Skip to content

 

মাটির স্বাস্থ্য

মাটির স্বাস্থ্য

কৃষিতে উন্নতি করতে চাইলে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করা ও এ সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আজকের এ আলোচনাটিতে আমরা মাটি কী, মাটির পুষ্টি, মাটির স্বাস্থ্য, মাটির সুস্থতা রক্ষায় করণীয় ও এর সুফল সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

মাটির স্বাস্থ্য কথাটি শুনে আপনি কি খুব অবাক হয়েছেন? মাটির আবার স্বাস্থ্য কী?

আমরা মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ে জানি। আমাদের গৃহপালিত জীবজন্তু যেমন- গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস, মুরগি এমনকি কুকুর-বিড়ালের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও জানি। মানুষ বা প্রাণী অর্থাৎ জীবনের সাথেই স্বাস্থ্য জড়িত। তাহলে প্রশ্ন আসে মাটির কি জীবন আছে? হ্যাঁ, মাটির জীবন আছে।

বিজ্ঞানীরা মাটির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মাটিকে জীবিত বস্তু হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে সাধারণ অর্থে মাটির জীবন নেই। তবে মাটিতে অসংখ্য জীব রয়েছে। এর মধ্যে কিছু আমরা খালি চোখে দেখতে পাই, যেমন- কেঁচো। আবার অধিকাংশই খালি চোখে দেখতে পাই না। এগুলো অণুজীব।

এক গ্রাম মাটিতে হাজারের অধিক প্রজাতির কোটি কোটি অণুজীব থাকে। মাটিতে অবস্থিত জীব ও অণুজীব গাছ বা ফসলের পুষ্টি উপাদান সহজলভ্য করার কাজে অংশগ্রহণ করে।

(১) মাটি কী?

আমরা জানি মাটি কী।

মাটি হলো ভূপৃষ্ঠের ভঙ্গুর বা অস্থিতিশীল অগভীর আবরণ যা স্থানভেদে ১ মিটারের চেয়েও কম গভীর। কিন্তু যেখানে জগতের অধিকাংশ জীবের অবস্থান এবং যাকে কেন্দ্র করেই জীবনের অস্তিত্ব।

আমরা কিসের উপর চলাফেরা করি? অবশ্যই মাটির উপর। কোথায় ঘরবাড়ি তৈরি করি? মাটির উপর। আমাদের খাবার কোথা থেকে পাই? মাটি থেকে। আমাদের খাবারের ৯৫ ভাগ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মাটি থেকে আসে।

ধান, চাল, শাকসবজি, ফলমূল সরাসরি মাটি থেকে উৎপাদিত হয়। জীবজন্তু যেমন- গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি তৃণভোজী প্রাণী মাটি থেকেই খাবার গ্রহণ করে। হাঁস, মুরগিও মাটি থেকে সরাসরি বা তৈরি করা পশু খাদ্যও মাটি থেকে আসে। মাছের খাবারও আসে মাটিতে উৎপাদিত প্ল্যান্টেন বা তৈরি করা মাছের খাদ্য থেকে। তার মানে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সবই মাটি থেকে আসে।

See also  কোন মাটিতে কী ফসল চাষ ভালো হয়? ধান, গম, পাট, ডাল, আলু ও টমেটো

(২) মাটির পুষ্টি

স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের যেমন- প্রয়োজন শর্করা, আমিষ ও চর্বি বা তেলজাতীয় খাবার, তেমনি প্রয়োজন ভিটামিন ও খনিজ লবণ বা মিনারেল। শর্করা, আমিষ ও চর্বি বা তেলজাতীয় খাবার প্রয়োজন হয় অধিক হারে আর ভিটামিন ও খনিজ লবণ বা মিনারেলের প্রয়োজন অতি স্বল্প মাত্রায়। কিন্তু এসবের অভাবে শরীর সুস্থ থাকে না। আর এর সবই পাই উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে খাবারের মাধ্যমে।

মাটিতে যদি ক্যালসিয়াম কম থাকে, তবে উদ্ভিদেও ক্যালসিয়াম কম থাকবে।

আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে বুকে ধুকধুক, অনিদ্রা, অস্বস্তিভাব, পেশিতে টান, স্নায়ুদুর্বলতা, অবসাদ ও হাড়ের ক্ষয় দেখা দেয়।

মাটিতে আয়োডিনের অভাব থাকলে উদ্ভিদে আয়োডিনের অভাব দেখা দেয়।

আয়োডিনের অভাবে গলা ফুলা বা গলগন্ড রোগ দেখা দেয়। বুদ্ধির বিকাশও কম হয়। আমাদের দেশের উত্তরবঙ্গে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। কিন্তু খাবার লবণে আয়োডিন মিশ্রণের কারণে বর্তমানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমেছে।

মাটিতে মিনারেলের অভাব থাকলে ফসলেও মিনারেলের অভাব ঘটবে।

ফলে আমাদের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব দেখা দিবে। এ জন্যই আমাদের মাটির স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে।

(৩) মাটির স্বাস্থ্য

মাটি আমাদের খাদ্য, তন্তু বা সুতা তথা বস্ত্র, জ্বালানি ও ওষুধের উৎস। মাটি পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে। মাটি জৈব কার্বন ধারণ করে জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। মাটিতে পানি ধারণ ও চুইয়ে নিচে যাওয়ার ফলে একদিকে আমরা খরা ও বন্যা থেকে রক্ষা পাই।

সুস্থ মাটি হলো আমাদের জীবনের ভিত্তি। এবার প্রশ্ন হলো মাটির স্বাস্থ্য বলতে কী বোঝায়?

মাটিতে অবস্থিত জীবের টেকসই উৎপাদিকাশক্তি, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি টেকসইভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষমতাকে মাটির স্বাস্থ্য বলে।

(৪) মাটির গুণাগুণ

সুস্থ মাটির কী কী গুণাগুণ থাকতে হবে?

  • মাটির অম্লতা ৫.৬ থেকে ৭.৩ এর মধ্যে থাকবে।
  • মাটি হতে হবে অলবণাক্ত, জৈব পদার্থ ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে।
  • মাটির ধনাত্মক আধান বিনিময় ক্ষমতা ১৫ মিলি তুলাংকের বেশি হতে হবে, মাটির উর্বরতা মান হবে উত্তম, মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা হবে বেশি।
  • মাটির বুনট ও সংগঠন এমন হবে যাতে গাছের শিকড় সহজে মাটিতে প্রবেশ করতে পারে।
  • মাটিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক কেঁচো এবং অণুজীব থাকবে।
  • মাটি হবে দূষণমুক্ত।
  • কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ বা ক্ষতিকর ভারী পদার্থ মাটিতে থাকতে পারবে না।
  • মাটিতে ক্ষতিকর ভারী পদার্থ থাকলে শিকড়ের মাধ্যমে উদ্ভিদ তা গ্রহণ করবে এবং খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে।
See also  জমি প্রস্তুতি বা ভূমি কর্ষণ বা জমি চাষ

(৪) মাটির সুস্থতা রক্ষায় করণীয়

সুস্থ মাটি পেতে হলে আমাদের কী করতে হবে?

  • মাটির অম্লতা বেশি হলে চুন বা ডলো চুন প্রয়োগ করে মাটির অম্লতা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব।
  • মাটিতে জৈব পদার্থ প্রয়োগ করতে হবে। ফসল আহরণের সময় পাছের গোড়া থেকে যথাসম্ভব উপরে ফসল কর্তন করতে হবে। দৈনন্দিন খাবারের অবশিষ্টাংশ, শাকসবজির অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে রেখে জৈব সার প্রস্তুত করে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গোবর সার ও হাঁস, মুরগির বিষ্ঠা পচিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  • মাটি পরীক্ষা করে ফসলের চাহিদানুযায়ী সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখতে হবে অবস্থানভেদে জমির উর্বরতায় পার্থক্য রয়েছে এবং বিভিন্ন ফসলের পুষ্টি চাহিদাও ভিন্ন। উদহারণ হিসেবে বলা যায় ব্রি ধান-২৮ এর চেয়ে ব্রি ধান-২৯ এর পুষ্টি চাহিদা বেশি।

(৫) আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা দিবস

আমাদের জীবনে মাটির স্বাস্থ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘ প্রতিবছর ০৫ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা দিবস হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশেই এ দিনটি পালিত হচ্ছে। এছাড়া জতিসংঘ ২০১৫ সালকে আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ এটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করেছে।

(৬) মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার সুফল

মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকলে ফসলের উৎপাদন বাড়বে। উৎপাদিত ফসলের মানও ভালো হবে। উৎপাদন খরচ কমবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৬৯ হাজার হেক্টর হারে কৃষিজমি কমছে অন্যদিকে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ যোগ হচ্ছে। প্রতিবছরই প্রায় ৭ লক্ষ মেট্রিক টন করে জ্যামিতিক হারে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। সেখানে মাটির স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ রাখা একান্তই কর্তব্য।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page