প্রিয় খামারি ভাই/বোন/বন্ধুরা! বিগত পোষ্টে আমি কথা দিয়েছিলাম যে আপনাদের জন্য আমি প্রিয় খামারি উন্নত জাতের ভুট্টার নাম একটি তালিকা তৈরি করে আপনাদের এর সামনে উপস্থাপন করব। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে ৩২টি উন্নত জাতের ভুট্টার নাম সামনে তুলে ধরছি।
আমরা জনি যে- ভুট্টা একটি শতভাগ পর-পরাগী ফসল। আর শতভাগ পর-পরাগী না হয়ে এর উপায় নেই। ভুট্টার প্রতিটি গাছের মাথার শীর্ষে হলো পুরুষ ফুল আর গাছের কাণ্ডের মাঝামাঝি এলাকায় হলো এর স্ত্রী ফুলের অবস্থান। ফলে বীজ ধারণ করতে হলে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডকে পেতে হবে অবশ্যই পুরুষ ফুলের পরাগরেণুর পরশ। সে ব্যবস্থাও ভুট্টাতে বেশ উত্তম। প্রতিটি স্ত্রী ফুলের মাথায় অতি মোলায়েম রেশম সূতার মত ছড়িয়ে থাকে অজস্র গর্ভমুণ্ড। সে কারণে বুঝি একে বলা হয় ‘সিল্ক’। তো এদের এভাবে ছড়িয়ে থাকার কারণই হলো উড়ে আসা পরাগরেণুকে বেঁধে ফেলা এবং বীজ তৈরির জন্য এদের অঙ্কুরিত হওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া। ভুট্টার পর-পরাগয়াণের এই স্বভাবই কাজে লাগিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
অর্থ্যাৎ- ভুট্টা পর-পরাগী স্বভাব বলে ভুট্টার দু’টি উত্তম ইনব্রিড লাইনকে পাশাপাশি নির্দিষ্ট অনুপাতে সারিবদ্ধভাবে লাগিয়ে দিয়ে একটি ইনব্রিড লাইনের পুরুষাঙ্গ কর্তন করে দেয়া হয়। অর্থাৎ এই লাইনটি অতঃপর কেবল বহন করে স্ত্রী ফুল। অন্য ইনব্রিড লাইন থেকে অতঃপর পরাগরেণু বাতাসের আন্দোলনে উড়ে এসে পড়ে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে। তৈরি হয় এর ফলে কেবলমাত্র হাইব্রিড বীজ। সে হাইব্রিড বীজ এরপর ব্যবহার করা হয় ভুট্টা চাষের জন্য। এভাবেই কৃষি বিজ্ঞানীগণ নতুন নতুন উন্নত জাতের ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করে থাকেন।
উদ্ভাাবিত উন্নত জাতের ভুট্টার জাত এর উদাহরণস্বরূপ-
গুণগত মানসম্পন্ন প্রোটিন সমৃদ্ধ উন্নত জাত, যেমন: বারি হাইব্রিড ভুট্টা ৫।
গো-খাদ্যোপযোগি উন্নত জাত, যেমন: বারি ভুট্টা ৭; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৩; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৭; বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবি কর্ণ ১; প্রভৃতি।
মধ্যম মাত্রার খরা সহিষ্ণু উন্নত জাত, যেমন: বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১২; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৩; প্রভৃতি।
লবণাক্ততা সহিষ্ণু উন্নত জাত, যেমন: বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৬।
অধিক তাপ সহিষ্ণু উন্নত জাত, যেমন: বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৪; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৫; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৭; প্রভৃতি।
খাটো আকৃতির (হেলে পড়া প্রতিরোধী) উন্নত জাত, যেমন: বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৪; বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ১; প্রভৃতি।
উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ভুট্টার নতুন জাত গুলোর মধ্যে রয়েছে, যেমন- বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ থেকে শুরু করে ১৭ অবধি সবগুলো; বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ১; বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ২; বারি মিষ্ট ভুট্টা-১; প্রোফিট; শাহী; ডন-১১১; ডন-১১২; প্যাসিফিক-১৩৯; কাভেরি-৩৬৯৬, ঊত্তরণ; উত্তরন-২; উত্তরন সুপার; বিপ্লব; বিপ্লব; শক্তি; শক্তি-৩; প্যাসিফিক ২৯৩; প্যাসিফিক ৯৮৪; প্যাসিফিক ৯৯৯ সুপার; প্যাসিফিক ৫৫৫ হাইব্রিড; প্রভৃতি।
তো নিম্নে ৩২টি উন্নত জাতের ভুট্টার নাম, তার অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও রবি মৌসুমে ফলন এর পরিমাণ (টন/হেক্টর) এর তালিকা আকারে উপস্থাপন করা হলো-
- উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: প্রোফিট।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: এ সি আই লিমিটেড।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১০-১১ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: শাহী।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: এ সি আই লিমিটেড।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১০-১১ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: ডন-১১১।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: এ সি আই লিমিটেড।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১১-১৩ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: ডন-১১২।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: এ সি আই লিমিটেড।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১১-১৩ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: প্যাসিফিক-১৩৯।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: এ সি আই লিমিটেড।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১১-১৩ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: কাভেরি-৩৬৯৬।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: এ সি আই লিমিটেড।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ৯-১০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: ঊত্তরণ।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ৯-১০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: উত্তরন-২।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১২-১৪ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: উত্তরন সুপার।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১২-১৪ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বিপ্লব।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ৯-১০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: শক্তি।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ৯-১০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: শক্তি-৩।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ৯-১০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: প্যাসিফিক ২৯৩।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১২-১৪ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: প্যাসিফিক ৫৫৫ হাইব্রিড।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: লাল তীর সীড লিমিটেড।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টররে ১৩-১৫ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: প্যাসিফিক ৯৮৪।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১০-১২ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: প্যাসিফিক ৯৯৯ সুপার।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১২-১৪ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি মিষ্টি ভুট্টা-১
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ৯.৫ থেকে ১০.৫ টন (খোসা ছাড়ানো কচি মোচা)। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: জাতটির ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ১০-১০.৫ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৭.০-৭.৫ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৬
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: জাতটির ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ৯.৮-১০.০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: জাতটির ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ১০.৫-১১.০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৮
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: জাতটির ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ৯.৭০-১১.৫০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: জাতটির ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ১০.২০-১২০০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: জাতটির ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ৯.০০-১১.৫০ টন - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: রবি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৯.৫০-১১.৫০ টন - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: শতক প্রতি ফলন ৩৬-৪০ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ফলন ৯.৫-১১.০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: খরা অবস্থায় একটি মাত্র সেচ প্রয়োগে জাতটির ফলন ৮.১-৮.৫ টন/হেক্টর এবং স্বাভাবিক সেচ প্রয়োগে ফলন ১০.০-১১.১ টন/হেক্টর। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: রবি ও খরিপ মৌসুমে জাতটির গড় ফলন যথাক্রমে ১০.৮৪ টন/হেক্টর এবং ১০.৫২ টন/হেক্টর। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: শতক প্রতি ফলন ৫০-৫২ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ফলন ১২.৫ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৬
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: রবি মৌসুমে ১১.৫৭ টন/হেক্টর এবং লবনাক্ত এলাকায় (৮ ডিএস/মি) ৭.০৬ টন/হেক্টর ফলন দিতে সক্ষম। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৭
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: রবি ও খরিপ মৌসুমে জাতটির গড় ফলন যথাক্রমে ১১.০-১২.০ টন/হেক্টর এবং ৮.৫-৯.৫ টন/হেক্টর। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-১
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: জাতটি উচ্চফলনশীল। রবি মৌসুমে উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি ফলন ১১.০-১৩.০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-২
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: জাতটি উচ্চফলনশীল। রবি মৌসুমে উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি ফলন ১২.০-১৪.০ টন। - উন্নত জাতের ভুট্টার নাম: বারি মিষ্টি ভুট্টা-১।
অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
ফলনশীলতা: উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে খোসাসহ মিষ্টি ভুট্টার (কাঁচা) ফলন গড়ে ১৪.৪ টন ও খোসা ছাড়া ফলন প্রতি হেক্টরে ১০.৩ টন এবং সবুজ বায়োমাস ২৪ টন/হেঃ পাও কেজি।
(এখানে শুধু উন্নত জাতের ভুট্টার নাম ও ফলনের পরিমাণ উল্লেখ করা হলো। নিম্নক্তো ২টি পোষ্টে উপরের উল্লিখিত সকল ভুট্টার জাত সম্পর্কে বিষদ আলোচনা হয়েছে:
https://inbangla.net/krisi/হাইব্রিড-ভুট্টার-জাত/
https://inbangla.net/krisi/ভুট্টার-জাত-সমূহ/
এই পোষ্টটিতে তুলে ধরা ৩২টি উন্নত জাতের ভুট্টার পরিচিতি, গাছ ও ফলের ছবি, বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী, চাষে উপযোগী অঞ্চল, ফলনসহ বিভিন্ন বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন উপরে দেওয়া লিংক ২টি থেকে।)
শেষ কথা- আজকের এই উন্নত জাতের ভুট্টার নাম এর তালিকাটি এখানেই সমাপ্ত হচ্ছে। আশা করি বিভিন্ন উন্নত জাতের ভুট্টার নাম জানতে ও বুঝতে পেরেছি, আপনাদের ভুট্টা চাষে জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যাপভাবে সাহায্য করবে।
বাস্তবেই- হাইব্রিড উন্নত জাতের ভুট্টার ফলন অন্য যে কোন দানাদার ফসলের চেয়ে অনেক বেশি। হাইব্রিড ভুট্টা হয় উন্নত জাতের ও উচ্চফলনশীল। অধিকন্তু অন্য দানা ফসলের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম এবং পরিবেশবান্ধব। এ ছাড়া সম্ভাবনাময় ফসল হিসাবে দেশের বর্তমান উৎপাদিত ভুট্টা থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল উৎপাদন করা সম্ভব, যার বাজারমূল্য অনেক বেশি। কর্ন অয়েল বা ভুট্টার তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে- আমাদের দেশের একমাত্র ফসল যার প্রতিটি জাতই এখন হাইব্রিড। অর্থাৎ এ দেশের মাঠে ভুট্টার এখন শতকরা একশত ভাগই হাইব্রিড ভুট্টা জাতের আবাদ করা হচ্ছে। ভুট্টা ছাড়াও বহু সবজি ফসলে এখন হাইব্রিড জাতের বীজই উৎপাদনের অন্যতম ভরসা। ভুট্টার ক্ষেত্রে হাইব্রিড জাতগুলো এতটাই সফল যে, দেশের কোন কোন এলাকার মানুষের কাছে হাইব্রিড ভুট্টা মহা আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকার মানুষের জীবন ধারাই বদলে দিয়েছে হাইব্রিড ভুট্টার চাষ।
আসলে- উন্নত জাতের হাউব্রিড ভুট্টার এর ফলন ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর ভুট্টার হাইব্রিডের কি দারুণ প্রভাব তা পর্যবেক্ষণ করা বড় জরুরি বলে বিবেচনা করি। চরের ধূ ধূ বালুতে হাইব্রিড ভুট্টা কতটা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে না দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিন। ভুট্টার চাষ এসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় বহুমাত্রিক প্রভাব নিয়ে এসেছে। এর ফলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ভুট্টার দানা ভুট্টার প্রধান আকর্ষণ বটে তবে পাশপাশি ভুট্টা থেকে আলাদা করা মোচা ও ভুট্টার গাছ চাষিরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। নারী শ্রমিকেরাও এখানে ভুট্টা সংগ্রহ, মাড়াই, বাছাই ও শুকানোসহ নানা রকম কাজের সাথে জড়িত হয়েছে। ফলে নারীদেরও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
শুধু বাংলাদেশেই নয়- উন্নত জাতের হাইব্রিড ভুট্টার আবাদ যুক্তরাষ্ট্রে এক নবযুগের সূচনা করেছে। মুক্তপরাগী ভুট্টার জাত নিয়ে যখন কিছুতেই আর ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছিল না তখন ভুট্টার হাইব্রিড জাত সৃষ্টি আমেরিকাতে এক নতুন মাত্রা নিয়ে যেন হাজির হয়। অল্প কিছু দিনের ভেতরই সেখানে হাইব্রিড এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে ১৯৩৪ সনে যেখানে মাত্র শতকরা এক ভাগ জমিতে ভুট্টার হাইব্রিড আবাদ করা হয় সেখানে চল্লিশের দশকে এসে তা শতকরা ৭৮ ভাগ জমি দখল করে নেয়। পঞ্চাশের দশকে এসে হাইব্রিড ভুট্টা যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ জমি দখল করে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৯ শতাংশ জমিতেই আবাদ করা হচ্ছে নানা রকম হাইব্রিড ভুট্টা।
বাংলাদেশে মূলত- হাঁস-মুরগির ও গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টার দানা ব্যবহার করা হয়। মৎস্য খাদ্যেরও একটি অন্যতম উপকরণ হলো ভুট্টা দানার গুঁড়া। তবে এ দেশে এখন মানুষও ভুট্টা সেদ্ধ বা পুড়িয়ে খাওয়া শুরু করেছে। মানুষের জন্য নানা রকমের খাবার তৈরি করা যায় ভুট্টা থেকে। রুটি, আটার সাথে মিশিয়ে রুটি, গোলআলুর সাথে মিশিয়ে রুটি, পুরি, ভুট্টার প্যানকেক, ভুট্টার বিস্কুট, ভুট্টা খিচুরি, ভুট্টা-চাল খিচুরি, ভুট্টা পোলাও, সবুজ ভুট্টার দানা, ভুট্টা সেদ্ধ, ভুট্টা পুড়িয়ে কতভাবেই না ভুট্টাকে মানুষের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়। ভুট্টার পপকর্ণ তো দিনে দিনে শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভুট্টার খাদ্যমান বেশ ভালো। চালের তুলনায় ভুট্টার আমিষ, ফসফরাস ও চর্বির পরিমাণ অধিক।
সম্ভাবনাময় কর্ণ ওয়েল- ভুট্টার বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৭-১২ ভাগ। ভুট্টার তেল ভোজ্যতেল হিসেবে উত্তম। শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধপানকারী মায়ের জন্য ভুট্টার তেল উত্তম। তাছাড়া ভুট্টাতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং সালফার এসব গৌণ খনিজ উপাদান বেশ ভালোই রয়েছে।
আমাদের এই ওয়েবসাইটে- ভুট্টা চাষের সাথে সম্পর্কি অনেকগুলো তথ্য সংবলিত পোষ্ট/আলোচনা রয়েছে। আপনি ভুট্টা চাষের ব্যাপারে আরও জানতে সেগুলো পড়তে পারেন।
এই পোষ্টটি দ্বারা যদি আপনার উপকার হয়ে থাকে মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে ধন্যবাদ জানাবেন। এতে করে আমরা কাজে উৎসাহ পাই।
আজকের মত এখানেই বিদায়। পরবর্তী আলোচনাটি পড়ার আমন্ত্রণ জানাই। আল্লাহ হাফেজ।
[সূত্র: বিএআরআই, বিডব্লিউএমআরআই, এআইএস ও কৃষি বাতায়ন]