(১) মরিচের উন্নত/উচ্চ ফলনশীল জাত বারি মরিচ-৪ এর পরিচিতি ও গাছের বৈশিষ্ট্য
মরিচের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীগন মরিচের বেশ কয়েকটি লাইনের উপর গবেষণা চালিয়ে ‘বারি মরিচ-৪’ নামে মরিচের উচ্চ ফলন শীল শীতকালীন জাত উদ্ভাবন করেছে যা চরাঞ্চলসহ কম বেশী সারা দেশে চাষ করা সম্ভব। জাতটি বাংলাদেশ থেকে প্রবর্তিত এবং মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়ার গবেষণা মাঠে C0677 নামে লাইনটি যাচাই করা হয়।
পরবতীতে বগুড়া, গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহ চর অঞ্চলে এর ফলন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট যেমন রোগবালাই, পোকামাকড়ের আক্রমন ইত্যাদি যাচাই করা হয়। উচ্চ ফলনশীল ও আপেক্ষাকৃত কমরোগ ও পোকার আক্রমন হওয়ায় লাইনটি (C0677) বারি মরিচ -৪ জাত হিসেবে ২০১৮ সালে অবমুক্ত হয় করা হয়। জাতটির বৈশিষ্ট ও উৎপাদন প্রযুক্তি নিম্নে বর্ননা করা হলো।
বৈশিষ্ট্য:
- গাছ লম্বা, ঝোপালো ও প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ঠ।
- গাছ লম্বায় ৮০-১০০ সেমি এবং পাতার রং সবুজ।
- প্রতিটি মরিচের ফলের দৈর্ঘ্য ১০.০-১২.০ সেমি, ওজন গড়ে ১.৮-২.০ গ্রাম।
- ১০০০ বীজের ওজন ৪.৫-৫.০ গ্রাম।
- প্রতি গাছে মরিচের সংখ্যা ৪৮০-৫২০ টি এবং ওজন ১২০০-১৪০০ গ্রাম।
- এই জাতের গাছের মরিচের ত্বক পাতলা।
- এটি শীতকালে চাষ উপযোগী জাত।
- এই জাতটি মাঠে ১৪০-১৫০ দিন পর্যন্ত (নভেম্বর- মার্চ) থাকে।
- তুলনামুলকভাবে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়।
- কচি অবস্থায় ফল সবুজ রঙের এবং পাকা অবস্থায় চকচকে লাল রঙের হয়।
- হেক্টর প্রতি সবুজ অবস্থায় ফলন ১৮-২০ টন (কাচা মরিচ), ৪.৫-৫.০ টন (শুকনা মরিচ)।
(২) মরিচের উন্নত/উচ্চ ফলনশীল জাত বারি মরিচ-৪ চাষ পদ্ধতি ও মরিচ গাছের পরিচর্যা
ক) মাটি ও আবহাওয়া
- মরিচ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভাল জন্মে। সাধারণত ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস- ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সে. এবং সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা মরিচের গাছের বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা যায়।
- অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে মরিচ গাছের পাতা ঝরে যায় এবং গাছ পচে যায়।
- পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে-দোআঁশ থেকে এঁটেল-দোআঁশ মাটিতে মরিচ চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁ-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটি চাষাবাদের জন্য উত্তম।
- মাটি অতিরিক্ত ভেজা থাকলে ফুল ও ফল ঝরে পরে।
- মাটির pH ৬-৭ হলে মরিচের ফলন ভাল হয়।
খ) জমি তৈরী
- শীতকালীন মরিচের জন্য প্রথমে জমিকে চারিদিক দিয়ে আইলের অতিরিক্ত অংশ কেটে নিতে হবে। তারপর ৪-৬টি এবং ট্রাক্টর গভীর চাষ দিতে হবে।
- জমিতে শেষ চাষের আগে একবার মই দিয়ে সমান করে আগাছা বেছে ফেলে দিতে হবে। মাটির ঢেলা ভেঙ্গে মাটি ঝুরঝুর ও সমতল করে নিতে হবে।
- জমি তৈরীতে শেষ চাষের আগে জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে।
