Skip to content

মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি

মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। দেশের বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ এবং মৎস্য খাদ্য অপ্রতুল। বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদা পূরণ জমির স্বল্পতা এবং মৎস্য খাদ্যের অপ্রতুলতা দূর করার জন্য একই জায়গায় মাছ ও মুরগি এবং মাছ ও হাঁসের সমন্বিত চাষের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশে হাঁস মুরিগ চাষের পারিবারিক ঐতিহ্য বর্তমান এবং প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পুকুর বিদ্যমান সমন্বিত হাঁস, মুরগি ও মৎস্য চাষ খামার পদ্ধতিতে এসব প্রাণির বিষ্ঠা পুকুরে সঠিক পরিমাণে প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের মৎস্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

এই পাঠটি শেষ অবধি অধ্যয়ন করলে আপনি- সমন্বিত মাছ চাষের জন্য কোন কোন জাতের মাছ, হাঁস ও মুরগি নির্বাচন করতে হবে তা জানতে পারবেন; কোন কোন জাতের মুরগি লাভজনক তা বুঝতে পারবেন; কোন কোন জাতের হাঁস সমন্বিত চাষের জন্য নির্বাচিত করা প্রয়োজন তা বুঝতে; সমন্বিত মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছ মুরগি ও হাঁসের আনুপাতিক হার সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন; মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতির ব্যবস্থাপনার কৌশল সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারবেন।

নিম্নে মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

(১) মাছ, হাঁস ও মুরগির জাত নির্বাচন

সমন্বিত মাছ চাষের ক্ষেত্রে জাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমন্বিত চাষে যে জাতের মাছ, হাঁস ও মুরগি বেশি বৃদ্ধি পায় এবং ডিম দেয় সাধারণত সেগুলোই নির্বাচন করা উচিত।

See also  সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা

ক) মাছের জাত নির্বাচন

মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি (মাছের জাত নির্বাচন)
  • সমন্বিত মাছ চাষে এমন সব মাছের জাত নির্বাচন করতে হবে সেগুলো খাদ্য গ্রহণের জন্য পুকুর বা জলাশয়ের ভিন্ন স্তরের মাছের সাথে প্রতিযোগিতা করে এবং পুকুরে উৎপাদিত প্রাকৃতিক খাদ্যকে স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করে। বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা পুকুরে ছাড়া হলে পকুর বা জলাশয়ের পানির সকল স্তরের খাবারের পূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হয়।
  • সমন্বিত পদ্ধতিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে পানির উপরের স্তরের জন্য কাতলা ও সিলভার কার্প, মধ্য স্তরের জন্য রুই মাছ এবং নিচের স্তরের জন্য মৃগেল মিরর কাপ ও কার্পিও মাছের জাত নির্বাচন করতে হবে। তবে অল্পসংখ্যক গ্রাস কার্প নির্বাচন করা যায়।

খ) মুরগির জাত নির্বাচন

  • সমন্বিত মাছ চাষে মুরগির জাত নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন করা হয় মূলত দুটো উদ্দেশ্যে যথা-মাংস উৎপাদনের জন্য এবং ডিম উৎপাদনের জন্য।
  • মাংস উৎপাদনকারী মুরগিকে ব্রয়লার এবং ডিম পাড়া মুরগিকে লেয়ার বলা হয়।
  • সমন্বিত মাছ চাষে ব্রয়লার মুরগির জাত হাইসেক্স’ ইত্যাদি মুরগির জাত নির্বাচন করা উচিত।

গ) হাঁসের জাত নির্বাচন

চিত্র- পানির উপর হাঁসের ঘর
চিত্র- পানির উপর হাঁসের ঘর
  • সমন্বিত মাছ চাষে হাঁসের জাত নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত যে জাতের হাঁস বেশি ডিম দেয় সেগুলোই নির্বাচন করা উচিত।
  • স্থানীয় জাতের হাঁস ৬০-৭০ টির কম সংখ্যক ডিম দেয় অথচ খাঁকি ক্যাম্বেল জাতীয় প্রতিটি হাঁস বছরে ২৫০-৩০০ টি ডিম দিয়ে তাকে। ইন্ডিয়ান রানার জাতীয় হাঁস এখন ২০০-২৫০টি ডিম দিতে সক্ষম।
  • ইন্ডিয়ান রানার ও খাকি ক্যাম্বল জাতীয় হাঁসগুলো আমাদের বাংলাদেশের পরিবেশের সাথে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে চলতে সক্ষম। তাই সমন্বিত মাছ চাষের ক্ষেত্রে হাঁসের জাত হিসেবে খাকি ক্যাম্বেলইন্ডিয়ান রানার জাত নির্বাচন করা উচিত।

(২) মাছ, হাঁস ও মুরগির সংখ্যা নির্ধারন

মাছ, মুরগি ও হাঁসের আনুপাতিক হার নির্ধারণ মাছের পোনা ছাড়ার হার সফলভাবে মাছ চাষ করার জন্য পোনার আকার ও পোনা ছাড়ার হার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

See also  সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা

ক) মাছের সংখ্যা

  • ছোট পোনার তুলনায় বড় আকারের পোনার মৃত্যু হর কম। পুকুড়ে সাধারণত ৬-১২ সেন্টিমিটার আকারের পোনা ছাড়া উচিত।
  • সাধারণত প্রতিশতকে ৩০টি পোনা ছাড়া উচিত। তবে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে পারলে প্রতি শতকে ৪০টি পোনা ছাড়া যেতে পারে।

নিম্নের সারণি এর মাধ্যমে সমন্বিত মাছ চাষের জন্য বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়ার আনুপাতিক হার দেওয়া হলো।

সমন্বিত মাছ চাষের জন্য বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়ার আনুপাতিক হার-

মাছের জাতপ্রতি শতকের সংখ্যা
কাতলা
সিলভার কার্প
মৃগেল
রুই
মিরর কার্প/থাই পাংগাস
গ্রাস কার্প
রাজপুটি
মোট৩০টি
(উৎস: সমন্বিত মাছ চাষ, মৎস্য অধিদপ্তর বাংলাদেশ)

খ) মুরগির সংখ্যা

জলাশয় বা পুকুরের আয়তনের ওপর মুরগির সংখ্যা নির্ভর করে। সমন্বিত মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতকে ২টি হারে মুরগি লালন করলে মাছ চাষের জন্য কোনো সার বা খাদ্য সরবরাহের প্রয়োজন হয় না। উল্লিখিত হারে মুরগি পালন করলে সমন্বিত মাছ চাষের পুকুরের পানিতে সাধারণত কোনো প্রকারের দূষণ পরিলক্ষিত হয় না।

গ) হাঁসের সংখ্যা

মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি (পুকুর হাঁসর সংখ্যা নির্ধারণ)
  • সমন্বিত মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতকে ২টি করে হাঁস পালন করা ভালো। এ পরিমাণ হাঁস পালন করলে পুকুরে কোন প্রকার সার ও মাছের খাদ্য সরবরাহের প্রয়োজন হয় না। তবে পুকুরের পানির গভীরতা ২ মিটারের অধিক হলে প্রতি শতকে ৩টি করে হাঁস পালন করা যেতে পারে।
  • তবে হাঁসের বয়স ২.৫ বৎসর হয়ে গেলে তা বিক্রি করে দিয়ে সমান সংখ্যক বাচ্চা হাঁস পালে ঢুকিয়ে দিতে হবে। প্রতি পুকুরে ২/১ টি পুরুষ হাঁস রাখা উচিত।

(৩) মাছ, হাঁস ও মুরগির চাষ ব্যবস্থাপনা

ক) মাছের চাষ ব্যবস্থাপনা

  • পোনা ছাড়ার পরপরই মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানির গুণাগুণ পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ, মাছের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি কাজগুলো করা উচিত। মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যে পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা রয়েছে।
  • মাছের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য এবং রোগ বালাই পরীক্ষা করার জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার জাল টেনে মাছকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
  • মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষে পুকেুরের পানির গুণাগুণ যথাযথ রাখার জন্য ৩-৪ মাস পর পর প্রতি শতক জলায়তনে ০.৫ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
  • নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় বিধায় নির্দিষ্ট সময়েই মাছ ধরা ও বিক্রয় করার কাজ সম্পাদন করা উচিত।
See also  সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা

খ) হাঁসের ব্যবস্থাপনা

  • হাঁস এমন এক ধরনের প্রাণি যাদেরকে সহজেই পোষ মানানো সম্ভব। তাই হাঁস পালন অতি সহজ। হাঁস পালন করার উপযুক্ত সময় হলো এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত।
  • সাধারণত বাচ্চা অবস্থায় হাঁসের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। প্রথম ১০-১৫ দিন বাচ্চাগুলোকে শুষ্ক স্থানে আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হয়। বাচ্চাগুলো যেনো ঠান্ডায় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
  • হাঁসের ঘর সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। হাঁস আশে পাশের পরিবেশ থেকে যে খাবার গ্রহণ করে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বিধায় নিয়মিত বাইরের খাবার সরবরাহ করতে হয়।
  • হাঁসের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

গ) মুরগির ব্যবস্থাপনা

মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি (মুরগির ব্যবস্থাপনা)

বাচ্চা অবস্থায় মুরগির বিশেষভাবে যত্ন নেয়া দরকার। সাধারণত এক মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চা মুরগির শরীরে কিছুটা তাপ দেওয়ার প্রয়োজন হয় কেননা তাদের জীবনচক্র খুবই নাজুক। যে যন্ত্রের সাহায্যে বাচ্চা মুরগিকে তাপ দেওয়া হয় তাকে ব্রুডার বলে। বাচ্চা মুরগিকে সাধারণত বৈদ্যুতিক হিটার, বাল্ব বা তুষের হিটার দিয়ে তাপ দেওয়া হয়।

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একটা সম্পষ্ট ধারণা অর্জন করলাম।

বাংলাদেশের বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ, জমির স্বল্পতা, মৎস্য খাদ্যের অপ্রতুলতা দূর করার জন্য একই জায়গায় মাছ, হাঁস ও মুরগির সমন্বিত চাষের গুরুত্ব অপরিসীম। এক্ষেত্রে কাছের প্রজাতি এবং হাঁস ও মুরগির জাত নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এতে মাছ, মুরগি হাঁস ও মুরগির সঠিক ব্যবস্থাপনায় অধিক উৎপাদন সম্ভব।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts