Skip to content

বাছুর গরু পালন পদ্ধতি ও বাছুরের খাদ্য তালিকা

বাছুর গরু পালন পদ্ধতি ও বাছুরের খাদ্য তালিকা

মাংস উৎপাদন বা দুগ্ধ খামারের ভবিষ্যত নির্ভর করে বাছুরের সন্তোষজনক বৃদ্ধির ওপর। কারণ আজকের বাছুরই ভবিষ্যতের মাংস উৎপাদনকারী গরু, উন্নতমানের প্রজনন উপযোগী ষাঁড় বা দুধ উৎপাদনশীল গাভী। এসব গুরুত্বে কথা বিবেচনায় রেখেই এই পোষ্টটিতে বাছুর পালন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

এ পাঠ শেষে আপনি- বাছুর কাকে বলে, তার সংঙ্গ্ বলতে পারবেন। বাছুরের বাসস্থান সম্পর্কে ধারনা পাবেন। বকনা বাছুরের পরিচর্যাসমূহ সম্পর্ক অবগত হতে পারবেন। বাছুরের খাদ্য তালিকা, বাছুরের জন্য দানাদার খাদ্য তালিকা ও বয়স অনুযয়ী বাছুরের খাদ্য পরিবেশন, সম্পর্কে জানতে পারবেন। সর্বপরি, বাছুর গরু পালন পদ্ধতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পারবেন।

(১) বাছুর কাকে বলে?

বাছুর কাকে বলে

বাছুর কাকে বলে: বাছুর হলো গরু-মহিষের শৈশবকাল। অর্থাৎ জন্মের পর থেকে এক বছরের বেশি বয়সের গরু-মহিষের বাচ্চাই সচরাচর বাছুর নামে পরিচিত।

মাংস উৎপাদন বা দুগ্ধ খামারের ভবিষ্যত নির্ভর করে বাছুরের সন্তোষজনক বৃদ্ধির ওপর। কারণ আজকের বাছুরই ভবিষ্যতের মাংস উৎপাদনকারী গরু, উন্নতমানের প্রজনন উপযোগী ষাঁড় বা দুধ উৎপাদনশীল গাভী। এদেশে পালিত গবাদিপশুর প্রায় এক-চতুর্থাংশই (২৫%) বাছুর। এরা অত্যন্ত রোগ সংবেদনশীল হয়। তাই সুস্থ- সবল বাছুর পেতে হলে একদিকে যেমন গর্ভাবস্থায় গাভীর পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য ও যত্ন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন প্রসবকালীন ও জন্মের পর নবজাতক বাছুরের সঠিক পরিচর্যা।

(২) বাছুর গরু পালন পদ্ধতি

বাছুর গরু পালন পদ্ধতি

ক) বাছুরের বাসস্থান

বাছুরের জন্মকালীন গড় ওজন জাতভেদে ভিন্ন হতে পারে, যেমন- দেশী ও উন্নত জাতের বাছুরের ওজন যথাক্রমে ১৫- ২০ কেজি হয়। অবশ্য উন্নত ও সংকর জাতের বাছুরের জন্মকালীন ওজন প্রায় ২৫-৩০ কেজি হতে পারে।

See also  বাছুরের খাদ্য তালিকা, গরুর বাছুরের যত্ন ও বাসস্থান, বকনা বাছুরের পরিচর্যা এবং গরুর বাছুরের রোগ দমন

মূলত বাছুরের আকারের ওপর নির্ভর করে এর বাসস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ।

বাছুরের ঘর নির্মাণে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। যথা-

  • প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশের সুবিধা রয়েছে এমন জায়গায় বাছুরের ঘর তৈরি করতে হবে।
  • ঘরে প্রতিটি বড় আকারের বাছুরের জন্য ৩.২৪ বর্গ মিটার ও ছোট আকারের বাছুরের জন্য ১.১১ বর্গ মিটার জায়গা বা খোপের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বাছুরের বাসস্থান কাঁচা বা পাকা যাই হোক না কেন এতে মলমূত্র নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • মেঝে পাকা না হলে তা যেন কর্দমাক্ত ও স্যাঁতসেঁতে না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
  • বাছুরের খোপে খড়-বিচালি দিয়ে বিছানা তৈরি করতে হবে।

খ) বকনা বাছুরের পরিচর্যা

বাছুরের পরিচর্যা বলতে এদেরকে সময়মতো ও পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য পরিবেশন, কৃমিনাশক ও টিকা প্রদান, রোগবালাইয়ের চিকিৎসা করা ও অন্যান্য যত্ন-আত্তি করাকে বোঝায়।

যদিও গবাদিপশু বিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী বাছুর ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকে দৈহিক পরিপক্কতা অর্জন করে সাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত এদেরকে পরিচর্যা করতে হয়, কিন্তু এদেশে এটি তেমনভাবে মানা হয় না। তবে ভবিষ্যতে কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়ার জন্য বাছুরের সুষ্ঠু পরিচর্যা দরকার।

এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে বাছুরের পরিচর্যার কলাকৌশল নিম্নে বর্ণিত হলো-

১। বাছুরকে শালদুধ পান করানো: নবজাতক বাছুরকে জন্মের এক ঘন্টা পর থেকে ৩-৪ দিন পর্যন্ত মায়ের বাট থেকে নিঃসৃত গাঢ় বা হালকা হলদে রঙের শালদুধ বা কাচলা দুধ পান করাতে হবে। শালদুধে বাছুরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবডি থাকে। এছাড়াও শালদুধে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, আমিষ ও ভিটামিন-এ থাকে। আমাদের গ্রামে-গঞ্জে অনেকেই অজ্ঞতার জন্য এ শালদুধ বাছুরকে খেতে দেয় না, দোহন করে ফেলে দেয়। এটা কখনোই করা উচিত নয়।

২। বাছুরকে গাভীর দুধ পান করা শেখানো: জন্মের পরই কিন্তু বাছুর স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাভীর বাট চুষে দুধ পান করতে পারে না বা জানে না। বাছুরকে তাই বাট মুখে পুরে দুধ চুষে পান করতে শেখাতে হয়।

See also  বাছুরের খাদ্য তালিকা, গরুর বাছুরের যত্ন ও বাসস্থান, বকনা বাছুরের পরিচর্যা এবং গরুর বাছুরের রোগ দমন

৩। খামার পর্যায়ে বাছুর চিহ্নিতকরণ বা ট্যাগ নম্বর লাগানো: পারিবারিক খামারে বাছুর চিহ্নিতকরণের প্রয়োজন না হলেও খামারে পালিত বাছুরের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে বাছুরের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণে সুবিধা হয় এবং খামার ব্যবস্থাপনাও সহজ হয়ে যায়।

৪। পরিমিত খাদ্য পরিবেশন: বাছুর পালনে দৈনিক পরিমিত খাদ্য পরিবেশনের কোন বিকল্প নেই। বর্ধিষ্ণু বাছুরের চাহিদা অনুযায়ী জন্মের পর থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

৫। মলমূত্র নিষ্কাশন ও বিছানা পরিষ্কার করা: স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালনের জন্য বাছুরের শোয়ার ঘর ও রক্ষনাবেক্ষণের ঘরটিতে মলমূত্র নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। কেননা মলমূত্র থেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয় ও বাছুর কৃমিসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। বাছুরের খোপে বিছানা হিসেবে যে খড় দেয়া হয় তাও মাঝেমধ্যে পরিষ্কার করে শুকনো রাখতে হবে।

৬। সময়মতো বাছুর খোপে ওঠানো ও নামানো: বাছুরকে নিয়মিত খোপে ওঠানামা করাতে হয়। এদেরকে যেমন সারাদিন খোপে আবদ্ধ করে রাখা ঠিক নয়, তেমনি দিনভর খোলা জায়গায় বিচরণ করতে দেয়াও উচিত নয়। এটা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা নির্বিশেষে সব মৌসুমে করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত শীতে বা বৃষ্টিতে ভিজলে বাছুর নিউমোনিয়া বা ফুসফুস প্রদাহে আক্রান্ত হতে পারে।

৭। বাছুরের প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ: প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ বাছুর পরিচর্যার অন্যতম করণীয় কাজ। তাছাড়া মাঝে মাঝে এদের দৈহিক বৃদ্ধি বা অবণতির পরিমাপ করতে হবে। জন্মের দিন থেকে দৈনিক ওজন মাপা হলে এদের দৈনিক বৃদ্ধির হার সহজেই বোঝা যাবে। পারিবারিকভাবে না হলেও খামারভিত্তিতে এটি পালন করতে হবে।

৮। রোগপ্রতিরোধ ও রোগচিকিৎসা: বাছুরকে নিয়মিত টিকাদান করতে হবে ও কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। বাছুর রোগাক্রান্ত হলে দ্রুত ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, সুস্থ্য-সবল গাভী থেকেই সঠিক উৎপাদন পাওয়া যাবে।

See also  বাছুরের খাদ্য তালিকা, গরুর বাছুরের যত্ন ও বাসস্থান, বকনা বাছুরের পরিচর্যা এবং গরুর বাছুরের রোগ দমন

(৩) বাছুরের খাদ্য তালিকা

বাছুরের খাদ্য তালিকা

উন্নত বিশ্বে জন্মের পরপরই বাছুরকে মা থেকে আলাদা করে নিয়ে পালন করা হয়। অন্যদিকে, এদেশে পারিবারিক বা খামার উভয় পদ্ধতিতেই বাছুরকে মায়ের সঙ্গে রেখে অন্তত ৬ মাস পালন করা হয়। এ সময় বাছুর মূলত মায়ের দুধ পান করে বড় হয়। তবে যেভাবেই পালন করা হোক না কেন লক্ষ্য রাখতে হবে এরা যেন খাদ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পুষ্টি পায়। তা না হলে পরবর্তীতে এদের থেকে কাঙ্খিত মাংস বা দুধ উৎপাদন পাওয়া যাবে না।

নিম্নে বাছুরের জন্য দু’টি খাদ্য মিশ্রণ দেখানো হয়েছে। এছাড়াও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাছুরকে কি পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করতে হবেবাছুরের জন্য দানাদার খাদ্য মিশ্রণ তা দেখানো হয়েছে।

ক) বাছুরের জন্য দানাদার খাদ্য তালিকা

খাদ্য উপকরণমিশ্রণ ১: শতকরা অংশ (শুষ্ক পদার্থে)মিশ্রণ ২: শতকরা অংশ (শুষ্ক পদার্থে)
গম/ ভুট্টা /চাল ভাঙ্গা১০১৫
গমের ভুশি৩৫৩০
চালের ভুশি২০২৫
খেসারির ভুশি১০
তিলের খৈল১৫১০
নারিকেলের খৈল১৫
শুটকি মাছের গুঁড়া
শামুক/ঝিনুকের গুঁড়া
খাদ্য লবণ
সর্বমোট১০০১০০
(উৎস: হক, মো.আ., আলী, শে.জি., রহমান, আ.ন.ম.আ., ২০০৪; গৃহপালিত পশুপালন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, পৃ. ৯৩)

খ) বয়স অনুযায়ী বাছুরের খাদ্য তালিকা

বাছুরের বয়সপরিবেশনযোগ্য খাদ্য উপাদান
জন্মের প্রথম ২ সপ্তাহসকাল ও বিকালে মোট দু’বার শালদুধ সরবরাহ করতে হবে।
৩-১২ সপ্তাহদিনে দু’বার দুধ পান করাতে হবে। তাছাড়া ৩য় সপ্তাহ থেকে কিছু কচি পাতা, ঘাসের ডগা ও ৮ম সপ্তাহ থেকে সামান্য দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
১৩-১৬ সপ্তাহদিনে দু’বার দুধ পান করাতে হবে। সেই সাথে মাথা পিছু ১.০ কেজি সবুজ ঘাস ও ৫০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য সরবরাস করতে হবে।
১৭-২০ সপ্তাহদিনে দু’বার দুধ পান করাতে হবে। মাথাপিছু ৩.০ কেজি সবুজ ঘাস ও ৭৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
২১-২৪ সপ্তাহদিনে দু’বার দুধ পান করাতে হবে। মাথাপিছু ৫.০-৭.০ কেজি সবুজ ঘাস ও ১.০ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
২৫-৩৫ সপ্তাহদুধ পান বন্ধ করতে হবে। কিন্তু মাথাপিছু ৫.০-৭.০ কেজি সবুজ ঘাস, ১.০-২.০ কেজি খড় ও ১.০-১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
৩৬-৫০ সপ্তাহমাথাপিছু ১০.০-১২.০ কেজি সবুজ ঘাস, ২.০-৩.০ কেজি খড় ও ১.৫-২.০ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
(উৎস: হক, মো.আ., আলী, শে.জি., রহমান, আ.ন.ম.আ., ২০০৪; গৃহপালিত পশুপালন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, পৃ. ৯৩)

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বাছুর কাকে বলে, বাছুর গরু পালন পদ্ধতি, বাছুরের বাসস্থান, বকনা বাছুরের পরিচর্যা, বাছুরের খাদ্য তালিকা, বাছুরের জন্য দানাদার খাদ্য তালিকা, বয়স অনুযায়ী বাছুরের খাদ্য তালিকা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

বাছুর হলো গরু-মহিষের শৈশবকাল। মাংস উৎপাদন বা দুগ্ধ খামারের ভবিষ্যত নির্ভর করে বাছুরের সন্তোষজনক বৃদ্ধির ওপর।

মূলত বাছুরের আকারের ওপর নির্ভর করে এর বাসস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ। তাই বাসস্থানে বাছুরের আকার অনুযায়ী বাছুরপ্রতি ১.১১-৩.২৪ বর্গ মিটার জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।

বাছুরের পরিচর্যা বলতে এদেরকে সময়মতো ও পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য পরিবেশন, কৃমিনাশক ও টিকা প্রদান, রোগবালাইয়ের চিকিৎসা করা ও অন্যান্য যত্ন-আত্তি করাকে বোঝায়।

বাছুরকে আলাদাভাবে বা মায়ের সঙ্গে রেখে যেভাবেই পালন করা হোক না কেন লক্ষ্য রাখতে হবে এরা যেন খাদ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পুষ্টি পায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদেরকে সঠিক নিয়মে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য পরিবেশন করতে হবে।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts