পেয়ারা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। পেয়ারা ভিটামিন ‘সি’ এর একটি প্রধান উৎস। দেশের সর্বত্র কম বেশি এ ফল জন্মে থাকে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা প্রভৃতি এলাকার এর চাষ হয়ে থাকে।
নিম্নে পেয়ারা চারা রোপন পদ্ধতি/পেয়ারা চাষ করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-
ক) জাত নির্বাচন: বাংলাদেশে অনেক ধরনের পেয়ারা দেখা যায় তার মধ্যে কাঞ্চন নগর, স্বরূপকাঠি, মুকুন্দপুরী, কাজী পেয়ারা, বারি পেয়ারা-২, বারি পেয়ারা-৩ জাতগুলো অন্যতম।
ক) মাটি:
- পেয়ারা খরা সহিষ্ণু উদ্ভিদ এবং অনেক ধরনের মাটিতে জন্মাতে পারে। এটা কিছুটা লবণাক্ততাও সহ্য করতে পারে।
- বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য উর্বর ও গভীর দোঁআশ মাটি উত্তম।
খ) গর্ত তৈরি:
- পেয়ারার চারা প্রধানত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করা হয়।
- চারা রোপণের জন্য ৪মিটার৪ মিটার দূরত্বে ৬০ সেমি x ৬০ সেমি x ৬০ সেমি গর্ত তৈরি করা হয়।
- গর্তের উপরের ৩০ সেমি মাটি একদিকে এবং নিচের ৩০ সেমি মাটি অন্যদিকে রাখতে হয়।
- এবার জমাকৃত উপরের মাটি গর্ভের নিচে দিয়ে এবং নিচের মাটির সাথে ৫-৭ কেজি পচা গোবর সার, ২০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১৫০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে।
গ) চারা রোপণ:
- বীজ থেকে এবং গুটি কলমের মাধ্যমে পেয়ারার চারা তৈরি করা হয়। বীজ অথবা কলমের মাধ্যমে তৈরিকৃত চারা গর্তের মাঝখানে লাগানো হয়।
- চারটিকে একটি শক্ত খুঁটির সাথে বেঁধে নিতে হবে যেন বাতাসে হেলে না পড়ে।
- গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের তৈরি খাঁচা বা বেড়া দিতে হয়।
ঙ) সার প্রয়োগ:
- পেয়ারা গাছে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি, মে ও সেপ্টেম্বর মাসে সমান তিন কিস্তিতে সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
- সার একেবারে গাছের গোড়ায় না দিয়ে যতদূর পর্যন্ত ডালপালা বিস্তার লাভ করে সে এলাকার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
- সার প্রয়োগের পর পানি সেচ অত্যাবশ্যক।
বয়স অনুযায়ী গাছ প্রতি সারের পরিমাণ-
সারের নাম | গাছের বয়স ১-৩ বছর |
গোবর/কম্পোস্ট | ১০-২০ কেজি |
ইউরিয়া | ১৫০-৩০০ গ্রাম |
টিএসপি | ১৫০-৩০০ গ্রাম |
এমওপি | ১৫০-৩০০ গ্রাম |
পরিচর্যা:
- বয়স্ক গাছের ফল সপ্তাহের পর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে অঙ্গ ছাঁটাই করা হয়। অঙ্গ ছাঁটাই করলে গাছে নতুন ডালপালা গজায়, ফল ধারণ বৃদ্ধি পায়।
- গাছকে নিয়মিত ফলবান রাখতে এবং মানসম্পন্ন ফল পেতে কচি অবস্থায় শতকরা ২৫-৫০ ভাগ ফল ছাঁটাই করা প্রয়োজন।
- ফল ধারণের সময় এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৭-১০ দিন পর পর পানি সেচ দিলে ফলন বৃদ্ধি পায়।
রোগ ও পোকা ব্যবস্থাপনা:
পেয়ারা গাছে অনেক সময় ছত্রাকজনিত রোগ হয়। এ রোগের কারণে প্রথমে ফলের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ দেখা যায় যা ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে পেয়ারার গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে। ফল ফেটে বা পচে যেতে পারে। এ রোগ দমনের জন্য গাছের নিচে ঝরে পড়া পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছে ফল ধরার পর ২৫০ ইসি টিস্ট (প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি) ১৫ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
- কাজী পেয়ারা ও বারি পেয়ারা বছরে দুইবার ফল দিয়ে থাকে।
- পেয়ারা পাকার সময় হলে এর সবুজ রং আস্তে আস্তে হলদে সবুজে পরিণত হয়।
- পেয়ারা গাছের বয়স ও জাত ভেদে ফলনে পার্থক্য দেখা যায়। ৪-৫ বছরের একটি গাছ থেকে বছরে ১৫- ২০ কেজি ফল পাওয়া যায়।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।