লতা, গুল্ম ও ছোটবড় গাছপালায় আচ্ছাদিত এলাকাকে বন বলা হয়। বনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সেখানে উঁচু ও কাষ্ঠল বৃক্ষ থাকবে।
বনে নানারকম পশু-পাখি ও পোকামাকড় বাস করে বনজ পরিবেশ তৈরি করে। বন আমাদের পরিবেশকে আবাস উপযোগী রাখে। কোনো দেশের সমগ্র এলাকার ২৫% প্রাকৃতিক বন থাকাটা আদর্শ অবস্থা। সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশের ১৭% এলাকায় প্রাকৃতিক বন রয়েছে (পরিসংখ্যান ২০১৩)। বনকে রক্ষা করা ও নতুন বন সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবি।
এখানে আমরা প্রাকৃতিক বন, সামাজিক বন ও কৃষি বন সৃষ্টি এবং এর পরিচর্যা সম্পর্কে আমরা জানব। তাছাড়া বনের গুরুত্ব সম্পর্কেও আমরা তথ্য জানতে এবং উপলব্ধি করতে পারব।
এ আলোচনাটি থেকে আমরা- কৃষি ও সামাজিক বনের সাথে প্রাকৃতিক বনের তুলনা; বাংলাদেশের মানচিত্রে প্রাকৃতিক বন এবং ঐ সকল বনের উদ্ভিদ ও প্রাণী; কৃষি ও সামাজিক বনায়নের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক; পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কৃষি ও সামাজিক বনায়নের গুরুত্ব; বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে, টবে, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার উপায়; পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কৃষি ও সামাজিক বনায়নের অবদান; ইত্যাদি বিষয় জানতে, বুঝতে ও, উপলব্ধি করতে পারব।
(১) প্রাকৃতিক বন, সামাজিক বন ও কৃষি বন
গাছপালায় ঢাকা বিস্তৃত এলাকাকে বন বলা হয়। বনে বড় বড় উদ্ভিদের সংখ্যা বেশি থাকে। এ ছাড়া মাঝারি গাছপালা ও লতা গুলাও বনে জন্মে থাকে। হরেক রকমের পশু-পাখি এবং কীটপতঙ্গ বনে বাস করে। এসব গাছপালা ও জীবজন্তু এক সাথে মিলেমিশে বনজ পরিবেশ সৃষ্টি করে।
বনের প্রকারভেদ:
উৎপত্তি অনুসারে বন প্রধানত তিন প্রকার, যথা- ক) প্রাকৃতিক বন খ) সামাজিক বন ও গ) কৃষি বন প্রাকৃতিক বন।
ক) প্রাকুতিক বন
প্রকৃতিতে আপনা-আপনি যে বিস্তৃত বনাঞ্চল সৃষ্টি হয়, তাকে প্রাকৃতিক বন বলে। শত শত বছর ধরে এ বনাঞ্চল গড়ে ওঠে।
সুন্দরবন এরকম একটি প্রাকৃতিক বন। খুলনা শহরের দক্ষিণ অঞ্চলে এ বন অবস্থিত। বৃহত্তর ঢাকার গাজীপুর ও মধুপুরের শালবনও প্রাকৃতিক বন। আমাদের দেশের চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, সিলেট প্রভৃতি অঞ্চলেও প্রাকৃতিক বন রয়েছে। এসব বনের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ হলো- সুন্দরি, শাল, গর্জন, গেওয়া, কেওড়া, বাইন প্রভৃতি। অঞ্চল ভেদে হাতি, বাঘ, হরিণ, বানর, ভালুক, অজগর এবং বিভিন্ন রকম পাখি ও পোকামাকড় এসব বনে বাস করে। এসব বন থেকে মূল্যবান কাঠ পাওয়া যায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাকৃতিক বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিস্তৃতি অনুসারে আমাদের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বন তিন প্রকার। এগুলো হলো- পাহাড়ি বন, সমভূমির বন ও উপকূলীয় বন।
খ) সামাজিক বন
বাড়িঘর, বিদ্যালয়, পুকুরপাড়, রাস্তা ও বাঁধের দুই পাশে আমরা বিভিন্ন রকম গাছপালা রোপণ করে থাকি। এসব উদ্ভিদের বেশিরভাগই ফল জাতীয় হয়। আবার রেইনট্রি, মেহগনি, কড়ই জাতীয় বনজ গাছও লাগানো হয়। এসব গাছপালা আমাদের চারপাশে ছায়াঘন প্রশান্তিময় সবুজ পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ বন বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ থেকে আমাদের রক্ষা করে, আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
মানুষ নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য পরিকল্পনা করে যে বন সৃষ্টি করে, তাকে সামাজিক বন বলে।
আমাদের বাংলাদেশে পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ভোলা এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে মানব তৈরি উপকূলীয় বন সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বনের প্রধান উদ্ভিদ কেওড়া ও বাইন। বিভিন্ন পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদিও মানুষ বিনোদন ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করে গড়ে তোলে। এগুলোও সামাজিক বনের অন্তর্ভুক্ত।
গ) কৃষি বন
আমাদের দেশের অনেক বাড়িতে এবং বাড়ির আঙ্গিনায় বড় গাছপালার সাথে সবজি চাষ করা হয়। ফলের বাগানে ও ফসলি জমির আইল, ক্ষেত-খামারে পৌঁছার পথ, পুকুরের চারপাশ, খাল-সেচনালার পাশে ছোট-বড় গাছ লাগানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মাঠ ও উদ্যান ফসলের ক্ষতি করবে না এমন গাছ নির্বাচন করা হয়। এভাবে তৈরি বনকে কৃষি বন বলে।
অর্থাৎ একই জমিতে বহুমুখী ফসল, বৃক্ষ, মাছ ও পশু-পাখির খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে কৃষি বন বলা হয়।
কৃষি বনে মাঠ ফসল, তাল, সুপারি, নারিকেল, কলা, আম, কাঁঠাল, ইপিল-ইপিল প্রভৃতি গাছ লাগানো হয়। কৃষি বন অধিক খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ করে।
(২) বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের ধারণা ও গুরুত্ব
অবস্থান ও বিস্তৃতি অনুসারে আমাদের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বন প্রধানত ৩ প্রকার, যথা- পাহাড়ি বন, সমতল ভূমির বন ও উপকূলীয় বন।
ক) পাহাড়ি বন
বাংলাদেশের বনাঞ্চলের মধ্যে পাহাড়ি বনের পরিমাণ সর্বাপেক্ষা বেশি। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এ বন অবস্থিত। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার প্রাকৃতিক বন পাহাড়ি বন বলে পরিচিত।
এসব পাহাড়ি বনে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, শিলকড়ই, গামার প্রভৃতি বৃক্ষ জন্মে। এসব মূল্যবান বৃক্ষ থেকে উন্নতমানের কাঠ পাওয়া যায়। পাহাড়ি বনে বহু রকমের বাঁশও জন্মায়। এই বনে হাতি, বানর, শূকর, ভালুক, বনমুরগি, হনুমান, অজগর, প্রভৃতি বন্য প্রাণী বাস করে। বিচিত্র ধরনের পাখি ও কীটপতঙ্গও এখানে রয়েছে।
খ) সমতল ভূমির বন
বৃহত্তর ঢাকা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, রাজশাহী ও কুমিল্লার সমতল এলাকায় যে প্রাকৃতিক বন রয়েছে, তা সমতল ভূমির বন হিসেবে পরিচিত। প্রধান বৃক্ষ শাল। তাই এ বনকে শালবন বলা হয়।
শাল বৃক্ষ গজারি নামে পরিচিত। এ বনে গজারি, ছাড়াও কড়ই, রেইনট্রি, জারুল প্রভৃতি বৃক্ষ জন্মে। নেকড়ে, বানর, সাপ, ঘুঘু, দোয়েল, শালিক প্রভৃতি জীবজন্তু এ বনে বাস করে।
মানবসৃষ্ট কারণে সমতল ভূমির প্রাকৃতিক বন দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। বনকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এলাকার জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার। সে কারণে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গ) উপকূলীয় বন
সমুদ্র উপকূলে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা বনকে উপকূলীয় বন বলা হয়। এ ছাড়া পরিকল্পিত উপায়ে সমুদ্র উপকূলে সামাজিক বন গড়ে তোলা হলেও তাকে উপকূলীয় বন বলে।
বাংলাদেশে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় উপকূলীয় বন অবস্থিত। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীর উপকূলীয় বন সুন্দরবন নামে পরিচিত। প্রতিনিয়ত সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় বলে একে ম্যানগ্রোভ বনও বলা হয়।
সুন্দরবন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। এ বনের মোট আয়তন ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এ বন পৃথিবীর বৃহত্তম উপকূলীয় প্রাকৃতিক বন। এ বনের নৈসর্গিক সৌন্দর্য অপরূপ।
সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরি। এ ছাড়া পশুর, গেওয়া, গরান, কেওড়া, গোলপাতা প্রভৃতি এ বনের উল্লেখযোগ্য বৃক্ষ। এ বনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। চিত্রা হরিণ, চিতাবাঘ, বন্য শূকর, বানর, কুমির, ঘড়িয়াল, অজগর এবং নানা প্রজাতির পাখি, কীটপতঙ্গ এ বনে বাস করে। এ বনের বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ গৃহনির্মাণ, নিউজপ্রিন্ট তৈরি ও জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রতিবছর এ বন থেকে প্রচুর পরিমাণ মধু ও মোম সংগ্রহ করা হয়।
(৩) সামাজিক বন ও বনায়ন
মানুষ নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য পরিকল্পনা করে যে বন তৈরি করে, তাই সামাজিক বনায়ন। সড়ক ও বাঁধ বন এবং উপকূলীয় মানবসৃষ্ট কেওড়া বন, সামাজিক বনায়নের উদাহরণ। রেইনট্রি, কড়ই, আকাশমণি, মেহগনি সড়ক ও বাঁধের দুই পাশে লাগানো হয়।
সারা দেশের বনজ সম্পদের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে এবং পরিবেশ রক্ষায় গ্রামীণ জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে সামাজিক বনায়ন করা হয়।
এবার আমরা সামাজিক বনের যেসব গুরুত্বের কথা বলেছি, তার সাথে নিচের বিষয়গুলো মিলিয়ে নেই।
সামাজিক বনের গুরুত্ব-
- ছায়াঘেরা সুশীতল মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়।
- গ্রামের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির যোগান দেয়।
- কাঠ, জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করে।
- গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
- পতিত জমির সঠিক ব্যবহার হয়।
- দারিদ্র্য বিমোচনসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে।
(৪) কৃষি বন ও বনায়ন
একই জমিতে একই সময়ে বা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন গাছ, ফসল ও পশু-পাখি উৎপাদন হচ্ছে কৃষি বনায়ন।
কৃষি বন উপযোগী উদ্ভিদের সংখ্যা অসংখ্য। কৃষি বনে সুপারি, তাল, খেজুর, বাবলা, নারিকেল, মেহগনি, ইত্যাদি ফল ও কাঠের গাছ ফসলি জমির আইল বা ফাঁকে ফাঁকে রোপণ করা হয়।
কৃষি বনায়ন পদ্ধতি:
আমাদের দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব অধিক। সে তুলনায় কৃষি জমির পরিমাণ খুবই কম। সে কারণে এই জমিতে বহুমুখী ফসল ফলানো এখন সময়ের দাবি।
ভূমির প্রকৃতি ও স্থানীয় চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন রকম কৃষি বনায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন-
ক) বৃক্ষ ও মাঠ ফসল চাষ পদ্ধতি
কৃষি বনায়নের এ পদ্ধতিতে একই জমিতে মাঠ ফসলের সাথে বৃক্ষের সমন্বিত চাষ করা হয়। এর ফলে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন বেশি হয়।
খ) বৃক্ষ ও গোখাদ্য চাষ পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে একই জমিতে বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদের সাথে পশুখাদ্যের চাষ করা হয়। এতে একদিকে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মাটির ক্ষয় রোধ হয়।
গ) বনজ ও ফলদ বৃক্ষ চাষ পদ্ধতি
এ ধরনের কৃষি বনায়নে বনজ বৃক্ষের সাথে ফলদ বৃক্ষের চাষ করা হয়। এ পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত। এ পদ্ধতিতে জমির বহুমুখী উৎপাদন নিশ্চিত হয়। তাছাড়া জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। পশু-পাখি ও কীটপতঙ্গের আবাস সৃষ্টি হয়, পরিবেশ সংরক্ষিত হয়। উদাহরণ: ইপিল-ইপিল, নারিকেল, লিচু গাছের সাথে আনারস।
(৫) কৃষি ও সামাজিক বনায়নের পার্থক্য
কৃষিজ ফসল ও বনজ বৃক্ষ একসাথে চাষ করার পদ্ধতিই হলো কৃষি বনায়ন। এ বনায়নের মাধ্যমে কৃষক ভূমির সঠিক ব্যবহার করতে পারে। ফলে উৎপাদন বেশি হয়। কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়।
সামাজিক বনায়নে গ্রামীণ জনগণ সরাসরি অংশগ্রহণ করে। বাড়ির আঙ্গিনা, প্রতিষ্ঠান, সড়ক ও বাঁধ, নদী ও খাল পাড় প্রভৃতি জায়গায় বনায়ন করা হয়। জনগণের কল্যাণে জনগণ সৃষ্ট এ বনায়ন সামাজিক বনায়ন নামে পরিচিত।
কৃষি বনায়ন ও সামাজিক বনায়নের পারস্পরিক সম্পর্ক-
- কৃষি বনায়নের মাধ্যমে একই সাথে ফসল, বৃক্ষ, মাছ ও পশু-পাখির খাদ্য উৎপাদন করা যায়। তবে একই সাথে বৃক্ষ ও ফসল উৎপাদনকে কৃষি বনায়ন বলা হয়। কিন্তু সামাজিক বনায়নের ফলে কেবল কাঠ ও ফল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ উৎপাদন করা যায়।
- সামাজিক বনায়নের ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণিবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়। গ্রামীণ জনগণ সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন করে থাকে। জনসাধারণের চেষ্টায় সৃষ্টি হয় সামাজিক বন। কৃষি বনায়নে কাঠ ও ফল উৎপাদনকারী উদ্ভিদের পাশাপাশি মাঠ ফসল চাষ করা যায়।
- কৃষি বনায়নে একই জমি বারবার ব্যবহার করে পর্যায়ক্রমে শস্য উৎপাদন করা হয়। এর ফলে বেশি ফসল পাওয়া যায়। জমির উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যায়। সামাজিক বনায়নে একই জমি একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ কম।
- কৃষি বনায়নের মাধ্যমে কৃষি খামার, মৎস্য খামার, মৌমাছি চাষ, রেশম চাষ করা যায়। ফলে খাদ্য, বস্ত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ বাড়ে। অপর দিকে সামাজিক বনায়নের ফলে মূল্যবান কাঠ ও নানা রকম ফল পাওয়া যায়।
- সড়ক, রাজপথ, বাঁধ ও রেলপথে সামাজিক বনায়ন করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজারেও সামাজিক বনায়ন করা হয়। ফসলি মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনা, পাহাড়ি পতিত জমি এবং উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি বনায়ন করা হয়। আজকাল বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক বনেও সামাজিক বনায়ন ও কৃষি বনায়ন করা হচ্ছে। যেমন: মধুপুর ও ভাওয়ালের শালবন।
(৬) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনের ভূমিকা
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এসব বনের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ ভূমিতে বন থাকা অপরিহার্য।
আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে বনের পরিমাণ মোট আয়তনের ১৭ ভাগ (পরিসংখ্যান ২০১৩)। সুতরাং দেশের বনজ সম্পদ বাড়ানোর জন্য কৃষি বন এবং সামাজিক বনের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
এবার দেখা যাক এসব বন কীভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখে-
- বনের গাছপালা বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন পরিবেশে ছেড়ে দেয়। ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য বজায় থাকে।
- এসব বনের গাছপালা বাতাসে জলীয়বাষ্প সরবরাহ করে। ফলে পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকে। এ জলীয় বাষ্প মেঘ ও বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।
- আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতা হ্রাস করে। বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করে।
- এসব বন মাটিকে উর্বর করে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির উপযোগী পরিবেশ রক্ষা করে।
- জীবজন্তুর খাদ্য উৎপাদন করে এবং আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করে।
- ভূমিক্ষয় ও ভূমিধস থেকে পরিবেশ রক্ষা করে।
- টর্নেডো, ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে জনপদ রক্ষা করে।
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা করে।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।