Skip to content

হাঁস কি খায়? হাঁসের খাদ্যাভাস ও হাঁসের খাবার তালিকা/ডিম পাড়া হাঁসের খাদ্য তালিকা

হাঁস কি খায়, হাঁসের খাদ্যাভাস ও হাঁসের খাবার তালিকা, ডিম পাড়া হাঁসের খাদ্য তালিকা

প্রতিটি পুষ্টি উপাদান দেহের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শর্করা দেহে শক্তি যোগায় এবং আমিষ দেহের বৃদ্ধি এবং ক্ষয়প্রাপ্ত কলার পূণর্গঠনে সাহায্য করে। আবার খণিজপদার্থ দেহের কাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন খুব সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভিটামিন দেহের জৈবিক কার্যাবলীতে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। তাই এখানে হাঁস কি খায় অর্থ্যাৎ হাঁসের খাবার তালিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

এ পাঠ শেষে আপনি- হাঁস কি খায়, হাঁসের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বলতে পারবেন। বয়সভেদে হাঁসের খাবার তালিকায় বা রসদে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের মাত্রা জানতে পারবেন। বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের সাহায্যে বিভিন্ন বয়সের ডিম পাড়া হাঁসের খাদ্য তালিকা বা রসদ কিভাবে তৈরি করতে হয় তা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। বয়সভেদে হাঁসের দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ সম্পরেক অবগত হতে পারবেন পারবেন।

(১) হাঁস কি খায়? হাঁসের খাদ্যাভ্যাস

হাঁস কি খায়, হাঁসের খাদ্যাভ্যাস
  • হাঁস সর্বভূক পাখি। এরা এমনকী তৃণলতা এবং খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ খেয়েও ভালো উৎপাদন দিতে সক্ষম।
  • হাঁস দলবদ্ধ ও জলচর পাখি। তাই খাল-বিল, পুকুর, হাওর-বাওর, নদী ইত্যাদিতে দলে বিচরণ করে ছোট ছোট জলজ উদ্ভিদ ও অমেরুদন্ডী প্রাণী, যেমন- শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি খেয়ে অনায়াসে বেঁচে থাকতে পারে।
  • কিন্তু খামারভিত্তিতে অধিক মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য হাঁস পুষতে হলে এসব খাদ্যের সঙ্গে সম্পূরক খাদ্যও সরবরাহ করতে হবে।
  • হাঁস শুষ্ক খাদ্য খেতে পারে না। তাই হাঁসের খাবারের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি সরবরাহ করতে হয়। এদেরকে সবসময় ভেজা ও গুঁড়া খাদ্য দেয়া উচিত।
  • ডিম থেকে ফোটার পর প্রথম ৮ সপ্তাহ হাঁসকে ইচ্ছেমতো খেতে দেয়া উচিত। পরবর্তীতে দিনে দু’বার রসদ সরবরাহ করলেই চলে।
  • হাঁসের বাচ্চাকে জন্মের পর প্রথম দু’একদিন হাতে তুলে খাওয়াতে হয় যাতে করে বাচ্চারা খাবার খাওয়া শিখতে পারে।
See also  হাঁস-মুরগির বাসস্থানঃ হাঁস-মুরগির ঘর তৈরির নিয়ম

(২) হাঁসের খাবার তালিকা/ডিম পাড়া হাঁসের খাদ্য তালিকা

হাঁসের খাবার তালিকা, ডিম পাড়া হাঁসের খাদ্য তালিকা

হাঁসকে সারাদিনে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় যে পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা হয়, তাকে হাঁসের খাবার তালিকা/রসদ বলে।

ডিম পাড়া হাঁসকে লেয়ার হাঁস বলা হয়।

বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ মিশ্রিত করে মুরগির মতো হাঁসেরও রসদ তৈরি করা যায়। মুরগির মতো হাঁসের রসদের বিভিন্ন ধরনে পুষ্টি উপাদান, যেমন- আমিষ, শর্করা, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন ও খণিজপদার্থ সঠিক মাত্রায় সরবরাহ করতে হবে।

বয়সভেদে হাঁসকে ৩-৪ ধরনের রসদ প্রদান করা হয়, যেমন-

  1. বাচ্চার প্রারম্ভিক রসদ (০-২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত),
  2. বৃদ্ধির রসদ (৩-৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত),
  3. লেয়ার/ব্রিডারের জন্য বৃদ্ধির রসদ (৯-২০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত) ও
  4. লেয়ার/ব্রিডার বা সমাপ্তির রসদ (২১ সপ্তাহ বয়স থেকে বাকি সময় পর্যন্ত)।

নিচে হাঁসের রেশনে কী পরিমাণ শক্তি ও পুষ্টি উপাদান থাকা উচিত তা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য দিয়ে তৈরি দু’টি রসদ দেখানো হয়েছে। এগুলো অনুসরণ করে হাঁসের খাদ্য তৈরি করা যায়।

মাংস উৎপাদনকারী হাঁসের ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক রসদ দেয়ার পর বৃদ্ধি রসদ শুরু করতে হয় এবং বাজারজাতকরণের পূর্ব পর্যন্ত এই রসদ সরবরাহ করতে হয়।

মাংসের জন্য ব্যবহৃত হাঁসের বাণিজ্যিক জাত/উপজাতগুলো ৮-১০ সপ্তাহের ভেতর বাজারজাত করা হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাংসের জন্য কিছুটা বয়ষ্ক হাঁস ব্যাবহার করা হয়।

অন্যদিকে, ডিমপাড়া বা লেয়ার ও প্রজননের হাঁসগুলোকে ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত বৃদ্ধির রসদ দিয়ে অতঃপর লেয়ার/ব্রিডার রসদ রসবরাহ করা যায়।

ক) বিভিন্ন বয়সের হাঁসের রসদে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের মাত্রা

শক্তি/পুষ্টি উপাদানপ্রারম্ভিক রসদ (০-২ সপ্তাহ)বৃদ্ধির রসদ (৩-৮ সপ্তাহ)লেয়ার/বিডারের বৃদ্ধির রসদ (৯-২০ সপ্তাহ)লেয়ার/ব্রিডার রসদ (২১ সপ্তাহ-বাকি সময়)
বিপাকীয় শক্তি (কিলো ক্যালরি/ কেজি খাদ্য)২,৭৫০ ক্যালরি২,৭৫০ ক্যালরি২,৭০০ ক্যালরি২,৬০০ ক্যালরি
আমিষ২০%১৮%১৫%১৮%
ক্যালসিয়াম০.৮০%০.৮০%০.৮০%২.৫%
ফসফরাস০.৪৫%০.৪৫%০.৪৫%০.৪৫%
(উৎস: Shrivastav and Panda, 1982; Farmer’s Journal, India)

খ) বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বয়সের হাঁসের রসদ

খাদ্য উপকরেণের নামপ্রারম্ভিক রসদবৃদ্ধির রসদলেয়ার/ব্রিডার রসদ
ভুট্টার গুঁড়া৩০%৩০%৩০%
ধানের কুঁড়া২০%২২.৫%২৫%
খৈল২৭.৫%২০%২০.৫%
মাছের গুঁড়া১০%৮%১০%
চালের খুদ১০%১৭%১০%
শামুকের গুঁড়া২%
খনিজ লবণ২.৫%২.৫%২.৫%
ভিটামিন বি২, ডি৩০.০২৫%০.০২৫%০.০২৫%
(উৎস: DAS, S.K., 1994; Poultry Production, CBS Publishers & Distributors, India, p. 211)

বিশেষ দ্রষ্টব্য: হাঁসের রসদ তৈরিতে উপরোক্ত খাদ্য উপকরণগুলোর পাশে উল্লেখিত মাত্রার বেশি ব্যবহার করা যাবে না। রসদ এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে হাঁসের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও পুষ্টি উপাদান রসদে বিদ্যমান থাকে।

See also  গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন এবং তাদের কিছু কমন রোগব্যাধির পরিচিতি

গ) বয়সভেদে হাঁসের জন্য বিভিন্ন ধরনের রসদ

খাদ্যদ্রব্যের নামপ্রারম্ভিক রসদ (০-২ সপ্তাহ)বৃদ্ধির রসদ (৩-৮ সপ্তাহ)লেয়ার/ব্রিডারের বৃদ্ধির রসদ (৯-২০ সপ্তাহ)লেয়ার/ব্রিডার রসদ (২১ সপ্তাহ-বাকি সময়)
ভুট্টা৪৩%৪৫%৩৩.৬৯%৩১.৮৯%
চালের গুঁড়া২০%২০%৪০%৩৫%
গমের গুঁড়া৫%৯%১০%
বাদামের খৈল
সূর্যমুখীর খৈল৭%৫%৫%১১.৫%
সরিষার খৈল৭%৫%৫%১১.৫%
তিলের খৈল
ভুট্টার ময়দা৭%৫%
মাছের গুঁড়া১০%৫%
হাড়ের গুঁড়া০.৫০%০.৬০%০.৭০%০.৭৫%
লবণ০.২৫%০.২৫%০.২০%০.৭৫%
কোলিন ক্লোরাইড০.০২%০.০৫%০.৩০%৫%
ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স০.১১%০.১১%০.১১%০.১১%

(৩) বয়সভেদে হাঁসের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ

বয়সভেদে হাঁসের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ

মুরগির মতো হাঁসও প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে ও নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন লাভ করে।

নিচে প্রতিদিন বয়সভেদে প্রতিটি হাঁস কতটুকু খাদ্য গ্রহণ করে তা দেয়া হয়েছে।

তবে, হাঁসের জাত বা উপজাতের ওপর নির্ভর করে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের তারতম্য ঘটতে পারে।

বয়স (সপ্তাহ)খাদ্য গ্রহণ
০১ সপ্তাহ১৫ গ্রাম/হাঁস/দিন
০২ সপ্তাহ২৫ গ্রাম/হাঁস/দিন
০৩ সপ্তাহ৩০ গ্রাম/হাঁস/দিন
০৪ সপ্তাহ৩৫ গ্রাম/হাঁস/দিন
০৫ সপ্তাহ৪০ গ্রাম/হাঁস/দিন
০৬ সপ্তাহ৪৫ গ্রাম/হাঁস/দিন
০৭ সপ্তাহ৫০ গ্রাম/হাঁস/দিন
০৮ সপ্তাহ৫৫ গ্রাম/হাঁস/দিন
০৯-২০ সপ্তাহ৮৫ গ্রাম/হাঁস/দিন
২১ সপ্তাহ-বাকি সময়১২৫ গ্রাম/হাঁস/দিন

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা- হাঁস কি খায়, হাঁসের খাদ্যাভাস, হাঁসের খাবার তালিকা, ডিম পাড়া হাঁসের খাদ্য তালিকা, বয়সভেদে হাঁসের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

হাঁস সর্বভূক পাখি। এরা দলবদ্ধভাবে খাল-বিল, পুকুর, হাওর-বাওর, নদী ইত্যাদিতে বিচরণ করে জলজ উদ্ভিদ ও অমেরুদন্ডী প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। তবে হাঁস থেকে অধিক মাংস ও ডিম পেতে হলে এগুলোর সঙ্গে সম্পূরক খাদ্যও সরবরাহ করতে হবে। বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ মিশ্রিত করে মুরগির মতো হাঁসেরও রসদ তৈরি করা হয়। বয়সভেদে হাঁসকে ৩-৪ ধরনের, যেমন- বাচ্চার প্রারম্ভিক রসদ, বৃদ্ধির রসদ, লেয়ার বা ব্রিডারের জন্য বৃদ্ধির রসদ এবং সমাপ্তির রসদ প্রদান করা হয়। মুরগির মতো হাঁসকেও বয়সভেদে দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ রসদ সরবরাহ করতে হয়।

See also  হাঁস পালন পদ্ধতি

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts