Skip to content

মাটির গঠন, প্রকারভেদ ও গুণাগুণ

মাটির গঠন, প্রকারভেদ ও গুণাগুণ

(১) মাটির গঠন

চিত্র- মাটির গঠন

মাটি একটি প্রাকৃতিক বস্তু এবং মিশ্র পদার্থ। এ মাটিতে চাষাবাদ করে মানুষ শস্য ফলায়। আমরা কি জানি, এ মাটি কীভাবে তৈরি হয়েছে? বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবী প্রথমে একটি জলন্ত অগ্নিগোলকের পিও ছিল। দীর্ঘকাল তাপ বিকিরণ করতে করতে এ পিণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে শিলাময় শক্ত ভূ-ত্বক সৃষ্টি করেছে। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় শিলা কালক্রমে ক্ষয় হয়ে মাটির সৃষ্টি হয়েছে।

পরিশেষে বলতে পারি, মাটি হলো-

  • প্রাকৃতিক বস্তু, যা খনিজ ও জৈব পদার্থের সমন্বয়ে ঘটিত;
  • ভূ-পৃষ্ঠের সবচেয়ে উপরের স্তর, যা উদ্ভিদকে অবলম্বন দেয়;
  • বিভিন্ন পুরুত্ববিশিষ্ট নানা স্তর দ্বারা গঠিত যার প্রতিটি স্তরের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্ম বিভিন্ন।

মাটির গঠন উপাদান মাটি প্রধানত ৪টি উপাদান দ্বারা গঠিত। উপাদানগুলো হলো- 

  1. অজৈব পদার্থ বা খনিজ পদার্থ 
  2. জৈব পদার্থ 
  3. পানি ও 
  4. বায়ু।

১। খনিজ পদার্থ: আমরা জানি, ভূ-পৃষ্ঠ প্রকৃতপক্ষে শিলা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। প্রাকৃতিক শক্তি তথা তাপ, চাপ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, পানিপ্রবাহ ইত্যাদির প্রভাবে সময়ের ব্যবধানে আলি শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মাটির অজৈব বা খনিজ পদার্থ সৃষ্টি করেছে। নুড়িপাথর, বালিকণা, পলিকণা ও কর্দমকণা হচ্ছে মাটির খনিজ পদার্থ। এসব খনিজ পদার্থ নানাভাবে মিশে মাটির বুনট সৃষ্টি হয়েছে। মাটিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ আয়তন ভিত্তিতে শতকরা প্রায় ৪৫ ভাগ অর্থাৎ মাটির সর্ববৃহৎ অংশ জুড়ে আছে।

২। জৈব পদার্থ: জৈব পদার্থ মাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জীবজন্তর মৃতদেহ, গাছপালা, লতাপাতা, খড়কুটা, প্রাণীর মলমূত্র, প্রভৃতি মাটিতে পড়ে জৈব পদার্থের সৃষ্টি হয়। মাটিতে আয়তনের ভিত্তিতে শতকরা ৫ ভাগ জৈব পদার্থ থাকে। জৈব পদার্থকে মাটির প্রাণ বলা হয়। কেননা জৈব পদার্থের উপস্থিতিতে মাটির অণুজীবগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

এছাড়াও জৈব পদার্থ- 

  1. মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মাবলি উন্নত করে 
  2. ভূমিক্ষয় রোধ করে 
  3. মাটিতে পানি ও বায়ু চলাচল সহজতর করে 
  4. মাটির কেঁচোর সংখ্যা ও এর কার্যাবলি বাড়ায়
  5. মাটির রস ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
See also  ভূমিক্ষয়ের প্রকারভেদ ও ভূমিক্ষয়ের ফলাফল/কুফল

