এখানে প্রথমে কৃষি মৌসুম, কৃষি মৌসুমের বৈশিষ্ট্য, রবি, খরিপ ও মৌসুম নিরপেক্ষ ফসল এবং এসব ফসলের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরে ফসল উৎপাদনে আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিকূল আবহাওয়া ও জলবায়ু যেমন- অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, খরা, বন্যা ও জলাবদ্ধতা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়েছে। এসব প্রতিকূল পরিবেশে ফসলের কী কী ধরনের ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
এ আলোচনাটির মাধ্যমে আমরা কৃষি মৌসুমের বৈশিষ্ট্য জানতে পারব, রবি ও খরিপ মৌসুমের ফসলাদি, মৌসুম নিরপেক্ষ ফসলাদি, কৃষি উৎপাদনে আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব, কৃষি উৎপাদন ও কৃষি পরিবেশ বিবেচনায় বাংলাদেশকে প্রধান কয়েকটি অঞ্চল ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হতে পারব।
নিম্নে কৃষি মৌসুম কাকে বলে? কৃষি মৌসুম কয়টি? মৌসুমের সময়কাল ও কোন মৌসুমের ফসল কোনটি/নাম/কি কি? এবং বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে কোন ফসল ভালো জন্মে তার তালিকা সুন্দর ও সহজভাবে উপস্থাপন করা হলো-
(১) কৃষি মৌসুম কাকে বলে?
একটি ফসল বীজ বপন থেকে শুরু করে তার শারীরিক বৃদ্ধি ও ফুল-ফল উৎপাদনের জন্য যে সময় নেয় তাকে ঐ ফসলের মৌসুম বলে।
অর্থাৎ কোনো ফসলের বীজ বপন থেকে ফসল সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কে সে ফসলের মৌসুম বলে।
কোন অঞ্চলে কখন কোন ফসল জন্মাবে তা নির্ভর করে সে অঞ্চলের জলবায়ুর উপর। তাই কোনো অঞ্চল বা দেশের ফসল উৎপাদনের ধরন ও সময় জানতে হলে সে অঞ্চল বা দেশের জলবায়ুকে জানতে হবে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যালোক, বায়ুচাপ, বায়ুর আর্দ্রতা ইত্যাদি হলো আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান। এ উপাদানগুলোই ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ও দূরত্ব, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের জলবায়ু সাধারণত সমভাবাপন্ন। পরিমিত বৃষ্টিপাত, মধ্যম শীতকাল, আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ ধরনের জলবায়ু কৃষি উৎপাদনের জন্য খুবই সহায়ক।
বাংলাদেশের জলবায়ুর উপর নির্ভর করে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল জন্মে।
(২) কৃষি মৌসুম কয়টি?
ফসল উৎপাদনের জন্য সারা বছরকে প্রধানত দুটি মৌসুমে ভাগ করা হয়েছে, যথা- ক) রবি মৌসুম ও খ) খরিপ মৌসুম।
ক) রবি মৌসুমের সময়কাল: আশ্বিন থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত সময়কে রবি মৌসুম বলে। রবি মৌসুমের প্রথম দিকে কিছু বৃষ্টিপাত হয়, তবে তা খুবই কম হয়ে থাকে। এ মৌসুমে তাপমাত্রা, বায়ুর আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত সবই কম হয়ে থাকে।
খ) খরিপ মৌসুমের সময়কাল: চৈত্র থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত সময়কে খরিপ মৌসুম বলে।
খরিপ মৌসুমকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যথা- খরিপ-১ বা গ্রীষ্মকাল এবং খরিপ-২ বা বর্ষাকাল।
- খরিপ-১ মৌসুম কোনটি: চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত সময়কে খরিপ-১ মৌসুম বা গ্রীষ্মকাল বলা হয়। এ মৌসুমে তাপমাত্রা বেশি থাকে এবং মাঝে মাঝে ঝড়, বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে।
- খরিপ-২ মৌসুম কোনটি: আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত সময়কে খরিপ-২ মৌসুম বা বর্ষাকাল বলা হয়। এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে এবং তাপমাত্রা মাঝারি মাত্রার হয়।
যে সকল ফসলের বৃদ্ধি ও ফুল-ফল উৎপাদন তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুর আর্দ্রতা, দিনের দৈর্ঘ্য ইত্যাদি যারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় কেবল সে সকল ফসলেরই মৌসুমভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ করা হয়। বহু বর্ষজীবী ফসল যেমন-ফলন, বনজ ও ঔষধি ফসলের ক্ষেত্রে মৌসুমভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ তেমন প্রযোজ্য নয়।
(৩) রবি ফসল কাকে বলে? রবি মৌসুমের বৈশিষ্ট্য ও রবি মৌসুমের ফসল কোনটি/নাম/কি কি?
রবি ফসল কাকে বলে: যেসব ফসলের শারীরিক বৃদ্ধি ও ফুল-ফল উৎপাদনের পুরো বা অধিক সময় রবি মৌসুমে হয় তাদেরকে রবি ফসল বলে। রবি ফসলকে শীতকালীন ফসলও বলা হয়ে থাকে।
রবি ফসলের বৈশিষ্ট্য জানতে হলে আমাদের রবি মৌসুমের বৈশিষ্ট্য ভালোভাবে জানতে হবে।
রবি মৌসুমের বৈশিষ্ট্য:
রবি মৌসুমের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
- তাপমাত্রা কম থাকে।
- বৃষ্টিপাত কম হয়।
- বায়ুর আর্দ্রতা কম থাকে।
- ঝড়ের আশঙ্কা কম থাকে।
- শিলাবৃষ্টির আশঙ্ক্ষা কম থাকে।
- কন্যার আশঙ্ক্ষা কম থাকে।
- রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়।
- পানিসেচের প্রয়োজন হয়।
- দিনের চেয়ে রাত বড় বা সমান হয়।
রবি মৌসুমের বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, এ মৌসুমে কোন ধরনের ফসল জনায়। যেসব ফসল চাষাবাদের জন্য কম তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় সেসব ফসল রবি মৌসুমে চাষাবাদ করা হয়।
রবি মৌসুমের ফসল কোনটি/নাম/কি কি: রবি মৌসুমে আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, গাজর, লাউ, শিম, ওলকপি, ব্রোকলি, শালগম, পালংশাক, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি উদ্যান ফসল চাষ করা হয়। মাঠ ফসলের মধ্যে রয়েছে বোরো ধান, গম, সরিষা, তিসি, মসুর, ছোলা, খেসারি ইত্যাদি। এ মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়।
(৩) খরিপ ফসল কাকে বলে? খরিপ মৌসুমের বৈশিষ্ট্য ও খরিপ মৌসুমের ফসল কোনটি/নাম/কি কি?
খরিপ ফসল কাকে বলে: যেসব ফসলের শারীরিক বৃদ্ধি ও ফুল-ফল উৎপাদনের পুরো বা অধিক সময় খরিপ মৌসুমে হয় তাদেরকে খরিণ ফসল বলে। ধরিণ ফসলের বৈশিষ্ট্য জানতে হলে আমাদের খরিপ মৌসুমের বৈশিষ্ট্য জানতে হবে।
খরিপ মৌসুমের বৈশিষ্ট্য:
খরিপ মৌসুমের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
- এ মৌসুমে তাপমাত্রা বেশি থাকে।
- বৃষ্টিপাত বেশি হয়।
- বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে।
- ঝড়ের আশঙ্কা বেশি থাকে।
- শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা বেশি থাকে।
- বন্যার আশঙ্কা বেশি থাকে।
- রোগ ও পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
- পানি সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না।
- দিনের দৈর্ঘ্য রাতের দৈর্ঘ্যের সমান বা বেশি হয়।
- যেসব ফসল চাষাবাদের জন্য বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় সেসব ফসল খরিপ মৌসুমে চাষাবাদ করা হয়।
খরিপ মৌসুমকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা-
খরিপ-১ মৌসুমের বৈশিষ্ট্য:
- এ মৌসুমে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয় এবং মৌসুমের শেষের দিকে বেশি বৃষ্টিপাত শুরু হয়।
- কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা বেশি।
- এ মৌসুমে দেশের অনেক অঞ্চলে ঢল বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়।
- এ সময় তাপমাত্রা খুব বেশি এবং বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ মাঝারি থাকে।
- ফসলে রোগ ও পোকার আক্রমণ মাঝারি হয়।
- ফসল উৎপাদনে মাঝারি ধরনের সেচের প্রয়োজন হয়।
খরিপ ১ মৌসুমের ফসল কোনটি/নাম/কি কি: এ মৌসুমের প্রধান ফসল হলো- পাট, তিল, ডাঁটা, মুখি কচু, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, করলা, পটোল, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি। আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপে, তরমুজ, বাঙ্গী এ সময়ে পাকে।
খরিপ-২ মৌসুমের বৈশিষ্ট্য:
- এ মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টিপাত খুব বেশি হয়।
- ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা কম থাকে তবে বন্যার আশঙ্ক্ষা বেশি থাকে।
- ভাপমাত্রা ও বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে।
- ফসলে পোকার আক্রমণ ও রোগ বেশি হয়।
- ফসল উৎপাদনে কৃত্রিম পানি সেচের প্রয়োজন তেমন হয় না।
খরিপ-২ মৌসুমের ফসল কোনটি/নাম/কি কি: এ মৌসুমের প্রধান ফসল হলো আমন ধান, পানি কচু, চাল কুমড়া, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ধুন্দল ইত্যাদি। এ সময়ে তাল, আমলকী, আনারস, আমড়া, পেয়ারা, নাবি জাতের আম ও কাঁঠাল এবং বাতাবি লেবু পাকে।
(৪) মৌসুম নিরপেক্ষ ফসল কি? মৌসুম নিরপেক্ষ ফসলের বৈশিষ্ট্য ও মৌসুম নিরপেক্ষ ফসল কোনটি/নাম/কি কি?
পূর্ববর্তী পাঠে আমরা মৌসুম ভিত্তিক বিভিন্ন ফসলের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য জানতে পেরেছি। এসব মৌসুমি ফসলের ক্ষেত্রে এক মৌসুমের ফসল অন্য মৌসুমে চাষ করা যায় না। কিন্তু এমন কতগুলো ফসল রয়েছে যাদের সারা বছর লাভজনকভাবে চাষ করা যায়।
মৌসুম নিরপেক্ষ ফসল কি: যেসব ফসল সারা বছর লাভজনকভাবে চাষ করা হয় তাদেরকে মৌসুম নিরপেক্ষ ফসল বা বারমাসি ফসল বলা হয়। মৌসুম নিরপেক্ষ ফসলগুলোকে আবার নিবা নিরপেক্ষ ফসলও বলে। কারণ যেকোনো দৈর্ঘ্যের দিনে এসব ফসল ফুল-ফল উৎপাদন করতে পারে।
ফসলের ফুল-ফল উৎপাদনে দিবা দৈর্ঘ্যের প্রভাবের বিষয়ে আমরা পরের পাঠে বিস্তারিত জানব।
মৌসুম নিরপেক্ষ ফসল কোনটি/নাম/কি কি: আমাদের দেশে মৌসুম নিরপেক্ষ উদ্যান ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- লালশাক, বেগুন, মরিচ, পেঁপে, কলা ইত্যাদি। অন্যদিকে মৌসুম নিরপেক্ষ মাঠ ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভুট্টা, চিনাবাদাম ইত্যাদি।
আমাদের দেশে আবহাওয়া ও জলবায়ুগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ফসল সারা বছর চাষ করা যায় না। তবে কিছু উচ্চমূল্যের ফসল রয়েছে যা সারা বছর চাষ করা সম্ভব হলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো না- যেমন টমেটো ও পেঁয়াজ। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মৌসুম নিরপেক্ষ ফসলের জাত নিয়ে গবেষণা চলছে। ইতোমধ্যে সারা বছর চাষোপযোগী টমেটো ও পেঁয়াজের অনেকগুলো জাত বের করা হয়েছে।
আমাদের অনেক সময় মনে এ প্রশ্ন জাগে যে, কেন কিছু ফসল সারা বছর চাষ করা যায়? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের ফসলের জলবায়ুগত চাহিদার কথা ভাবতে হবে। আমরা জানি রবি ফসলের জন্য এক ধরনের এবং খরিপ ফসলের জন্য আরেক ধরনের জলবায়ুর প্রয়োজন। মৌসুম নিরপেক্ষ ফসলগুলো রবি ও খরিপ উভয় মৌসুমেই জন্মাতে পারে। এ থেকে বোঝা যায় যে, মৌসুম নিরপেক্ষ ফসলগুলোর জলবায়ুগত চাহিদার বিস্তার অনেক বেশি হবে। ফলে এ ফসলগুলো উভয় মৌসুম বা সারা বছর চাষ করা যায়।
মৌসুম নিরপেক্ষ ফসলের বৈশিষ্ট্য:
- সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, মৌসুম নিরপেক্ষ ফসলগুলো-
- কম তাপমাত্রা থেকে বেশি তাপমাত্রায় জন্মাতে পারে।
- কম বৃষ্টিপাত থেকে বেশি বৃষ্টিপাতে জন্মাতে পারে।
- কম আর্দ্রতা থেকে বেশি আর্দ্রতায় জন্মাতে পারে।
- স্বপ্ন দিবা দৈর্ঘ্য থেকে দীর্ঘ দিবা দৈর্ঘ্যে ফুল-ফল উৎপাদন করতে পারে।
(৫) ফসল উৎপাদনে আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব
কোন অঞ্চলে কী ধরনের ফসল জন্মাবে তা ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলো ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে। এসব উপাদান কীভাবে ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে সে সম্পর্কে এখন আলোচনা করব।
ক) সূর্যালোক: সূর্যালোক অনেকভাবে ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে। আমরা জানি উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। এ প্রক্রিয়ায় সূর্যালোকের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমন্বয়ে পাতায় খাদ্য তৈরি হয়।
সূর্যালোকের প্রয়োজন অনুসারে উদ্ভিদকে প্রধানত দুই ভাগ করা হয়, যথা-
- আলো পছন্দকারী উদ্ভিদ ও
- ছায়া পছন্দকারী উদ্ভিদ।
ভুট্টা, আখ পূর্ণ সূর্যালোকে ভালো জনো আবার চা, কফি ছায়া পছন্দ করে। দৈনিক আলোর সংস্পর্শে আসার সময় দিনের দৈর্ঘ্য ফসলের ফুল-ফল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে।
দিনের দৈর্ঘ্যের উপর সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে উদ্ভিদকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-
- দীর্ঘ দিবা উদ্ভিদ বা বড় দিনের উদ্ভিদ: এসব উদ্ভিদের ফুল-ফল উৎপাদনের জন্য দিনের দৈর্ঘ্য ১২ ঘণ্টার বেশি প্রয়োজন হয়। যেমন- আউশ ধান, পাট, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ইত্যাদি।
- স্বপ্ন দিবা উদ্ভিদ বা ছোট দিনের উদ্ভিদ: এসব উদ্ভিদের ফুল-ফল উৎপাদনের জন্য দিনের দৈর্ঘ্য ১২ ঘণ্টার কম প্রয়োজন হয়। যেমন- গম, সরিষা, আমন ধান, গিমা কলমি, পুঁইশাক।
- নিবা নিরপেক্ষ উদ্ভিদ: যেকোনো দৈর্ঘ্যের দিনে এসব ফসলের ফুল-ফল উৎপাদিত হয়ে থাকে। যেমন- চিনাবাদাম, টমেটো, কার্পাস তুলা ইত্যাদি।
খ) তাপমাত্রা: বেঁচে থাকার জন্য সকল উদ্ভিদে একটি সর্বনিম্ন, সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে। একে কার্ডিনাল তাপমাত্রা বলে। কার্ডিনাল তাপমাত্রা উদ্ভিদের প্রজাতি ও জাত ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। কোনো স্থানের ফসলের বিস্তৃতি কার্ডিনাল তাপমাত্রা যারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
তাপমাত্রার চাহিদা অনুযায়ী আবাদযোগ্য ফসলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা ঠাণ্ডা ঋতুর ফসল ও উষ্ণ ঋতুর ফসল।
- ঠাণ্ডা ঋতুর ফসল: এরা অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রা পছন্দ করে, যেমন- গম, আলু, ছোলা, মসুর, ফুলকপি, ওলকপি ইত্যাদি। এদের জন্মানোর জন্যে সর্বনিম্ন ০-৫° সে., সর্বোত্তম ২৫-৩১° সে. এবং সর্বোচ্চ ৩১-৩৭° সে. তাপমাত্রার প্ররোশন হয়।
- উষ্ণ ঋতুর ফসল: এ ফসলগুলো অপেক্ষাকৃত উচ্চতাপমাত্রায় জন্মে, যেমন-পাট, রাবার, কাসাভা এদের জন্যানোর জন্য সর্বনিম্ন ১৫-১৮° সে., সর্বোত্তম ৩১-৩৭° সে. এবং সর্বোচ্চ ৪৪-৫০ সে. তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়।
গ) বৃষ্টিপাত: উদ্ভিদের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদ মাটিতে ধারণকৃত পানির উপর নির্ভরশীল। আর বৃষ্টিপাত মাটিতে ধারণকৃত পানির প্রধান উৎস। সেজন্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সময় ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টিপাতের পার্থক্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফসল জন্মে থাকে।