- এরপর বেড তৈরী করতে হবে। বেড চওড়ায় ১ মিটার হলে ভাল হয়। তবে দৈর্ঘ্য জমির আকার অনুসারে হলে ভাল হয়। বেডের উচ্চতা ১০-১৫ সে. মি. হতে হয়।
- পাশাপাশি দুটো বেডের মাঝখানে ৫০সে. মি. প্রশস্ত এবং ১০ সে. মি. গভীরতা বিশিষ্ট নালা পানি সেচ ও নিস্কাশনের সুবিধার্থে রাখতে হয়।
গ) মাটির অম্লিয়তা দুর করা
pH মান ৫.৮-৬.৫ এর চাইতে কম হলে মাটি বেশী অম্লিয় হয়ে যায় ফলে মরিচের ফলন কমে যাবে। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশ জমিতে ১-২ কেজি হারে চুন মিশিয়ে মাটির অম্লিয়তা দুর করতে হবে।
ঘ) বীজহার ও রোপন পদ্ধতি
মরিচ সাধারনত দুই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। যথাঃ
- সরাসরি বীজ বপন ও
- বীজ হতে চারা তৈরী করে।
- বীজ তলায় চারা তৈরী করলে ১-১.৫ কেজি/হেক্টর (২৪৭শতক) বীজের প্রয়োজন হয়। আবার সরাসরি ছিটিয়ে মরিচ চাষাবাদ করলে হেক্টর প্রতি (২৪৭ শতক) ৫-৬ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
- চারা রোপনের ক্ষেত্রে মরিচের চারা ৫০ X ৫০ সে.মি. দুরত্ব বজায় রেখে রোপন করা হয়।
- চারা একটু গভীরে লাগানো ভাল।
ঙ) মরিচের বীজ শোধন
- বীজ তলায় বীজ বপনের আগে মরিচের বীজকে শোধন করে নিতে হবে এতে করে চারা অবস্থায় রোগ-বালাই কম হবে।
- প্রোভেক্স জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করা যায়। প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স-২০০ দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।
- বীজ বপনের পূর্বে মরিচ বীজ উপরে উল্লেখিত ছত্রাক নাশক দ্বারা ৩০ (ত্রিশ) মিনিট ভিজিয়ে রেখে ছায়াযুক্ত স্থানে ১০-১৫ মিনিট শুকাতে হবে বীজশোধনের কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও শোধিত বীজ ব্যবহারে সাবধাণতা অবলম্বন করতে হবে।
- বীজ শোধনের ফলে বীজ বাহিত রোগ সংক্রমন থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
চ) বীজ বপন পদ্ধতি
- জমিতে বীজ বপনের আগে ১২ ঘন্টা পনিতে ভিজিয়ে রেখে; পানি থেকে উঠিয়ে হালকা ছায়াতে ২ গ্রাম/কেজি হারে প্রভেক্র মিশিয়ে শুকিয়ে ঝরঝরা করে মূল জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
- মনে রাখা দরকার বীজ কোন ক্রমেই ১-১.৫ সে.মি. মাটির গভীরে যেন না যায়।
- বপনের সময় জমিতে পর্যপ্ত পরিমাণ আদ্রতা বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে বীজ বপনের ২-৩ দিন পর হালকা করে সেচ দিতে হবে এতে বীজ তাড়াতাড়ি গজাবে।
ছ) সার ব্যবস্থপনা ও প্রয়োগ পদ্ধতি
নিম্নোক্ত হারে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। ভাল ফলন পেতে হলে মরিচের হেক্টর প্রতি নিম্নলিখিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের মাত্রা:
সারের নাম | হেক্টর প্রতি মোট পরিমাণ | শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ | সারের উপরি প্রয়োগ: ১ম কিস্তি | সারের উপরি প্রয়োগ: ২য় কিস্তি | সারের উপরি প্রয়োগ: ৩য় কিস্তি |
গোবর/কম্পোস্ট | ১০ টন | সম্পূর্ণ | – | – | – |
ইউরিয়া | ২১০ কেজি | – | ৭০ কেজি | ৭০ কেজি | ৭০ কেজি |
টিএসপি | ৩০০ কেজি | সম্পূর্ণ | – | – | – |
এমওপি | ২০০ কেজি | ১২৫ কেজি | ২৫ কেজি | ২৫ কেজি | ২৫ কেজি |
জিপসাম | ১১০ কেজি | সম্পূর্ণ | – | – | – |
জিংক সালফেট | ১২ কেজি | সম্পূর্ণ | – | – | – |
বোরিক এসিড | ১০ কেজি | সম্পূর্ণ | – | – | – |
সার প্রয়োগের পদ্ধতি:
- চারা রোপনের ২৫, ৫০ এবং ৭৫ দিন পর পর্যায়ক্রমে ১ম, ২য় ও ৩য় কিস্তিতে হেক্টর প্রতি সার উপরোক্ত পরিমাণে গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরে ছিটিয়ে ভিটির মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
- শেষ চাষের সময় সম্পূর্ন গোবর বা কম্পোষ্ট, টি.এস.পি., জিপসাম, জিংক,বোরন এবং ১২৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। বাকী এম.পি এবং ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে বীজ গজানোর/ চারা রোপনের ২৫, ৫০ এবং ৭৫ দিন পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- সাাধারনত সকাল বেলা কিংবা বিকাল বেলা জমিতে সার প্রয়োগ করতে হয়।
- প্রতি কিস্তি সার জমিতে সেচ দেওয়ার পর পানি বের করে দিয়ে অর্থাৎ জমিতে সেচ দেওয়ার পর যখন কোন পানি জমিতে জমে না থাকে সে সময় সার প্রয়োগ করতে হবে। কারন সেচের পর জমিতে সার প্রয়োগ করলে সার তাড়াতাড়ি মাটির সাথে মিশে যায়। এভাবে সার প্রয়োগ করলে সারের অপচয় কম হয়।
জ) নিড়ানী
জমিতে আগাছার পরিমানের উপর নির্ভর করে নিড়ানী দিতে হবে। যদি আগাছা বেশী থাকে তাহলে নিড়ানী বেশী দিতে হবে। অর্থাৎ জমিতে কোনক্রমেই আগাছা রাখা যাবেনা।
ঝ) পাতলাকরণ
বুনা মরিচের ক্ষেত্রে মরিচ গজানোর ২০-২৫ দিন পর ২-৩ ধাপে পাতলা করতে হবে। সরাসরি ছিটিয়ে বপন করলে ১৫-২০ সে.মি. পরপর গাছ রেখে পাতলা করতে হবে। প্রতি মিটার এ ৩৫-৪০ টি গাছ রেখে পাতলা করতে হবে।
ঞ) সেচ
মাটিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা মরিচ সহ্য করতে পারেনা আবার বেশী সেচ প্রয়োগ করলে গাছ লম্বা হয় ও ফুল ঝড়ে যায়। জমির আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে ৪/৫টি সেচ দিতে হবে। ফুল আসার সময় এবং ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পরিমানমত আর্দ্রতা রাখতে হবে।
ট) মালচিং
সেচের পর মাটিতে চটা বাঁধলে নিড়ানি দিয়ে ভেঙ্গে দিতে হবে তাতে শিকড় প্রয়োজনীয় বাতাস পায় এবং গাছের বৃদ্ধি তরান্বিত হয়।
ঠ) ফসল সংগ্রহ
- মরিচের ফুল ফোটা, ফল ধরা ও রং ধারণ তাপমাত্রা, মাটির উর্বরতা এবং ভালো জাতের উপর নির্ভর করে। উষ্ণ তাপমাত্রায় ফল তাড়াতাড়ি পাকে এবং ঠান্ডা তাপমাত্রায় ফল দেরিতে পাকে।
- মরিচ বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিন পর ফুল আসা শুরু করে। ফুল ধরার ১৫-২০ দিন পর ফল ধরা শুরু করে। ফল আসার ২০-২৫ দিন পর ফল পাকতে শুরু করে।
- চারা লাগানোর ক্ষেত্রে, চারা লাগানোর ৩৫-৪০ দিন পর গাছে ফুল ধরতে শুরু করে, ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফল ধরে এবং ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে আরম্ভ করে।
- কাঁচা অথবা পাকা অবস্থায় মরিচ তোলা হয়। মরিচ বীজের জন্য গাছের মাঝামাঝি অংশ থেকে অথাৎ দ্বিতীয় জোয়ারের মরিচ সংগ্রহ করতে হবে।
- প্রতি সপ্তাহে পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়।
