Skip to content

 

পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি বা মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ

পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি বা মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ

(১) মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষের সুবিধা

যেসব প্রজাতির মাছ রাক্ষুসে স্বভাবের নয়, খাদ্য নিয়ে প্রতিযোগিতা করে না, জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরে বাস করে এবং বিভিন্ন স্তরের খাবার গ্রহণ করে- এসব গুণের কয়েক প্রজাতির মাছ একই পুকুরে একত্রে চাষ করাকেই মিশ্র চাষ বলে।

মিশ্র চাষ করার জন্য কার্প বা রুই জাতীয় মাছ বেশি উপযোগী, যেমন সিলভার কার্প, বুই, কাতলা, কার্পিও ইত্যাদি।

আমাদের দেশি কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে রুই, কাতলা ও মৃগেল অন্যতম। এরা পুকুরে মিশ্র চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

এ মাছগুলো পুকুরে চাষের সুবিধাগুলো নিচে দেওয়া হলো-

  1. এরা জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরের খাবার খায় যেমন- কাতলা পুকুরের উপরের স্তরে, রুই মধ্য স্তরে ও মৃগেল নিচের স্তরের খাবার খায়।
  2. এরা রাক্ষুসে স্বভাবের নয়।
  3. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
  4. দ্রুত বর্ধনশীল।
  5. চাষের জন্য সহজেই হ্যাচারিতে পোনা পাওয়া যায়।
  6. স্বল্প মূল্যের সম্পূরক খাবার খেয়ে বেড়ে উঠে।
  7. খেতে সুস্বাদু ও বাজারে চাহিদা আছে।

মিশ্র চাষের সুবিধা-

  1. মাছ পুকুরের বিভিন্ন স্তরে থাকে ও খাবার খায় বলে পুকুরের সকল জায়গা ও খাবারের সদ্যবহার হয়।
  2. কোনো স্তরের খাবার জমা হয়ে নষ্ট হয় না। ফলে পুকুরের পরিবেশ ভালো থাকে।
  3. মিশ্র চাষে মাছের রোগবালাই কম হয়।
  4. সর্বোপরি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

(২) মিশ্র মাছ চাষের জন্য আদর্শ পুকুর নির্বাচন

মিশ্র চাষের জন্য উপযোগী পুকুর নির্বাচনে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে তা হচ্ছে-

  1. পুকুরটি বন্যামুক্ত হবে। এজন্য পুকুরের পাড় অবশ্যই উচু ও মজবুত হবে।
  2. পুকুরের পানির গড় গভীরতা ২-৩ মিটার হবে এবং শুকনার সময় পানির গভীরতা হবে কমপক্ষে ১ মিটার।
  3. দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ বা এঁটেল মাটির পুকুর সবচেয়ে ভালো। কারণ এ মাটির পানি ধারণক্ষমতা বেশি।
  4. পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড়ে বড় গাছ থাকবে না।
  5. পুকুরটি খোলামেলা হবে যেন প্রচুর আলো-বাতাস পায়।
  6. আয়তন ৩০-৫০ শতক হলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয়।
  7. রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকারক পোকামাকড় থাকবে না।
  8. পুকুরে আগাছা থাকবে না।
  9. পুকুরের তলায় বেশি কাদা থাকবে না।

মাছের জীবনধারণের মাধ্যম হচ্ছে পানি। পুকুরের পানির গুণাগুণ মাছ চাষে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

একটি উৎপাদনশীল পুকুরের পানির নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো খেয়াল রাখা প্রয়োজন-

ক) গভীরতা

মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হচ্ছে গ্রাংকটন। এটি উৎপাদনের জন্য সুর্যালোক দরকার।

পুকুরের পানির গভীরতা বেশি হলে সূর্যালোক পানির অতি গভীরে পৌছাতে পারে না। তাই পর্যাপ্ত প্রাংকটন তৈরি হয় না। আবার গভীরতা কম হলে পানি অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে ও পুকুরের তলদেশে আগাছা জন্মাতে পারে।

খ) পানির ঘোলাত্ব

পুকুরে ভাসমান কাদা ও মাটির কণা ঘোলাত্ব সৃষ্টি করে। তা ছাড়া বৃষ্টি হলে পুকুরের পানি ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে।

ঘোলাত্ব সৃষ্টির ফলে পানিতে সূর্যের আলো প্রবেশে বাধা পায়, এবং পানিতে খাদ্য তৈরি হয় না। মাছের ফুলকা নষ্ট হয়ে যায়।

এ সমস্যা প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রতি শতকে ৩০ সে.মি. গভীরতার জন্য ২৪০-২৫০ গ্রাম ফিটকিরি অথবা প্রতি শতকে ১.২ কেজি খড় দেওয়া যেতে পারে।

গ) পানির রং

পানির রং ঘন সবুজ হয়ে যাওয়া বা পানির উপর শেওলার স্তর পড়া মাছের জন্য ক্ষতিকর। প্রতি শতকে ১২-১৫ গ্রাম তুতের ছোট ছোট পোলা বেঁধে রাখলে পানিতে ঢেউয়ের ফলে তুঁত পানিতে মিশে শেওলা দমন করে।

অতিরিক্ত আয়রন বা লাল শেওলার জন্য পানির উপর লাল স্তর পড়তে পারে। এ জন্য পুকুরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। খড়ের বিচালি বা কলাগাছের পাতা পেচিয়ে দড়ি তৈরি করে পানির উপর দিয়ে টেনে তা তুলে ফেলা যায়।

পানির রং যদি হালকা সবুজ, লালচে সবুজ ও বাদামি সবুজ হয় তবে বোঝা যাবে যে, পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য প্রাংকটন পরিমিত পরিমাণ আছে।

ঘ) তাপমাত্রা

পানির তাপমাত্রা কমে গেলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও মাছের খাদ্য গ্রহণের হার কমে যায়। আবার তাপমাত্রা বেড়ে গেলে খাদ্য গ্রহণের হার বেড়ে যায়। এজন্য শীতকালে সার ও সম্পূরক খাদ্যের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দিতে হয়। রুই জাতীয় মাছ ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো হয়।

ঙ) দ্রবীভূত গ্যাস

মাছ তার শ্বাসকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন থেকে ফুলকার সাহায্যে গ্রহণ করে।

পুকুরে বিভিন্ন প্রাণী, উত্তিদ ও শেওলার অতিরিক্ত পচন, মেঘলা আবহাওয়া, ঘোলাত্ব, পানিতে অতিরিক্ত লৌহের উপস্থিতির কারণে অক্সিজেন কমে যায়। সে সাথে কার্বনভাই-অক্সাইভ ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস বেড়ে যায়।

অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে মাছ পানির উপর ভেসে মুখ হা করে খাবি খেতে থাকে। কৃত্রিম উপায়ে পুকুরে বাঁশ পিটিয়ে, সাতার কেটে এ অবস্থা দূর করা যায়।

(৩) পুকুরে মিশ্র মাছ চাষের জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ

ফসল ফলানোর জন্য চারা রোপণের আগে জমি চাষ, সেচ দেওয়া, সার প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে কৃষিজমি প্রস্তুত করতে হয়। পুকুরে পোনা ছাড়ার আগেও তেমনি পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হয়।

মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতির ধাপগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো-

ক) পুকুরের পাড় ও তলদেশ মেরামত

পুকুরের পাড় ভাঙা থাকলে তা উঁচু করে বেঁধে দিতে হবে। পাড়ে বড় গাছপালা থাকলে তার ডাল ছেঁটে দিতে হবে। এতে করে পুকুরে সূর্যের আলো পড়বে ও প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হবে।

পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। ৩-৪ বছর পর পর একবার পুকুর শুকিয়ে তলার অতিরিক্ত কাদা তুলে ফেলা উচিত ও রোদে পুকুর কয়েকদিন শুকানো উচিত।

খ) আগাছা পরিষ্কার

পুকুরে জলজ আগাছা যেমন- কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি পানিতে মাছের খাদ্য প্লাংকটনের পুষ্টি শোষণ করে নেয় ও পুকুরে সূর্যের আলো পড়তে বাধা দেয়। তাই পুকুরে সব ধরনের জলজ আগাছা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

গ) রাক্ষুসে ও অপ্রয়োজনীয় মাছ অপসারণ

শোল, গজার, চিতল, বোয়াল ইত্যাদি চাষের মাছ বা পোনা খেয়ে ফেলে। আবার চাষকৃত প্রজাতি ছাড়া অন্য মাছ চাষকৃত মাছের সাথে খাদ্যের জন্য প্রতিযোগিতা করে। পুকুরের পানি শুকিয়ে এসব মাছ ধরে ফেলা যায়।

পুকুরে পানি কম থাকলে বারবার জাল টেনেও তা করা যায়। পুকুরে ১ ফুট বা ৩০ সে. মি. গভীরতার জন্য প্রতি শতকে ৩০-৩৫ গ্রাম মাছ মারার বিষ রোটেনন পাউডার পানিতে গুলে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপর জাল টেনে পুকুরের পানি উলটপালট করে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর সমস্ত মাছ পানির উপর ভেসে উঠলে তা তুলে ফেলতে হবে। রোটেনন ব্যবহার করা মৃত মাছ খাওয়া যাবে।

ঘ) চুন প্রয়োগ

পুকুর শুকনা হলে প্রতি শতকে ১-২ কেজি চুন পাউডার করে তলায় ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুরে পানি থাকলে বালতি বা ড্রামে গুলে ঠাণ্ডা করে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।

চুন মাটি ও পানি জীবাণু মুক্ত করে ও উর্বরতা বৃদ্ধি করে, পানির ঘোলাটে অবস্থা দূর করে এবং তলদেশের বিষাক্ত গ্যাস দূর করে।

ঙ) সার প্রয়োগ

পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির জন্য সার প্রয়োগ করতে হয়। চুন প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর সার দিতে হবে।

জৈব সারের জন্য পুকুরে প্রতি শতকে ৫-৭ কেজি গোবর বা ৩-৪ কেজি হাস মুরগির বিষ্ঠা এবং অজৈব সারের মধ্যে প্রতি শতকে ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি ও ২০-৩০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য তেরি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে।

চ) পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা

সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে।

এজন্য ২০ সে.মি. ব্যাসযুক্ত টিনের তৈরি একটি সাদা-কালো থালা (সেকিডিস্ক) সুতা ছারা পানিতে ডোবানোর পর যদি ২৫-৩০ সে.মি. গভীরতায় থালা না দেখা যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে।

অথবা হাতের কনুই পর্যন্ত ডুবিয়ে যদি হাতের তালু না দেখা যায় তবে বুঝতে হবে পরিমিত প্রাকৃতিক খাদ্য রয়েছে। অন্যথায় পুনরায় কিছু সার দিয়ে ২-৩ দিন পর প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে কি না দেখতে হবে

(৪) মাছের পোনা মজুদ এবং মজুদ পরবর্তী পরিচর্যা

ক) পোনা মজুদ

পুকুরে পোনা ছাড়ার জন্য নিকটবর্তী কোনো সরকারি বা বেসরকারি হ্যাচারি বা নার্সারি খামার থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। কাছাকাছি স্থানে মাটির হাঁড়ি বা আ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে পোনা পরিবহন করা যায়। দূরবর্তী স্থানের ক্ষেত্রে পলিথিন ব্যাগে অক্সিজেন দিয়ে পোনা পরিবহন করা উচিত।

পোনা এনে সরাসরি পুকুরে ছাড়া উচিত নয় ৷ পোনা ভর্তি পলিব্যাগ বা পাত্র পুকুরের পানিতে ১৫-২০ মিনিট ভাসিয়ে রাখতে হবে। এ সময় অল্প অল্প করে পলিথিনে বা পাত্রে পুকুরের পানি মেশাতে হবে। এতে করে পাত্রের পানির তাপমাত্রা ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা প্রায় সমান হবে। এরপর পলিব্যাগ বা পাত্র কাত করে পোনা আস্তে আস্তে পুকুরে ছাড়তে হবে।

