শিম আমিষ সমৃদ্ধ একটি সবজি। শিম এবং এর বীজ উভয়ই জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি। এটি উচ্চ আঁশযুক্ত, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ যা মানুষের জন্য খুবই উপকারী। এর মূলে নডিউল জাত আছে তা বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন সংবদ্ধ করে নাইট্রোজেন মাটিতে যুক্ত করতে পারে।
এই আর্টিকেলটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- বিভিন্ন প্রকার শিম গাছের পরিচর্যা যেমন- শিম গাছে সার প্রয়োগ পরিচর্যা, শিম গাছের আন্তঃপরিচর্যা, শিম গাছের পোকা দমন পরিচর্যা, শিম গাছের রোগ ব্যাধি দমন পরিচর্যা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। সঠিকভাবে শিম গাছের পরিচর্যা করতে পারবেন। শিম চাষের উপযুক্ত সময় কোনটি, শিম চাষের জন্য কোন মাটি উত্তম, শিম কোন মাটিতে ভালো জন্মে, শিম চাষে সার প্রয়োগ, জমি তৈরি ও বপন পদ্ধতি, শিম গাছের বীজ বপনের সময় এই বিষয়গুলো জানতে পারবেন।
আশা করি এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি উপকৃত হবেন। চলুন শুরু করি।
(১) শিম চাষের উপযুক্ত সময় কোনটি? শিম চাষের জন্য কোন মাটি উত্তম?
শিম চাষের উপযুক্ত সময় কোনটি: বাংলা মাস হিসেবে- গ্রীষ্মকালে চৈত্র (মার্চ) এবং শীতকালে আষাঢ় থেকে ভাদ্র আগাম লাগালে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে বোনা উত্তম। ইংরেজি মাস হিসেবে, আগাম বীজ বপনের জন্য জুন মাস উত্তম। তবে স্বাভাবিক ভাবে জুনের শেস সপ্তাহ থেকে জুলাই পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
শিম চাষের জন্য কোন মাটি উত্তম: শিম শীতকালীন এবং খরা সহিষ্ণু সবজি। দোআঁশ মাটি শিমের জন্য ভালো তবে সার ও পানি ব্যবস্থাপার মাধ্যমে যেকোন মাটিতে ভালো জন্মে। মাটির pH ৬.৫-৮.৫ হলে ভালো।
ফসলের অঙ্গজবৃদ্ধি ও পুষ্পায়ন জন্য তাপমাত্রা ও দিবস দৈর্ঘ্য যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এ সবজি গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধির জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এবং দীর্ঘ দিবস প্রয়োজন। কিন্তু প্রজননের জন্য নিম্ন তাপমাত্রা ও কম দিবস দৈর্ঘ্য প্রয়োজন।
শীতকালীন জাতগুলোতে কেবল শীতের প্রভাবেই পুষ্পায়ন ঘটে গ্রীষ্মকালীন জাতগুলো দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় বছরের যে কোনো সময় বীজ বপন বা চারা রোপন করা হউক না কেন যথাসময়ে পুষ্পায়ন ঘটে থাকে।
(২) শিমের জাত
শিমের জাত: কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি শিম-১, বারি শিম-২, বারি শিম-৩, বারি শিম-৪ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত ইপসা শিম, এছাড়া কার্তিকা, বারমাসি জনপ্রিয় জাতের মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও বিভিন্ন বীজ কোম্পানি থেকে নিত্য নতুন জাত বাজারজাত করছে।
(৩) শিম চাষে সার প্রয়োগ, জমি তৈরি ও বপন পদ্ধতি
- বানিজ্যিকভাবে আবাদের জন্য ৪-৫ বার জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিতে হবে। এছাড়াও কৃষক তার বসত বাড়িতে, পতিত জমি, পুকুর পাড়ে রাস্তার ধারে শিমের চাষ করতে পারে।
- সাধারণত মাদা বা গর্ত করতে হবে। মাদা থেকে মাদা ৩ মিটার দূরত্ব রাখতে হবে।
- আগাম বীজ বপনের জন্য জুন মাস উত্তম। তবে স্বাভাবিক ভাবে জুনের শেস সপ্তাহ থেকে জুলাই পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
- বীজের হার হেক্টর প্রতি ৭-৭.৫ কেজি যা নির্ভর করে বীজ বপনের সময়ের উপর। প্রতি মাদায় ৫-৬ টি বীজ বপন করতে হবে। পরবর্তীতে ২ টি সুস্থ চারা রেখে অন্যগুলো তুলে ফেলতে হবে।
- শিম কোন মাটিতে ভালো জন্মে: প্রায় সব ধরণের মাটিতেই শিম জম্মে। তবে সুনিষ্কাশিত দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো ফলনের উপযুক্ত।
(৪) শিম গাছের বীজ বপনের সময়
মধ্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস।
(৫) শিমের বীজ হার
প্রতি শতকে | প্রতি একরে | প্রতি হেক্টরে |
৩০ গ্রাম | ৩ কেজি | ৭.৫ কেজি |
(৬) শিমের জমি, মাদা ও গর্ত তৈরি
- ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে ঢেলা ভেঙ্গে জমি সমান করে ঝুর ঝুরে করে নিতে হয়।
- তারপর ২.৫-৩ মিটার দূরে দূরে এমনভাবে মাদা তৈরি করতে হবে যাতে মাদা উচ্চতায় ১৫-২০ সেমি, প্রস্থে ২.৫ মিটার, এবং দৈর্ঘ্য জমির সুবিধা মতো নিতে হয়।
- প্রতি মাদার গর্তের আকার হবে ৪৫ সেমি x ৪৫ সেমি x ৪৫ সেমি।
- অতিবৃষ্টি ও জলাদ্ধতা সমস্যা সমাধানে নালা তৈরি করে রাখুন যাতে অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনে সুবিধা হয়।
(৭) শিম গাছে সার প্রয়োগ পরিচর্যা
সারের নাম | শতক প্রতি সার | হেক্টর প্রতি সার |
গোবর/ জৈব সার | ১.৫ কেজি | ১০ টন |
ইউরিয়া | ১০০.০০ গ্রাম | ২৫ কেজি |
টিএসপি | ৩৬০.০০ গ্রাম | ৯০ কেজি |
এমওপি | ২৪০.০০ গ্রাম | ৬০ কেজি |
জিপসাম | ২০.০০ গ্রাম | ৫ কেজি |
বোরিক এসিড | ২০.০০ গ্রাম | ৫ কেজি |
- শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর সার এবং জিপসাম সবটুকু ছিটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করে চাষ দিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
- বীজ বপন বা চারা রোপণের ৪-৫ দিন আগেই ইউরিয়া ও পটাশ সারের অর্ধেক এবং টিএসপি সারের সবটুকু একত্রে ছিটিয়ে প্রয়োগ করে মাদার মাটির সাথে (৪ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত) কোদালের দ্বারা হালকাভবে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বপন/রোপণের ৩০ দিন পর বাকি অর্ধেক ইউরিয়া এবং পটাশ সার মাদায় উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
- শিমের জমিতে সার উপরি প্রয়োগের কাজ দুই কিস্তিতে করতে হয়। প্রথম কিস্তি চারাগজানোর এক মাস পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি গাছে দুই-চারটি ফুল ধরার সময়।
- প্রতি কিস্তিতে মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া (শতক প্রতি) ও ২৫ গ্রাম (শতক প্রতি) এমওপি সার গাছের গোড়ার চারদিকে (গোড়া থেকে ৪-৫ ইঞ্চি দূরে) উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
- সারপ্রয়োগের সময় মাটিতে রসের অভাব হলে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে।
(৮) শিম গাছের মাদায় বীজ বপন
গর্তে সার প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে।
(৯) শিম গাছের আন্তঃপরিচর্যা
- আগাছা দমন: জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন। জমিতে বা মাদায় আগাছা দেখামাত্রই সরিয়ে ফেলতে হবে। সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা দমন করতে হবে। সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র নিড়ানি দিয়ে আগাছা দমন করতে হবে।
- চারা পাতলা করণ: প্রতি মাদায় ২টি সুস্থ, সবল চারা রেখে বাকিগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে।
- মাচা তৈরি: গাছ ২৫-৩০ সেমি উঁচু হলেই মাচা বা বাউনি তৈরি করে তাতে গাছগুলো উঠিয়ে দিতে হবে।
- সেচ প্রদান: গাছের গোড়ার মাটির রস যাচাই করে সেচ দিতে হবে। সাধারণতঃ ১০-১২ দিন পরপর গাছে সেচ দিতে হবে। বেডের দুপাশে নালার মাধ্যমে সেচ দিন। ফসলের পুরো জীবন কালে মাটিতে রসের মাত্রা ৬০% এর নিচে নেমে যাবার আগে সেচ দিন। রসের মাত্রা অর্ধেকের বেশি এর নিচে গেলে বাড়ন ও ফলন বেশ কমে যাবে।
- গোড়ায় মাটি উঠানো: গাছের গোড়ায় মাটি উঠিয়ে দিতে হবে যাতে বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় পানি না উঠতে পারে।
- প্রুনিং করা: পুরাতন পাতা ও ফুলবিহীন ডগা বা শাখা কেটে ফেলতে হবে।
- সারের উপরি প্রয়োগ: বীজ বপনের ১ মাস পর অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেরক এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারা বড় হতে থাকলে আরও ১৫-২০ দিন পর বাকি ইউরিয়া ও এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
গাছের গোড়ার মাটির রস যাচাই করার উপায় হলো-
- ৯০-১০০ সেমি গভীরতার ৩ ভাগের ২ ভাগ নিচের মাটি হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিলে– চিকন বুনটের মাটি/পলিময় কাদা জমিতে তা শক্ত ও কিছুটা আঠালো দলা হলে এবং জমিনে ফেলে দিলে না ভাঙলে ২ দিন পর সেচ দিন।
- মাঝারি থেকে মোটা বুনটের মাটি/বেলে প্রধান জমিতে তা শক্ত ও কিছুটা আঠালো দলা হলে এবং জমিনে ফেলে দিলে না ভাঙলে ১ দিন পরই সেচ দিন।
(১০) শিম গাছের পোকা দমন পরিচর্যা
ক) পোকা
- জাব পোকা: শিমের প্রধান ক্ষতিকারক পোকা হলো জাব পোকা (অঢ়যরফ)। এরা গাছের কচি ডগা, পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদির রস চুষে খায়। ফলে ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সরাসরি ক্ষতি ছাড়াও এ সব পোকা মোজাইক ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
- ফল ছিদ্রকারী পোকা: শিমের আর একটি ক্ষতিকারক পোকা হলো ফল ছিদ্রকারী পোকা। এ সব পোকার ডিম থেকে বের হয়ে আসা কীড়া ফুল, ফুলের কুঁড়ি, কচি ফল ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে পড়ে।
- থিপস (Thrips): শিমের আর একটি ক্ষতিকর পোকা হলো থ্রিপস। এ সব পোকার আক্রমণে শিমের উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে। এ সব পোকা পাতা থেকে রস চুষে খায়।
খ) দমন পদ্ধতি
উল্লেখিত পোকা ৩টির প্রতিকারের জন্য নিম্নের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে-
- আক্রান্ত অংশ তুলে ফেলে দিতে হবে। গুড়া সাবান পানিতে মিশ্রিত করে স্প্রে করতে হবে।
- আঠা ফাঁদ পেতে অর্থাৎ জমিতে ৩ মিটার দূরে দূরে ৩০ সেমি x ৩০ সে.মি. আকারের বোর্ডে গ্রিজ/আঠা লাগিয়ে আঠা ফাঁদ পেতে থ্রিপস পোকাকে আকৃষ্ট করে মারা যায়।
- গাছগুলো আক্রান্ত বেশি হলে মেলাথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (২ মিলি) ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
- নিমের বীজের শাস পিষে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করেও এ পোকা দমন করা যায়।
- ভাইরাস আক্রান্ত গাছগুলো মাটিসহ উঠিয়ে গভীর গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে।
গ) কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রা
- শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে: সাইপারমেথরিন জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ কট বা ম্যাজিক ১০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার) সকালের পরে সাঁজের দিকে স্প্রে করুন। স্প্রের পুর্বে খাবারযোগ্য ফল পেড়ে নিন।
- শিমের ক্যাবেজ লুপার পোকা বা ঘোড়া পোকা দমনে: অতি আক্রমণ না হলে রাসায়নিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন নেই। অতি আক্রমণে সাইপারমেথরিন জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ কট বা ম্যাজিক ১০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) সকালের পরে সাঁজের দিকে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করুন। স্প্রের পুর্বে খাবারযোগ্য লতা ও ফল পেড়ে নিন। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে।
- শিমের জাবপোকা দমনে: ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার/২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।
- থ্রিপস আক্রমণ বেশি হলে: ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার/২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।
- শিমের পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা দমনে: সাইপারমেথরিন জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ কট বা ম্যাজিক ১০ মিলি/১০ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার) সকালের পরে সাঁজের দিকে স্প্রে করুন। স্প্রের পুর্বে খাবারযোগ্য লতা ও ফল পেড়ে নিন। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে।
- শিমের কাঁঠালে পোকা দমনে: ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন।
- শিমের পাতামোড়ানো পোকা দমনে: ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
(১১) শিম গাছের রোগ ব্যাধি দমন পরিচর্যা
শিম গাছে এনথ্রাকনোজ বা ফল পঁচা রোগ হয়। এ রোগ দমনে রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। ছত্রাক নাশক যেমনব্যাভিস্টিন/নোইন/একোনাজল প্রয়োগ করতে হবে।
- এনথ্রাকনোজ/ফল পচা রোগ দমনে প্রপিকোনাজল জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ টিল্ট ২৫০ ইসি ৫ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পরপর ৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
- শিমের পাউডারী মিলডিউ রোগ দমনে রোগের আক্রমণ বেশি হলে টেবুকোনাজল+ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ ৫ গ্রাম নাটিভো) অথবা প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ টিল্ট) ১০ লিটার পানিতে ৫ মিলিলিটার (১মুখ) হারে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- শিমের মরিচা রোগ দমনে প্রপিকোনাজল জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ টিল্ট ২৫০ ইসি ৫ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পরপর ৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে। বালাইনাশক ছিটানোর পর ১৫ দিন ফল তোলা থাকে বিরত থাকুন।
- শিমের পাতার দাগ রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ নোয়িন বা ব্যাভিস্টিন ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করুন। বালাইনাশক ছিটানোর পর ১৫ দিন ফল তোলা থাকে বিরত থাকুন।
- শিমের উইল্ট রোগ দমনে কপার হাইড্রোক্সাইড জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ চ্যাম্পিয়ন ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে অথবা মাদার মাটিতে ট্রাইকোডারমা ৩০ গ্রাম প্রতি ৫০০ গ্রাম গোবরের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
- বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলতে হবে।
- ব্যবহারের সময় নিরাপদ পোষাক পরিধান করুন
- ব্যবহারের সময়ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।
- বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন।
- বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে ৭ থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুতে হবে।
(১২) শিম ফসল সংগ্রহ
- আশ্বিন-কার্তিক মাসে শিম গাছে শিম ধরে। জাত ভেদে বীজ বপনের ৯৫-১৪৫ দিন পর শিম গাছ থেকে শিম ওঠানো যায়।
- বীজ হিসেবে শিম সংগ্রহ করতে হলে শিম যখন গাছে শুকিয়ে হলদে বর্ণ হয়, তখন সংগ্রহ করা হয়। শিম থেকে বীজ বের করে তা নিমের শুকনা পাতার গুড়াসহ সংরক্ষণ করতে হয়।
(১৩) শিমের ফলন
জাত ভেদে শিমের ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে। সবজি হিসেবে শিম পুরা মৌসুমে উঠানো যায়।
নিম্নে বারি (BARI) শিমের ফলনের তালিকা দেয়া হলো-
জাত | শতক প্রতি | একর প্রতি | হেক্টর প্রতি |
বারি শিম-১ | ৮১-৮৯ কেজি | ২০৩-২২৩ মন | ২০-২২ টন |
বারি শিম-২ | ৪৯-৫৭ কেজি | ১২৩-১৪৩ মন | ১২-১৪ টন |
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা শিম চাষের উপযুক্ত সময় কোনটি, শিম চাষের জন্য কোন মাটি উত্তম, শিম কোন মাটিতে ভালো জন্মে, শিম চাষে সার প্রয়োগ, জমি তৈরি ও বপন পদ্ধতি, শিম গাছের বীজ বপনের সময়, বিভিন্ন প্রকার শিম গাছের পরিচর্যা যেমন- শিম গাছে সার প্রয়োগ পরিচর্যা, শিম গাছের আন্তঃপরিচর্যা, শিম গাছের পোকা দমন পরিচর্যা, শিম গাছের রোগ ব্যাধি দমন পরিচর্যা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।
শিম আমিষ জাতীয় একটি জনপ্রিয় সবজি। শিম গাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য উষ্ণ, আর্দ্র জলবায়ু ও দীর্ঘ দিবস প্রয়োজন। কিন্তু পুষ্পায়নের জন্য নিম্ন তাপমাত্রা ও কম দিবস দৈর্ঘ্য প্রয়োজন। সবজি হিসেবে শিম পুরো মৌসুমে উঠানো যায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী শিমে জলীয় অংশ- ৮৬.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ- ০.৯ গ্রাম, আঁশ- ১.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি- ৪৮ কিলোক্যালোরি, আমিষ- ৩.৮ গ্রাম, চর্বি- ০.৭ গ্রাম, শর্করা- ৬.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২১০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন- ১৮৭ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১- ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২- ০.০৫ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি- ৯ মিলিগ্রাম রয়েছে।
[সূত্র: ওপেন স্কুল; বামিস; ইন বাংলা নেট কৃষি (in bangla net krisi)]