বীজ শোধন বলতে বীজ জীবাণুমুক্তকরণকে বোঝায়। বীজ শোধন হচ্ছে বীজের বাইরে অথবা বীজের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র জীবকনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জৈবিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া ।
বীজ শোধন করার কারণ হলো বীজকে জীবাণুমুক্ত করা। বীজ শোধন করা হলে অতি ক্ষুদ্র জীবানুর হাত থেকে বীজ ও চারা গাছকে রক্ষা করে। বীজ শোধন করে ফসল লাগানোর ফলে গাছের সার্বিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, ফসলের উৎপাদন বাড়ে।
এই পোষ্টটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- পিঁয়াজ, আলু ও সরিষার বীজ শোধন পদ্ধতি জানতে সম্পর্কে জানতে পারবেন। পিঁয়াজ বীজ শোধন করতে পারবেন। আলু বীজ শোধন করতে পারবেন। সরিষার বীজ শোধন করতে পারবেন।
(১) পিঁয়াজ বীজ শোধন পদ্ধতি/উপায়/নিয়ম
পিঁয়াজ বীজ বেশ ছোট আকৃতির। এর সাথে বিভিন্ন রোগজীবাণু যেমন- ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও নেমাটোড লেগে থাকতে পারে। পিঁয়াজ গাছ জন্মানোর পর এসব বীজ বাহিত রোগ জীবাণু পিঁয়াজের কন্দ, পাতা, শিকড় ইত্যাদি অংশে আক্রমণ করতে পারে। এজন্য পিঁয়াজ বীজ বপনের পূর্বে তা শোধন (জীবাণমুক্ত) করে নিতে হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১। পিঁয়াজের বীজ; ২। বীজ শোধক ভিটাভ্যাক্স ২০০ পাউডার (এম ৪৫); ৩। মুখ আটকানো কৌটা; ৪। নিক্তি; ইত্যাদি।
কার্যপ্রণালী:
- এক কেজি পেঁয়াজ বীজ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কৌটায় নিন।
- পরিমাণমত ভিটাভ্যাক্স ২০০ পাউডার (২ গ্রাম/কেজি) নিক্তি দ্বারা মেপে কৌটার বীজের মধ্যে নিয়ে কৌটার মুখ ভালভাবে আটকিয়ে দিন।
- এবার বন্ধ কৌটাটি উল্টিয়ে পাল্টিয়ে কয়েকবার ঝাঁকুন। এতে বীজ শোধক পাউডার বীজের গায়ে লেগে যায়।
- শোধন করা বীজ পলিব্যাগ বা উক্ত কৌটায় কয়েক ঘন্টা সংরক্ষণ করুন। অত:পর নির্ধারিত বীজ তলায় বপন করুন।
সাবধানতা:
- বীজ শোধক এক ধরনের বিষ। তাই শোধন করা বীজ এবং ঔষধ শিশু ও পশুপাখির নাগালের বাইরে রাখুন।
- বীজ শোধনের পর হাত ও মুখ ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালভাবে ধৌত করে নিন।
- বীজ ও ঔষধ সঠিক পরিমাণে মিশাতে হবে।
(২) আলু বীজ শোধন পদ্ধতি/উপায়/নিয়ম
বীজ আলুর সাথে বিভিন্ন রোগজীবাণু লেগে থাকতে পারে। তাই আলু বীজ লাগানোর পূর্বে শোধন করে নিতে হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১। একটি বড় পাত্র; ২। আলু বীজ; ৩। ডাইথেন এম ৪৫ (বা এমিসন-৬) ইত্যাদি।
কার্যপ্রণালী:
- একটি বড় পাত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি নিয়ে তাতে নির্দিষ্ট হারে ডাইথেন এম -৪৫ (৩.৬ গ্রাম/লিটার) নিয়ে ভালভাবে মিশান।
- দ্রবণের মধ্যে প্রয়োজনীয় বীজ আলু (প্রতি লিটারে দেড় কেজি) এক মিনিট ডুবিয়ে তুলে ছায়ায় শুকিয়ে নিন।
- এরপর বীজ আলু মাঠে বপন করুন। তবে আলু বীজ কাটা অবস্থায় দ্রবণে নিলে পানি বেরিয়ে অন্তত ২৪ ঘন্টা চট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে যাতে কাটা অংশের উপর একটি পাতলা আবরণ পড়ে। এ আবরণ আলুর বীজকে পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে রক্ষা করে।
(৩) সরিষা বীজ শোধন পদ্ধতি/উপায়/নিয়ম
সরিষা বীজ ছোট আকৃতির। এর সাথে বিভিন্ন বীজবাহিত রোগজীবাণু লেগে থাকতে পারে। তাই বপনের পূর্বে সরিষাবীজ শোধন করে নিতে হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১। ডাইথেন এম ৪৫ (বা এগ্রোসান জি এন); ২। বীজ শোধন যন্ত্র; ইত্যাদি।
কার্যপ্রণালী:
- একটি বড় বালতিতে ১০ লিটার পানি দিয়ে তার মধ্যে ৩০০ গ্রাম লবন দিয়ে ভালভাবে মিশান।
- লবণ দ্রবণে সরিষার বীজ ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করতে থাকুন। অপুষ্ট বীজগুলো উপরে ভেসে উঠবে। ভেসে থাকা বীজগুলো ফেলে দিন এবং পানিতে ডুবে থাকা বীজ গুলো উঠিয়ে শুকিয়ে নিন।
- শুকনো বীজের সাথে প্রয়োজনমতো ডাইথেন এম ৪৫ (প্রতি কেজিতে ৩ গ্রাম) মিশিয়ে সীড ড্রেসারে নিন।
- সীড ড্রেসারটি কিছুক্ষণ ঘোরালে বীজের গায়ে ঔষধ ভালোভাবে লেগে যাবে। এবার শোধন করা বীজ কয়েক ঘন্টার মধ্যে বপন করুন।
সাবধানতা:
- বীজ শোধক এক ধরনের বিষ। তাই শোধন করা বীজ এবং ঔষধ শিশু ও পশুপাখির নাগালের বাইরে রাখুন।
- বীজ শোধনের পর হাত ও মুখ ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালভাবে ধৌত করে নিন।
- বীজ ও ঔষধ সঠিক পরিমাণে মিশাতে হবে।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা পিঁয়াজ, আলু ও সরিষার বীজ শোধন পদ্ধতি/উপায়/নিয়ম সমবপর্কে জানলাম।
সর্বশেষ কথা এই যে, ভালো ফলনের জন্য বীজ বপনের পূর্বে শোধন করে নেওয়া উচিত।
বিভিন্ন ফসলের জন্য বিভিন্ন রকমের বীজ শোধন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বীজকে ৫২-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (হাতে সহনীয়) তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে বীজ শোধন হয়ে যায়। এছাড়া কারবেনডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়েও বীজ শোধন করা যায়।
পদ্ধতি যেটাই হোক না কেন, একজন দায়িত্বশীল কৃষক সর্বদা বীজ শোধন করে শস্য ও ফসল চাষ করে থাকেন।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।