৩। পানি: মাটির একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি। মাটির বিভিন্ন কণার মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে পানি অবস্থান করে। মাটির পানি উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানগুলোকে তরল রাখে এবং মাটিকে রসাল রাখে। বৃষ্টিপাত, বায়ুমণ্ডলের জলীয়বাষ্প, ভূ-গর্ভস্থ পানি ও সেচব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত পানিই মাটির পানির প্রধান উৎস। আদর্শ মাটিতে পানির পরিমাণ হলো শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ।

৪। বায়ু: বায়ু মাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাটির কণার ফাঁকে ফাঁকে বায়ু থাকে। উদ্ভিদের শিক্ষ ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য অণুজীবের কর্মতৎপরতার জন্য যে অক্সিজেনের প্রয়োজন, তা মাটিতে অবস্থানরত বায়ু সরবরাহ করে। আদর্শ মাটিতে বায়ুর পরিমাণ হলো শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ।

(২) মাটির প্রকারভেদ

যেসব খনিজ কণার ব্যাস দুই মিলিমিটার বা তার কম, তাকে মাটির কণা বলা হয়। আমরা জানি, এ কণার দ্বারাই মাটির বুনট সৃষ্টি হয়। মাটির বুনট হলো মাটির বালি, পলি, কর্দমকণার তুলনামূলক পরিমাণ বা শতকরা অনুপাত। মাটির এসব কণা বিভিন্ন অনুপাতে বিভিন্ন প্রকার মাটির সৃষ্টি করে। আর মনে রাখব, এসব কণার আকারও ভিন্ন ভিন্ন হয়।

কোন মাটিতে কোন ফসল জন্মায় তা জানার জন্যই মাটির শ্রেণিবিভাগ জানা খুবই দরকার।

কৃষিকাজে ব্যবহারের সুবিধার জন্য বুনটের উপর ভিত্তি করে মাটিকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- 

  1. বেলে মাটি 
  2. দোআঁশ মাটি ও 
  3. এঁটেল মাটি।

১। বেলে মাটি: যে মাটিতে শতকরা ৭০ ভাগ বা তারও বেশি বালিকণা থাকে, তাকে বেলে মাটি বলে। মোটা কণাযুক্ত বেলে মাটিতে ফসলের চাষ করা যায় না। তবে বেলে মাটিতে প্রচুর কম্পোস্ট, গোবর ও সবুজ সার প্রয়োগ করে চিনা, কাউন, ফুটি, আলু, ভরমুজ ইত্যাদি চাষ করা সম্ভব।

চিত্র- বেলে মাটি
চিত্র- বেলে মাটি

২। দোআঁশ মাটি: যে মাটিতে বালিকণার পরিমাণ শতকরা ৭০ ভাগের কম কিন্তু ২০ ভাগের বেশি, তাকে দোআঁশ মাটি বলে। তবে আদর্শ দোআঁশ মাটিতে অর্ধেক বালিকণা এবং বাকি অর্ধেক পলি ও কর্মমকণা থাকা আবশ্যক। চাষাবাদের জন্য এ মাটি উত্তম। এ মাটিতে সব ধরনের ফসল ভালো জন্মে। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকার মাটি দোআঁশ প্রকৃতির। 

See also  জমি প্রস্তুতি বা ভূমি কর্ষণ বা জমি চাষ
চিত্র- দোআঁশ মাটি
চিত্র- দোআঁশ মাটি

দোআঁশ মাটিকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- 

  1. বেলে-দোআঁশ মাটি 
  2. পলি-দোআঁশ মাটি 
  3. এঁটেল দোআঁশ মাটি।

৩। এঁটেল মাটি: যে মাটিতে কমপক্ষে শতকরা ৪০ ভাগ কর্নমকণা থাকে, তাকে এঁটেল মাটি বলে। এ মাটিতে পলিকণাও বেশি থাকে। ঢাকা জেলার উত্তরাংশ, টাঙ্গাইল জেলার পূর্বাংশ ও ময়মনসিংহ জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এ মাটি দেখা যায়। এ মাটিতে চাষ করা খুব কষ্টকর। জৈব সার প্রয়োগে চাষের উপযোগী করা সম্ভব। ধান, পাট, আখ ও শাকসবজি এ মাটিতে ভালো জন্মে।

চিত্র- এঁটেল মাটি
চিত্র- এঁটেল মাটি

(৩) মাটির গুণাগুণ

ফসল উৎপাদনে মাটির গুণাগুণ প্রভাব বিস্তার করে। কোন মাটিতে কোন ধরনের ফসল উৎপাদন করা যাবে তা মাটির গুণাগুণের উপর নির্ভর করে। 

মাটির সকল গুণাবলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা- ক) ভৌত গুণাগুণ, খ) রাসায়নিক গুণাগুণ ও গ) জৈবিক গুণাগুণ।

ক) মাটির ভৌত গুণাগুণ মাটির ভৌত গুণাগুণ বলতে-

  1. মাটির বুনট
  2. মাটির সংযুতি
  3. মাটির ঘনত্ব
  4. মাটির বর্ণ
  5. মাটির তাপমাত্রা
  6. মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা
  7. মাটির বায়ু চলাচল ইত্যাদিকে বোঝায়।

খ) মাটির রাসায়নিক গুণাগুণ মাটির রাসায়নিক গুণাগুণ বলতে-

  1. মাটির অম্লত্ব ক্ষারত্ব
  2. উদ্ভিদের জন্য সহজলভ্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ
  3. মাটির লবণাক্ততা ইত্যাদিকে বোঝায়।

গ) মাটির জৈবিক গুণাগুণ মাটির জৈবিক গুণাগুণ বলতে-

  1. অণুজীবের প্রকার
  2. অণুজীবের সংখ্যা
  3. অণুজীবের কার্যাবলি ইত্যাদিকে বোঝায়।

কৃষি ফলনে মাটির গুণাগুণের গুরুত্ব ফসল উৎপাদনে মাটির গুণাগুণের গুরুত্ব অপরিসীম। মাটির ভৌত গুণাবলির মধ্যে মাটির বুনট, মাটির সংযুতি, মাটির ঘনত্ব ইত্যাদি ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে।

  • মাটির বুনটের পার্থক্যের কারণে মাটিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। দোআঁশ মাটিতে অধিকাংশ ফসল ভালো জন্মে। এঁটেল মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি বলে এ মাটিতে ধান ভালো জন্মে। বেলে মাটিতে বাদাম, আলু, ফুটি, তরমুজ ইত্যাদি ফসল জন্মে।
  • মাটির বালি, পলি ও কর্মমকণা যে দলাকৃতিতে সজ্জিত থাকে তাকে মাটির সংযুতি বলে। দানাদার, চূর্ণাকার সংযুতি ফসল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। খালাকার সংযুতির মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি।
  • মাটির রাসায়নিক গুণাগুণের মধ্যে মাটির অম্লত্ব, ক্ষারত্ব, লবণাক্ততা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ ফসল বেশি অম্লীয়, ক্ষারীয় বা লবণাক্ততা পছন্দ করে না অর্থাৎ নিরপেক্ষ মাটি ফসল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। এ ধরনের মাটিতে উদ্ভিদের জন্য সহজলভ্য পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে ও অণুজৈবিক কার্যাবলি সক্রিয় থাকে।
  • কেঁচো, ছত্রাক, ব্যাক্টেরিয়া, শৈবাল ইত্যাদি জীব ও অণুজীবের সংখ্যা, প্রকার এবং ক্রিয়াকলাপই মাটির জৈবিক গুণাবলি। এসব জীব ও অণুজীব মাটিতে হিউমাস উৎপাদন ও ফসলের জন্য পুষ্টি উপাদান সহজলভ্য করার মাধ্যমে প্রভূত উপকার করে।
See also  মাটির উর্বরতা কি? মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির উপায় ও মাটির উৎপাদন ক্ষমতা

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts