Skip to content

 

পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি ও পাংগাস মাছের খাবার তালিকা

পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি ও পাংগাস মাছের খাবার তালিকা

প্রিয় কৃষি প্রেমী বন্ধুরা, পাঙ্গাস মানুষের খুবই প্রিয় ও সুস্বাদু একটি মাছ। একসময় আমাদের নদীতে পর্যাপ্ত পাঙ্গাস পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন কারণে অন্যান্য মাছের মতো নদীতে পাঙ্গাস মাছের প্রাপ্যতা কমে গেছে। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশেদেশে থাইল্যান্ড থেকে আনা পাঙ্গাস মাছ চাষ করা হচ্ছে।

বাজারে এ মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এখানে আমরা পাঙ্গাস চাষের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা, পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি, পাংগাস মাছের খাবার তালিকা ও মাছ আহরণ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানব।

(১) পাঙ্গাস চাষের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা

চিত্র- পাঙ্গাশ মাছ
চিত্র- পাঙ্গাশ মাছ

ক) পাঙ্গাস মাছের বৈশিষ্ট্য: মাছের উপরের অংশ ধূসর এবং পেটের অংশ সাদা হয়। এদের গায়ে কোনো আঁইশ থাকে না। দেহ চ্যাপটা, লম্বা আকৃতির, মাথা ছোট। পুকুরে চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ মাছে ছোট কাঁটা থাকে না। তাই খেতে খুব সুবিধা।

খ) পাঙ্গাস চাষের সুবিধা: যেকোনো ধরনের ছোট- বড় পুকুর, দিঘি, ডোবা ও বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা যায়। এ মাছ এককভাবে বা মিশ্রচাষও করা যায়। এ মাছ সর্বভুক বলে বিভিন্ন সম্পূরক খাবার সরবরাহ করে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়। হ্যাচারি থেকে সহজে এ মাছের পোনা পাওয়া যায়। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বেঁচে থাকার হার বেশি। তাই চাষে ঝুঁকি কম। এ মাছ অল্প পানির মধ্যে রেখে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়।

(২) পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি

পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়- প্রথম ভাগে পুকুর প্রস্তুতি, দ্বিতীয় ভাগে পোনা ছাড়া, খাবার প্রদান ও চাষকালীন মাছের পরিচর্যা এবং তৃতীয় ভাগে মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ।

ক) চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি: পুকুরে পোনা মাছ ছাড়ার আগে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হয়।

See also  এককভাবে পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি

পুকুর প্রস্তুতির জন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপসমূহ অনুসরণ করতে হবে-

i) পুকুরের পাড় মেরামত: প্রথমে পুকুরের পাড় মেরামত ও উঁচু করে বেঁধে দিতে হবে। পুকুর পাড়ে ঝোপ-ঝাড় থাকলে কেটে ফেলতে হবে। বড় গাছ থাকলে তার ডালপালা কেটে দিতে হবে। 

ii) পুকুর পরিষ্কার: পুকুরে কোনো ধরনের জলজ আগাছা থাকবে না। পুকুরের তলায় বেশি কাদা মাটি থাকলে তা তুলে ফেলতে হবে। সম্ভব হলে কাদার স্তর শুকিয়ে পুকুরের তলা শক্ত করতে হবে। এতে ক্ষতিকর গ্যাস ও রোগজীবাণু দূর হয়। 

iii) রাক্ষুসে ও অপ্রয়োজনীয় মাছ নিধন: পুকুরে রাক্ষুসে মাছ ও অপ্রয়োজনীয় মাছ রাখা যাবে না। সেচের মাধ্যমে পুকুর শুকিয়ে বা ঘন ফাঁসের জাল বারবার টেনে এ কাজ করা যেতে পারে। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে ৩০ সেমি পানির গভীরতার জন্য প্রতি শতকে ৩০ ৩৫ গ্রাম মাছ মারার বিষ রোটেনন পাউডার প্রয়োগ করে রাক্ষুসে মাছ মেরে ফেলতে হবে। রোটেনন দেওয়ার পর পুকুরের পানি ৭-১০ দিন ব্যবহার করা যাবে না। রোটেনন ব্যবহারে মৃত মাছ খাওয়া যাবে।

iv) চুন প্রয়োগ: উক্ত কাজগুলো শেষ হলে পুকুরের প্রতি শতকে ১ থেকে ২ কেজি করে চুন দিতে হবে। বালতি বা ড্রামে চুন নিয়ে গুলে সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। চুন পুকুরের পানি পরিষ্কার ও রোগজীবাণু দূর করে।

v) পুকুরে সার প্রয়োগ: চুন দেওয়ার ৭ দিন পর পুকুরে শতক প্রতি ৫-৭ কেজি গোবর অথবা ২-৩ কেজি হাঁস মুরগির বিষ্ঠা, ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০-১০০ গ্রাম টিএসপি সার পানিতে গুলে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৫-৬ দিন পর পুকুরের পানি সবুজ হলে বোঝা যাবে যে পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয়েছে। তখন মাছের পোনা ছাড়তে হবে।

চিত্র- আরো মাছ ধরা হচ্ছে
চিত্র- আরো মাছ ধরা হচ্ছে
চিত্র- মাছ চাষের প্রস্তুতির জন্য শুকনা পুকুর
চিত্র- মাছ চাষের প্রস্তুতির জন্য শুকনা পুকুর

খ) পাংগাসের পোনা ছাড়া, চাষকালীন মাছের পরিচর্যা

i) পোনা ছাড়া: পুকুরে পানির গভীরতা ১৫০-১৮০ সেমি হলে একক চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতকে ৭-১০ সেমি আকারের ১৩০-১৪০টি করে পাঙ্গাসের পোনা ছাড়তে হবে। মিশ্রচাষে শতকে ১২০-১২৫টি করে পোনার সাথে ৪-৫টি সিলভারকার্প বা কাতলার পোনা ছাড়া যেতে পারে। পুকুরে পোনা ছাড়ার পর মাছের যত্ন ও পরিচর্যা করতে হবে।

See also  পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি

ii) মাছের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা: পুকুরে পোনা ছাড়ার পর মাছের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। প্রতি মাসে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি পরীক্ষা করতে হবে। রোগবালাই দমনে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের আগে পুকুরে শতকে প্রতি ২৫০ গ্রাম চুন ও ২৫০ গ্রাম লবণ সপ্তাহে একবার করে ৪-৬ সপ্তাহ দিতে হবে।

চিত্র- জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা
চিত্র- জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা
চিত্র- পুকুর থেকে মাছ আহরণ
চিত্র- পুকুর থেকে মাছ আহরণ

(৩) পাংগাস মাছের খাবার তালিকা ও মাছ আহরণ

ক) পাংগাস মাছের খাবার তালিকা: পাঙ্গাস একটি দ্রুত বর্ধনশীল মাছ। তাই পাঙ্গাস চাষের পুকুরে নির্দিষ্ট সময় পর পর খাদ্য প্রদান করতে হবে। বাজার থেকে কেনা সুষম খাদ্য পুকুরে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এতে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। তাই বাজারজাত খাদ্য না কিনে এটি খামারেও বানানো যেতে পারে।

প্রতিদিন পুকুরে মোট মাছের ওজনের শতকরা ৪-৬ ভাগ হিসাবে খাবার দিতে হবে। প্রতিদিনের খাবার ২ ভাগে ভাগ করে সকাল ও বিকালে দিতে হবে। তবে পোনা মাছকে একটু বেশি ও বড় মাছকে কম খাবার দিতে হয়।

নিচে ১০০ কেজি খাদ্য তৈরির জন্য পাংগাস মাছের খাবার তালিকা/উপকরণ দেওয়া হলো।

খাদ্য উপকরণপরিমাণ
শুঁটকি মাছের গুঁড়া২৫ কেজি
খৈল৩০ কেজি
গমের ভুসি২০ কেজি
চালের কুঁড়া২০ কেজি
আটা৩.৫ কেজি
লবণ২ কেজি
ভিটামিন-খনিজ মিশ্রণ১.৫ কেজি
মোট =১০০ কেজি

খ) মাছ আহরণ ও বিক্রয়: পুকুরে পোনা ছাড়ার ৪ থেকে ৫ মাস পর মাছ গড়ে ৫০০ গ্রাম ওজনের হয়। তখন কিছু মাছ পুকুর থেকে উঠিয়ে বিক্রি করলে পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমে যাবে। এতে পুকুরের অন্য মাছগুলো তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে।

বন্ধুরা, আজকের আলোচ্য বিষয়টি এখানেই শেষ করছি। সিম্পল ও সহজভাবে পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি ও পাংগাস মাছের খাবার তালিকা আপনারে সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আমরা এই পোষইট যদি আপনার ভঅলো লেগে থাকে ও কমেন্ ও শেয়ার করে উৎসাহিত করেবেন এ ধরণের আরও আলেচনা আপেনাদের সামনে নিয়মিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইংশাআল্লাহ। ততদিন ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, কৃষির সাথেই থাকুন।

See also  এককভাবে পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page