Skip to content

কবুতরের পালন/কবুতর পালন পদ্ধতি: কবুতরের পালনে বাসস্থান, কবুতরের খাদ্যাভ্যাস, কবুতরের খাদ্য তালিকা, কবুতরের বাচ্চার খাবার, কবুতরের বাচ্চা পালন পদ্ধতি এবং কবুতরের রোগের নাম

কবুতরের পালন/কবুতর পালন পদ্ধতি: কবুতরের পালনে বাসস্থান, কবুতরের খাদ্যাভ্যাস, কবুতরের খাদ্য তালিকা, কবুতরের বাচ্চার খাবার, কবুতরের বাচ্চা পালন পদ্ধতি এবং কবুতরের রোগের নাম

কবুতর বা পায়রা শান্তি প্রতীক। সেই আদিকাল থেকেই মানুষ কবুতর পালন করে আসছে। প্রাচীনকালে মানুষ দেব-দেবীদের খুশি করার জন্য কবুতর উৎসর্গ করতো। তাছাড়া সংবাদ প্রেরণ, চিত্ত-বিনোদন এবং সুস্বাদু মাংসের জন্য কবুতরের বহুল ব্যবহার ছিল। বর্তমানে আমাদের দেশে মাংস, চিত্ত-বিনোদন, সৌন্দর্য, রেসিং এবং জাতীয় ও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান উদ্বোভনীতে শান্তির প্রতীক হিসাবে আকাশে কবুতর ওড়ানো হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিভিকিত্ততে কবুতর পালন করা হচ্ছে। কোন কোন প্রজাতি বা জাতের একজোড়া কবুতর এমনকি ৫-১০ লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়। কাজেই পোল্ট্রি শিল্পেবর্ত মানে কবুতর একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। বেকার যুবা ও নারীরা সহজেই কবুতরের খামার গড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়লণ করতে পারে। এখানে কবুতর পালন ও ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে  সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

এ পাঠ শেষে আপনি- কবুতরের পালনে বাসস্থান সম্পর্কে  জানতে পারবেন। কবুতর পালন পদ্ধতি, কবুতরের খাদ্যাভ্যাস, কবুতরের খাদ্য তালিকা, কবুতরের বাচ্চার খাবার, কবুতরের বাচ্চা পালন পদ্ধতি এবং কবুতরের রোগের নাম সম্পর্কে ধারনা পাবেন।

(১) কবুতরের পালনে বাসস্থান

গ্রামে সাধারণত টিন বা খড়ের চালা ঘরের কার্নিশে মাটির হাড়ি বা টিন বেঁধে কবুতর পালন করা হয়। তাছাড়া কাঠের তৈরি ছোট ছোট খোপ তৈরি করেও কবুতুর পালন করা হয়।

  • কবুতরের খামারের জন্য উঁচু ও শুষ্ক সমতল ভূমি থাকা প্রয়োজন।
  • কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, বেজি ইত্যাদি যেন কবুতরের ঘরের নাগাল না পায় সেদিকে খেয়াল রেখে ঘর উঁচু করতে হবে। এজন্য বাঁশের বা কাঠের খুঁটি পুঁতে তার উপর ঘর নির্মাণ করা যায়।
  • প্রতিজোড়া কবুতরের জন্য একটি ঘর থাকা প্রয়োজন। একজোড়া কবুতর যেন স্বাচ্ছন্দে ঘুরতে ফিরতে পারে তা লক্ষ্য রেখেই ঘর নির্মাণ করতে হবে।
  • ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘরে যেন বৃষ্টির পানি না ঢুকতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • প্রতিজোড়া কবুতরের জন্য ঘরে ৩০ সেমি লম্বা, ৩০ সেমি প্রশস্ত ও ৩০ সেমি উচ্চতাবিশিষ্ট খোপ বানাতে হবে।
  • কবুতরের ঘর পাশাপাশি ও বহুতল বিশিষ্ট্য হতে পারে। প্রতি তলায় খোপের সামনে ১২ সেমি বারান্দা এবং প্রতি খোপ ১০ সেমি ১০ সেমি মাপের একটি করে দরজা রাখতে হবে।
  • খাবার ও পানির পাত্র ঘরের কাছেই রাখতে হবে এবং প্রতিমাসে দু-একবার ঘরের ভিতরের বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে হবে।
See also  কবুতরের বৈশিষ্ট্য ও কবুতর পালন পদ্ধতি

(২) কবুতরের বাচ্চা ফোটানো ও কবুতরের বাচ্চা পালন পদ্ধতি

কবুতর সাধারণত ডিম থেকে ফোঁটার পর ৫-৬ মাস বয়সে কবুতর বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। এরা ৬ মাস বয়স থেকে ডিম দিতে শুরু করে।

  • স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই পালাক্রমে ডিমে তা দেয়।
  • কবুতরের নতুন জোড়া তৈরি করতে হলে স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরকে এক ঘরে ৭-১৪ দিন আবদ্ধ করে খাবার ও পনি দিতে হবে।
  • কবুতরের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৮ দিন সময় লাগে। জন্মের প্রথম দিন বাচ্চার গায়ে উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের লম্বা চুলের মতো কোমল পালক দেখা যায় যা পরবতীর্ তে ঝরে পরে।
  • প্রথম ৪-৫ দিন কবুতরের বাচ্চার চোখের পাতা বন্ধ থাকে। এদের নাক ও কানের ছিদ্র বেশ বড় দেখায়।
  • প্রায় ৭ দিন বয়সে কবুতরের গায়ে পালক গঁজাতে শুরু করে। প্রায় ৮ দিন বয়সে পালকগুলো সজারুর কাটার মতো দেখায়।
  • ১১ দিনে কবুতরের বাচ্চার ডানার অর্ধেক পালকে ঢেকে যায়।
  • ১৯ দিনে ডানা ও লেজ পরিপূর্ণ হয়, ঠোঁট স্বাভাবিক হয় ও বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হয়।
  • কবুতর সাধারণত ১২-১৫ বছর বাঁচে।

(৩) কবুতরের বাচ্চার খাবার ও পানি

পাখির মধ্যে একমাত্র কবুতরই বাচ্চাকে প্রথম ৫-৭ দিন দুধ খাওয়ায়। এই জন্য প্রথম ৫-৭ দিন পর্যন্ত বাচ্চাদের কোন বাড়তি খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। স্ত্রী ও পুরুষ কবুতরের খাদ্যথলিতে হরমোনের প্রভাবে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি এক ধরনের দুধজাতীয় বস্তু খেয়ে এ সময় এরা বাড়তে থাকে। এ দুধ পিজিয়ন মিল্ক বা কবুতরের দুধ নামে পরিচিত।

  • স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরই ঠোঁট দিয়ে বাচ্চাকে পিজিয়ন মিল্ক/দুধ খাওয়ায়। ৭ দিন পর হতে একই নিয়মে অন্য খাবার খাওয়াতে থাকে।
  • ১০ দিন বয়সের পর বাচ্চা নিজে খাদ্য খেতে আরাম্ভ করে। তবে বাচ্চা বড় হওয়া ও স্বাধীনভাবে ওড়াউড়ি করা ও নিজের খাদ্য নিজে সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত বাবা-মা ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে বাচ্চাকে খাদ্য খাওয়ায়।
  • কবুতরের জন্য ঘরের কাছাকাছি মাটির গামলা বা পাত্রে পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা রাখতে হয়। সারদিন এরা পাত্র থেকে পানি খাবে এবং গোসল করবে।
  • প্রতিদিন পানির পাত্র পরিষ্কার করে টিউবয়েলের পানি দিতে হবে।
See also  কবুতরের বৈশিষ্ট্য ও কবুতরের ছবি

(৪) কবুতরের খাদ্যাভ্যাস

স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি এবং উৎপাদনে জন্য এদেরকে সুষম খাদ্য দেওয়া প্রয়োজন।

  • কবুতর সাধারণত বিভিন্ন প্রকার শষ্যদানা, যেমন- গম, ভুট্টা, ধান, চাল, কাউন, জোয়ার, কালাই, খেশারি, সরিষা ইত্যাদি খেয়ে থাকে।
  • কবুতরের খাদ্যে ১৫- ১৬% আমিষ থাকা প্রয়োজন।
  • প্রতিটি কবুতর দৈহিক ৩৫-৬০ গ্রাম দানাদান খাদ্য খেয়ে থাকে।
  • কবুতরের বাচ্চার দ্রুত বৃদ্ধি এবং বয়স্ক কবতরের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য ঝিনুকের চূর্ণ, চূনা পাথর কাঠ কয়লা চূর্ন, হাড়ের গুড়া ও লবণ দিয়ে খণিজ মিশ্রণ তৈরি কওে সরবরাহ করতে হয়।

(৫) কবুতরের খাদ্য তালিকা

শস্যদানাশতকরা হার: মডেল-১শতকরা হার: মডেল-২শতকরা হার: মডেল-৩শতকরা হার: মডেল-৪
১। ভুট্টা ভাঙ্গা৩৫%৩০%৩০%২২%
২। গম ভাঙ্গা২০%২০%১০%২৮%
৩। সরিষা দানা১৫%১৫%১০%১০%
৪। ছোলা ভাঙ্গা২০%২০%৩০%১৫%
৫। সয়াবিন মিল৫%১০%১৫%১৭%
৬। চালের কুঁড়া৪.৫%৪.৫%৪.৫%৭.৫%
৭। লবণ০.৫%০.৫%০.৫%০.৫
মোট =১০০%১০০%১০০%১০০%

(৬) কবুতরের রোগের নাম

কবুতরের রোগ-বালাই তুলনামূলকভাবে কম। তবে মাঝে মাঝে বসন্ত রোগ, কলেরা, রানীক্ষেত রোগ, অরনিথোসিস, রক্ত আমাশায় ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে এবং প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

কবুতর একটি সৌখিন এবং জনপ্রিয় পোল্ট্রি প্রজাতি। কবুতরের পালন করে লাভবান হতে হলে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা, যেমনবাসস্থান, বাচ্চা ফোটানো ও লালন-পালন, পানি এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে হবে।

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা কবুতরের পালনে বাসস্থান, কবুতর পালন পদ্ধতি, কবুতরের খাদ্যাভ্যাস, কবুতরের খাদ্য তালিকা, কবুতরের বাচ্চার খাবার, কবুতরের বাচ্চা পালন পদ্ধতি এবং কবুতরের রোগের নাম প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে অবগত হলাম।

যদিও বহুকাল ধরেই এদেশে কবুতর পোষা হয়, তবে সম্প্রতি পোল্ট্রি শিল্পে কবুতর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। কোন কোন প্রজাতি বা জাতের একজোড়া কবুতর এমনকি ৫-১০ লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়। কাজেই এদেশের বেকার যুবা ও নারীরা সহজেই কবুতরের খামার গড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ও দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারেন। তবে কোয়েল, হাঁস, রাজহাঁস ও কবুতর পালন করে লাভবান হতে হলে মুরগির মতো এদের লালন-পালন পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

See also  কবুতরের বৈশিষ্ট্য ও কবুতরের ছবি

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts