নদীমাতৃক আমাদের বাংলাদেশ হাঁস পালনের জন্য বেশ উপযোগী। আমাদের দেশি হাঁস গড়ে বার্ষিক ৬০-৮০টি ডিম পাড়লেও সঠিকভাবে হাঁস পালন পদ্ধতি অনুসরণ করলে উন্নত জাতের হাঁসপ্রতি বার্ষিক প্রায় ৩০০টি ডিম পাওয়া যায়। আমরা এখানে হাঁস পালন পদ্ধতি ও হাঁসের খাদ্য তালিকা সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করব।
এদেশের অনেকেই শখের বশে ও মাংসের জন্য পারিবারিকভাবে রাজহাঁস পালন করে থাকেন। যদিও এদেশে এখনও বাণিজ্যিকভিত্তিতে রাজহাঁসের খামার গড়ে ওঠেনি তবে পারিবারিকভাবে পালন করে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।
এ পাঠ শেষে আপনি- হাঁস পালন পদ্ধতি ও হাঁসের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পরবেন। হাঁসের ঘর তৈরি নিয়ম সম্পর্কে ও হাঁসের ঘরের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারবেন। বিভিন্ন বয়সের হাঁসের জন্য খাদ্য তৈরি করতে পরবেন। পুরুষ হাঁস চেনার উপায়/হাঁসের লিঙ্গ নির্ধারণ করার পদ্ধতি শিখতে পারবেন। এছাড়া রাজ হাঁস পালন সম্পর্কেও অবগত হতে পারবেন।
নিম্নে হাঁস পালন পদ্ধতি ও হাঁসের খাদ্য তালিকা উপস্থাপন করা হলো-
(১) হাঁসের ঘর তৈরি
ডিমপাড়া বা লেয়ার হাঁস পালনে সহজ ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন প্রকৃতির ঘরের প্রয়োজন। যেমন-
- সকল বয়সের বাচ্চা থেকে লেয়ার পর্যন্ত হাঁস পালনের জন্য এই ঘর ব্যবহার করা হয়।
- বাচ্চা ও বাড়ন্ত বাচ্চা পালনের জন্য ব্রুডার ও গ্রোয়ার ঘর ব্যবহার করতে হবে।
- লেয়ার বা খাবারের ডিমপাড়া হাঁস এবং ব্রিডার বা ফোটনোর ডিমপাড়া হাঁস যথাক্রমে লেয়ার ও ব্রিডার ঘরে পালন করা হয়।
হাঁসকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যপ্রাণী থেকে রক্ষা এবং নিরাপদে পালনের জন্যই বাসস্থানের প্রয়োজন। হাঁসের ঘর তৈরি করার কিছু নিয়ম রয়েছে। যথা-
- হাঁস খুব বেশি গরম ও ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। হাঁসের ঘর সাধারণত খোলামেলা, উঁচু ও রৌদ্র থাকে এমন জায়গায় নির্বাচন করা উচিত।
- ঘরের পাশে জঙ্গল থাকতে পারবে না এবং মুরগির খামার থেকে দূরে হওয়া ভালো।
- গ্রামীণ পরিবেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ঘরের চালা নির্বাচন করতে হবে। ছোট খামারিদের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের বাসগৃহ হাঁসের জন্য উপযোগী। বাঁশ, টিন, ছন অথবা খড় দিয়ে দোচালা ঘর তৈরি করা যায়।
- বাসস্থানের মেঝেতে আস্তরণ হিসেবে বালি, ধানের তুষ, চুলোর ছাই অথবা খড় ছিটিয়ে দিতে হয়। এ আস্তরণ যখন স্যাঁতসেঁতে অথবা অপরিষ্কার হয়ে যায় তখন তা সরিয়ে নিয়ে নতুন আস্তরণ বিছিয়ে দিতে হয়।
- হাঁস সাধারণত মেঝেতে ডিম পাড়ে। তাই ঘরের দেয়াল বা বেড়ার পাশে কিছুটা গর্ত করে সেখানে তুষ বা খড় বিছিয়ে দিলে ডিমগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে।
- হাঁস সাধারণত পুকুর, হাওর-বাওড় ও খালবিলে চরে খাবার সংগ্রহ করে তাই জলাশয়ের ধারে হাঁস পালনের ঘর নির্মাণ করা উত্তম।
- ঘর যে বয়সের হাঁসের জন্যই হোক না কেন আলো-বাতাস চলাচলের সুবিধার জন্য ঘরটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এবং উত্তর- দক্ষিণে খোলা থাকা প্রয়োজন।
- জলাশয়ের পাড়ে বা জলাশয়ের মধ্যে খুঁটি বা পিলারের উপর অথবা ভাসমান অবস্থায় ঘর তৈরি করা যায়।
- হাঁসের ঘরের মেঝের প্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন- বাঁশের মেঝে, পাকা মেঝে, মাঁচাযুক্ত মেঝে ইত্যাদি।
- কাঁচা এবং পাকা মেঝেতে ১৫ সেমি (৬ ইঞ্চি) পুরু করে ধানের তুষ, কাঠের গুড়া ইত্যাদি লিটার বিছাতে হয়।
- মাঁচা তৈরি করার জন্য বাঁশের চটা বা শক্ত কাঠের বাতা ব্যবহার করা যায়। চাট বা বাতার মাঝে ২.৫ সেমি (১ ইঞ্চি ) ফাঁকা স্থান থাকবে।
- হাঁসের ঘরে ছাউনি হিসাবে বাণিজ্যিক খামারে ঢেউটিন অথবা অ্যাসবেস্টস শিট ব্যবহার করা যায়। পারিবারিক খামারের জন্য খড় বা গোলপাতা ব্যবহার করলে ঘর ঠান্ডা থাকে। বর্তমানে দুই পর্দা বাঁশের চাটাইয়ের মাঝে পলিথিন ব্যবহার করে অল্প খরচে চালা তৈরি করা যায়।
- চালার উচ্চতা ঘরের মধ্যবর্তী স্থানে কমপক্ষে ৩ মিটার (১০ ফুট) উঁচু হওয়া বাঞ্ছনীয়। পারিবারিক খামারে চালের উচ্চতা ১.৫-২.০ মিটার (৫/৬ ফুট) হলেই যথেষ্ট।
- ঘরের চালা ঘরের বাইরের দিকে অন্তত ৬০ সেমি (২ ফুট) বাড়তি থাকলে বৃষ্টির পানি ভিতরে প্রবেশ করে না।
- ঘরের বেড়া হিসাবে তারের জাল, নাইলনের জাল, বাঁশের চটা, কাঠ বা লোহার রড দ্বারা তৈরি গ্রিল ব্যবহার করতে হয় যাতে ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করতে পারে।
(২) হাঁসের ঘরের ব্যবস্থাপনা
বাণিজ্যিক ও আধুনকি হাঁস পালন পদ্ধতিতে ঘরের ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হাঁসের ঘরের ব্যবস্থাপনার অন্যতম তিনটি দিক হলো-
- খাবার পাত্র: ১৫ সেমি চওড়া, ১৫০-১৮০ সেমি লম্বা এবং ১৫ সেমি গভীর কাঠ, টিন বা প্লাস্টিকের তৈরি খাবার পাত্র ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি হাঁসের জন্য অনুরূপ পাত্রে ১৫ সেমি পরিমাণ স্থান দিতে হয়। এরূপ পাত্রের উভয়দিকে দাঁড়িয়ে ২০/২৪টি হাঁস দাঁড়াতে পারে।
- পানির পাত্র: পানির পাত্রে প্রতিটি হাঁসের জন্য ৫ সেমি পরিমাণ স্থান যথেষ্ট। প্লাস্টিক, টিন বা স্বয়ংক্রিয় পানির পাত্র ব্যবহার করা হয়। পানির পাত্রের গভীরতা ডিমপাড়া হাঁসের জন্য ২০-২৫ সেমি হয়।
- ডিম পাড়ার বাসা: স্বাভাবিক কারণে হাঁস ডিম পাড়ার জন্য কিছুটা গোপনীয়তা পছন্দ করে। একটা নির্দিষ্ট স্থানে ডিম পাড়ার জন্য চতুষ্কোণ বাক্স স্থাপন করতে হয়। ৪/৫ টি হাঁস একত্রে ডিম পাড়ার জন্য ৬০ সেমি ৯০ সেমি ৩০ সেমি একটি খোলা বাক্স যথেষ্ট।
(৩) হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতি
হাঁসের বাচ্চা কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক উভয়ভাবেই পালন করা যায়।
- গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে ১০-১৫টি বাচ্চা কুঁচে মুরগির সাহায্যে পালন করা যায়। প্রথম ৫-৭ দিন একটি সীমাবদ্ধ জায়গায় ঝাঁপি বা খাঁচা দিয়ে ঢেকে রেখে বা বেড় দিয়ে আবদ্ধ জায়গায় খাবার ও পানির ব্যবস্থা করে হাঁসের বাচ্চাসহ হাঁসকে রাখতে হবে। এই অবস্থায় বাচ্চাগুলোকে গম ভাঙ্গা, চালের কুঁড়া, ছোট ছোট শামুক ভেঙ্গে খাওয়ানো যায়।
- উন্নত জাতের হাঁসের বাচ্চাকে ৪ সপ্তাহ বয়সের পূর্বের জলাশয়ে ছাড়া যাবে না।
কৃত্রিম পদ্ধতিতে ব্রুডার ও গ্রোয়ার হাউজে হাঁসের বাচ্চা পালন করা হয়।
- এজন্য ঘরের নির্দিষ্ট একটি স্থানে চটের পর্দা দ্বারা ঘিরতে হবে।
- লিটারের উপর ব্রুডার গার্ড দিতে হবে যা ৩০ সেমি (১ ফুট) উঁচু হবে।
- দুপুরের পূর্বের ব্রুডারে বাচ্চা গ্রহণ করা উচিত।
- বাচ্চাদের পানি ও খাদ্য পাত্র লিটারের বাইরে স্থাপন করা হয়।
- হাঁসের বাচ্চারা লিটার ভিজিয়ে ফেললে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। লিটার ভিজে গেলে ভিজা অংশ পরিবর্তন করতে হবে।
- প্রথম ৭ দিন চিক গার্ডের ভিতরে এবং ব্রুডারের নিচে কাগজ বিছাতে হবে। ৭ দিন পর থেকে কাঠের গুঁড়া, ধানের খড় ইত্যাদি বিছানা হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। বিছানার উচ্চতা হবে ২-৩ ইঞ্চি।
ব্রুডিং-এ তাপমাত্রার পরিমাণ:
বাচ্চার বয়স (সপ্তাহ) | ব্রুডারের নিচের তাপমাত্রা (ফারেনহাইট) | মেঝে থেকে ৫ ফুট উপরে ঘরের তাপমাত্রা (ফারেনহাইট) |
১ | ৯৫° | ৭০-৭৫° |
২ | ৯০° | ৭০-৭৫° |
৩ | ৮৫° | ৬০-৭০° |
৪ | ৮০° | ৬০-৬৫° |
৫ | ৭৫° | ৬০° |
৬ | ৭০° | ৬০° |
৭ | ৭০° | ৬০° |
৮ | ৭০° | ৬০° |
(৪) হাঁসের খাদ্য তালিকা
হাঁস অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার খেয়ে জীবন-ধারণ করতে পারে। সব জাতের হাঁস চরে খেতে পছন্দ করে।
- বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের বর্জিত খাদ্য, যেমন- তরিতরকারির খোসা, ফলমূলের উপজাত, উচ্ছিষ্ট ভাত, ডাল, তরকারি, ভাতের মাড়, চাল ধোয়া পানি, মাছ ইত্যাদি একত্রে সিদ্ধ করে হাঁসের জন্য উপাদেয় খাদ্য তৈরি করা যায়। এই খাদ্যের সাথে চাউলের কুড়া, গমের ভুষি, ফলের ছোবড়া ইত্যাদি নির্দিষ্ট পরিমাণে মিশিয়ে দেওয়া যায়।
- হাঁস চরার মতো স্থান থাকলে ও বাড়ির উঠানে চাড়ি পুঁতে তার মধ্যে ডাক ডইড, শৈবাল ইত্যাদি চাষ করা যায়। চাড়ির মধ্যে শামুক, ঝিনুক সংগ্রহ করে দিতে হয়। চাড়ির ময়লা পরিষ্কার করতে হয় মাঝে মাঝে।
হাঁসের খাদ্য দুই প্রকার। যথা–
- ম্যাশ খাদ্য ও
- পিলেট খাদ্য।
- ম্যাশ খাদ্যের মধ্যে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ বিভিন্ন মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। ম্যাশ খাদ্য যন্ত্রের সাহায্যে চাপ প্রয়োগ করে পিলেট তৈরি করা হয়।
- পিলেট আকারে বাচ্চার জন্য ৩ মিমি ও বড় হাঁসের জন্য ৫ মিমি হয়। ছোট দানার পিলেট বাচ্চাদের ২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত খাওয়ানো হয়।
- পূর্ণবয়ষ্ক হাঁস সারাদিনে মোট ২০০-২৫০ গ্রাম খাবার খায়। হাঁস নিজেদের খাবারের প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ নিজেরাই সংগ্রহ করে থাকে।
- বাচ্চা হাঁসের জন্য খাদ্য হিসাবে বেশ পাতলা ও নরম খাবার দেয়া উচিত। ভিজে চালের গুঁড়ো, ভেজানো বুট, ভেজানো কুঁড়ো বাচ্চাদের উপযুক্ত খাদ্য। দিনে ৪-৫ বার বাচ্চাদের খাবার সরবরাহ করতে হবে।
বিভিন্ন বয়সের হাঁসের খাদ্য তালিকা বা খাদ্য তৈরির সূত্র:
খাদ্য উপাদান | হাঁসের বাচ্চা (০-৬ সপ্তাহ) | বাড়ন্ত হাঁস (৭-১৯ সপ্তাহ) | ডিমপাড়া হাঁস (২০সপ্তাহ ও তদুর্দ্ধ) |
গম ভাঙ্গা | ৩৬% | ৩৭% | ৩৬% |
ভুট্টা ভাঙ্গা | ১৮% | ১৮% | ১৬% |
চালের কুঁড়া | ১৮% | ১৭% | ১৬% |
সয়াবিন তেল | ২২% | ২৩% | ২৩% |
প্রোটিন কনসেনট্রেট | ২% | ২% | ২% |
ঝিনুক চূর্ণ | ২% | ২.% | ৩.৫০% |
ডিসিপি | ১.২৫% | ১.২৫% | ০.৭৫% |
ভিটামিন-খণিজ প্রিমিক্স | ০.২৫% | ০.২৫% | ০.২৫% |
লাইসিন | ০.১০% | ০.১০% | ০.১০% |
মিথিওনিন | ০.১০% | ০.১০% | ০.১০% |
লবণ | ০.৩০% | ০.৩০% | ০.৩০% |
মোট = | ১০০% | ১০০% | ১০০% |
বয়স অনুযায়ী হাঁসের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ:
বয়স (সপ্তাহ) | আবদ্ধ অবস্থায় প্রতি হাঁস/দিন (গ্রাম) | অর্ধছাড়া অবস্থায় প্রতি হাঁস/দিন (গ্রাম) |
১ | ৮-১৫% | ৮-১৫ গ্রাম |
২ | ২৫-৩০% | ২৫-৩০ গ্রাম |
৩ | ৩০-৪০% | ৩০-৪০ গ্রাম |
৪ | ৪০-৫০% | ৪০-৫০ গ্রাম |
৫ | ৫০-৬০% | ৩০-৪০ গ্রাম |
৬ | ৬০-৭০% | ৪০-৫০ গ্রাম |
৭ | ৭০-৮০% | ৬০-৬৫ গ্রাম |
৮ | ৮০-৯০% | ৭০ গ্রাম |
৯ | ৯৫-১০০% | ৭০ গ্রাম |
১০ | ১১০% | ৭৫ গ্রাম |
১১ | ১২০% | ৭৫ গ্রাম |
১২ | ১৩০% | ৭৫ গ্রাম |
১৩ | ১৩৫% | ৮০ গ্রাম |
১৪ | ১৪০% | ৮০ গ্রাম |
(৫) পুরুষ হাঁস চেনার উপায়/হাঁসের লিঙ্গ নির্ধারণ
মুরগীর তুলনায় হাঁসের লিঙ্গ নির্ধারণ সহজ ও অধিকতর সঠিক। মাংস উৎপাদনকারী হাঁসের জন্য লিঙ্গ নির্ধারণ জরুরী না হলেও ডিম উৎপাদনকরী হাঁসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পুরুষ হাঁস চেনার উপায়/হাঁসের লিঙ্গ নির্ধারণের কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যথা-
- হাঁসের পায়ু হাতের নির্দেশক এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির মাঝে এমনভাবে ধরতে হবে যেন বুক উপরের দিকে থাকে ও মাথা ঝুলান্ত অবস্থায় থাকে।
- তারপর হাঁসের ক্লোয়েকা লম্বালম্বিভাবে প্রসারিত করতে হবে কিন্তু ধীরে শক্ত করে ধরার মাধ্যমে।
- এবার হাঁসের ক্লোয়েকা আড়াআড়িভাবে প্রসারিত করতে হবে যাতে পরে কপুলেটরি অর্গান দেখা যায়। বাচ্চা স্ত্রী বা হাঁসি হলে ক্লোয়েকার রং হালকা ও গোলাপি-এর মধ্যে থাকবে এবং পুরুষ বা হাঁসা হলে পুরুষাঙ্গ থাকবে।
- হাঁসি উচ্চস্বরে কোয়াক কোয়াক শব্দ করে। অপরপক্ষে, হাঁসা নরম স্বরে ডাকে, কন্ঠের পার্থক্য ৬-৯ সপ্তাহে হয়।
- ঠোঁট দেখে বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়। ঠোঁট লম্বা হলে হাঁসা, ছোট হলে হাঁসি।
- লেজের পালক দেখেও লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়। সেসব বাচ্চা লেজের পালক উঁচু করে চলে সেগুলো হাঁসা আর যারা নিচু করে চলে তারা হাঁসি।
- দলীয়ভাবে চলাফেরার সময় যেগুলো দেখতে আকারে ছোট, সেগুলো সাধারণত হাঁসি এবং মোটা লম্বা হলে হাঁসা হবে।
- পুরুষ বাচ্চার দেহের রং উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। স্ত্রী বাচ্চার পালকের রং অনুজ্জ্বল থাকে।
- বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে স্ত্রী হাঁসের পেছনে হাড়ের পরিবর্তন হতে থাকে। ডিমপাড়া হাঁসের হাড় নরম ও চওড়া হয়।
- মুরগির বাচ্চার মতো যন্ত্রের সাহায্যে হাঁসের বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়।
- পুরুষ বাচ্চা ডানা ও পা বেশি ছোড়ে এবং অনেক বেশি চঞ্চল হয়। তুলনামূলকভাবে স্ত্রী বাচ্চা ডানা ও পা কম ছোড়ে ও কিছুটা শান্ত স্বভাবের হয়।
(৬) হাঁসের প্রজনন
হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য হাঁসের প্রজনন একান্ত আবশ্যক। তাছাড়া হাঁসের জাত উন্নয়ন ও জাত সংরক্ষণ করার জন্যও প্রজনন অত্যন্ত প্রয়োজন।
- উন্নত জাতের হাঁস গড়ে চার মাস বয়সে এবং দেশি হাঁস ছয় মাসে ডিম দেয়।
- উর্বর ডিম পেতে হলে প্রতি ১০টি হাসির জন্য একটি হাঁসা রাখলেই যথেষ্ট।
- প্রজনন কাজে পানির প্রয়োজন হয় জলকেলির জন্য। জলকেলি ছাড়া মাদা-মাদি প্রজননে উৎসাহ পায় না।
(৭) রাজহাঁস পালন
এদেশের অনেকেই মাংসের জন্য ও শখের বশে রাজহাঁস পালন করে থাকেন। এরা সহজেই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশে সাধারণত বাণিজ্যিকভিত্তিতে ও বড় আকারে রাজহাঁস পালন করা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিকভাবে এদের পালন করা হয়। ছোট আকারের খামারের জন্য এরা বেশি উপযোগী। এতে খামারির মূলধনও কম লাগে। রাজহাঁস পুষ্টিকর ডিম এবং মাংস উৎপাদন করে।
- ডোবা-নালা জলাবদ্ধ স্থানে বসবসের জন্য এরা বেশি উপযোগী। যেখানে প্রাকৃতিক ঘাস রয়েছে সেখানে এদের সহজেই পালন করা যায়।
- এরা দিনে প্রচুর তাজা ঘাস খায়। তবে এদেরকে দৈনিক ৪০০ গ্রামের বেশি তাজা সবুজ ঘাস সরবরাহের করা যাবে না।
- রাজহাঁস থেকে ভালো উৎপাদন পাওয়ার জন্য সুষম খাদ্যের সাথে সবুজ ঘাস খাওয়াতে হবে। প্রাপ্তবয়ষ্ক রাজহাঁস প্রতিদিন গড়ে ২৫০ গ্রাম সুষম খাবার খাবে।
রাজহাঁসের খাদ্য তালিকা বা সুষম রেশনে পুষ্টি উপাদানের মাত্রা (গ্রাম/কেজি খাদ্যে):
পুষ্টি উপাদান | প্রারম্ভিক রেশন (০-৩ সপ্তাহ) | বাড়ন্ত রেশন (৪-৬ সপ্তাহ) | লেয়ার রেশন (৭ সপ্তাহ-বিক্রি পর্যন্ত) |
বিপাকীয় শক্তি (কিলোক্যালরি/কেজি) | ২৮০০.০০ | ২৯০০.০০ | ৩০০০.০০ |
ক্রুড প্রোটিন | ১৭০.০০ | ১৩০.০০ | ১২৫.০০ |
লাইসিন | ৯.৫০ | ৬.১০ | ৫.৯৫ |
ট্রিপটোফ্যান | ১.৮০ | ১.৪৫ | ১.৩৫ |
থিউনিন | ৬.৫৫ | ৪.২১ | ৪.১১ |
লিউসিন | ৯.৫০ | ৬.০০ | ৫.৯০ |
আইসোলিউসিন | ৬.৮৪ | ৪.৪০ | ৪.৩০ |
ভ্যালিন | ৭.৫০ | ৪.৮২ | ৪.৭০ |
হিসটিডিন | ৩.৮৭ | ৪.৮২ | ৪.৭০ |
আরজিনিন | ৯.৭৭ | ৬.২৭ | ৬.১২ |
ফিনাইল অ্যালানিন+টাইরোসিন | ১২.৯ | ৮.২৮ | ৪.০৮ |
সালফার সমন্বিত অ্যামাইনো এসিড | ৮.৫০ | ৬.০০ | ৫.৫৫ |
ক্যালসিয়াম | ৮.০০ | ৮.০০ | ৭.০০ |
প্রাপ্ত ফসফরাস | ৪.০০ | ৩.৮০ | ৩.৫০ |
সোডিয়াম | ১.৩০ | ১.৩০ | ১.৩০ |
ক্লোরাইড | ১.২০ | ১.২০ | ১.২০ |
(৮) রোগ প্রতিকার
হাঁসের মতোই রাজহাঁসেরও রোগ-ব্যাধি হতে পারে। রাজহাঁসের রোগ প্রতিকারের জন্য জৈব-নিরাপত্তা সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা হাঁস পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম। আমরা হাঁসের ঘর তৈরি, হাঁসের ঘরের ব্যবস্থাপনা, হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতি, হাঁসের খাদ্য তালিকা, পুরুষ হাঁস চেনার উপায়/হাঁসের লিঙ্গ নির্ধারণ, হাঁসের প্রজনন, রাজহাঁস পালন, রোগ প্রতিকার প্রভৃতি বিষেয়ে ধারণা লাভ করলাম।
হাঁস পালনের প্রতিটি ধাপ যেমন বাসস্থান, ঘর ব্যাবস্থাপনা, বাচ্চা পালন, খাবার ব্যবস্থাপনা, লিঙ্গ নির্ধারন প্রভৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ন।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।