অনেক সময়ে বাড়ির আশপাশ ফাঁকাই থেকে যায় কিংবা কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই দু-চার রকমের সবজির গাছ জন্মানো হয়। অথচ বসতবাড়ির আস্তিনা সারা বছরই বিভিন্ন শাকসবজি আবাদের জন্য উপযোগী অবস্থায় থাকে। তাই এসব বসত বাড়িতে পরিকল্পনামাফিক চাষ করতে পারলে সহজেই বসতবাড়িতেই পরিবারের চাহিদা মিটানোর মতো সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।
(১) বসতবাড়িতে সবজি চাষের উপকারিতা
বসতবাড়িতে সবজি চাষ করার সুবিধাগুলো নিম্নরূপ-
- অল্প পরিমাণ জমিতেও অনেক প্রকারের ও বহু সংখ্যক শাকসবজির গাছ জন্মানো যায়।
- শাকসবজির ফসল পেতে বেশি সময় লাগে না, তাই একই জমিতে বছরে কয়েক বার ফসল জন্মানো সম্ভব।
- পুষ্টির দিক থেকে অধিকাংশ শাকসবজি উঁচুমানের হয়ে থাকে। শাকসবজির পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ, লৌহ ও ক্যালসিয়াম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। উপযুক্ত পরিমাণে শাকসবজি খেলে পুষ্টিহীনতা দূর করা যায়, আবার খাদ্যে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থেও অভাবে যেসব অসুখ-বিসুখ দেখা দেয় সেসব থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব হয়।
- বেশি পরিমাণে শাকসবজি উৎপাদন করতে পারলে, কেবল যে পরিবারের প্রয়োজন মেটে তাই নয়, বাড়তি ফসল বিক্রি করে পরিবারে একটা বাড়তি আয়ও আসতে পারে।
- পরিবারের লোকেরা নিজেরাই বসতবাড়ির বাগানে কাজ করে অবসর সময় কাটাতে পারেন।
(২) বসতবাড়িতে সবজি চাষের পদ্ধতি
বসতবাড়িতে সারা বছর সবজি উৎপাদনের জন্য সবজিবিন্যাস সবজি বাগানের পাঁচ খণ্ড জমিতে বা বেডে যে পাঁচটি সবজিবিন্যাস অনুসরণ করা হয়, এখানে সেগুলোর একটি তালিকা দেয়া হলো-
প্রথম খণ্ডের বিন্যাস | মুলা/টমেটো-লালশাক-লালশাক-পুঁইশাক |
দ্বিতীয় খণ্ডের বিন্যাস | লালশাক+বেগুন-লালশাক-ঢেঁড়শ |
তৃতীয় খণ্ডের বিন্যাস | পালংশাক-রসুন/লালশাক-ডাঁটা লালশাক |
চতুর্থ খণ্ডের বিন্যাস | মুলাশাক-পেঁয়াজ বা গাজর-কলমীশাক-লালশাক |
পঞ্চম খণ্ডের বিন্যাস | বাধাকপি-লালশাক-কলা-লালশাক |
প্রথম খণ্ড: মুলার বীজ সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে বপন করতে হবে। মুলা শেষ বারের মতো ওঠানোর ১০-১২ দিন আগেই টমেটোর চারা রোপণ করতে হবে। টমেটো ওঠানো শেষ হলে পর পর দু’বার লালশাক চাষ করে, পরে পুঁইশাক চাষ করতে হবে।
দ্বিতীয় খণ্ড: লালশাক ও বেগুন সাথি ফসল হিসেবে চাষ করতে হবে। বেগুন শেষ বারের মতো ওঠানোর পর, সেখানে আবার লালশাক বুনতে হবে। লালশাকের পর ঢেঁড়স লাগাতে হবে সারি করে।
তৃতীয় খণ্ড: পালংশাক চাষের পর রসুনের আবাদ করতে হবে, রসুন তোলার পূর্বে লালশাকের বীজ বুনতে হবে। এরপর ডাঁটা লাগিয়ে, তা তোলার পর আবার লালশাকের চাষ করতে হবে।
চতুর্থ খণ্ড: মূলাশাক তোলার পর পেঁয়াজের চারা রোপণ করতে হবে। তবে ইচ্ছা করলে পেঁয়াজের পরিবর্তে গাজরের আবাদ করা যেতে পারে। পেঁয়াজ বা গাজর ওঠানোর পর কলমিশাকের আবাদ করে, পরে লালশাক উৎপন্ন করা যাবে।
পঞ্চম খণ্ড: সেপ্টেম্বর মাসের শেষে বাঁধাকপির চারা রোপণ করে, জানুয়ারি মাসের দিকে বাঁধাকপি সংগ্রহ শেষ করে লালশাক বুনতে হবে। লালশাক তোলার পর করলার চাষ করে, পরে আবার লালশাক চাষ করতে হবে।
বাগানের কিনারায় সবজি: উল্লিখিত খণ্ডগুলো ছাড়াও বাগানের কিনারায় বেড়া দিয়ে ভিতরের দিকে রোপণ করে বেড়াকে বাউনি হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন লতা জাতীয় সবজি চাষাবাদ করা যাবে। বেড়ার পাশে যে জায়গা রাখা হয়েছে সেখানে মৌলভীকচু, মানকচু, মুখীকচু ইত্যাদি রোপণ করা যাবে। তাছাড়া বাগানের কিনারায় একটি করে পেঁপে গাছ লাগানো যাবে। এভাবে একদিকে যেমন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ইত্যাদির উপদ্রব থেকে বাগানের সবজিগুলোকে রক্ষা করা যাবে, অপরদিকে সবজিবিন্যাসের বাইরে কতকগুলো সবজি উৎপাদন করা যাবে।
এভাবে সারা বছর বসতবাড়িতে সবজি চাষ করে পরিবারের পুষ্টি প্রয়োজন মিটবে তাই নয়, বাড়তি ফসল বিক্রি করে পরিবারে একটা বাড়তি আয়ও আসবে।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।