Skip to content

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি

চন্দ্রমল্লিকা শীতকালীন মৌসুমী ফুল। চীন ও জাপান চন্দ্রমল্লিকার উৎপত্তিস্থল। এটি জাপানের জাতীয় ফুল।

চন্দ্রমল্লিকা বিশ্বব্যাপি অত্যন্ত জনপ্রিয় যা গোলাপের পরই এর স্থান। নানা আকার, বাহারি রং, আকার আকৃতি এবং ফুলের দীর্ঘস্থায়িত্ব এর কারণে সকল মৌসুমি ফুলের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। আমরা এখানে চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।

চন্দ্রমল্লিকা ফুল টবে, উদ্যানে, বিশেষ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। শরৎকালীন ফুল ফোটে বলে শরতের রাণী বা Autmn queen বলা হয়। চীন, জাপান ইউরোপের এ এই ফুলের আরও উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কাজ চলছে। সংকরায়নের মাধ্যমে প্রচুর সংখ্যক জাত উদ্ভাবন হচ্ছে। শুধু বাগানের সৌন্দর্য নয় কাটফ্লাওয়ার হিসেবে বাংলাদেশে চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের প্রসার বাড়ছে।

এ পাঠ শেষে আপনি- চন্দ্রমল্লিকার জাত, বংশবিস্তার সম্পর্কে  ধারণঅ পাবেন; চন্দ্রমল্লিকার জলবায়ু ও মাটি সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন; চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি শিখতে পারবেন।

নিম্নে চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি সহজ ও সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

(১) চন্দ্রমল্লিকা ফুলের জাত

চিত্র- চন্দ্রমল্লিকা ফুল
চিত্র- চন্দ্রমল্লিকা ফুল

চন্দ্রমল্লিকা জাতভেদে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-

  1. সিঙ্গেল
  2. এনিমোন-ফ্লাওয়ার্ড
  3. ডেকোরেটিভ
  4. পমপন
  5. ইনকার্ভড
  6. কাসকেড
  7. হেয়ারি বা স্পাইডারী
  8. রিফ্লেক্সড
  9. লার্জ একজিবিশন
  10. স্পুন
  11. লিলিপুট।

বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত জাত হলো বারি চন্দ্রমল্লিকা-১, বারি চন্দ্রমল্লিকা-২।

(২) চন্দ্রমল্লিকা চাষে জলবায়ু ও মাটি

চন্দ্রমল্লিকা সাধারণতঃ ঠান্ডা ও রৌদ্রজ্জল পরিবেশ পছন্দ করে। দোআঁশ ও পলিদোআঁশ মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উপযোগী।

(৩) চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চারা উৎপাদন

চন্দ্রমল্লিকা চারা বীজ, সাকার ও শাখা কলম হতে প্রস্তুত করা হয়। বীজ থেকে উৎপন্ন চারা থেকে ভালোমানের ফুল পাওয়া যায়না আবার ফুল আসতে সময় লাগে। সেদিক থেকে কলম করে চারা উৎপাদন করাই উত্তম।

See also  চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি ও গাছের পরিচর্যা

ক) সাকার থেকে চারা উৎপাদন

  • গাছে ফুল ধরা শেষ হলে ১৫-২৫ সে.মি. উপরে ডালগুলো কেটে দিতে হয়। মাস খানেকের মধ্যে গাছের গোড়া থেকে সাকার বের হয়। এগুলো গাছের গোড়া থেকে ছিঁড়ে নিয়ে প্রতিটি খন্ডে ২-৩ টি পাতা রেখে প্রথমে ছোট টবে লাগাতে হবে।
  • টবে মাটির মিশ্রনে সমপরিমাণ পচা গোবর সার কিংবা পাতা পচা সার এবং বালি মিশিয়ে নিতে হবে। পরিমাণ মতো পানি সেচ দিলে এক মাসের মধ্যে সাকারের খন্ডগুলো থেকে মুল গজাবে।
  • মধ্য জুন-মধ্য জুলাই মাস পর্যন্ত খন্ডগুলো বড় হবে এবং পাশ দিয়ে শাখা বের হবে সেগুলোকে কেটে নিয়ে টবে বা বীজতলয়ে ৩০ সে.মি. দুরে দুরে রোপন করা যেতে পারে।
  • চারাগুলোকে কড়া রোদ ও অতিরিক্ত বৃষ্টি থেকে রক্ষাসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

খ) শাখা কলম থেকে চারা উৎপাদন

  • শাখা কলম তৈরির জন্য জুলাই-আগষ্ট মাসের দিকে ৮-১০ সে.মি. দীর্ঘ করে অগ্রভাগ কেটে নিতে হবে।
  • ২-৩টি নোড সম্পন্ন শাখা কলমের খন্ডগুলোকে তিনভাগ বালি ও একভাগ পাতা পচা সারের মিশ্রণে রোপন করতে হবে।

(৪) চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চারা রোপন

সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২৫ সে.মি. চারা রোপন করতে হবে।

(৫) চন্দ্রমল্লিকা চাষে সারপ্রয়োগ

  • চন্দ্রমল্লিকার জন্য গোবর সার একর প্রতি ৪০০০ কেজি, ১৬০ কেজি ইউরিয়া, ১১০ কেজি টিএসপি ১২০ কেজি এমপি, ৬৬ কেজি জিপসাম, ৪.৮ কেজি বরিক এসিড, ১.৬ কেজি জিঙ্ক অক্সাইড হারে প্রয়োগ করতে হবে (বারি, ২০০৪)।
  • শেষ চাষের সময় সমুদয় সার মাটির দুই কিস্তিতে ভাগ করে একভাগ রোপনের ২৫-৩০ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক ৪৫-৫৯ দিন পর গোড়ার চারপাশে দিতে হবে।
  • প্রতিবার সার প্রয়োগের পর পানি সেচ দিতে হবে।

(৬) চন্দ্রমল্লিকার কুড়ি অপসারণ

বর্ষাকালে প্রথম দিকে যখন শাখা বের হতে থাকে তখন মুল কান্ডের মাথা কেটে দিতে হবে। এরপর শাখা বের হলে প্রয়োজনীয় শাখা রেখে বাকি শাখা কেটে দিতে হয়। এতে ফুলের সংখ্যা বাড়ানো যায়। শাখাগুলির অগ্রভাগের ফুলের কুড়ি রেখে বাকিগুলো ফেলে দিতে হবে। এর ফলে বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়।

See also  চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি ও গাছের পরিচর্যা

(৭) চন্দ্রমল্লিকার গাছে ঠেক দেওয়া

চন্দ্রমল্লিকার গাছ যাতে হেলে না পড়ে সেজন্য ঠেক দেয়া প্রয়োজন।

(৮) চন্দ্রমল্লিকা চাষে রোগ ও পোকা দমন

চন্দ্রমল্লিকার সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল জাবপোকা। এ পোকা কচি পাতা, ফুলের রস খেয়ে ফেলে। এই পোকা ১ লিটার পানিতে ২ মিলি ম্যালাথিয়ন মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। থ্রিপস পোকাও পাতা ও ফুলের রস চুষে খায় ফলে পাতা ও ফুল শুকিয়ে যায়।

চন্দ্রমল্লিকা পাউডারি মিলডিউ নামক ছত্রাক জনিত রোগের প্রার্দূভাব দেখা যায়। এ রোগ হলে পাতার উপর সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়। এটি দমনের জন্য রিডোমিল ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে টিল্ট ২৫০ ইসি ৭-১০ দিন পর পর প্রয়োগ করলে রোগ দমন হয়।

(৯) চন্দ্রমল্লিকা ফুল সংগ্রহ

  • চারা লাগানোর ১০০-১২৫ দিনের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকার ফুল ফোটে। বাংলাদেশে নভেম্বর-জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এ ফুল ফোটে।
  • চন্দ্রমল্লিকা ফুল কুড়ি অবস্থায় না তুলে বাইরে পাপড়িগুলো সম্পূর্ণ খুলে গেলে এবং মাঝের পাপড়িগুলো ফুটতে শুরু করলে দীর্ঘ বোঁটা সহ ছুরি দিয়ে কেটে আনতে হবে।
  • চন্দ্রমল্লিকার ফুল অনেক দিন পর্যন্ত তাজা থাকে। ফুল সংগ্রহের পর বাজারে পাঠানোর আগ পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে।

উপরোক্ত আলোনার মাধ্যমে আমারা চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারলাম।

চন্দ্রমল্লিকা বিশ্বব্যাপী গোলাপের পরেই এর স্থান। চীন ও জাপান এর উৎপত্তিস্থল। চন্দ্রমল্লিকাকে জাতভেদে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। চন্দ্রমল্লিকার চারা সাধারণত: বীজ, সাকার ও শাখা কলমের মাধ্যমে করা হয়। চন্দ্রমল্লিকার ক্ষতিকর পোকা হল জাব পোকা। চারা লাগানোর ১০০-১২৫ দিনের মধ্যে ফুল ফোঁটে।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts