(১) সার কি?
সার হল প্রাকৃতিক অথবা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা কোনো উপাদান যা মাটিতে কিংবা উদ্ভিদের টিস্যু তে প্রয়োগ করা হয় যাতে উদ্ভিদে বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানের সরবরাহ নিশ্চিত হয়।
(২) সার কত প্রকার ও কি কি?
আমরা যেমন খাবার খাই, তেমনি উদ্ভিদও মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। উদ্ভিদের জীবনচক্র সম্পন্ন করার জন্য ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়।
তবে সবগুলো পুষ্টি উপাদানই উদ্ভিদের জন্য সমান পরিমাণে প্রয়োজন হয় না। এর মধ্যে কিছু পুষ্টি উপাদান উদ্ভিদের জন্য বেশি পরিমাণে লাগে যেমন: নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ইত্যাদি। এই উপাদানগুলোকে আমরা জমিতে সার হিসেবে প্রয়োগ করি যেমন: ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ইত্যাদি।
উৎস অনুযায়ী সারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- জৈব সার।
- রাসায়নিক সার।
(৩) জৈব সার
যেসব সার জীবের দেহ থেকে প্রাপ্ত অর্থাৎ উদ্ভিদ বা প্রাণীর ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রস্তুত করা যায়, তাদেরকে জৈব সার বলে। যেমন- গোবর সার, কম্পোস্ট সার, সবুজ সার, খৈল ইত্যাদি। গাছের প্রয়োজনীয় প্রায় সব খাদ্য উপাদানই জৈব সারে থাকে।
জমিতে জৈব সার প্রয়োগের সুবিধা-
- জৈব সারে ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদানই থাকে।
- মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
- মাটির অণুজীবের কার্যাবলি বাড়ায়।
- মাটির সংযুক্তির উন্নতি ঘটায়।
- মাটির পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- মাটিতে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে।
(৪) রাসায়নিক সার
কলকারখানায় যে সকল সার তৈরি করা হয় তাদেরকে রাসায়নিক সার বলে। যেমন: ইউরিয়া, ডিএপি, জিপসাম, দস্তাসার।
কয়েকটি সারের নাম ও এদের সরবরাহকৃত পুষ্টি উপাদানের নাম নিম্নের ছকে তুলে ধরা হলো-
সার | পুষ্টি উপাদান |
ইউরিয়া | নাইট্রোজেন |
টিএসপি | ফসফরাস, ক্যালসিয়াম |
এমওপি | পটাশিয়াম |
ডিএপি | নাইট্রোজেন, ফসফরাস |
জিপসাম | সালফার, ক্যালসিয়াম |
দস্তাসার | জিংক, সালফার |
রাসায়নিক সার প্রয়োগের সুবিধা-
- উদ্ভিদের প্রয়োজন অনুযায়ী মাটিতে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যোগ করা যায়।
- উদ্ভিদের পুষ্টি ঘাটতি দ্রুত মিটানোর জন্য রাসায়নিক সার খুবই কার্যকরী।
- ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
রাসায়নিক সার প্রয়োগের অসুবিধা-
- সুষম পরিমাণে ব্যবহার না করলে মাটি ও ফসলের ক্ষতি যায়।
- রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে পরিবেশদূষণ ঘটে।
(৫) কৃষিকাজে সারের ব্যবহার
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। প্রতিবছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই অল্প জমি থেকে বেশি পরিমাণে ফসল উৎপাদনের জন্য সার ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য। তাই বাংলাদেশে সারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে প্রধানত জৈব ও অজৈব এই দুই ধরনের সার ব্যবহার হচ্ছে।
তবে কোন সার কী পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে সে ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেমন-
- মাটির উর্বরতার অবস্থা।
- উৎপাদিত ফসলের ধরন ও জাত।
- সার প্রয়োগের সময় ও পদ্ধতি।
- সার অপচয়ের মাত্রা।
- মাটির আর্দ্রতার অবস্থা।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।