Skip to content

ছাদে বাগান বা ছাদ বাগান করার পদ্ধতি

ছাদে বাগান বা ছাদ বাগান করার পদ্ধতি

(১) রুফটপ গার্ডেনিং বা ছাদ বাগান কি?

ছাদের উপর সবজি, ফল ও ফুল চাষ নতুন কিছু নয়। এটি সাধারণ সবজি, ফল ও ফুল চাষেরই প্রতিরূপ যা একটি সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করা হয়। বিশেষ করে শহুরে লোকজন তাদের বাড়ির ছাদে রুফটপ গার্ডেনিং করে থাকেন।

বাড়ির ছাদে টব, বালতি, ড্রাম বা ট্রেতে সীমিত আকারে যে সবজি, ফল ও ফুলের চাষ করে থাকে তাকেই রুফটপ গার্ডেনিং বা ছাদ বাগান বলা হয়।

বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন ধরনের বাগান দেখা যায়।

অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদে যেসব বাগান দেখা যায়, তার অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যেকোনো গাছ, এমনকি শাকসবজিও ফলানো সম্ভব।

ছাদ বাগানে আঙ্গুর, বেদানা, ডালিম, আমড়া, পেঁয়ারা ইত্যাদি নানা ধরনের মৌসুমি ফল ছাড়াও টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, ব্রোকলি, লাউ, করলা, শসা, মিষ্টিকুমড়া, শিম ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়।

(২) ছাদ বাগানে শাকসবজি চাষের উদ্দেশ্য

  • শহুরে পরিবেশে নিজের বাগানে শাকসবজি ও ফল-ফুল উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
  • নির্মল বায়ুপ্রবাহ, পরিবেশের উন্নয়ন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন রোধে সহায়তা করে।
  • বাড়ির ছাদ ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে।
  • শহুরে পাখির আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

(৩) ছাদ বাগানের ধরন

  • সবজি বাগান।
  • ফল বাগান।
  • ফুল, অর্কিড ও শোভাবর্ধনকারী গাছের বাগান।
  • ঔষধি গাছের বাগান।

(৪) ছাদ বাগান করার পদ্ধতি

চিত্র- ছাদ বাগান
চিত্র- ছাদ বাগান

ছাদে বাগান করার জন্য পদ্ধতি ও আবশ্যিক বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো-

  1. বেশি রোদ বা গরম সহ্য করতে পারে এমন গাছই ছাদে বপন/রোপণ করা উত্তম।
  2. ছাদে বাগান করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নিয়মিত পানি সেচ দেয়া। কারণ, বাগানের গাছগুলো সাধারণ মাটির সংস্পর্শ হতে দূরে থাকে। তাই নিয়মিত পানি সেচ না দিলে গাছগুলো যে কোনো সময় মারা যেতে পারে।
  3. ছাদে বাগানের জন্য জৈব সার, শুঁটি ইউরিয়া, খৈল, হাড়ের গুঁড়া (পচিয়ে) ব্যবহার করা ভালো।
  4. ছোট গাছকে বড় গাছের সামনে রাখতে হবে।
  5. বছরে একবার নতুন মাটি দিয়ে পুরনো মাটি বদলিয়ে দিতে হবে। এটি অক্টোবর মাসে করলে ভালো।
  6. জানা দরকার, ছাদের উপযোগী গাছ কোনগুলো। গাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে যে গাছটি ছাদ বাগানের জন্য তা হাফ ড্রাম, টব নাকি চৌবাচ্চা কাঠামো করে লাগানো হবে এবং এসব গাছের জন্য পরিচর্যার ধরন কী হবে, তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে।
  7. টবের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি। কয়েকটি ভাঙ্গা চাড়ির টুকরা ছিদ্রের মুখে নিয়ে টবে মাটি ভরতে হবে। তিন ভাগ মাটি, দুই ভাগ গোবর সার, আর এক ভাগ পাতা পচা সার দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে টব পূর্ণ করতে হবে।
  8. টবে/ড্রামে গাছের জাত নির্বাচনের পর যৌক্তিকভাবে সাজাতে হয়। যেমন বড় গাছ পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে না দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর দিকে দিতে হবে। এতে আলো, বাতাস এবং রোদ ভালোভাবে পাবে। তাছাড়া ছোট বড় জাতের মিশ্রণ করে সেটিং করলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। 
  9. আরেকটি জরুরি বিষয় হলো, ছাদবাগান করার ক্ষেত্রে ফল চাষাবাদে কলমের এবং হাইব্রিড জাতের ব্যবহার বেশি ফলদায়ক।
  10. কুঁড়ি আসার লক্ষণ প্রকাশ পেলে ৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতি গাছে এক চা-চামচ করে ১০ দিন অন্তর দিতে হবে। তবে এক মৌসুমে এই রাসায়নিক সার তিনবারের বেশি দেওয়ার দরকার নেই। রাসায়নিক সার ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সার কোনোক্রমেই শিকড়ের ওপর না পড়ে। সার প্রয়োগের সময় মাটির আর্দ্রতা দেখে নিতে হবে।
  11. টবের ক্ষেত্রে ছোট গাছ বড় হলে পট/টব বদল, ডিপটিং (পুরনো টবকে আলতো করে মাটিতে শুইয়ে গড়াগড়ি দিলে গাছটি টব থেকে বেরিয়ে আসবে। পরে অতিরিক্ত মূল কেটে মাটি বদলিয়ে সার প্রয়োগসহ নতুনভাবে গাছ বসানো) করতে হবে সময়মতো। বছরে অন্তত একবার পুরাতন মাটি বদলিয়ে নতুন মাটি জৈব সারসহ দিতে হবে।
  12. ছাদে চাষের একটা প্রয়োজন হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এজন্য পুরাতন রোগাক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা, পাতা সাবধানতার সাথে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে। এতে গাছপালা রোগযুক্ত থাকবে, মানসম্পন্ন ফলন পাওয়া যাবে। ফুল এবং সবজিতে প্রয়োজনমাফিক সার প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে অন্তত বর্ষার আগে একবার এবং বর্ষার পরে সাবধানে পরিমাণমতো সার দিতে হবে।
  13. আমাদের দেশের আবহাওয়ায় যে কোনো ফলে পোকা বা রোগের আক্রমণ অহরহ ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে ২/৩ বার ছাদের বাগান পরিদর্শন করা হলে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কমে যাবে এবং ফসলও ভালো পাওয়া যাবে।
  14. স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী অন্যান্য উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘরের ভিতরে, সিঁড়ি, ব্যালকনি, বারান্দা, কার্নিশ এসব জায়গায় অনায়াসে গাছ লাগিয়ে ভালো ফলন পাওয়া যেতে পারে।

(৫) ছাদে বাগান করে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সবজির যোগান নিশ্চিত করার জন্য: সবজির পঞ্জিকা

কাঠের বাক্স/ট্রেআগস্ট-অক্টোবরনভেম্বর- ফেব্রুয়ারিমার্চ-জুলাই
কাঠের বাক্স/ট্রে ১আগাম ফুলকপিগাজরঢেঁড়স
কাঠের বাক্স/ট্রে ২বেগুনব্রোকলিডাঁটা
কাঠের বাক্স/ট্রে ৩লালশাকক্যাপসিকাম + লেটুসকরলা
কাঠের বাক্স/ট্রে ৪মুলা + গাজরটমেটোঝিঙ্গা + ধন্দুল
কাঠের বাক্স/ট্রে ৫গাজরমিষ্টি কুমড়াপুঁইশাক
কাঠের বাক্স/ট্রে ৬বিলিাতি ধনিয়া + পুুদনা পাতাশসা + লাউকলমীশাক
কাঠের বাক্স/ট্রে ৭শিমশিমবরবটি

(৬) ছাদে যেসব ফল গাছ লাগানো যায়

চিত্র- রুফটপ গার্ডেনিং
চিত্র- রুফটপ গার্ডেনিং

ছাদে বাগান করলে তাতে-

আম, পেঁয়ারা, লেবু, বড়ই/কুল, আমড়া, জামরুল, পেঁপে, মাল্টা, কামরাঙ্গা, ডালিম, কতবেল, তেঁতুল, জাম্বুরা, আঙ্গুর, আতা, শরিফা, সফেদা, জলপাই, লিচু, ড্রাগন ফ্রুট, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফল চাষ করা যায়।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts