Skip to content

 

বীজ ও বীজতলা তৈরি

বীজ ও বীজতলা তৈরি

(১) বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি

উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে প্রথম যে প্রযুক্তির কথা বলতে হয় তা হচ্ছে উচ্চফলনশীল জাতের বীজ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান শাকসবজি, গম, সরিষা, আলু ইত্যাদি ফসলের অনেক উন্নত এবং উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন করেছে। শাকসবজির মধ্যে টমেটো, বেগুন, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ এসবের নাম উল্লেখযোগ্য। এসব উন্নত জাতের সবজির বীজ কৃষকেরা পাচ্ছেন এবং ব্যবহার করছেন। গ্রীষ্মকালেও টমেটোর চাষ করতে পারছেন। বারমাসব্যাপী বেগুন ও লাউয়ের চাষ করছেন। আরও কতো কী। এর ফলে কৃষকেরা ভালো আয় করছেন।

বাংলাদেশে ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ৭৮টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর সাথে আরও ধানের জাত যুক্ত করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। উচ্চফলনশীল ধানের জাতের অবদান হিসেবে বলা যায় বাংলাদেশ এখন প্রায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

নিচে কয়েকটি ধানের জাতের নাম উল্লেখ করা হলো।

  • আউশ ধানের জাত: বি আর ১ (সুফলা), বি আর ১৪ (গাজী), বি আর ১৬ (শাহী বালাম) ইত্যাদি।
  • আমন ধানের জাত: বি আর ১১ (মুক্তা), ব্রি ধান ৩০, ব্রি ধান ৩৩, ব্রি ধান ৪০, ব্রি ধান ৪৪ ইত্যাদি।
  • বোরো ধানের জাত: ব্রি ধান ২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান ৩৬, ব্রি হাইব্রিড-১, ব্রিধান ৫০ (বাংলামতি) ইত্যাদি।

বীজ উৎপাদন একটি প্রযুক্তিগত কর্মকান্ড। বীজ উৎপাদনের প্রথম কাজ হলো বীজের গুণাগুণ সরক্ষণ করা। তাই কৃষিবিজ্ঞানীরা অবিরাম ফসলের জাতের বংশবৃদ্ধি ও গুণাগুণ সরক্ষণের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি সংযোগ করছেন। বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি কাতে মানসম্মত বীজ উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও সরক্ষণকে বোঝায়।

মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞানীরা নিচে উল্লিখিত শর্তসমূহ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন-

১। বীজের বিশুদ্ধতা সংরক্ষণ: বীজের পরিচিতি এর জন্যসূত্র থেকে। অতএব, বীজ উৎপাদনের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন আকাঙ্ক্ষিত বীজের সাথে অন্য জাতের বীজের মিশ্রণ না ঘটে।

২। বীজ ফসলের পৃথকীকরণ: বীজ ফসলের জমিকে অবীজ ফসলের জমি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার নামই পৃথকীকরণ। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই বীজ ফসলের চারদিকে বর্ডার লাইন হিসেবে একই ফসলের অতিরিক্ত চাষ করতে হয়। এতে পর-পরাগায়নের সম্ভাবনা থাকে না।

See also  বীজ বপনের জন্য উপযুক্ত মাটি প্রস্তুত, আদর্শ বীজতলা তৈরি, সাশ্রয়ীরূপে সেচ ও সার প্রয়োগ এবং উন্নত বীজ নির্বাচন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

৩। বীজ শোধন: বীজ জীবাণু বহন করতে পারে। সেজন্য জমিতে বপনের আগে বীজ শোধন করে নিতে হয়। বীজ শোধন করার জন্য অনেক ঔষধ ব্যবহার করা হয়। যেমন, গ্রানোসান-এম, ভিটাভেক্স-২০০ ইত্যাদি।

৪। বীজ বপন পদ্ধতি: বীজ সময়মতো বপন করতে হবে। আর বীজ বপনের সময় জমিতে যথেষ্ট রস থাকা প্রয়োজন। সাধারণত বীজ ফসল নির্দিষ্ট দূরত্বে লাইনে বপন বা রোপণ করা ভালো। লাইনে বীজ বপনের জন্য বীজ বপনযন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৫। রগিং: বীজের জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য ব্লগিং একটি জরুরি কাজ। ব্লগিং অর্থ হচ্ছে আকাঙ্ক্ষিত বীজের গাছ ছাড়া আগাছাসহ অন্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত গাছ জমি থেকে শিকড়সহ তুলে ফেলা। ফুল আসার আগেই অনাকাঙ্ক্ষিত গাছ রগিং করা ভালো।

৬। আন্তঃপরিচর্যা: বীজের জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষাসময়ে কীটপতঙ্গ দমন করতে হবে।পরিমাণমতো পানি সেচ দিতে হবে।

৭। বীজ ফসল কর্তন: বীজ যখন পরিপূর্ণভাবে পরপর হয় ও বৃষ্টিবাদলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না তখনই বীজ ফসল কর্তন করতে হয়। বীজ ফসল কাটার পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে মাড়াইবাড়াই করতে হবে।

৮। বীজ শুকানো ও সংরক্ষণ: বীজ এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে বীজে অতিরিক্ত আর্দ্রতা না থাকে। যেমন, ধানের বীজে শতকরা ১২ ভাগ অর্দ্রতা থাকতে পারে। ভালোভাবে শুকানোর পর সংরক্ষণের জন্য মাটি অথবা ধাতব পাত্রে রাখতে হবে। পাত্রটি অবশ্যই শুষ্ক, পরিচ্ছন্ন হতে হবে। বীজে যাতে কীটপতঙ্গ আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য ম্যালাথিয়ন স্প্রে করা যেতে পারে।

(২) মানসম্মত বীজের উৎপাদন

মানসম্মত বীজ তিন ধাপে উৎপাদন করা হয়। যথা- 

  1. মৌল বীজ;
  2. ভিত্তি বীজ; ও
  3. প্রত্যয়িত বীজ।

কৃষকের প্রত্যয়িত বীজ ছাড়া অন্য বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি কেউ ফসল উৎপাদনে প্রত্যয়িত বীজ ছাড়া সারহীন বীজ ব্যবহার করেন তবে ফসল ভালো না হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই বিশেষজ্ঞরা প্রত্যয়িত বীজ ব্যবহারের অনুমোদন প্রদান করেন।

See also  বীজতলা কী? বীজতলা তৈরির পদ্ধতি ও বীজতলার পরিচর্যা

নিচে বীজ উৎপাদনের ধাপগুলো আলোচনা করা হলো-

মৌল বীজ: উদ্ভিদ প্রজন্ম বিজ্ঞানীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বংশগত গুণাগুণ সম্পন্ন যে বীজ উৎপাদন করা হয় তাকে মৌল বীজ বলে। মৌল বীজ সাধারণত কম পরিমাণে উৎপাদন করা হয়। এ বীজ বিক্রয়যোগ্য নয়।

ভিত্তি বীজ: বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের খামারে বীজ অনুমোদন সংস্থার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মৌল বীজ থেকে যে বীজ উৎপাদন করা হয় তাকে ভিত্তি বীজ বলে।

চিত্র- প্রত্যায়িত বীজ
চিত্র- প্রত্যায়িত বীজ

প্রত্যয়িত বীজ: ভিত্তি বীজ থেকে বীজ অনুমোদন সংস্থার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যে বীজ উৎপাদন করা হয় তাকে প্রত্যয়িত বীজ বলে। এই বীজ কৃষকদের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন সংস্থা অনুমোদন প্রদান করে। প্রত্যয়িত বীজ কৃষকদের নিকট বিক্রি করা হয়।

(৩) বীজ হতে চারা উৎপাদন

চিত্র- একটি আদর্শ বীজতলা
চিত্র- একটি আদর্শ বীজতলা
  • বীজ থেকে চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমত বীজতলা তৈরি করতে হবে। শীতকালীন সবজির জন্য আশ্বিন-কার্তিক মাসে আর গ্রীষ্মকালীন সবজির জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজতলা তৈরি করতে হবে। আগাম ফসদের জন্য আরও একমাস আগে থেকে বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে।
  • টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ, পুঁইশাক, পেঁপে ইত্যাদির বীজ প্রথমে বীজতলায় ফেলে চারা উৎপাদন করতে হয়। চারার বয়স চার সপ্তাহ থেকে একমাস হলে মূল জমিতে রোপণ করা হয়।
  • বীজতলার আকার ৩ মিটার x ১ মিটার হলে ভালো হয়। এরূপ একটি বীজতলায় জাতভেদে ১০-১২ গ্রাম বীজ দরকার।
  • পানির উৎসের কাছে আলো বাতাস যুক্ত উঁচু উর্বর জমিতে বীজতলা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজতলা মূল জমি থেকে কমপক্ষে ১০ সেমি উঁচুতে থাকে। দুটি বীজতলার মাঝে ৩০ সেমি নালা রাখতে হবে।
  • বীজতলার মাটির সাথে পচা গোবর ও ১০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে দিতে হবে। অতঃপর সাবধানে বীজ ছিটিয়ে ঝুরা মাটি দিয়ে বীজ তক্তার সাহায্যে উপরিভাগ সমান করে দিতে হবে এবং মাটি চেপে দিতে হবে। এরপর বীজতলায় প্রতিদিন নিয়মিত পানি দিতে হবে।
  • বীজতলায় ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দেওয়া ভালো। কেননা এতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো সমানভাবে পানি দেওয়া যায়। তিন চার দিনের মধ্যে চারা বের হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজতলা শুকিয়ে না যায়। যেসব বীজের ত্বক পুরু সেসব বীজের চারা বের হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। পুরু ত্বকের বীজ ২৪-৪৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে বীজতলায় বুনলে তাড়াতাড়ি চারা বের হবে।
  • রোদ ও বৃষ্টি থেকে চারাকে রক্ষার জন্য বীজতলার উপর ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বয়স বাড়ার সাথে চারার তাপ সহ্য ক্ষমতাও বাড়ে। তবে মাটির আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য বাকরি দিয়ে সেচ দিতে হবে। বিকেল বেলা সেচ দেওয়া ভালো। অতঃপর মাটি যখন শক্ত হবে তখন নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে।
  • বীজতলায় পোকামাকড় ও রোগবালাই আক্রমণ করতে পারে। পোকা আক্রমণ করার আগেই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সাধারণভাবে ১০ লিটার পানিতে ৪ চা চামচ ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি গুলে বীজতলায় ছিটাতে হবে। আর কোনো চারা রোগাক্রান্ত হলে তা তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • ফুলকপি, বাঁধাকপি এসব সবজির চারা মূল জমিতে রোপণের পূর্বে দ্বিতীয় বীজতলায় রোপণ করা ভালো।
  • চারা বড় হতে থাকলে ঝাঁঝরির পানিতে ১০ গ্রাম ইউরিয়া নিয়ে দ্রবণ তৈরি করে বীজতলায় ছিটালে চারা স্বাস্থ্যবান হয়।
  • বীজতলায় আর্দ্রতা সংরক্ষণের জন্য খড়কুটা বিছিয়ে দিতে হবে।
  • চারার বয়স ৪-৫ সপ্তাহ হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।
See also  পিঁয়াজ ও সরিষার বীজ উৎপাদন পদ্ধতি

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page