পেঁপে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন ফল। কাঁচা অবস্থায় তরকারি এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। সারা বছর পেঁপে পাওয়া যায়।
নিম্নে পেঁপে চাষ পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-
ক) পেঁপের জাত:
- আমাদের বাংলাদেশে শাহী, রাঁচি, ওয়াশিংটন, হানিডিউ, পুষা ইত্যাদি জাতের পেঁপে চাষের প্রচলন রয়েছে।
- এছাড়াও বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ করা হয়।
খ) জমি নির্বাচন ও তৈরি:
- উঁচু ও মাঝারি উঁচু দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য উত্তম। তবে উপযুক্ত পরিচর্যার দ্বারা প্রায় সব ধরনের মাটিতেই পেঁপের চাষ করা যায়।
- জমি ৩/৪ বার উত্তমরূপে চাষ দিতে হয়।
- পেঁপে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
গ) চারা তৈরি:
- ভালো মিষ্টি পেঁপে থেকে বীজ সপ্তাহ করে বীজের উপরের সাদা আবরণ সরিয়ে টাটকা অবস্থায় বীজতলায় বা পলিথিন ব্যাগের মাটিতে বীজ বপন করতে হয়।
- বীজ বপনের পর প্রয়োজনীয় পানি সেচ দিতে হয়। ১৫-২০ দিনের মধ্যে চারা গজায়।
ঘ) চারা রোপণ পদ্ধতি:
- পেঁপে সারা বছর চাষ করা যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য আশ্বিন-কার্তিক বা ফাল্গুন-চৈত্র মাস উত্তম সময়।
- নির্বাচিত সময়ের দুই মাস আগে চারা তৈরির জন্য বীজ বপন করতে হয়।
- দেড় থেকে দুইমাস বয়সের চারা রোপণ করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে ৬০ সেমি x ৬০ সেমি x ৬০ সেমি আকারের মাদা তৈরি করে চারা রোপণ করা হয়।
- রোপণের ১৫ দিন পূর্বে মাদার মাটিতে সার মেশাতে হয়।
ঙ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
- প্রতিটি মাদায় ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২৫ গ্রাম বোরাক্স, ২০ গ্রাম জিংক সালফেট এবং ১৫ কেজি জৈব সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
- চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা এলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি এক মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল এলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।
- শেষ ফল সংগ্রহের এক মাস পূর্বেও এমওপি ও ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়।
চ) অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা:
- একলিঙ্গ জাতের ক্ষেত্রে প্রতি মাদায় ৩টি চারা রোপণ করা হয়। ফুল এলে ১টি মন্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে।
- পরাগায়নের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখা হয়। ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হয়।
- গাছ যাতে ঝড়ে না ভাঙে তার জন্য বাঁশের খুটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে।
ছ) রোগ-পোকা ও প্রতিকার:
- বীজতলা বা পলিব্যাগের মাটি সেঁতসেঁতে থাকলে চারার ঢলে পড়া এবং সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থার অভাবে বর্ষার সময় মাঠে বয়ষ্ক গাছে কান্ড পচা রোগ দেখা দিতে পারে।
- ছত্রাকজনিত এ রোগ দমনের জন্য গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভালো ব্যবস্থা রাখতে হয়, রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হয়।
- পেঁপে গাছে মোজাইক ভাইরাস ও পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ দেখা দিতে পারে। মোজাইক রোগে পাতা হলদেভাব ও মোজাইকের মতো মনে হয়। এসব রোগে পাতার ফলক পুরু ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। বাগানে কোনো গাছে ভাইরাস দেখা দিলে তা সাথে সাথে উপড়িয়ে পুঁতে ফেলতে হবে।
জ) ফল সংগ্রহ:
- ফলের কষ জলীয়ভাব ধারণ করলে সবজি হিসেবে সগ্রহ করা যায়। ফলের ত্বক হালকা হলদে বর্ণ ধারণ করলে পাকা ফল হিসেবে সগ্রহ করা হয়।
- জাত ভেদে ফলনে পার্থক্য দেখা যায়। তবে শাহী পেঁপের ফলন প্রতি হেক্টরে ৪০-৫০ টন হয়।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।