- শুকানো মরিচের জন্য আধাপাকা মরিচ তুললে মরিচের রং ও গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফল লাল টকটকে হয়ে পাকলে সংগ্রহ করতে হবে।
- মরিচ সাধারনতঃ রৌদ্রজ্জল দিনে উত্তোলন করলে মরিচের গুনগতমান ভাল থাকে তাতে বাজার মূল্য বেশী পাওয়া যায়।
- ফল উঠানোর সময় বোটার উপরের অংশ এবং ফলের উপরের অংশ অর্থাৎ বোটার কাছের অংশ ধরে ফল তুলতে হবে।
ড) সংগ্রহ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
- জমি থেকে ফসল সংগ্রহের পর সংগৃহীত মরিচ হতে আঘাত প্রাপ্ত, রোগাক্রান্ত, বিকৃত, কাঁচা, অর্ধপাকা ও সম্পূন্ন পাকা মরিচ গুলোকে আলাদা করে ছায়াযুক্ত স্থানে ৮-১০ ঘন্টা হালকা ছড়িয়ে রাখতে হবে।
- কোন ক্রমেই মরিচের বোঁটা ছাড়ানো যাবে না তাতে মরিচ অল্প সময়ের মধ্যেই তার সজীবতা হারিয়ে ফেলে ও পচে যায়।
- সুর্যালোকের সাহায্যে ফল শুকানো দেশের একটি প্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু সর্তক না হলে অতিরিক্ত সূর্য তাপে ফল সাদাটে রং এবং সংগ্রহকৃত ফলে বৃষ্টি বা শিশির পড়লে ফল পঁচা রোগ দেখা দেয়। এর পরে পাকা মরিচ পলিথিনে বা চাতালে বা পাকা মেঝেতে রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশে শুকাতে হবে।
- শুকানোর সময় মরিচ পাতলা করে বিছিয়ে দিতে হবে। মরিচের আদ্রতা ১০-১২% এ পৌছলে উক্ত মরিচ সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত হবে।
- শুকানো মরিচ ঝাকি দিলে ভিতরের বীজগুলো ঝনঝন শব্দ করলে বুঝতে হবে মরিচ ভালভাবে শুকিয়েছে।
- সাধারণত সূর্য্যের আলোতে মরিচ শুকাতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে।
ঢ) বীজ সংরক্ষণ
সাধারণতঃ জাতভেদে পাতলা ত্বক ও শুস্ক পদার্থের পরিমান কম এই জাতীয় মরিচ তাড়াতাড়ি শুকানো যায় কিন্তু পুরু মাংসল ত্বক বিশিষ্ট মরিচ শুকানো বেশ সময় সাপেক্ষ এবং কঠিন।
মরিচ শুকানোর পরে ছায়াযুক্ত স্থানে ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।
ছয় মাস হতে এক বছর সময় পর্যন্ত মরিচ সংরক্ষণের জন্য টিনের পাত্র, পলিথিন ব্যাগ, মাটির পাত্র, ডুলি বা ছালার ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। তবে দ্বিস্তর বিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ ও টিনের পাত্রের মধ্যে পলিথিন দিয়ে তার ভিতর মরিচ রাখলে মরিচের রং ও গুনগতমান ভাল থাকে।
সংরক্ষিত মরিচ মাঝে মাঝে রৌদ্রে দিলে ভাল থাকে।
মরিচ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মরিচের বোটা যেন মরিচ থেকে পৃথক না হয়ে যায় সে দিকে সর্তক দৃষ্টি রাখতে হবে। বোটা মরিচ থেকে পৃথক হয়ে গেলে মরিচের বীজ বের হয়ে যায়। ফলে মরিচের ওজন ও ঝাঁঝ দুই’ই কমে যায় এবং মরিচের বীজের গুনগতমান হ্রাস পায়।
সংরক্ষিত মরিচের মধ্যে কয়েক টুকরা চারকোল/কাঠের কয়লা রেখে দিলে মরিচ ভাল থাকে। এ ক্ষেত্রে চারকোল/কাঠের কয়লা অতিরিক্ত র্আদ্রতা শোষন করে নেয়। ফলে সহজে রোগ বা পোকার আক্রমণ হয় না।
(৩) রোগবালাই ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
ক) রোগবালাই প্রতিকার
i) পাতা পচাঁ রোগ
- জাতটিতে রোগের আক্রমণ অন্যান্য জাতএর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হয়। তবে আবহাওয়া কুয়াশাচ্ছন্ন এবং হঠাৎ রাত্রির তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়, তবে মাঝে মাঝে চুয়ানিফোরা পাতা পচাঁ রোগের আক্রমণ হতে পারে।
- এই রোগে চারা ও বয়স্ক গাছের শাখা-প্রশাখা, পাতা, ফুল ও ফল আক্রান্ত হয়।
- চুয়ানিফোরা (Choanephora sp.) নামক ছত্রাক এই রোগের জন্য দায়ী।
- প্রথমে উপরের পাতায় পানি ভেজা দাগ হয় ও পাতা দ্রুত পঁচতে থাকে। আক্রান্ত অংশে ছত্রাকের মাইসেলিয়াম খালি চোখে দেখা যায়। রোগের মাএা বেশী হলে ৫-৭ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছ মারা যায়।
দমন ব্যবস্থা:
রোগের লক্ষন দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে অটোষ্টিন মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার পাতায় স্প্রে করতে হবে।
খ) পোকামাকড় দমন
কীটপতঙ্গের মধ্যে মরিচে থ্রিপস ও মাইট পোকার আক্রমন লক্ষ্য করা যায়। তবে ইহাতে অন্যান্য জাতের তুলনায় মাইট/থ্রিপসের আক্রমন কম হয়।
i) থ্রিপস
- সাধারনতঃ কচি চারা গাছ ও চারা রোপনের ৭-১৭ দিনের মধ্যে এই পোকা মরিচ গাছকে আক্রমন করে।
- থ্রিপস কচি পাতার রস শুষে খায় ফলে পাতা উপরের দিকে কুকড়ে যায়।
- পাতার মধ্যশিরার নিকটবতী এলাকা বাদামী রঙ ধারণ করে ও শুকিয়ে যায় নতুন কিংবা পুরাতন পাতার নিচের পিঠে অধিক ক্ষতি হয় নৌকার খোলের ন্যায় পাতা উপরের দিকে কুকড়ে যায় আক্রান্ত পাতা বিকৃত ও বেঢপ দেখায়।
দমন ব্যবস্থা:
- আক্রমন বেশি হলে ফিপ্রোনিল (রিজেন্ট/এসেন্ড/গুলি/অন্য নামের) বা ডাইমেথয়েট (বিস্টারথোয়েট/ টাফগর/অন্য নামে) ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ০.৪ মিলি হারে স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রন করা যায়।
- চারা রোপনের ১০-৩০ দিনের মধ্যে তিন বার ১০ দিন অন্তর অন্তর এই পোকা দমনের জন্য প্রতি ১০ লিটার পারিতে ৫মিলি এ্যাডমায়ার/টিডো/গেইন ঔষধ প্রতি ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হয়।
ii) মাইট
- মাইট মরিচ গাছের কচিও বয়স্ক পাতায় আক্রমন করে।
- সাধারণত পাতার নীচের দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিরার মধ্যকার এলাকা বাদামী রং ধারণ করে ও শুকিয়ে যায় এবং মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতা সহজেই ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়।
- কচি পাতা মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হলে পাতা নীচের দিকে মুড়ে গিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে নরম হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা:
- আক্রমনর বেশি হলে মাকড়নাশক ওমাইট ৫৭ইসি (প্রতি পানিতে ২.০ মিলি হারে) বা ভার্টিমেক ১৮ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ মিলি হারে পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করে মাকড়ের আক্রমন প্রতিহত করা সম্ভব।
- মাকড়নাশক পাওয়া না গেলে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (কুমুলাক্স, থিওভিট ইত্যাদি) স্প্রে করে মাকড়ের আক্রমন কমানো সম্ভব।
- মাকড়ের সাথে অন্য পোকার আক্রমন দেখা দিলে প্রথমে মাকড়নাশক ব্যবহার করে অতপর কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
[সূত্র: বিএআরআই]