(১) গৃহপালিত পশুর পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য
পৃথিবীতে অনেক পশু বাস করে। এদের মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, উট ইত্যাদি পশুকে গৃহে পোষ মানিয়ে লালন পালন করা যায় এবং এরা গৃহে বাচ্চা প্রসব করে থাকে। তাই এদেরকে গৃহপালিত পশু বলা হয়। এদের মতো কুকুর, বিড়ালও গৃহপালিত পোষা প্রাণী। এরা সবাই আমাদের অনেক উপকারে আসে।
বাংলাদেশে প্রায় ২৪ মিলিয়ন গরু ও ২৫ মিলিয়ন ছাগল রয়েছে। আমাদের দেশি গাভি দৈনিক গড়ে ১ লিটার দুধ দেয়। কিন্তু বিদেশি উন্নত জাতের গাভি দৈনিক ১৫-২০ লিটার দুধ দেয়।
উন্নত জাতের দুগ্ধ উৎপাদনকারী গরুর মধ্যে হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ও জার্সি অন্যতম। শাহীওয়াল এবং রেড সিন্ধি গাভিও দৈনিক ৬-১০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের সর্বত্র কালো রঙের যে ছাগল পালন করা হয়, তাকে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বলা হয়। এটি মাংস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
তাছাড়া আমাদের বাংলাদেশের মানুষ দুধের জন্য লম্বা পা ও ঝুলন্ত কানবিশিষ্ট যে ছাগল পালন করে, তাকে যমুনাপাড়ি বা রাম ছাগল বলা হয়।
গৃহপালিত পশু জন্মের দিন থেকে মানুষের আদর-যত্নে বড় হতে থাকে। এ কারণে গৃহপালিত প্রাণী ও মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গৃহপালিত পশুর ভিন্ন ভিন্ন আচরণ, বৈশিষ্ট্য থাকলেও এদের কতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেওয়া হলো-
- গৃহপালিত পশু সহজে পোষ মানে।
- বাড়ির পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে।
- গৃহপালিত পশু তার পালনকারীদের সহজে চেনে
- এরা মানুষের সান্নিধ্য পছন্দ করে।
- এরা বাড়ির মানুষের আচরণে সাড়া দেয়।
- গৃহপালিত পশু বাড়িতে বাচ্চা প্রসব করে।
- এরা স্তন্যপায়ী হয়ে থাকে।
গৃহপালিত পশুদের মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া জাবরকাটা প্রাণী। এদের খুব বিভক্ত ও মাথায় শিং রয়েছে। এরা জমিতে চরে ঘাস খায়। ঘোড়া জাবরকাটা প্রাণী নয়। এদের শিং নেই ও খুর বিভক্ত নয়। এরা দাঁড়িয়ে ঘুমায়। এরা দ্রুত দৌড়াতে পারে।
(২) গৃহপালিত পাখির পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য
গৃহপালিত পশুর মতো হাঁস, মুরগি, কবুতর ইত্যাদিকে গৃহপালিত পাখি বলা হয়। কারণ, এদের পোষ মানিয়ে গৃহে লালনপালন করা যায়। এরা গৃহে ডিম পাড়ে এবং ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে।
শিশু- কিশোররাও বড়দের মতো কবুতর, হাঁস ও মুরগি পালনে খুব আগ্রহ দেখায়। বাংলাদেশে গ্রামবাংলার মানুষ প্রায় ২৪৬ মিলিয়ন দেশি মোরগ-মুরগি ও ৪৬ মিলিয়ন হাঁস লালনপালন করছে।
আমাদের বাংলাদেশি মুরগি বছরে গড়ে ৪৫টি এবং দেশি হাঁস ৭০টি ডিম পাড়ে। কিন্তু উন্নত জাতের লেগহর্ন, ফাওমি, আর আই আর জাতের মুরগি বছরে ২০০-২৫০টি ডিম পাড়ে।
বিদেশি জাতের ইন্ডিয়ান রানার, খাকি ক্যাম্বেল ও জেন্ডিং হাঁস বছরে গড়ে ২৫০টি ডিম উৎপাদন করে। পিকিন হাস মাংসের জন্য বিখ্যাত।
গৃহপালিত পাখিরা বাড়িতে মুক্ত অবস্থায় থাকে এবং তাদের জন্য তৈরি করা বিশেষ বাসস্থানে বসবাস করে। সকালে বাসা বা খাঁচা থেকে ছেড়ে দেবার পর এরা সারাদিন বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু কবুতর খাদ্যের সন্ধানে অনেক দূর চলে যায় ও সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে আসে।
গৃহপালিত পাখির কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
- এরা সহজে পোষ মানে।
- এরা বাড়ির পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়।
- এরা তার পালনকারীকে চেনে ও খাবারের জন্য পিছু নেয়।
- এরা গৃহে ডিম পাড়ে ও ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায়।
- এরা বাচ্চা পালনে দক্ষ।
- এরা নিজের খাবার নিজে সংগ্রহ করতে পারে।
এদের পায়ে ৪টি আঙ্গুল থাকে। এদের মাথায় লাল ঝুঁটি ও গলায় লাল ফুল থাকে। মুরগি ৫ মাস বয়সে ডিম দেওয়া শুরু করে। মুরগি তার সন্তানকে বন্য পশু-পাখির হাত থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করে।
হাঁসকে জলজ পাখি বলা হয়। হাঁসের পায়ের আঙ্গুল পর্দা দ্বারা যুক্ত। তাই এরা সহজে পানিতে সাঁতার কাটতে পারে। হাঁসের ডিমে তা দেবার অভ্যাস কম। তাই হাঁসের ডিম মুরগির নিচে রেখে ফুটানো হয়।
(৩) গৃহপালিত পশু-পাখির অর্থনৈতিক গুরুত্ব
গৃহপালিত পশু-পাখি লালনপালন করে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি। গৃহপালিত অধিকাংশ পশু- পাখির মাংস ও ডিম মানুষের নিকট খুব জনপ্রিয়।
মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ও মেধা-মনন বিকাশের জন্য অন্যান্য খাবারের সাথে দৈনিক দুধ, ডিম ও মাংস খাওয়া আবশ্যক।
গরুর দুধ সুষম খাদ্য। হাঁস-মুরগির ডিমও একটি পুষ্টিকর খাবার। এসব পুষ্টিকর খাবার আমাদের শরীরের আমিষের ঘাটতি পূরণ করে থাকে। তাই প্রতিদিনের খাবারে দুধ ও ডিম থাকা উচিত। মাংস, ডিম, দুধ, মিষ্টি, দই ইত্যাদি অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে দুধ, মাংস ও ডিমের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক কম। বাজারে গৃহপালিত পশু-পাখি এবং এদের থেকে উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি। তাই আমাদের গৃহপালিত পশু-পাখির পারিবারিক খামার করা দরকার। এতে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পুরণ হবে। খামারের অতিরিক্ত উৎপাদিত ডিম ও দুধ বাজারে বিক্রি করে অর্থ আয় করা যাবে।
গরু ও মহিষ জমি চাষ, পরিবহন, শস্য মাড়াই, ঘানিটানা এবং শস্য নিড়ানির কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গৃহপালিত পশু-পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কৃষি জমির আগাছা, ফসলের উপজাত, রান্না ঘরের বর্জ্য এদের খাবার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
হাঁস-মুরগি পোকামাকড় ও ঝরে পড়া দানা শস্য খেয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। ভেড়ার পশম শীতবস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
কুকুর বিশ্বস্ত পোষা প্রাণী হওয়ায় পৃথিবীর সব দেশেই প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত হয়। দাঙ্গা দমনে নিরাপত্তা বাহিনী ঘোড়া ব্যবহার করে।
উট, ঘোড়া, গাধাসহ অনেক পশু ভার বহন কাজে ব্যবহৃত হয়।
গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা জৈবসার হিসাবে জমিতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া এগুলো মাছের খাদ্য তৈরিতে ও জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।