বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের জীবনে কৃষি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কৃষি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর প্রায় সকল উপকরণ উৎপাদন ও সরবরাহ করে। এছাড়া অন্যান্য পণ্য ও সেবা ক্রয়ের অর্থও কৃষি যোগান দেয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য খাতের চাহিদাগুলো পুরণে আমাদের জীবনে কৃষি ভাই ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
কৃষির অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো যেমন ফসল, পশু-পাখি, মৎস্য ও বনায়ন নিয়েই হচ্ছে কৃষির পরিধি।
এখানে আমরা বাংলাদেশের কৃষির পরিধি এবং পরিসর ব্যাখ্যা এবং কৃষিবিষয়ক তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করব।
(১) কৃষির পরিধি ও পরিসর
কৃষি একটি আসি, আধুনিক এবং অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা। কারণ এর মাধ্যমেই মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানো হয়। মানুষের মৌলিক চাহিদা বলতে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাকে বুঝায়। তাই সংগত কারণে কৃষির পরিধি ব্যাপক।
ফসল উৎপাদন, পশু-পালন, হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ ও বনায়ন কৃষির অন্তর্ভুক্ত বিষয়।
কৃষি আমাদের খাদ্য যোগান দেয়। ধান, গম, আলু, ভুট্টা, শাকসবজি, ফল-ফলাদি এসব খাদ্য ও পুষ্টি আমরা কৃষি থেকে পাই।
- পাট, তুলা ও রেশম থেকে কাপড় তৈরির সুতা পাই।
- কাঠ, বাঁশ, খড়, শান, গোলপাতা ইত্যাদি থেকে গৃহনির্মাণ সামগ্রী ও আসবাবপত্র পাই।
- বাঁশ, খড়, গবাদি পশুর গোবর, গাছের ডাল ইত্যাদি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি।
- কাঠ ও আখের ছোবড়া, বাঁশ ইত্যাদি থেকে কাগজ পাই।
- আমলকী, হরতকি, বহেরা, থানকুনি, বাসক ইত্যাদি থেকে ঔষধ পাওয়া যায়।
- দুধ, মাংস, ডিম এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার আমরা পেয়ে থাকি পশু-পাখি পালন করে।
আর এসবই হলো কৃষি খাদ্য উৎপাদন এবং বস্ত্র, বাসস্থানের উপাদান সরবরাহ করে থাকেন কৃষক।
কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন কৃষিনির্ভর। তাই কৃষির উন্নয়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
আমাদের এই মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানো হয় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন, পশু-পাখি প্রতিপালন, মৎস্য চাষ ও বনায়নের মাধ্যমে।
- বিভিন্ন ফসল বলতে মাঠ ফসল দানা, তেল, আঁশ, পানীয়, ডাল ও উদ্যান জাতীয় ফসলকে বুঝায়।
- পশু-পাখি প্ৰতিপালন বলতে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন এবং পশু খাদ্য উৎপাদনকে বুঝায়।
- মৎস্য চাষ বলতে বন্ধ ও মুক্ত জলাশয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষকে বুঝায়। আর বনায়ন বলতে প্রাকৃতিক বনায়ন, সামাজিক বনায়ন এবং কৃষি বনায়নকে বুঝায়।
(২) ফসল, মৎস্য, পশু-পাখি ও বনায়ন
পূর্বোক্ত পাঠে আমরা কৃষির পরিধি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। উক্ত পাঠে আমরা কোন কোন বিষয় কৃষির অন্তর্ভুক্ত তা জানতে পেরেছি। এখন আমরা ফসল, মৎস্য, পশু-পাখি, বন ও বনায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ক) ফসল
ফসল উৎপাদন কৃষি কর্মকাণ্ডের মূল বিষয়। মানুষের খাওয়া ও পরা অর্থাৎ বেঁচে থাকা ফসল উৎপাদনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চাষের উপর ভিত্তি করে ফসলকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যা মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসল।
(i) মাঠ ফসল: মাঠ ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, গম, ভুট্টা, পাট, ভুলা ইত্যাদি। ধান, গম, ভুট্টা হলো দানা জাতীয় ফসল। দানা জাতীয় ফসল মানুষের প্রধান খাদ্য। দানা জাতীয় ফসল আমাদের শর্করার জোগান দেয়। মসুর, মাষকলাই, মৃগ ইত্যাদি ডাল জাতীয় ফসল আমিষ সরবরাহ করে। তেল জাতীয় ফসলের মধ্যে রয়েছে তিল, সরিষা, তিষি, সূর্যমুখী ইত্যাদি। এসব ফসল আমাদের খাদ্যের স্নেহ জাতীয় উপাদান সরবরাহ করে। পাট হচ্ছে আঁশ জাতীয় ফসল। পাট আমাদের প্রধান অর্থকরী ফসল। পানীয় জাতীয় ফসল হচ্ছে চা, কফি।
(ii) উদ্যান ফসল: সারা বছরই কৃষকেরা উদ্যান ফসল উৎপাদন করেন। উদ্যান ফসলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফল, ফুল, মসলা ইত্যাদি। লাউ, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, আলু ইত্যাদি শীতকালের প্রধান সবজি। চাল কুমড়া, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, কচু, পটল, করলা ইত্যাদি গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের সবজি। ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মৌসুমি ফল। আবার পেঁপে, নারিকেল, কলা ইত্যাদি সারা বছর পাওয়া যায়। শাকসবজি ও ফল থেকে আমরা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পেয়ে থাকি। সুতরাং বলা যায় ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা বেঁচে থাকার জন্য প্রায় সকল খাদ্য উপাদানই পেয়ে থাকি।
খ) মৎস্য
মাছ আমাদের রূপালি সম্পদ এবং আমিষের প্রধান উৎস। প্রাণিজ আমিষের সিংহভাগ (৬০%) আমরা মাছ থেকে পাই।
মাছ আমাদের প্রিয় খাদ্য। তাই আমাদের বলা হয় মাছে-ভাতে বাঙালি। বাংলাদেশের মাটি ও পানি মাছ চাষের জন্য উপযোগী। এ দেশে চাষযোগ্য মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, চিংড়ি, থাই পাঙ্গাস, সিলভারকার্প, গ্রাসকার্প, সরপুঁটি, তেলাপিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ থেকে চিংড়িসহ অনেক প্রজাতির মাছ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
বিভিন্ন শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাছ চাষের অনেক প্রযুক্তি বের করেছে। এসব প্রযুক্তির বিস্তার ঘটার দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দৈনিক মাথাপিছু মাছের চাহিদা প্রায় ৫৬ গ্রাম। তবে আমরা দৈনিক মাথাপিছু প্রায় ৫২ গ্রাম মাছ পেয়ে থাকি।
গ) পশু-পাখি
কৃষি কর্মকাণ্ডে বিরাট অংশ জুড়ে আছে পশু-পাখি প্রতিপালন। পশু-পাখি ছাড়া ফসল উৎপাদন ও পুষ্টির কথা ভাবা যায় না। গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি অন্যতম।
অনুধ্যে গরু ও মহিষ হালচাষ ও ভারবাহী হিসাবে ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে যান্ত্রিকশক্তি পশু-পাখির স্থান দখল করলেও এখনও আমাদের দেশে পশুশক্তির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়নি। কৃষকেরা হালচাষের কাজে গরু-মহিষ ব্যবহার করছেন ব্যাপকভাবে। পাড়াগীয়ের পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে গরু-মহিষের গাড়ি।
গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া পালন করে আমরা দুধ ও মাংস পাচ্ছি। অন্যদিকে হাঁস-মুরগি, কবুতর, তিতির- এগুলো পালন করে আমরা মাংস ও ডিম পাচ্ছি।
ঘ) বন ও বনায়ন
গাছপালা দ্বারা আচ্ছাদিত এলাকাকেই আমরা বন বলি। আর যে পদ্ধতিতে বন তৈরি হয়, তা-ই হলো বনায়ন।
আমরা জানি, প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক আছে। গাছপালা অক্সিজেন ত্যাগ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে। আবার প্রাণী কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে এবং অক্সিজেন গ্রহণ করে। কাজেই প্রাণীকে বাঁচতে হলে গাছপালাকে বাঁচাতে হবে।
কোনো দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য সে দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা দরকার। বনে বিভিন্ন ধরনের পাখি, পশু, কীটপতঙ্গ থাকে। বনের মাধ্যমে একদিকে কাঠ ও জ্বালানির চাহিদা পূরণ হয় এবং অন্যদিকে পরিবেশ ভালো থাকে।
(৩) কৃষিবিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস
অভিজ্ঞ কৃষক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কৃষকদের কৃষিবিষয়ক তথ্যাদি ও সেবা দিয়ে থাকেন। নিচে কে কীভাবে সেবাদান করেন তা আলোচনা করা হলো।
ক) অভিজ্ঞ কৃষক
অভিজ্ঞ কৃষক একজন স্থানীয় নেতা এবং একজন পরামর্শদাতা। তিনি স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন ও নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন। এছাড়া তিনি গণমাধ্যম থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেন। ফলে তিনি স্থানীয় তথ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা যখন এলাকা পরিদর্শনে যান, তখন অভিজ্ঞ কৃষকের শরণাপন্ন হন এবং তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই কৃষকদের গৃহ ও খামার পরিদর্শন করেন এবং মাঝেমধ্যে কৃষক সভা ও উঠান বৈঠক করেন। এভাবে অভিজ্ঞ কৃষকেরা কৃষি জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করেন। অতঃপর তিনি নিজ এলাকার কৃষকদের কৃষি বিষয়ে পরামর্শ দান করেন।
কৃষকেরা ফসল নিয়ে নানা সমস্যায় ভোগেন। যেমন ফসলের রোগ হওয়া, কীটপতঙ্গ আক্রমণ করা, বন্যা ও খরা দেখা দেওয়া ইত্যাদি। এসব প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য প্রাথমিকভাবে কৃষকেরা অভিজ্ঞ কৃষকের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। আর তিনিও আন্তরিকভাবে যতটুকু জানেন সে মোতাবেক কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
খ) কৃষিবিষয়ক অধিদপ্তরসমূহ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা যার যার অবস্থান থেকে কৃষকদের তথ্য প্রদান ও সেবা দিয়ে থাকেন। তারা নির্দিষ্ট প্রযুক্তির উপর পোস্টার, লিফলেট, বুকলেট তৈরি করে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন। আবার রেডিও, টেলিভিশনের মাধ্যমেও কৃষিতথ্য প্রচার করেন।
কৃষিতথ্য প্রচারের জন্য ‘কৃষিতথ্য সার্ভিস’ নামে একটি সংস্থা আছে। সম্প্রসারণ কর্মীরা কৃষকদের খামার ও গৃহ পরিদর্শন করেন। কৃষকনের সাথে সভা করেন। নতুন প্রযুক্তি বা পদ্ধতি প্রদর্শন করেন এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলাফল প্রদর্শন করেন। এছাড়া তারা কৃষি মেলার আয়োজন করেন ও কৃষকনের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো, কৃষকেরা কৃষি সমস্যা নিজেরা চিহ্নিত করেন। যার কিছুটা সমাধান নিজেরা নিতে পারেন। যেসব সমস্যার সমাধান কৃষকেরা দিতে পারেন না, কেবল সেগুলো সম্পর্কে সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা পরামর্শ নিয়ে থাকেন।
এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষক মাঠ স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। এ স্কুলের মাধ্যমে কৃষকদের সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
গ) স্থানীয় কৃষি অফিস
বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় কৃষকদের সেবা প্রদানের জন্য কৃষি অফিস, প্রাণিসম্পদ অফিস, মৎস্য অফিস আছে। এসব অফিস দক্ষ কৃষিবিদ দ্বারা পরিচালিত। অফিসের তৃণমূল কর্মীরা কৃষকদের সাথে সভা করেন। সভায় কৃষকদের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয় এবং সমাধান দেওয়া হয়।
ঘ) কৃষি মেলা
কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি, কৃষি উপকরণ ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য একসাথে একমাত্র কৃষি মেলার মাধ্যমেই দেখা সম্ভব। গ্রামের মতো শহরেও এ ধরনের মেলার আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মেলায় এক নজরে নানা ধরনের ফসল দেখা সম্ভব হয়। এই মেলায় চারা, বীজ, সার, কৃষি প্রযুক্তি ইত্যাদি দেখানো ও বিক্রি করা হয়। এ মেলায় কৃষিবিষয়ক নানা লিফলেট, পুস্তিকা, বুলেটিন, পত্রিকা প্রদর্শিত হয় এবং বিনামূল্যে দর্শকদের দেওয়া হয়। এতে কৃষি কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও উপস্থিত দর্শকগণও কৃষি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হন। সুতরাং কৃষিবিষয়ক তথ্য পেতে কৃষি মেলার বিকল্প নেই।
(৪) কৃষিশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান
ক) কৃষিশিক্ষা
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন স্তরে কৃষিশিক্ষা দেওয়া হয়। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা লব্ধ কৃষি জ্ঞান কৃষিকাজে ব্যবহার করে থাকেন। বাংলাদেশে ১৬টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আছে। এছাড়াও প্রাইভেট কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আছে। কারিগরি বোর্ডের একাডেমিক অধীনে থেকে ইনস্টিটিউটগুলো ৪ বছর মেয়াদি কৃষি ডিপ্লোমা প্রদান করে থাকে।
উচ্চতর কৃষিশিক্ষার জন্য বাংলাদেশে ৫টি সরকারি কৃষি | বিশ্ববিদ্যালয় আছে। দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদ চালু আছে। তাছাড়া রাজশাহী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও কৃষি অনুষদ চালু আছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি অনুষদ হতে কৃষিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়।
খ) কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশে অনেকগুলো কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেশিরভাগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানই নির্দিষ্ট ফসলের উপরে গবেষণা করে থাকে। যেমন: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ধানের উন্নত জাত ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাট উন্নয়নের জন্য যাবতীয় গবেষণা করে। বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট ইক্ষু উন্নয়নের জন্য যাবতীয় গবেষণা করে থাকে। বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন ফসলের উপর গবেষণা করে।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত মেধাবী কৃষিবিদগণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহে যোগদান করেন। তারা গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। এর ফলে কৃষকেরা উন্নতমানের ফসলের বীজ, নতুন জাত, রোগ ও কীটপতঙ্গের প্রতিকারসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন।
ফসল সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও প্রাণী ও মাছের উপর গবেষণার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই গবেষণার ফলে প্রাণী পালন ও মাছ চাষের অনেক প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে। এর ফলে প্রোটিন ব্যবসার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। সকল কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণার ফলাফল সম্পর্কিত লিফলেট, পুস্তিকা প্রকাশ করে জনগণকে অবহিত করা হচ্ছে।
গ) কৃষি বিজ্ঞানী
কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যিনি গবেষণা করে নতুন নতুন জাত প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন, তিনি কৃষি বিজ্ঞানী। তিনি একটি ফসলের জীবনচক্র সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন এবং তাঁর নিকট কৃষি বিষয়ক নানা প্রকার তথ্য পুঞ্জীভূত থাকে। তাঁরা নতুন ফসল ও প্রাণীর উন্নত জাত উৎপাদন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে দেশের কল্যাণ সাধন করছেন।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।