পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
- গাছের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা ও আশেপাশের ধুতুরা জাতীয় গাছ একত্র করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
- রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
খ) মরিচ গাছের আগা মরা/ক্ষত/ফল পচা রোগের প্রতিকার
ইংরেজি নাম:
Die back/Anthracnose/fruit rot.
রোগের কারণ:
কোলেটোট্রিকাম ক্যাপসিসি (Colletotrichum capsici) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার:
বীজ, বিকল্প পোষক এবং গাছের পরিত্যক্ত অংশের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। আর্দ্র আবহাওয়া ও অধিক বৃষ্টিপাত এ রোগ বিস্তারে সহায়তা করে।
রোগের লক্ষণ:
- মরিচ গাছের নতুন ডগা, ডাল, ফুলের কুঁড়ি ও ফল এ রোগে আক্রান্ত হয়।
- এ রোগের আক্রমণে গাছের আক্রান্ত অংশ যেমন পাতা, কান্ড ও ফল ক্রমশ উপর হতে মরতে থাকে এবং গাছ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে।
- গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
- ফলের উপর গোলাকার কালো বলয় বিশিষ্ট গাঢ় ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ইহা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে ফলকে পচিয়ে দেয়। আক্রান্ত ফল ঝরে পড়ে।
- ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে গাছ দ্রুত মরে যায়। মরা অথবা শুকনা কালো পচার মত রঙ ধারণ করে।
রোগের প্রতিকার:
- সুস্থ ও সবল ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- প্রোভেক্স-২০০ বা অটোস্টিন (প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম) দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
- পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
- গাছের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা ও আশেপাশের ধুতুরা জাতীয় গাছ একত্র করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
- রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
গ) মরিচ গাছের চুয়ানিফোরাপাতা পচা রোগের প্রতিকার
রোগের ইংরেজি নাম:
Choaniphora leaf rot.
রোগের কারণ:
চুয়ানিফোরা (Choanephora cucurbitarum) নামক ছত্রাক।
রোগের বিস্তার:
উচ্চ তাপমাত্রা ও স্যাতস্যাতে আবহাওয়ায় (কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া) এ রোগ হয়ে থাকে। বায়ু দ্বারা রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
রোগের লক্ষণ:
- চারা ও বয়স্ক গাছের শাখা-প্রশাখা, পাতা, ফুল-ফল আক্রান্ত হয়।
- প্রথমে পাতায় পানি ভেজা দাগ হয়। পাতা দ্রুত পচতে থাকে।
- আক্রমণ গাছের আগা থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে। আক্রান্ত গাছের পাতা ও ডাল কালো রঙের হয়ে থাকে।
- রোগের প্রকোপ বেশি হলে এবং অনুকূল আবহাওয়ায় ৫-৭ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছটি মারা যায়।
- সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করলে আগা ও ডালে ছত্রাকের সাদা বর্ণের মাইসেলিয়াম খালি চোখে দেখা যায়।
- ফলনের প্রচুর ক্ষতি হয়। ১০০% পর্যন্ত ফলনের ক্ষতি হতে পারে।
রোগের প্রতিকার:
- ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। জমিতে অতিরিক্ত সেচ দেয়া যাবে না।
- গাছ আক্রান্ত হওয়া মাত্রই অটোস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
ঘ) মরিচ গাছের ব্যাকটেরিয়া জনিত পাতায় দাগ রোগের প্রতিকার
রোগের ইংরেজি নাম:
Baeterial leaf spot.
রোগের কারণ:
জ্যানথোমোনাস ক্যামপেস্ট্রিস পিভি. ভেরিকেটোরিয়া (Xanthomonas campestrispv. vericatoria) নামক ব্যাকটেরিয়া।
রোগের বিস্তার:
ব্যাকটেরিয়া শীতকালে মাটিতে থাকে। ইহারা পোকামাকড়, কৃষি যন্ত্রপাতি, শ্রমিক ও বৃষ্টির পানির মাধ্যমে ছড়ায়।
রোগের লক্ষণ:
- গাছের পাতার নিচে প্রথমে ছোট গোলাকার থেকে অসমান পানি ভেজার মতো ক্ষতদাগ দেখতে পাওয়া যায়। স্পটগুলো ফুলে ওঠে এবং এর কেন্দ্র কালো রং ধারণ করে।
- পাতা শুকিয়ে গাছ মারা যায়।
- সবুজ ফল আক্রান্ত হয় এবং এগুলো বাদামী হতে কালো হয়।
রোগের প্রতিকার:
- সুস্থ ও রোগ মুক্ত গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- নিড়ানীর সময় যেন গাছ ক্ষত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে ফেলতে হবে।
- এক লিটার পানির মধ্যে ৩ গ্রাম কপার অক্রিক্লোরাইড (কুপ্রাভিট) মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
- রোগের প্রাথমিক অবস্থায় এক লিটার পানিতে সানভিট বা কুপ্রাভিট ৭ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
ঙ) মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ানো রোগের প্রতিকার
রোগের ইংরেজি নাম:
Leaf curl.
রোগের জীবাণু:
এক প্রকার ভাইরাস (Nicotiana virus-10) দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার:
বাহক পোকা (সাদা মাছি) ও পোষক উদ্ভিদের মাধ্যমে ছড়ায়।
রোগের লক্ষণ:
- আক্রান্ত গাছের পাতা কুঁকড়ে যায় এবং স্বাভাবিক পাতার তুলনায় পুরু হয়। পাতাগুলো ছোট গুচ্ছাকৃতির হয়। গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
- গাছের পর্বগুলি কাছাকাছি হয় (পর্ব দৈর্ঘ্য কমে যায়) ও গাছ খর্বাকৃতি হয়ে পড়ে।
গাছে অতিরিক্ত ডালপালা জন্মায় ও ঝোপের মত হয়। - ফল ধারণ ক্ষমতা কমে যায় এবং ফল আকারে ছোট ও কুঁকড়ানো হয়।
রোগের প্রতিকার:
- সুস্থ গাছ থেকে পরবর্তী মৌসুমের জন্য বীজ সংগ্রহ করতে হবে। রোগাক্রান্ত চারা কোন অবস্থাতেই লাগানো যাবে না।
- চারা অবস্থায় বীজ তলা মশারীর নেট দ্বারা ঢেকে রাখতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ ও আশেপাশের পোষক উদ্ভিদ তুলে ধ্বংস করতে হবে।
- মরিচকে এই রোগ হতে মুক্ত রাখতে হলে নিয়মিতভাবে ৭-১০ দিন দিন পর পর কীটনাশক ও মাকড়নাশক (থিওভিট/ভার্টিমেক/ওমাইট) সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
(২) মরিচ গাছের পোকা দমন ব্যবস্থাপনা
ক) মরিচ গাছের কাটুই পোকা দমন
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়:
জমিতে চারা রোপণের পর পরই এই পোকা রাতের বেলা গাছের গোড়া কেটে দিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে।
ক্ষতির ধরন:
- কচি চারা গাছ গোড়া কাটা অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকে।
- শুককীট দিনের বেলায় গাছের গোড়ায় মাটির সামান্য নিচে বা আবর্জনার ভিতর বিশ্রাম নেয় এবং রাতে উপরে উঠে চারা গাছের গোড়া কেটে দেয়।
- শুককীট যা খায় তার চেয়ে অনেক বেশি চারা বা গাছের গোড়া কেটে নষ্ট করে।
দমন ব্যবস্থা:
- বিষটোপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ১০০ গ্রাম গমের ভূষি অথবা ধানের কুড়া, ১০০ গ্রাম চিটা গুড় এবং ২০০ গ্রাম সেভিন ৫০ ডব্লিউ পি সবগুলো একত্রে মিশিয়ে প্রয়োজনীয় পানি দিয়ে মন্ড তৈরি করতে হবে।
- সন্ধ্যার পর মন্ড ছিটিয়ে দিলে শুককীট আকর্ষিত হবে এবং এই বিষটোপ খেয়ে মারা যাবে। ১ মিলিলিটার পরিমাণ সুমিসাইডিন ২০ ইসি বা রিপকর্ড ১০ ইসি বা সিমবুশ ১০ ইসি ১ লিটার পরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে সন্ধ্যার সময় জমিতে ছিটিয়ে দিলে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- জমি তৈরির সময় দানাদার জাতীয় ঔষধ শতকে ৪০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হয়। অনেক সময় ফ্লাড সেচ দিলে মাটির গর্ত থেকে কাটুই পোকা বের হয়ে আসে ফলে পাখিতে খেয়ে ফেলে।
খ) মরিচ গাছের থ্রিপস্ পোকা দমন
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়:
সাধারণত কচি চারা গাছ ও চারা রোপণের ৭-১৭ দিনের মধ্যে এই পোকা মরিচ গাছকে আক্রমণ করে।
ক্ষতির ধরন:
থ্রিপ্স কচি পাতার রস শুষে খায় ফলে পাতা উপরের দিকে কুঁকড়ে যায়। পাতার মধ্যশিরার নিকটবর্তী এলাকা বাদামী রঙ ধারণ করে ও শুকিয়ে যায় নতুন কিংবা পুরাতন পাতার নিচের পিঠে অধিক ক্ষতি হয় নৌকার খোলের ন্যায় পাতা উপরের দিকে কুঁকড়ে যায় আক্রান্ত পাতা বিকৃত ও বেঢপ দেখায়।
দমন ব্যবস্থা:
- আঠালো সাদা ফাঁদ (প্রতি হেক্টরে ৪০ টি) ব্যবহার করে পোকা নিয়ন্ত্রণ করা।
এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ২০ লিটার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি (ছেঁকে নেওয়ার পর) পাতার উপরের দিকে স্প্রে করা। - আন্তঃফসল হিসাবে মরিচের সঙ্গে গাজর (রেপিলেন্ট ক্রপ) চাষ করে।
- আক্রমণ বেশি হলে ফিপ্রোনিল (রিজেন্ট/এসে-/গুলি/অন্য নামের) বা ডাইমেথয়েট (বিস্টারথোয়েট/টাফগর/অন্য নামে) ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা সাকসেস ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি হারে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- চারা রোপণের ১০-৩০ দিনের মধ্যে তিন বার ১০ দিন অন্তর অন্তর এই পোকা দমনের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ মিলি এ্যাডমায়ার/টিডো/গেইন ঔষধ প্রতি ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হয়।
গ) মরিচ গাছের এফিড বা জাব পোকা দমন
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়:
মরিচ গাছের কচি ও বয়স্ক পাতা।
ক্ষতির ধরন:
সব ধরনের পাতার নিচের দিকে বসে রস শুষে খায় এমনকি এরা গাছের কান্ডেও আক্রমণ করে থাকে ফলে কান্ড শুকিয়ে মারা যায়।
দমন ব্যবস্থা:
- আঠালো হলুদ ফাঁদ (প্রতি হেক্টরে ৪০ টি) ব্যবহার করে।
- আধা ভাঙ্গা নিম বীজের (৫০ গ্রাম এক লিটার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভেজানোর পর মিশ্রণটি ছাঁকতে হবে) নির্যাস আক্রান্ত গাছে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বন্ধু পোকাসমূহ (লেডীবার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ ও কীড়া এবং সিরফিড ফ্লাই) প্রকৃতিতে লালন।
- আক্রমণ বেশি হলে স্বল্পমেয়াদী বিষক্রিয়ার ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি (ফাইফানন/সাইফানন) ১০ মিলি অথবা কুইনালফস ২৫ ইসি (করলাক্স/একালাক্স/কিনালাক্স/অন্য নামের) বা ডাইমেথয়েট (বিস্টারথোয়েট/টাফগর/অন্য নামে) বা কেরাতে ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা সাকসেস ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি হারে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ঘ) মরিচ গাছের সাদা মাছি পোকা দমন
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়:
সাধারণত কচি চারা গাছ আক্রমণ করে।
ক্ষতির ধরন:
কচি পাতার নিচে বসে রস শুষে খায় ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা:
- সাবান-পানি ব্যবহার (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট ) করে।
- নিম বীজের নির্যাস (আধা ভাঙ্গা ৫০ গ্রাম নিম বীজ ১ লিটার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে) স্প্রে করা।
- আক্রমণ বেশি হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ইসি (১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে) অথবা এডমায়ার ২০০ এসএল (১০ লিটার পানিতে ৫ মিলি হারে) স্প্রে করে।
ঙ) মরিচ গাছের মাইট পোকা দমন
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়:
মাইট মরিচ গাছের কচি ও বয়স্ক পাতা আক্রমণ করে।
ক্ষতির ধরন:
সাধারণত পাতার নিচের দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিরার মধ্যকার এলাকা বাদামী রং ধারণ করে ওশুকিয়ে যায় এবং মারাত্নকভাবে আক্রান্ত পাতা সহজেই ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। কচি পাতা মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হলে পাতা নিচের দিকে মুড়ে গিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে সরু হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা:
- নিমতেল ৫ মিলি + ৫ গ্রাম ট্রিকস প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করতে হবে।
- এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ২০ লিটার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি (ছেকে নেওয়ার পর) পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা।
- পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
- আক্রমণ বেশি হলে মাকড়নাশক ওমাইট ৫৭ইসি (প্রতি লিটার পানিতে ২.০ মিলি হারে) বা ভার্টিমেক ১.৮ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি হারে পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করে মাকড়ের আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব।
- মাকড়ের সাথে অন্য পোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রথমে মাকড়নাশক ব্যবহার করে অতপর কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
চ) মরিচ গাছের ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়:
এই পোকা কচি ও বাড়ন্ত ফল ছেদ করে ভিতরে ঢুকে ফলের ভিতরের অংশ খেয়ে ফেলে।
ক্ষতির ধরন:
ফলের বৃন্তের কাছে একটি ক্ষুদ্র আংশিক বদ্ধ কালচে ছিদ্র দেখা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত ফলের ভিতরে পোকার বিষ্ঠা ও পচন দেখা যাবে। পোকা আক্রান্ত ফল নিধারিত সময়ের পূর্বেই পাকে বা ঝরে পড়ে।
দমন ব্যবস্থা:
- সেক্স ফেরোমন ফাঁদ (প্রতি বিঘায় ১৫টি) ব্যবহার করে পোকা নিয়ন্ত্রণ করা।
ডিম নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ট্রাইকোগ্রামা কাইলোনিজ ও কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ব্রাকন হেবিটর, পর্যায়ক্রমিকভাবে মুক্তায়িত করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। - আধভাঙ্গা নিম বীজ (৫০ গ্রাম এক লিটার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভেজানোর পর মিশ্রণটি ছাকতে হবে) নির্যাস আক্রান্ত গাছে ১০ দিন পর পার ৩ বার স্প্রে করে এই পোকা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- আক্রমণ তীব্র হলে কুইনালফস ২৫ ইসি (দেবীকুইন/কিনালাক্স/করলাক্স) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে বা সাকসেস ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি হারে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- বেশি মাত্রায় মরিচ এ পোকা দ্বারা আক্রান্ত হলে ডেনিটল ১০ ইসি/ট্রিবন ১০ ইসি/ রিপকর্ড ১০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে অথবা ফেনকিল ২০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে অথবা সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি হারে এগুলোর যে কোন একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছের সমস্ত অংশ ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করা।
[সূত্র: বিএআরআই]