সকালে বা বিকালে বা দিনের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে।

পুকুরে ৭-১০ সে.মি. আকারের পোনা শতকে ২৫-৪০টি মজুদ করা যায়। কাতলা ১০-১৬টি, রুই ৭-১২টি, মৃগেল ৭-১২টি মজুদ করা যেতে পারে। এ সকল মাছের সাথে অন্য বিদেশি মাছ চাষ করা হলে সেক্ষেত্রে সিলভার কাপ ৭-১২টি, কাতলা ৩-৪টি, রুই ৫-৮টি, মৃগেল ৬-১০টি, কার্পিও ১-২টি ও গ্রাস কার্প ২-৪টি ছাড়তে হবে। তা ছাড়া প্রতি শতকে অতিরিক্ত ১০-১৫টি সরপুটির পোনা মজুদ করা যায়।

খ) সার প্রয়োগ

পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য না থাকলে মাছের বৃদ্ধি ভালো হয় না। তাই পুকুরে দৈনিক অথবা প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়মিত সার দেওয়া উচিত। সার পানির সাথে গুলে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।

পুকুরে সার প্রয়োগের তালিকা-

সারের নামমাত্রা (শতক/সপ্তাহ)
গোবর বা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা২-২.৫ কেজি বা ১-১.৫ কেজি
ইউরিয়া৪০-৫০ গ্রাম
টিএসপি২০-২৫ গ্রাম

গ) সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ

  • পুকুরে পোনা মজুদের পর থেকেই দৈনিক সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে। সুষম খাবার তৈরির জন্য ফিশমিল, সরিষার খৈল, গমের ভূসি, চালের কুঁড়া, আটা ও ভিটামিন যথাক্রমে ২০ঃ৩০ঃ৪৫ঃ৪.৫ঃ০.৫ অনুপাতে মিশিয়ে খাবার তৈরি করে মাছকে দেওয়া যায়।
  • খাবার দেওয়ার ১০-১২ ঘণ্টা আগে খৈল ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভেজা খৈলের সাথে বাকি উপাদানগুলো অল্প পানি দিয়ে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে বল আকারে পুকুরের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে দিতে হবে।
  • দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্য সমান দুইভাগে ভাগ করে সকালে ও বিকালে দিতে হবে।
  • এ ছাড়া বাজার থেকে কেনা কারখানায় তৈরি মৎস্য খাদ্যও পুকুরে সরবরাহ করা যেতে পারে।
  • পুকুরে প্রতিদিন মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ২-৫ ভাগ এবং শীতের সময় ১-২ ভাগ খাবার দিলেই চলে।

ঘ) মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা

পুকুরে মাছ চাষের সময় বিভিন্ন কারণে মাছের রোগ হতে পারে। পুকুরের পরিবেশ খারাপ হলে মাছ সহজেই রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় ও মারা যেতে পারে। ফলে মাছ চাষ লাভজনক হয় না।

চাষকালীন সময়ে মাছের ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ, পেটফোলা রোগ এবং মাছের দেহে উকুনের আক্রমণ হতে পারে।

রোগ হলে মাছ পানির উপরিভাগে অস্বাভাবিকভাবে সীতার কাটে, খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয় বা বন্ধ করে দেয়, ফুলকার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়, মাছের দেহে বিভিন্ন দাগ বা ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়।

মাছে রোগ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগাক্রান্ত মাছ পুকুর হতে সরিয়ে ফেলতে হবে।

প্রাথমিকভাবে পুকুরে শতকে ১ কেজি চুন বা ২৫-৩৫ গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দেওয়া যেতে পারে। অথবা ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম লবণ গুলিয়ে তাতে মাছগুলোকে ১ মিনিট গোসল করিয়ে আবার পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।

ঙ) মাছ আহরণ

রুই, কাতলা, মৃগেল মাছ ১ বছর বয়স পর্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এরপর খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও দৈহিক বৃদ্ধি সে হারে ঘটে না। এ জন্য নির্দিষ্ট বয়সে মাছ ধরে ফেলতে হবে। তা না হলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।

কাতলা ৭-১২ মাসের মধ্যে ওজনে ১-১.৫ কেজি হয়, বুই ও মৃগেল মাছ ৯-১২ মাসের মধ্যে ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হয়।

(৫) চাষকৃত মাছ সংগ্রহ ও বাছাই করার নিয়ম

মাছ দ্রুত পচনশীল দ্রব্য। মাছ ধরার পর তার গুণগত মান ভালো রেখে ক্রেতার কাছে পৌছানোর জন্য সতর্কতার সাথে সংগ্রহ, বাছাই ও রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। তাজা মাছকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করলে দ্রুত পচনক্রিয়া ঘটে।

মাছ সংগ্রহ ও বাছাইয়ের সময় যত্রসহকারে নাড়াচাড়া করতে হয় যেন মাছ আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।

মাছের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এমন হতে হবে যেন সহজেই ধুয়ে পরিষ্কার করা যায় এবং মাছকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।

আঘাত পাওয়া মাছ, পচা বা রোগাক্রান্ত মাছ দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। মাছকে সূর্যালোকের নিচে দীর্ঘক্ষণ রাখা উচিত নয়।

বড় মাছের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে রক্ত ঝরতে দিতে হবে। এ জন্য মাছের উপর পানির প্রবাহ দেওয়া যেতে পারে।

মাছকে ব্রিচিং পাউডার যুক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক কমে যায়। এ জন্য পানিতে লিটার প্রতি ২৫-৩০ মিলিগ্রাম ব্লিচিং পাউডার মেশাতে হয়। ব্লিচিং পাউডার পাওয়া না গেলে পরিষ্কার ট্যাপ বা টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করতে হবে।

বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মাছকে প্রজাতি ও আকার অনুযায়ী আলাদা করা যায় ৷ আবার মাছের গুণাগুণের উপর ভিত্তি করেও একে বিভিন্ন মান বা গ্রেডে ভাগ করা যায়। যেমন-

বাহ্যিক অবস্থাপেশিফুলকাচোখমান বা গ্রেড
উজ্জ্বল ও চকচকে স্বাভাবিক রংদৃঢ় ও স্থিতিস্থাপক অর্থ্যাৎ আঙুলে চাপ দিলে সাথে সাথে ফিরে আসেগাঢ় লালউজ্জ্বল, চকচকে ও লেন্স উচু স্বচ্ছউত্তম
ঔজ্জ্বল্য নেই, হালকা লালচে হলুদশক্ত ও চাপ দিলে ডেবে যায় নাবাদামি বা ধূসরচোখ বিবর্ণ ও ঢোকানো, পাতা ঘোলাটে, সামান্য রক্তাভমাঝারি বা সন্তোষজনক
লালচে হলুদচাপ দিলে পেশি সামান্য নরম দুর্গন্ধ পাতাবাদামি ও ঘোলাটেবিবর্ণ ও ডোবানো, দেবে যায়, রক্তময়নিম্নমান

মাছ সংগ্রহ বা বাছাইয়ের পর বরফের সাহায্যে সংরক্ষণ করে বাজারজাত করা হয়। আমাদের বাংলাদেশে মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফের ব্লককে গুঁড়া করে ব্যবহার করা হয়।

প্রতি ১ ভাগ মাছের জন্য ২ ভাগ বরফ দিতে হয় এবং শীতকালে প্রতি ১ ভাগ মাছের জন্য ১ ভাগ বরফ দিলেই চলে।

আমাদের বাংলাদেশে প্রচলিত পদ্ধতির ক্ষেত্রে বাঁশের চাটাই কিংবা মাদুরের তৈরি ঝুড়িতে বরফ ও মাছ স্তরে স্তরে সাজিয়ে একটি মাদুর বা চটের টুকরো দিয়ে ঢেকে সেলাই করে দেওয়া হয় এবং পরে কাঠের বাক্সে দুরবতা স্থানে পরিবহন করা হয়।

দূরে মাছ পরিবহনের জন্য শীতলীকৃত ভ্যান ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। কাছাকাছি পরিবহনের জন্য তাপ প্রতিরোধী বরফ বাক্স ব্যবহার করা প্রয়োজন।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page