ঘ) বায়ুপ্রবাহ: প্রস্বেদন, সালোকসংশ্লেষণ, ফুলের পরাগায়ন ইত্যাদি বায়ু প্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ঙ) বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ: ফসলের প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে উচ্চ জলীয়বাষ্প সহায়ক। দানা গঠন পর্যায়ে নিম্ন জলীয়বাষ্প দানার সংকোচন ঘটাতে পারে। বাতাসে অধিক জলীয়বাষ্পের পরিমাণ রোগজীবাণু ও পোকার বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করে।
চ) শিশিরপাত ও কুয়াশা: কোনো কোনো সময় শিশিরপাত ও কুয়াশা বায়ুর আর্দ্রতা বাড়িয়ে ফসলে রোগ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
(৬) ফসল উৎপাদনে প্রতিকূল আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব
আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূল থাকলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া ও জলবায়ুতে ফসল উৎপাদন হ্রাস পায়, এমনকি উৎপাদন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমরা এ পাঠে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়া নিয়ে আলোচনা করব। এ ধরনের আবহাওয়ায় ফসলের কী ধরনের ক্ষতি হয় সে সম্পর্কেও জানব।
ক) অতিবৃষ্টি: স্বাভাবিকের তুলনায় যখন কোনো স্থানে বেশি বৃষ্টিপাত হয় তখন তাকে আমরা অতিবৃষ্টি বলি।
- অতিবৃষ্টির কারণে বর্ষাকালে শাকসবজির উৎপাদন ব্যহত হয়। অতিবৃষ্টির কারণে শাকসবজির গাছ মাটিতে হেলে পড়ে পাতা, ফুল-ফল নষ্ট হয়ে যায়।
- অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। বন্যা ও জলাবদ্ধতায় মাটিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। এ অবস্থায় উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি অনেক গাছ মারাও যায়, যেমন- কাঁঠাল, পেঁপে। এ জন্য অতিবৃষ্টির মাধ্যমে জমা পানি দ্রুত নিকাশের ব্যবস্থা করতে হয়।
খ) শিলাবৃষ্টি: বৃষ্টিপাতের সাথে যখন বরফ খণ্ড পতিত হয় তখন তাকে শিলাবৃষ্টি বলে। বাংলাদেশে প্রতি বছর চৈত্র-বৈশাখ মাসে শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে।
- শিলাবৃষ্টির পরিমাণ দেশের উত্তরাঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বেশি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কালবৈশাখীর সাথে শিলাবৃষ্টি হয়।
- শিলাবৃষ্টি ফসলের প্রচুর ক্ষতি সাধন করে। শিলার আঘাতে ফসলের পাতা, কচি ডাল, ফুল, ফল ভেঙে ঝরে পড়ে, থেঁতলে যায়। শিলাবৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে ফসল মাটির সাথে মিশে যেতে পারে।
- আমাদের বাংলাদেশে বোরো ধান, পাট, আম, কলা, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি ফসল শিলাবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
গ) খরা: দীর্ঘ দিন বৃষ্টিপাতহীন অবস্থাকে খরা বলে। আমাদের বাংলাদেশে চৈত্র মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত সময়ে একটানা ২০ দিন বা তার বেশি দিন ধরে কোনো বৃষ্টিপাত না হলে তাকে খরা বলে।
অনাবৃষ্টির কারণে মাটিতে ক্রমান্বয়ে রসের ঘাটতি দেখা দেয়। ফসল যে পরিমাণ পানি মাটি থেকে শোষণ করে তার চেয়ে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেশি পানি ত্যাগ করে। এ অবস্থায় ফসলের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পানির ঘাটতি অবস্থা বিরাজ করে। এ অবস্থাকে খরা কবলিত বলা হয়।
খরার ফলে গাছ, নেতিয়ে পড়ে, এরা তীব্র হলে গাছ শুকিয়ে মারা যায়। খরার ফলে ফসলের বৃদ্ধি ও বিকাশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ফসলের ফলন কমে যায়।
ফসলের ক্ষতির মাত্রার উপর নির্ভর করে ধরাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-
- তীব্র খরা: তীব্র খরায় ৭০-৯০ ভাগ ফলন ঘাটতি হয়।
- মাঝারি খরা: মাঝারি খরায় ৪০-৭০ ভাগ ফলন ঘাটতি হয়।
- সাধারণ খরা: সাধারণ খরায় ১৫-৪০ ভাগ ফলন ঘাটতি হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে প্রায় সকল মৌসুমেই ফসল খরায় কবলিত হয়। রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর এবং মধুপুর অঞ্চলে তীব্র থেকে মাঝারি খরা দেখা দেয়।
ঘ) বন্যা: বন্যার পানির উচ্চতা, পানির গতি ও বন্যার স্থায়িত্বের উপর ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি নির্ভর করে। নিচু ও মাঝারি নিচু এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। ফলে ফসল বিশেষ করে ধানক্ষেত ডুবে যায়। সাধারণত আমন ধান রোপণের সময় বা রোপণের পর বন্যার কারণে ক্ষতিগস্ত হয়। তবে ল বন্যায় হাওর অঞ্চলে বোরো ধান পাকার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(৭) বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশ অঞ্চল কয়টি?
বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশ অঞ্চল কয়টি: সর্বশেষ ১৯৮৮-১৯৮৯ সালে বাংলাদেশকে ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে উপজেলা পর্যন্ত ভাগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। প্রায় সব ফসলই এদেশের মাটিতে জন্মায়। তবে সব এলাকায় সব ফসল জন্মায় না। ফসল জন্মানো নির্ভর করে এলাকার পরিবেশের উপর। অতএব এদেশে ফসল তথা কৃষি কার্যক্রম চালাতে এলাকাভিত্তিক কৃষি পরিবেশ জানা দরকার। অর্থাৎ কৃষি পরিবেশ অঞ্চল কৃষি কার্যক্রমে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
আমরা জানি বাংলাদেশের কোথাও বৃষ্টিপাত বেশি আবার কোথাও কম হয়। কোথাও তাপমাত্রা কম এবং কোথাও বেশি। একেক অঞ্চলের মাটি একেক প্রকার। এসবই হলো পরিবেশ। এ পরিবেশের জন্যই বাংলাদেশের রাজশাহীতে আমের ফলন ভালো, দিনাজপুরে লিচুর ফলন ভালো, শ্রীমঙ্গলে চা ও কমলার ফলন ভালো, যশোরে খেজুরের ফলন ভালো। তাই আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে।
কৃষি উৎপাদনের জন্য ফসল নির্বাচন, ফসল পরিচর্যা, রোগবালাই দমন ও ব্যবস্থাপনা এই সকল ক্ষেত্রে কৃষি পরিবেশ অঞ্চল বিবেচনায় নেওয়া হয়।
পরিবেশ অঞ্চল গঠনে কতগুলো নির্দিষ্ট বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। প্রধান বিবেচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে-
- ভূমি, কৃষি আবহাওয়া, মৃত্তিকা এবং পানি পরিস্থিতি। এর প্রতিটি ক্ষেত্রে আবার বিভাজন রয়েছে। যেমন- ভূমির শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে ৫ ভাগে। উঁচু ভূমি, মাঝারি উঁচু ভূমি, মাঝারি নিচু ভূমি, নিচু ভূমি এবং অতি নিচু ভূমি।
- কৃষি আবহাওয়া প্রসঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয় খরিপ-পূর্ব আবহাওয়া, খরিপ আবহাওয়া, রবি আবহাওয়া ও চরম তাপমাত্রা।
- কৃষি পরিবেশ অঞ্চল নির্ধারণে পানি পরিস্থিতি বা মাটির আর্দ্রতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ ছাড়া নদীর অববাহিকা, হাওর-বাঁওড় এলাকাও বিকেনায় নেওয়া হয়।
- মৃত্তিকার শ্রেণি বিবেচনায় বেলে মাটি, এঁটেল মাটি, বেলে দোআঁশ, এঁটেল দোআঁশ এবং এর পাশাপাশি মাটির Ph ও (অম্লত্ব ক্ষারত্ব) বিবেচ্য।
(৮) বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে কোন ফসল ভালো জন্মে?
কৃষি পরিবেশের কারণে এক এক অঞ্চলে আমরা এক একটি বিশেষ ফসলের প্রাধান্য দেখতে পাই। যদিও ধান, পাট, গম, আলু ইত্যাদি ফসল প্রায় সকল কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে উৎপাদন করা হয়।
কৃষি পরিবেশ অঞ্চল অনুযায়ী ফসল বৈচিত্র্য/বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে কোন ফসল ভালো জন্মে, তা হলো-
- পরিবেশ অঞ্চল ১ দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও নিয়ে গঠিত। এখানকার বিশেষ ফসল হচ্ছে পিচু ও আম। এখন এই এলাকায় চা এবং কমলার চাষও শুরু হয়েছে।
- পরিবেশ অঞ্চল ২-এ রয়েছে তিস্তার চর। নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার কিছু কিছু অংশ এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানকার বিশেষ ফসল চিনাবাদাম, কাউন।
- পরিবেশ অঞ্চল ৩ ও ৪ এলাকায় রয়েছে রংপুর ও বগুড়ার অংশবিশেষ। এই এলাকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তামাক এবং সবজি।
- পরিবেশ অঞ্চল ৫ ও ৬ চলন বিল, আত্রাই ও পুনর্ভবা নদী এলাকার নিচু জমি নিয়ে গঠিত যা নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এই এলাকার বৈশিষ্ট্য হলো পার্টি, বেত উৎপাদন। এখন তরমুজ ও রসুন ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে।
- পরিবেশ অঞ্চল ৭-এ পড়েছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র চর এলাকাগুলো। এ সকল অঞ্চলের বিশেষ ফসল হচ্ছে চিনাবাদাম ও মিষ্টি কুমড়া।
- ব্রহ্মপুত্র পাড় এলাকাগুলো পরিবেশ অঞ্চল ৮ এর অন্তর্ভুক্ত। শেরপুর ও জামালপুর জেলার অংশ বিশেষ এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। পরিবেশ অঞ্চল ৮-এর বিশেষ ফসল পানিফল।
- পরিবেশ অঞ্চল ৯-এ পড়েছে শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চল। পরিবেশ অঞ্চল ৯-এ প্রায় সকল ফসলই হয়।
- পরিবেশ অঞ্চল ১০ জুড়ে রয়েছে পদ্মার চরাঞ্চল। চাপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী জেলার অংশ বিশেষ এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানে চিনাবাদাম প্রধান ফসল।
- পরিবেশ অঞ্চল ১১ পুরাতন গঙ্গা বিধৌত এলাকা। ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরার অনেক এলাকা এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানকার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ফসল কার্পাস তুলা।
- পরিবেশ অঞ্চল ১২-এ রয়েছে পদ্মার পাড়। ফরিদপুর, মাদারীপুর ও পাবনা জেলার অনেক এলাকা এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানে বিশেষ ফসল বোনা আমন ও তাল।
- পরিবেশ অঞ্চল ১৩-এ রয়েছে খুলনার উপকূল অঞ্চল। এই এলাকার বৈশিষ্ট্য হলো সুন্দরবন।
- পরিবেশ অঞ্চল ১৪-এ রয়েছে গোপালগঞ্জের বিলের পাড় এলাকা, এখানকার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উদ্ভিদ হলো তালগাছ ও খেজুর।
- পরিবেশ অঞ্চল ১৫-এ রয়েছে আড়িয়াল বিল এলাকা। এখানে বোনা আমন প্রধান বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ফসল।
- পরিবেশ অঞ্চল ১৬-এ মধ্য মেঘনা এলাকা রয়েছে। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরের কিছু কিছু এলাকা এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানে জমি মাঝারি উঁচু। এখানে আলুসহ অন্যান্য সবজি ও কলা জন্মায়।
- পরিবেশ অঞ্চল ১৭-এ রয়েছে কুমিল্লা-নোয়াখালীর সীমান্ত এলাকা। এখানে চিনাবাদাম, ভুট্টাসহ সাধারণ ফসল জন্মায়।
- পরিবেশ অঞ্চল ১৮-এ রয়েছে ভোলার চর। এখানে নারিকেল ও পান বিশেষ ফসল।
- পরিবেশ অঞ্চল ১৯-এ রয়েছে পূর্ব মেঘনা এলাকা। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরের অনেক এলাকা এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানকার বিশেষ ফসল বোনা আমন।
- পরিবেশ অঞ্চল ২০-এ রয়েছে সিলেটের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ হাওর এলাকাগুলো। এখানে বোরো ধান ও মাছ উৎপাদন এলাকাগুলো রয়েছে।
- পরিবেশ অঞ্চল ২১-এ রয়েছে সুরমা-কুশিয়ারার দুই পাড়। সুনামগঞ্জের অনেক এলাকা এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানে বোরো ধান, মাছ ও সবজি উৎপাদন হয়।
- উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ের পাদদেশগুলো পরিবেশ অঞ্চল ২২-এর অধীনে পড়েছে। নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার কিছু কিছু অংশ এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সুপারি, লেবু, কমলা, খাসিয়া পান এই এলাকার বৈশিষ্ট্য। এখন এসব এলাকায় আগর উৎপাদন হচ্ছে।
- পরিবেশ অঞ্চল ২৩-এ রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অঞ্চল। এখানকার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ফসল পান।
- পরিবেশ অঞ্চল ২৪-এ রয়েছে সেন্টমার্টিন কোরাল দ্বীপ। এখানকার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উদ্ভিদ হচ্ছে নারিকেল।
- পরিবেশ অঞ্চল ২৫, ২৬, ও ২৭ এলাকাজুড়ে রয়েছে যথাক্রমে রাজশাহী, বগুড়া ও দিনাজপুরের বরেন্দ্র অঞ্চল। এখানে উঁচু এলাকায় প্রায় সকল ফসলই ফলে।
- পরিবেশ অঞ্চল ২৮ মধুপুর থেকে ঢাকার তেজগাঁও পর্যন্ত বিস্তৃত লালমাটি অঞ্চল। এখানকার বিশেষ বৃক্ষ হচ্ছে শাল। এখানকার ফসল হচ্ছে কাঁঠাল ও আনারস।
- সকল পাহাড়ি অঞ্চল পরিবেশ অঞ্চল ২৯-এর অন্তর্গত। রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজার ছাড়াও অন্যান্য জেলার পাহাড়ি এলাকাগুলো এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানকার বিশেষ ফসল চা।
- পরিবেশ অঞ্চল ৩০-এ রয়েছে আখাউড়ার লালমাটি অঞ্চল। এখানকার প্রধান ফসল কাকরোল এবং মুকুন্দপুরী পেয়ারা।
এই বিস্তৃত বিবরণের মূল উদ্দেশ্য হলো এই কথাটি জানানো যে, বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও এর কৃষি বৈচিত্র্য বিশাল। যাহোক, পরিবেশ অঞ্চল ৩, ৯, ১১ এবং আংশিকভাবে ১৬ উদার কৃষি পরিবেশ এলাকা। এই এলাকাজুড়ে উৎপন্ন ধান-পাটসহ নানা ফসলের জন্য বাংলাদেশ ‘সোনার বাংলা’ নামে অভিহিত।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।