Skip to content

ভুট্টা চাষের পদ্ধতি (ভুট্টা চাষ পদ্ধতি pdf সহ)

ভুট্টা চাষের পদ্ধতি (ভুট্টা চাষ পদ্ধতি pdf সহ)

ভুট্টা একটি অধিক ফলনশীল দানা শস্য। এই গাছ বর্ষজীবী গুল। ভুট্টা গ্রামিনী গোত্রের ফসল। বৈজ্ঞানিক নাম Zea mays L. একই গাছে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল জন্যে। পুরুষ ফুল একটি মঞ্জরী দতে বিন্যন্ত হয়ে পাছের মাথায় বের হয়। স্ত্রী ফুল গাছের মাঝামাঝি উচ্চতায় কাণ্ড ও পাতার অক্ষ-কোণ থেকে বের হয়। ভুট্টার ফল মঙ্গনীকে মোচা বলে। মোচার ভিতরে দানা সৃষ্টি হয়। ভুট্টার দানা ক্যারিওপসিস জাতীয় ফল। এতে ফলত্বক ও বীজত্বক একসাথে মিশে থাকে। তাই ফল ও বীজ আলাদা করে চিনা যায় না।

ধান গমের তুলনায় পুষ্টিমাণ বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফেন ও লাইসিন অধিক পরিমাণে আছে। এছাড়া, হলদে রঙের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন ‘এ’ থাকে।

ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে ভুট্টা ও ভুট্টার আটা এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

বিভিন্ন জাতের ভুট্টার মোচা
বিভিন্ন জাতের ভুট্টার মোচা

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এ পর্যন্ত ভুট্টার বেশ কিছু উন্নত জাত ও হাইব্রিড ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হলো- শুভ্রা; বর্ণালী; মোহর;  খই ভুট্টা; বারি ভুট্টা-৫,৬,৭; বারি মিষ্টি ভুট্টা-১; বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭; বারি বেবি  কর্ন-১; বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ১, ২; বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবি কর্ণ ১; প্রভৃতি।

(জাতগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে যেতে হবে→ https://inbangla.net/krisi/হাইব্রিড-ভুট্টার-জাত/ এখানে প্রতিটি জাতের গাছ ও মোচার ছবি, পরিচিতি, গুণ-বৈশিষ্ট্য, ফলনের পরিমাণ ইত্যাদি বর্ণনা করা আছে।)

সিনজেনটা, এ সি আই লিমিটেড, ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ, লাল তীর সীড লিমিটেড প্রভৃতি বেসরকারি বীজ কম্পানী/প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত ভুট্টার জাত সমূহ। যেমন- এনকে-৪০; প্রোফিট; শাহী, ডন-১১১; ডন-১১২; প্যাসিফিক-১৩৯; কাভেরি-৩৬৯৬; ঊত্তরণ; উত্তরন-২; উত্তরন সুপার; বিপ্লব; বিপ্লব-২; শক্তি; শক্তি-৩; প্যাসিফিক-১১; প্যাসিফিক-৬০; প্যাসিফিক-২২৪; প্যাসিফিক ২৯৩; প্যাসিফিক-৫৫৫; হাইব্রিড প্যাসিফিক ৯৮৪; প্যাসিফিক ৯৯৯ সুপার; প্রভৃতি।

(জাতগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে যেতে হবে→ https://inbangla.net/krisi/ভুট্টার-জাত-সমূহ/ এখানে প্রতিটি জাতের গাছ ও মোচার ছবি, পরিচিতি, গুণ-বৈশিষ্ট্য, ফলনের পরিমাণ ইত্যাদি বর্ণনা করা আছে।)

(১) ভুট্টা চাষ পদ্ধতি

মাটি: বেলে-দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি চাষের জন্য উপযোগী। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে।

বপনের সময়:

বাংলাদেশে রবি মৌসুমে মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য-অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমে ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্য-ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ) পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

বীজের হার ও বপন পদ্ধতি:

  • শুভ্রা, বর্ণালী ও মোহর জাতের ভুট্টার জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি এবং খইভুট্টা জাতের জন্য ১৫-২০ কেজি হারে বীজ বুনতে হয়।
  • বীজ সারিতে বুনতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেমি। সারিতে ২৫ সেমি দূরত্বে ১টি অথবা ৫০ সেমি দূরত্বে ২টি গাছ রাখতে হবে।

সারের পরিমাণ:

ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের পরিমাণ নিচে দেওয়া হল।

See also  ৩২টি উন্নত জাতের ভুট্টার নাম
সারের নামপরিমাণ/হেক্টর; কম্পোজিট; রবিপরিমাণ/হেক্টর; কম্পোজিট; খরিপ;পরিমাণ/হেক্টর; হাইব্রিড; রবি;
ইউরিয়া১৭২-৩১২ কেজি২১৬-২১৪ কেজি৫০০-৫৫০ কেজি
টিএসপি১৬৮-২১৬ কেজি১৩২-২১৬ কেজি২৪০-২৬০ কেজি
এমপি৯৬-১৪৪ কেজি৭২-১২০ কেজি১৮০-২২০ কেজি
জিপসাম১৪৪-১৬৮ কেজি৯৬-১৪৪ কেজি২৪০-২৬০ কেজি
জিংক সালফেট১০-১৫ কেজি৭-১২ কেজি১০-১৫ কেজি
বরিক এসিড৫-৭ কেজি৫-৭ কেজি৫-৭ কেজি
গোবর৪-৬ টন৪-৬ টন৪-৬ টন

সার প্রয়োগ পদ্ধতি:

  • জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে অনুমোদিত ইউরিয়ার এক তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে জমি চাষ দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান ২ কিস্তিতে প্রযোগ করতে হবে।
  • প্রথম কিস্তি বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানোর ৪০-৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
  • চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

সেচ প্রয়োগ পদ্ধতি:

উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। উদ্ভাবিত জাতে নিম্নরূপ ৩-৪টি সেচ দেওয়া যায়।

  1. প্রথম সেচ: বীজ বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে (৪৬ পাতা পর্যায়)
  2. দ্বিতীয় সেচ: বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে (৮-১২ পাতা পর্যায়)
  3. তৃতীয় সেচ: বীজ বপনের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে (মোচা বের হওয়া পর্যায়)
  4. চতুর্থ সেচ: বীজ বপনের ৮৫-৮৯ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার পূর্ব পর্যায়)

ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোন ক্রমেই জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ভুট্টা সংগ্রহ:

  • ভুট্টা পুষ্ট ও পরিপক্ব হলে সংগ্রহ করতে হবে। দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের ক্ষেত্রে উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছাড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে।
  • ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে।
  • জাত ভেদে, ভুট্টার গড় ফলন হেক্টরপ্রতি কম্পোজিট জাতে গড়ে ৪ থেকে ৫.৫ মেট্রিক টন, হাইব্রিড জাতে ৮ থেকে ১৪ মেট্রিক টন এবং খই ভুট্টার ফলন হেক্টরপ্রতি গড়ে ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন।
  • বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে।

যত্নে উৎপাদন করা এ ভুট্টাকে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে খুব যত্ন করে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করে সমৃদ্ধি আনতে আমাদের হয়তো আর খুব বেশি দিন  অপেক্ষা করতে হবে না।

(২) ভুট্টা চাষে রোগ-বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

ক) ভুট্টার বীজ পচা এবং চারা গাছের রোগ দমন

ভুট্টার দানা পঁচা
ভুট্টার দানা পঁচা

বীজ পচা এবং চারা নষ্ট হওয়ার কারণে সাধারণত ক্ষেতে ভুট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায়।

নানা প্রকার বীজ ও মাটিবাহিত ছত্রাক যেমন- পিথিয়াম, রাইজকটনিয়া, ফিউজেরিয়াম, পেনিসিলিয়াম ইত্যাদি বীজ বপন, চারা ঝলসানো, গোড়া ও শিকড় পচা রোগ ঘটিয়ে থাকে।

জমিতে রসের পরিমাণ বেশি হলে এবং মাটির তাপমাত্রা কম থাকলে বপনকৃত বীজের চারা বড় হতে অনেক সময় লাগে। ফলে এ সময়ে ছত্রাক আক্রমণের মাত্রা বেড় যায়।

প্রতিকার:

  • সুস্থ, সবল ও ক্ষতমুক্ত বীজ এবং ভুট্টার বীজ পচা রোগ প্রতিরোধী বর্ণালী ও মোহর জাত ব্যবহার করতে হবে।
  • উত্তমরূপে জমি তৈরি করে পরিমিত রস ও তাপমাত্রায় (১৩° সে. এর বেশি) বপন করতে হবে।
  • থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করলে ভুট্টার বীজ পড়া রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়।

খ) ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ দমন

পাতা ঝলসানো রোগাক্রান্ত গাছ
পাতা ঝলসানো রোগাক্রান্ত গাছ
পাতা ঝলসানো রোগের লক্ষণ
পাতা ঝলসানো রোগের লক্ষণ

হেলমিনথোস পরিয়াম টারসিকাম ও হেলমিনথোস পরিয়াম মেইডিস নামক ছত্রাকদ্বয় এ রোগ সৃষ্টি করে।

প্রথম ছত্রাকটি দ্বারা আমাদের দেশে ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ বেশি হতে দেখা যায়। হেলমিনথোস পরিয়াম টারসিকাম দ্বারা আক্র গাছের নিচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরবর্তীকালে গাছের উপরের অংশে তা বিস্তার লাভ করে। রোগের প্রকোপ বেশি হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যায়।

See also  ভুট্টার জাত: হাইব্রিড, উচ্চফলনশীল, ভালো খরা সহিষ্ণু, নতুন তাপ সহনশীল, উন্নত ও মিষ্টি ভূট্টার জাতের নাম

এ রোগের জীবাণু গাছের আক্রান্ত অংশে অনেক দিন বেঁচে থাকে। জীবাণুর জীবকণা বা কনিডিয়া বাতাসের সাহায্যে অনেক দূর পর্যন্ত সুস্থ গাছে ছড়াতে পারে। বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে এবং ১৮-২৭ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় এ রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়।

প্রতিকার:

  • রোগ প্রতিরোধী জাতের (মোহর) ভুট্টা বীজ চাষ করতে হবে।
  • আক্রান্ত ফসলের টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  • ভুট্টা উঠানোর পর জমি থেকে আক্রান্ত গাছ সরিয়ে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

গ) ভুট্টার মোচা ও দানা পচা রোগ দমন

বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি প্রভৃতি এ রোগ ঘটায়।

মোচা ও দানা পচা রোগ ভুট্টার ফলন, বীজের গুণাগুণ ও খাদ্যমান কমিয়ে দেয়। আক্রান্ত মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে যায়। দানা পুষ্ট হয় না, কুঁচকে অথবা ফেটে যায়। অনেক সময় মোচাতে বিভিন্ন দানার মাঝে বা উপরে ছত্রাকের উপস্হিতি খালি চোখেই দেখা যায়।

ভুট্টা গাছে মোচা আসা থেকে পাকা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বেশি থাকলে এ রোগের আক্রমণ বাড়ে। পোকা বা পাখির আক্রমণে কাণ্ড পচা রোগে পাছ মাটিতে পড়ে গেলে এ রোগ ব্যাপকতা লাভ করে।

এ রোগের জীবাণু বীজ অথবা আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। একই জমিতে বার বার ভুট্টার চাষ করলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

দুটি পঁচা দানাযুক্ত ভুট্টার মোচা ও একটি সুস্থ মোচা
দুটি পঁচা দানাযুক্ত ভুট্টার মোচা ও একটি সুস্থ মোচা

প্রতিকার:

  • এ রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে একই জমিতে বার বার ভুট্টা চাষ করা ঠিক নয়।
  • জমিতে পোকা ও পাখির আক্রমণ রোধ করতে হবে।
  • ভুট্টা পেকে গেলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।
  • কাটার পর ভুট্টার পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

ঘ) ভুট্টার কাণ্ড পচা রোগ দমন

ভুট্টার কান্ড পচা রোগের লক্ষণ
ভুট্টার কান্ড পচা রোগের লক্ষণ

বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি-এর কারণে এ রোগ ঘটে থাকে।

প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গাছের কাও পড়ে যায় এবং গাছ মাটিতে ভেঙ্গে পড়ে।

আমাদের দেশে খরিফ মৌসুমে এ রোগটি বেশি হয়ে থাকে। জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি এবং পটাশের পরিমাণ কম হলে ছত্রাকজনিত কাও পচা রোগ বেশি হয়।

প্রতিকার:

  • ছত্রাক নাশক ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
  • সুষম হারে সার ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে নাইট্রোজেন ও পটাশ
  • পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • শিকড় ও কাও আক্রমণকারী পোকা-মাকড় দমন করতে হবে।
  • আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাক নাশক ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

(৩) লবণাক্ত এলাকায় আমন ধানের পর গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টা চাষের পদ্ধতি

বিষয়বিবরণ
প্রয়োগের স্থান ক্ষেত্রনোয়াখালী, ফেনী, ভোলা, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও খুলনার লবণাক্ত এলাকা
প্রযুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যলবণাক্ত এলাকায় আমন ধান কর্তনের পর মধ্য-ডিসেম্বরের মধ্যে ভূট্টা চাষ করে গো-খাদ্যের অভাব পূরণ
মাটিবেলে দোআঁশ, দোআঁশ, এটেল দোআঁশ ও পলি এঁটেল
জাতখইভূট্টা
জমি তৈরিপ্রচলিত চাষ
রোপণ/বপন পদ্ধতিসারিতে বপন (৪০ সেমি x ২০ সেমি)
বীজের হার৫০ কেজি/হেক্টর
বপন সময়প্রথম থেকে মধ্য-ডিসেম্বর
আগাছা দমনচারা গজানোর ৩৫-৪০ দিন পর একটি নিড়ানি
জৈব সার
রাসায়নিক সারইউরিয়া ২২৫ কেজি/হেক্টর, টিএসপি ১১৫ কেজি/হেক্টর, এমপি ৬৭ কেজি/হেক্টর
বীজ শোধন
সেচবৃষ্টি নির্ভর
ফসল সংগ্রহফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ
সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনাউৎপাদিক গো-খাদ্য সাইলেজ তৈরি করে সংরক্ষ করা যেতে পারে
ফলন (টন/হেক্টর)প্রায় ১১ টন
প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিবরণ কোন ঝুঁকি নাই
পরিবেশের উপর প্রভাবপরিবেশের উপর কোন বিরূপ প্রভাব নেই
প্রযুক্তি হস্তান্তরের পদ্ধতিসগবি (বারি), এনজিও এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
লাভ খরচের অনুপাত২ঃ১ (১০০ টাকা খরচ করে ২০০ টাকা উঠানো যায়)। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষক এক জমিকে দুই পরিণত করে গো-খাদ্য উৎপানোর মাধ্যমে অধিক লাভবান হতে পারে।
সুপারিশমালাকৃষককে গো-খাদ্য হিসেবে দুটা ডানে উৎসাহিত করা
তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্যলবণাক্ত এলাকায় এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী জমিতে রূপান্তর করে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষকের আয়বৃদ্ধি এবং গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা যায়।

(৪) আন্তঃফসল হিসেবে ‘চীনাবাদাম’ এর সাথে ভুট্টা চাষের পদ্ধতি

উঁচু ও মাঝারি উঁচু দোআঁশ বা এটেল দোআঁশ মাটিতে ভুট্টা + চীনাবাদাম ভাল হয়। কাদা ও বেলে মাটি উপযোগী নয়। খরিফ মৌসুমে নিষ্কাশন ব্যবস্থার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে জমি জলাবদ্ধ না হয়।

See also  বেবী কর্ণ চাষ পদ্ধতি (ভুট্টার জাত বিশেষ)
বিষয়বিবরণ
ফসলভট্টা+চীনাবাদাম
জাতভুটা: বর্ণালী;
চীনাবাদাম: মাইজচর (ঢাকা-১)/ত্রিদানা বাদাম (ডিম-১);
বপনের সময়চৈত্র মাস (মধ্য-মার্চ থেকে মধ্য-এপ্রিল) এবং অগ্রহায়ণ (মধ্য-নভেম্বর মধ্য থেকে ডিসেম্বর)।
বপনের দূরত্ব ও পদ্ধতিভুট্টা: জোড়া সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩৭.৫ সেমি।
চীনাবাদাম: সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০ সেমি। ভুট্টার জোড়া সারির মাঝে ৪ সারি চীনাবাদাম (ভুট্টার গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি)।
বীজের হারভুটা: ৩০ কেজি/হেক্টর;
চীনাবাদাম: ৫০ কেজি/হেক্টর (খোসাসহ);
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঅর্ধেক ইউরিয়া, সমুদয় টিএসপি, এমপি ও জিপসাম সার বীজ বপনের পূর্বে অর্থাৎ শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। খরিফ মৌসুমে বাকি ইউরিয়া সার সমান ২ ভাগ করে চারা গজানোর ২১ দিন (৮ পাতার সময়) এবং ৪২ দিন (পুরুষ ফুল দেখার সময়) পর ভুট্টার সারির পাশে প্রয়োগ করতে হবে। তবে রবি মৌসুমে চারা গজানোর ৩০ দিন (৮ পাতার সময়) এবং ৬০ দিন ( পুরুষ ফুল আসার সময়) পর ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ প্রয়োগঅর্ধেক ইউরিয়া, সমুদয় টিএসপি, এমপি ও জিপসাম সার বীজ বপনের পূর্বে অর্থাৎ শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। খরিফ মৌসুমে বাকি ইউরিয়া সার সমান ২ ভাগ করে চারা গজানোর ২১ দিন (৮ পাতার সময়) এবং ৪২ দিন (পুরুষ ফুল দেখার সময়) পর ভুট্টার সারির পাশে প্রয়োগ করতে হবে। তবে রবি মৌসুমে চারা গজানোর ৩০ দিন (৮ পাতার সময়) এবং ৬০ দিন ( পুরুষ ফুল আসার সময়) পর ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
পোকা ও রোগ দমনভুট্টা+চীনাবাদাম সাথী ফসলে খুব ক্ষতিকর কোন পোকা বা রোগের উপদ্রব হয় না। তবে ভুট্টার চারা অবস্থায় কাটুই পোকার আক্রমণ হলে হাত দিয়ে তা মেরে ফেলতে হবে।
ফসল কাটার সময়
(খরিফ মৌসুম)
ভুট্টা: আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (জুন তৃতীয় সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ।
চীনাবাদাম: শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (জুলাই তৃতীয় থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ)।
ফসল কাটার সময় (রবি মৌসুম)ভুট্টা: মধ্য-চৈত্র থেকে চৈত্রের তৃতীয় সপ্তাহ (মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ।
চীনাবাদাম: মধ্য-বৈশাখ থেকে বৈশাখের তৃতীয় সপ্তাহ (এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ)।
ফলন (খরিফ মৌসুম)ভুটা: খরিফ মৌসুমে ৩ থেকে ৩.৫ টন/হেক্টর;
চীনাবাদাম: খরিফ মৌসুমে ৬০০ থেকে ৭০০ কেজি/হেক্টর;
ফলন (রবি মৌসুম)ভুটা: রবি মৌসুমে ৫ থেকে ৫.৫ টন/হেক্টর;
চীনাবাদাম: রবি মৌসুমে ৯০০ থেকে ১০০০ কেজি/হেক্টর;

সারের নাম ও পরিমাণ

ভুট্টা+চীনাবাদাম ফসলে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।

সারের নামসারের পরিমাণ
ইউরিয়া২৫৫-২৬৫ কেজি/হেক্টর
টিএসপি১৩০-১৩৫ কেজি/হেক্টর
এমপি৮০-৮৬ কেজি/হেক্টর
জিপসাম১০০-১২০ কেজি/হেক্টর

(৫) আন্তঃফসল হিসেবে ‘মাসকলাই’ বা ‘মুগ’ এর সাথে ভুট্টা চাষের পদ্ধতি

ভুট্টার সাথে মাসকলাই/মুগ আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করলে অধিক ফসল ও মুনাফা লাভ করা যায়।

চাষ পদ্ধতি

বিষয়বিবরণ
ফসলভুট্টা+মুগ/মাসকলাই
জাতসমূহভূট্টা: বর্ণালী;
মুগ: কান্তি;
মাসকলাই: বারিমাস-১/বারিমাস-২;
জমি নির্বাচন ও তৈরিউঁচু, মাঝারি উঁচু বেলে দোআঁশ মাটিতে পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন। বীজ বপনের আগে জমি চাষ দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
বপনের সময়চৈত্র মাস (মধ্য-মার্চ থেকে মধ্য-এপ্রিল)
বপন পদ্ধতিভুট্টার জোড়া সারির মাঝে ১৫০ সেমি দূরত্ব রেখে মধ্যবর্তী স্থানে ও সারি মাসকলাই/মুগ বীজ বাপন করতে হবে। মাসকলাই/মুগ বপনের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৫ সেমি রাখতে হবে। এ পর্যায়ে ভুট্টার সারির দূরত্ব ৩৭.৫ সেমি এবং গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি রাখতে হবে। এ পদ্ধতিতে ভুট্টা গাছের সংখ্যার কোন তারতম্য হয় না।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিএ পদ্ধতিতে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া, সমুদয় টিএসপি, এমপি ও জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বপনের ২৫ ও ৪৫ দিন পর পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও অন্যান্য পরিচর্যাভুট্টার চারা গজানোর পর প্রতিটি গুছিতে একটি সুস্থ চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। তবে জামিতে রস কম থাকলে বীজে অংকুরোদগমের জন্য হালকা সেচ দিতে হবে। ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের আগে একবার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়া ভুট্টা গাছের গোড়ার দুই পার্শ্বে অল্প পরিমাণে মাটি তুলে দিলে তুফানে বা অতি বৃষ্টিতে গাছ হেলে পড়বে না এবং অতিরিক্ত পানি নালা দিয়ে বের হয়ে যাবে।
পোকা দমনভুট্টার চারা অবস্থায় কাটুই পোকার আক্রমণ হলে হাত দিয়ে তা মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া মাসকলাই/মুগ-এ পোকা দেখা গেলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফসল সংগ্রহভুটা: আষাঢ় মাস (মধ্য-জুন থেকে মধ্য-জুলাই)।
মুগ/মাসকলাই: আষাঢ়ের প্রথম থেকে মধ্য সপ্তাহ (মধ্য-জুন থেকে জুন শেষ)।
ফলনভূট্টা: ৩-৪ টন/হেক্টর;
মুগ/মাসকলাই: ৫০০-৬০০ কেজি/হেক্টর;

সারের নাম ও পরিমাণ

ভুট্টা + মাসকলাই/মুগ আন্তঃফসলে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।

সারের নামসারের পরিমাণ
ইউরিয়া২৫৫-২৬৫ কেজি/হেক্টর
টিএসপি১৩০-১৩৫ কেজি/হেক্টর
এমপি৮০-৮৬ কেজি/হেক্টর
জিপসাম১০০-১২০ কেজি/হেক্টর

(৬) আন্তঃফসল হিসেবে ‘সয়াবীন’ এর সাথে ভুট্টা চাষের পদ্ধতি

চাষ পদ্ধতি

বিষয়বিবরণ
ফসলভুট্টা-বর্ণালী/হাইব্রিড
জাতসয়াবীন সোহাগ (পিবি-১)/বাংলাদেশ সয়াবীন-৪/ বাংলাদেশ সয়াবীন-৫
জমি ও মাটিমাঝারী উঁচু জমি। দোআঁশ অথবা বেলে দোআঁশ মাটি।
বপন সময়অগ্রহায়ণ (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর)
বপন/রোপণের দূরত্বভুট্টার এক জোড়া সারি থেকে অন্য জোড়া সারির দূরত্ব ১২০ সেমি অথবা ১৫০ সেমি। জোড়া সারিতে এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ৪০ সেমি। সয়াবীনের এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ৩০ সেমি। ভুট্টার সারির মাঝে (১৫০ সেমি / ৪ সারি সয়াধীন অথবা ১২০ সেমি মাঝে ও সারি সাধীন বপন করতে হবে।
বীজের হার/হেক্টরসয়াবীন: ২৫০ কেজি;
ভুট্টা: ৩০ কেজি (বর্ণালী), ১৫-২০ কেজি (হাইব্রিড);
সার প্রয়োগ পদ্ধতিইউরিয়া ব্যতীত অন্যান্য সব সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া বীজ বোনার আগে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া বপনের ৩০-৩৫ ও ৫০-৬০ দিন পর ভুট্টার সারির মাঝে প্রয়োগ করতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যাচারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর প্রতি গোছায় ১টি এবং সয়াবীনের সারিতে ৫-৭ সেমি পর পর একটি করে চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। প্রয়োজনবোধে জমিতে ৩/৪ টি সেচ দিতে হবে অর্থাৎ বপনের ৩০-৩৫, ৫০-৬০ এবং ৮০-৯০ দিন পর।
পোকা ও রোগ দমনসয়াবীন বিছাপোকার আক্রমণ দেখা দিলে এলসান ৫০ ইসি/রিপকর্ড ১০০ ইসি প্রতি ১ লিটার পানিতে ২ মিলি হিসেবে মিশিয়ে গাছে ছিটিয়ে দিতে হবে।
ফসল তোলার সময়ভুট্টা: মধ্য-চৈত্র থেকে শেষ (মার্চের শেষ সপ্তাহ এপ্রিল ১ম সপ্তাহ)
সয়াবীন: ফাল্গুন (মধ্য-ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ ১ম সপ্তাহ)
ফলনভুট্টা: ৪-৪.৫ টন/হেক্টর (বর্ণালী), ৭.৫-৮ টন/হেক্টর (হাইব্রিড);
সয়াবীন: ৯০০-১২০০ কেজি/হেক্টর;

সারের নাম ও পরিমাণ

সারের পরিমাণসারের পরিমাণ (বর্ণালী)সারের পরিমাণ/হেক্টর (হাইব্রিড)
ইউরিয়া১০০-১২০ কেজি/হেক্টর৫৩০-৫৫০ কেজি
টিএসপি১৫৫-১৭৫ কেজি/হেক্টর২৫০-২৭০ কেজি
এমপি১০০-১২০ কেজি১৯০-২১০ কেজি
জিপসাম৮০-১১৫ কেজি১৬০-১৭০ কেজি

(৭) ভুট্টার চাষে শক্তি চালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র

ক) শক্তি চালিত যন্ত্র দ্বারা ভুট্টা মাড়াই

শক্তি চালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র
শক্তি চালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র

শক্তি চালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্রের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য এখানে উল্লেখ করা হলো-

  • দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি করা যায়।
  • স্থানীয়ভাবে মেরামত করা যায়।
  • যন্ত্রের মূল্য প্রায় সকল কৃষকের সাধ্যর মধ্য।
  • ভুট্টা শেলিং ক্ষমতা: ২-২.৫ টন/ঘণ্টা।
  • মোটর দিয়েও চালনা করা যায়।

খ) হস্ত চালিত যন্ত্র দ্বারা ভুট্টা মাড়াই

হস্ত চালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র
হস্ত চালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র

বিএআরআই কর্তৃক হস্তচালিত মাড়াই যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে গ্রামীণ পরিবেশে এ যন্ত্র ব্যবহার করা খুবই সুবিধাজনক।

(৮) ভুট্টা বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি

মোচা সংগ্রহের সময় বীজে সাধারণত ২৫-৩৫% আর্দ্রতা থাকে। তাই সংরক্ষণের আগে বীজ এমনভাবে শুকাতে হবে যেন আর্দ্রতা ১২% এর বেশি না থাকে।

শুকানের পর দাত দিতে ‘কট’ শব্দ করে ভোগে গেলে বুঝতে হবে দানা ভালভাবে শুকিয়েছে। এভাবে শুকানো বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা ১০ মাস পর্যন্ত ৮৫% বা এর বেশি থাকে।

ক) টিনের পাত্র

টিনের উন্নত মানের পাত্র
টিনের উন্নত মানের পাত্র
  • এম এস শিট নিয়ে টিনের উন্নত মানের পাত্র তৈরি করা যায়।
  • মুখ বন্ধ করার ঢাকনা এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন এর চারিদিকে তুষ মিশ্রিত কাদা মাটি দিয়ে বাতাস চলাচল বন্ধ করা যায়।
  • ঢাকনায় ২.৫ x ২.৫ সেমি মাপের এক টুকরা কাঁচ বসানো থাকে। তাই ঢাকনা না খুলেও ভিতরের বীজের অবস্হা দেখা যায়।
  • এই পারের ধারণ ক্ষমতা পাঁচ কেজি।

খ) মাটির পাত্র

মাটির ভালো মানের পাত্র
মাটির ভালো মানের পাত্র
  • মাটির তৈরি পাত্রের ভিতরে পুরু পলিথিন ব্যাগ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
  • এ পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ভুট্টা বীজ রেখে তাপ দিয়ে ব্যাগের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  • মাটির মাটির উন্নত মানের পা পাত্রের মুখ এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সিলিং পদার্থ আটকে দিয়ে বায়ু চলাচল রোধ করা যায়।
  • পাত্রের মুখের ঢাকনায় ২.৫ x ২.৫ সেমি মাপের এক টুকরা কাঁচ বসানো থাকে যেন ঢাকনা না খুলে ভিতরের বীজ দেখা যায়।
  • পাত্রের ধারণ ক্ষমতা ৭ কেজি।

গ) পাটের ব্যাগ

পলিথিনসহ পাটের ব্যাগ
পলিথিনসহ পাটের ব্যাগ
  • পাটের তৈরি ব্যাগের ভিতরে পুরু পলিথিন ব্যাগ ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  • ভুট্টার দানা পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ভরে এর মুখ তাপ দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
  • এরপর থলের মুখ দড়ি দিয়ে ভালভাবে বেঁধে ব্যাগটি ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
  • ব্যাগের ধারণ ক্ষমতা ৭ কেজি।

(৯) ভুট্টা চাষ পদ্ধতি pdf

(১০) শেষ কথা

আমাদের দেশে ভুট্টা বা কর্ন অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি খাবার। ভুট্টার মোচা পুড়িয়ে খাবার প্রচলন চলে আসছে বহুকাল ধরেই। আধুনিক জীবনেও ভুট্টা তার নিজ গুণে ঠাঁই করে নিয়েছে নানা রূপে নানা স্বাদে।

  • ভুট্টার খই বা পপকর্ন কখনও খায়নি অথবা খেয়ে পছন্দ করেনি এমন মানুষ আজকাল আর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ক্লান্তিকর দীর্ঘ পথচলা কিংবা ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার একঘেয়ে সময়গুলোকে কিছুটা বৈচিত্র্যময় করতে পপকর্ন ভালো সঙ্গী। বাচ্চাদের কাছে তো এটা  সবসময়ই প্রিয়।
  • আর সকালের নাশতায় কর্নফ্লেক্স সব ঋতুতে সব জায়গায় সব বয়সীদের জন্য  উপযোগী।
  • এছাড়াও ভুট্টা থেকে তৈরি হতে পারে নানা রকম রুটি, খিচুরি, ফিরনি, নাড়–সহ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বিভিন্ন খাবার।
  • মজাদার চাইনিজ খাবার তৈরিতে অপিহার্য কর্নফ্লাওয়ার ভুট্টারই অবদান।
  • মানুষের খাবার শুধু নয় ভুট্টা গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি কিংবা মাছের খাবার হিসেবেও উৎকৃষ্ট বলে  এরই মধ্যে প্রমাণিত। হাঁস-মুরগি, মাছ ও গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভুট্টার ভাঙা দানা ও গাছ  অতুলনীয়।
  • জ্বালানি হিসেবেও ভুট্টা গাছ ব্যবহার করা যায়।
  • ভুট্টা যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে যার  জুড়ি নেই। রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রয়োজনীয় আয়রন ও ভিটামিন বি ১২ এর ভালো উৎস ভুট্টা। ভুট্টার  ভিটামিন এ সি ও লাইকোপিন ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধী ফাইবার এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে শক্তি জোগায়। ভুট্টা ডায়াবেটিস ও রক্তের  উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, আমাদের হৃৎপিন্ড ও কিডনির সুরক্ষা করে। 

ভুট্টার চাহিদা তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে-বাড়ছে জমিতে ভুট্টা উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ।

চমৎকার স্বাদ আর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ খাবারটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছর ধরেই জন্মানো সম্ভব। গম ও ধানের তুলনায় এর ফলনও হয় অনেক বেশি।

নিম্নে বিগত কিছু সালের বাংলাদেশে ভুট্টা উৎপাদনের পরিমাণ (লাখ মেট্রিক টন) এ উপস্থাপন করা হলো-

ফসলের নাম২০১০-১১ অথবছর২০১১-১২ অথবছর২০১২-১৩ অথবছর২০১৩-১৪ অথবছর২০১৪-১৫ অথবছর২০১৫-১৬ অথবছর
ধান(চাল)৩৩৫.৪১৩৩৮.৯৩৩৮.৩৩৩৪৩.৫৬৩৪৭.১০৩৪৯.৯৬
গম৯.৭২৯.৯৫১২.৫৫১৩.০২১৩.৪৮১৩.৪৮
ভুট্টা১৫.৫২১৯.৫৪২১.৭৮২৫.১৬২৩.৬১২৭.৫৯

সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের কৃষি জমিতে  খাদ্য শস্য হিসেবে ধান ও গমের পরের জায়গাটি এখন ভুট্টার দখলে। বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার উৎপাদন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অল্প জমি থেকে অধিক ফলন এখন সময়ের দাবি। এ দাবি পূরণে সময় এসেছে ভুট্টা চাষে বাড়তি  নজর দেয়ার।

[সূত্র: বিএআরআই, বিডব্লিউএমআরআই, এআইএস]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts