(১) নিম গাছের বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই নিম গাছ দেখা যায়। নিমের কমপক্ষে ২টি প্রজাতি রয়েছে। এগুলো হলে Melia azedarach (ঘোড়া নিম) এবং Azadirachta indica।
- নিম মাঝারি থেকে বড় আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। ১০ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
- ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে নতুন পাতা গজায়। পাতা যৌগিক, ১-১৫টি পত্রফলক থাকে। পত্রফলকগুলো লম্বাটে, তির্যক ও বর্গাকৃতির হয়। পত্রফলকের কিনারা বাঁজকাটা।
- ফুল সাদা সুগন্দ্বিযুক্ত। ফল ডিম্বাকৃতির। ফল পাকলে হালকা হলদে হয়।
(২) নিম গাছের উপকারিতা/নিম পাতার উপকারিতা
পুরুত্ব নিম গাছের ব্যবহার অনেক ভাবে হয়ে থাকে। তবে এর ঔষধিগুণ মানুষের যথেষ্ট উপকার করে থাকে।
- নিমপাতার নির্যাস শস্যের কীটনাশক হিসেবে ভালো কাজ করে।
- চর্মরোগে নিম পাতার রস ৩ নিমের তেল ব্যবহারে উপকার হয়।
- নিম পাতার রস কৃমির উপদ্রব কমায়।
- নিমের শুকনা পাতা কাপড়ের ও চালের পোকা সমনে ব্যবহার হয়।
- নিমের ভাগ ভালো দাঁতের মাজন হিসেবে ব্যবহার হয়।
- নিমের খৈল জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
- নিম গাছের বাকল বাতজ্বর, মান, বিখাউজ, একজিমা, পাঁ রক্ত ও পুঁজ পড়া, পাথরিয়া, জন্ডিস রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
- নিমের বাকলের রস দাঁতের মাড়ি শক্ত করে।
(৩) নিম গাছ লাগানোর নিয়ম/নিম গাছ চাষ পদ্ধতি
বংশবিস্তার: বীজ দ্বারা বংশবিস্তার করা হয়। মূল ও কান্ডের কাটিংয়ের মাধ্যমেও বংশবিস্তার করা যায়।
বীজ সংগ্রহের সময়: জুন-জুলাই মাসে বীজ সংগ্রহ করা হয়।
চারা উৎপাদন: জুন-জুলাই মাস নিমের বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। পাকা ফল থেকে খোসা ছাড়িয়ে বীজ আলগা করে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। বীজ সংগ্রহের এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা উৎপাদনের জন্য পলিব্যাগে বপন করতে হয়। উৎপাদিত চারা এক বছর পর মে-জুন মাসে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।
জমি প্রস্তুত: আমাদের দেশের মাটি ও জলবায়ু নিম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটিতে নিম চাষ ভালো হয়। জমি প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার ও আগাছামুক্ত করে চাষ দিতে হবে।
গর্ত তৈরি ও চারা রোপণ: নিমের চারা রোপণের জন্য ৭ মিটার x ৭ মিটার দূরত্বে ১ মিটার x ১ মিটার x ১ মিটার আকারের গর্ত করতে হবে। গর্তের উপরের মাটি একদিকে ও নিচের মাটি আরেক দিকে রাখতে হবে। তারপর গর্ত ও গর্তের মাটি ১৫ দিন রোদে শুকাতে হবে। গর্ভের নিচের মাটির সাথে পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার মিশিয়ে এবং উপরের মাটি নিচে দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। এর ১৫ দিন পর এক বছর বয়সের চারা গর্তের মাঝখানে রোপণ করতে হবে। চারার গোড়ায় মাটি একটু উঁচু করে দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে।
পরিচর্যা: চারার গোড়ায় খুঁটি ও বেড়া নিতে হবে। খরা মৌসুমে প্রয়োজনে পানি সেচ নিতে হবে। মাঝে মাঝে গোড়ার মাটি খুঁচিয়ে আলগা করে দিতে হবে। জমিতে আগাছার উপদ্রব দেখা দিলে নিড়ানি দিতে হবে। নিম গাছে সাধারণত রোগ ও পোকার আক্রমণ কম দেখা যায়।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন: নিম গাছের পাতা, ফুল, ফল, বীজ ও তেল বিভিন্ন ঔষধে ব্যবহার করা হয়। গাছ রোপণের ৮-১০ বছরের মধ্যে তা থেকে পাতা, ছাল, ফল ও বীজ সংগ্রহ করা যায়।
[সূত্র: এনসিটিবি]